শপিং ব্যাগ
যেসব কারণে ব্যর্থ হচ্ছে পলিথিন নিষিদ্ধের উদ্যোগ
অবৈধ পলিথিন ব্যাগ বন্ধে সরকারের উদ্যোগের তেমন কোনো সফলতা চোখে পড়ছে না। সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী মূল্যের বিকল্প শপিং ব্যাগ না থাকায় এ উদ্যোগ ব্যর্থ হতে চলেছে।
গত ১ নভেম্বর থেকে পলিথিন ব্যাগের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞার এক মাস পেরিয়ে গেলেও বিভিন্ন কাঁচাবাজার, মুদি দোকান ও বিক্রেতাদের ওপর পলিথিন ব্যাগের বিরুদ্ধে সরকারের অভিযানের দৃশ্যমান কোনো প্রভাব দেখা যায়নি।
পরিবেশকর্মী, সাধারণ মানুষ ও দোকান মালিকরা বলছেন, পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন বন্ধ এবং পলিথিনের কাঁচামাল আমদানিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা উচিত সরকারের। পাশাপাশি উপযুক্ত ও সাশ্রয়ী বিকল্প উদ্ভাবনের দিকে মনোনিবেশ করা দরকার।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) নির্বাহী সভাপতি ড. লেলিন চৌধুরী বলেন, পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধের সিদ্ধান্ত সঠিক পদক্ষেপ। কিন্তু যতই চাপ প্রয়োগ করা হোক না কেন, জনগণকে কার্যকর বিকল্প না দিয়ে এটি বন্ধ করা কঠিন হবে।’
পলিথিন ব্যাগের বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যাগের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি সরকারকে পাটের ব্যাগকে সস্তা ও সহজলভ্য করার পরামর্শ দেন। প্রয়োজনে সরকারকে পাটের ব্যাগকে প্রতিযোগিতামূলক করতে ভর্তুকি দিতে হবে, কারণ এগুলো প্রকৃতিবান্ধব ও পরিবেশবান্ধব।
২০০০ এর দশকের গোড়ার দিকে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে সরকারের ব্যর্থ প্রচেষ্টা সম্পর্কে এই পরিবেশকর্মী বলেন, তৎকালীন সরকার পলিথিন নিষিদ্ধ করার পর কার্যকর বিকল্প দিতে ব্যর্থ হয়। এ কারণে তা সফল হয়নি।
তিনি বলেন, পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের দীর্ঘদিনের অভ্যাস পরিবর্তন করা সহজ কাজ নয়।
তিনি বলেন, 'আমাদের জনগণকে পলিথিন ব্যাগের কার্যকর বিকল্প দিতে হবে; তা না হলে এবারও এ উদ্যোগ পুরোপুরি সফল হবে না।’
পরিবেশকর্মী অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ২০০২ সালে যখন প্রথম পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়, তখন মানুষ শাস্তির ভয়ে কিছু দিন তা ব্যবহার থেকে বিরত ছিল। তবে উপযুক্ত বিকল্প ব্যাগ না পাওয়ায় আবারও পলিথিন ব্যবহার শুরু করেন তারা।
তিনি বলেন, 'এবার শুধু পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করার দিকেই নজর দেওয়া হচ্ছে। বিকল্প উৎপাদনের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না।’
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মজুমদার বলেন, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে প্রায় এক হাজার ছোট কারখানায় পলিথিন ব্যাগ তৈরি হয়। তাই কারখানা বন্ধ করে কাঁচামাল আমদানিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির দিকে সরকারকে আরও নজর দিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাটমোস্ফেরিক পলিউশন স্টাডিজের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ড. মজুমদার বলেন, আইনের কঠোর প্রয়োগ, জনসচেতনতা তৈরি, পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন বন্ধ করা এবং সস্তায় বিকল্প ব্যাগ উৎপাদন একযোগে করতে হবে।
রাজধানীর পশ্চিম শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা মঈন উদ্দিন বুধবার পশ্চিম শেওড়াপাড়ার কাঁচাবাজার থেকে ফিরছিলেন। এ সময় চারটি পলিথিন ব্যাগের করে সবজি ও মুদি সামগ্রী বহন করতে দেখা যায় তাকে।
অবৈধ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সস্তায় বিকল্প কোনো ব্যাগ পাওয়া যায় না।
তিনি বলেন, ‘সরকার যদি সত্যিই পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করতে চায়, তাহলে প্রথমে আমাদের বিকল্প ব্যাগ সরবরাহ করা উচিত এবং পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন বন্ধ করা উচিত।’
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফিরছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী আনিসুল ইসলাম। মৌচাকে সবজি কিনলে বিক্রেতারা তিনটি পলিথিন ব্যাগের করে তা দেন। বিকল্পের অভাবকেই দায়ী করেছেন তিনিও।
শেওড়াপাড়ার আনন্দবাজারের নুরুল হক নামে এক সবজি বিক্রেতা বলেন, ক্রেতাদের পলিথিন ব্যাগ সরবরাহ করলে তার বিক্রি অনেক কমে যাবে।
নুরুল বলেন, ‘সরকার যদি পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ করতে পারত তাহলে আমার আয় বাড়ত। প্রতিদিন পলিথিন ব্যাগ কিনতে আমার ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা খরচ করতে হতো না। দোকানের জন্য প্রতিদিন ১৭০-২০০ পলিথিন ব্যাগ লাগে।’
পশ্চিম শেওড়াপাড়ার মুদি দোকানি শফিকুল ইসলামও বিকল্প ব্যাগ তৈরি না করে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার জন্য সরকারের সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, ‘পলিথিন ব্যাগ না দিলে ক্রেতারা আমার দোকান থেকে কিনবে না।
তিনি বলেন, তার প্রতিদিনের বিক্রির জন্য প্রায় ২৫০-৩০০ পলিথিন ব্যাগ লাগে।
এই মুদি দোকানে অবশ্য বাজার থেকে পলিথিন ব্যাগ বর্জনের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন। তাদের উৎপাদন বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
শফিকুল বলেন, 'ক্রেতাদের অভ্যাস আগে বদলাতে হবে। উপযুক্ত বিকল্প ব্যাগ পাওয়া গেলে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ করা যেতে পারে।’
একক ব্যবহারের পণ্য যেমন ব্যাগ, বোতল, স্ট্র ও প্যাকেজিং উপকরণের অতিরিক্ত ব্যবহারের অন্যতম প্রধান কারণ হলো এগুলো পুনঃপ্রক্রিয়া না করা, যার ফলে এগুলো শেষ পর্যন্ত ভাগাড়, জলাশয় ও প্রাকৃতিক পরিবেশে চলে যায়।
আরও পড়ুন: পলিথিনবিরোধী অভিযানে ১৯ লাখ টাকা জরিমানা: মনিটরিং কমিটির সভাপতি
প্লাস্টিক পণ্যের অনিয়ন্ত্রিত উৎপাদন
বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান প্লাস্টিক বর্জ্যের অব্যবস্থাপনার পেছনে প্লাস্টিক শিল্প সবচেয়ে বেশি দায়ী। বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ হাজার প্লাস্টিক প্রস্তুতকারক কাজ করছে। এসব স্থানে প্রায় ১২ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে (বিডা, ২০২১)।
শহরাঞ্চলে বাংলাদেশের বার্ষিক মাথাপিছু প্লাস্টিকের ব্যবহার ২০০৫ সালে ছিল ৩ কেজি। সেখান থেকে ২০২০ সালে তিনগুণ বেড়ে ৯ কেজিতে দাঁড়িয়েছে।
২০০৫ সালের তুলনায় ২০২০ সালে এলডিপিই প্যাকেজিং উপকরণের (প্লাস্টিক ব্যাগ ইত্যাদি) ব্যবহার পাঁচগুণ বেড়েছে। ২০২০ সালে ব্যবহৃত ৯ লাখ ৭৭ হাজার টন প্লাস্টিকের মধ্যে মাত্র ৩১ শতাংশ পুনর্ব্যবহার করা হয়েছে।
প্লাস্টিক দূষণের শীর্ষ ১০টি হটস্পট:
• চীন: প্রতি বছর ২৮ লাখ টন
• পাকিস্তান: প্রতি বছর ২৬ লাখ টন
• বাংলাদেশ: প্রতি বছর ১৭ লাখ টন
• রাশিয়া: প্রতি বছর ১৭ লাখ টন
• ব্রাজিল: প্রতি বছর ১৪ লাখ টন
• থাইল্যান্ড: প্রতি বছর ১০ লাখ টন
• ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো: প্রতি বছর ১০ লাখ টন।
আরও পড়ুন: যৌথবাহিনীর অভিযানে ২৪৬০ কেজি পলিথিন জব্দ, ৩ কারখানা সিলগালা
৩ সপ্তাহ আগে
পলিথিন বা প্লাস্টিক শপিং ব্যাগ কেন নিষিদ্ধ করা উচিত
শহুরে এলাকার বর্জ্য পদার্থের একটা বিরাট অংশ হচ্ছে পলিথিন বা প্লাস্টিক। উপাদানগত দিক থেকে এই পলিব্যাগগুলো মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী, পরিবেশ ও আবহাওয়ার জন্য ক্ষতিকর। তাই পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে যাবতীয় প্লাস্টিক শপিং ব্যাগ ও পলিথিনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এর আগে সুপারশপগুলোতে পলিথিন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কাঁচাবাজারগুলোতে এই নিয়ম শুরু হবে নভেম্বর থেকে। এই নিষেধাজ্ঞা কেন জরুরি, পলিথিন নিষিদ্ধ হলে এর বিকল্প কি, বর্তমান প্রেক্ষাপটে তার উপযোগিতাই বা কতটুকু, চলুন, তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা যাক।
প্লাস্টিকের ব্যাগ বা পলিথিন নিষিদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা
.
জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি
পরিত্যক্ত প্লাস্টিক মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়ে বাতাস, পানি ও খাবারের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে। এই অনুপ্রবেশের ফলে দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুস ও কিডনিজনিত রোগের উপক্রম ঘটে।
প্লাস্টিকের ব্যাগ তৈরির উপকরণগুলোর মধ্যে বিসফেনল এ (বিপিএ) ও ফ্যালেট্সের মতো রাসায়নিক পদার্থ থাকে। এগুলো হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, শ্বাসকষ্ট, প্রজনন সমস্যা ও ক্যান্সারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্য জটিলতার সৃষ্টি করে।
এই ব্যাগগুলো যখন পোড়ানো হয় তখন ডাইঅক্সিন ও ফুরানের মতো অত্যন্ত বিষাক্ত ধোঁয়া নির্গত হয়। এগুলো বায়ু দূষণের মধ্য দিয়ে শ্বাসযন্ত্রকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
ফেনীতে প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে তেল উৎপাদন!
অন্যান্য প্রাণীদের জন্য হুমকি
মাইক্রোপ্লাস্টিক যে কোনো উভচর প্রাণীর পরিপাকতন্ত্রকে বিনষ্ট করে দেয়, যার ফলে অপুষ্টি, অনাহার ও শেষ পর্যন্ত মৃত্যুও ঘটতে পারে।
বিশেষত সামুদ্রিক কচ্ছপগুলো প্রায়ই ভাসমান প্লাস্টিকের ব্যাগগুলোকে জেলিফিশ ভেবে ভুল করে, যেটি তাদের প্রধান খাদ্যগুলোর একটি। গরু ও হাতির মতো বড় বড় প্রাণীদের পাকস্থলীও প্লাস্টিকের কারণে কার্যকারিতা হারায়।
সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের বিনাশ
বেশিরভাগ প্লাস্টিক বর্জ্যের চূড়ান্ত গন্তব্য সাগর। প্লাস্টিক ব্যাগের ক্ষয়ে যাওয়া অংশগুলো পানিতে দীর্ঘদিন ধরে ভাসমান অবস্থায় থাকে। এভাবে সময় যত যায় জলাশয়ের ওপর আবর্জনাযুক্ত বিশাল এলাকা সৃষ্টি করে। এই আবর্জনা স্রোতের সঙ্গে সাগরের খাদ্য-শৃঙ্খলে প্রবেশ করে ক্ষুদ্রতম প্লাঙ্কটন থেকে শুরু করে বৃহাদাকার তিমিরও মৃত্যুর কারণ হয়।
মাছ, সামুদ্রিক পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীসহ গোটা সামুদ্রিক প্রজাতি প্লাস্টিক দূষণের ঝুঁকিতে রয়েছে। প্লাস্টিক বর্জ্যগুলো সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের জন্য প্রয়োজনীয় প্রবাল প্রাচীরগুলোকে ঢেকে দেয়। ফলে সেগুলোতে সূর্যালোক পৌঁছাতে পারে না ও সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়।
জলবায়ুর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব
প্লাস্টিক ব্যাগ পেট্রোলিয়ামভিত্তিক পণ্য থেকে তৈরি করা হয়, আর এই উৎপাদনে প্রয়োজন হয় প্রচুর পরিমাণে জীবাশ্ম জ্বালানি। অপরদিকে, নির্গত হয় কার্বন ডাই অক্সাইড ও মিথেনের মতো গ্রিনহাউস গ্যাস। এছাড়া উৎপাদনের উদ্বৃত্ত অংশগুলো যেখানে ফেলে দেওয়া হয়, সেখান থেকেও এ ধরনের বিষাক্ত গ্যাসগুলো বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্ত হয়।
পুনর্ব্যবহারের অযোগ্য বলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যবহারের পর পলিব্যাগগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়। তখনও ধোঁয়ার মাধ্যমে নির্গত হয় ক্ষতিকারক গ্যাস। এভাবে সামগ্রিকভাবে পুরো বায়ুমণ্ডলকে বিষাক্ত করে ফেলে প্লাস্টিক।
'রিকশা বিন': ঢাকাকে প্লাস্টিক বর্জ্যের ঝুঁকিমুক্ত করতে বিদ্যানন্দের নতুন পদক্ষেপ
প্লাস্টিক ব্যাগ বা পলিথিনের কয়েকটি উৎকৃষ্ট বিকল্প
.
সোনালী ব্যাগসহ অন্যান্য পাটের তৈরি ব্যাগ
বাংলাদেশে উদ্ভাবিত পাটের সেলুলোজ থেকে তৈরি সোনালী ব্যাগ। এগুলো শুধুমাত্র বায়োডিগ্রেডেবল নয় বরং টেকসই ও জল-প্রতিরোধীও। প্লাস্টিক বা পলিব্যাগের তুলনায় এগুলো ভারী বোঝা বহন করতে সক্ষম। এই ব্যাগ ফেলে দেওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে এর উপাদানগুলো সম্পূর্ণরূপে ভেঙে যায়। কোনো কিছুই আর অবশিষ্ট থাকে না।
এরকম পাটজাত ব্যাগগুলো পলিথিনের একটি সেরা বিকল্প। পাটের ব্যাগের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এগুলোকে বছরের পর বছর ধরে বারবার ব্যবহার করা যায়। তাছাড়া পাট চাষে ঝামেলাও কম, পানি ও সার ও কীটনাশকও অল্প প্রয়োজন হয়।
তুলার ব্যাগ
দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের জন্য আরও একটি দারুণ বিকল্প হচ্ছে তুলার ব্যাগ। এই ব্যাগগুলো হালকা ওজনের, ধোয়া যায় ও সহজেই ভাঁজ করা যায়। তবে চাষের ক্ষেত্রে তুলা বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট পরিমাণে পানির প্রয়োজন হয়। জৈব তুলার ব্যাগ সিন্থেটিক কীটনাশক বা সার ছাড়াই জন্মায়। এগুলো বায়োডিগ্রেডেবল ও অপরসারণ করা হলে দ্রুত সম্পূর্ণরূপে ক্ষয়ে যায়।
অবৈধ ইটভাটা বন্ধ: সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে ডিসিদের নির্দেশ
কাগজের ব্যাগ
উপাদানগত দিক থেকে কাগজের ব্যাগ পুনর্ব্যবহারযোগ্য ও প্রাকৃতিকভাবে দ্রুত নিঃশেষযোগ্য। এই ব্যাগগুলোর সঠিকভাবে নিষ্পত্তি করা হলে তা মাটির পুষ্টি ফিরিয়ে দিতে পারে। পাট বা তুলার মতো শক্তিশালী না হলেও, কাগজের ব্যাগ হালকা ওজনের জিনিস বহন করার জন্য একটি নির্ভরযোগ্য বিকল্প।
কাপড়ের তৈরি ব্যাগ
লিনেন, মসলিন বা অন্যান্য ফেব্রিক মিশ্রণের উপাদান থেকে তৈরি কাপড়ের ব্যাগ যথেষ্ট টেকসই হয়ে থাকে। এগুলো পানিতে ধুয়ে নিয়ে অসংখ্যবার ব্যবহার করা যেতে পারে। ইতোমধ্যে সুপরিচিতি পেয়েছে ক্যানভাস ব্যাগগুলো, যেগুলো মূলত তুলা বা লিনেন থেকে তৈরি।
বৈশিষ্ট্যগত ভাবেই এগুলো হালকা ওজনের ও ভাঁজ করা সহজ। উপকরণের একদম শেষ অংশগুলো চূড়ান্তভাবে প্রকৃতিতে মিশে যেতে খুব সময় নেয় না। তাই পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলার আশঙ্কা থাকে না।
উলের ব্যাগ
এই প্রাকৃতিক ফাইবার যথেষ্ট মজবুত, পুনর্ব্যবহারযোগ্য ও বায়োডিগ্রেডেবল। উল প্রাকৃতিকভাবে জলপ্রতিরোধী হওয়ার যে কোনো আবহাওয়াতেই এগুলো ব্যবহারের উপযোগী। ওপরন্তু, উলের উৎপাদনে প্রয়োজনীয় উপকরণ পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না। উলের ব্যাগ বছরের পর বছর স্থায়ী হওয়ার কারণে এগুলোর ঘন ঘন প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন পড়ে না। প্রাকৃতিকভাবে নিঃশেষ হওয়ার সময় মাটিকে দূষিত করার পরিবর্তে সমৃদ্ধ করে।
বাংলাদেশে ১৫ বছরে প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়েছে ৫ গুণ: বিশ্বব্যাংক
বেতের ব্যাগ
দ্রুত বর্ধনশীল ও রিনিউয়েবল হওয়ায় ব্যাগের জন্য উৎকৃষ্ট একটি উপকরণ হতে পারে বেত। ভারী জিনিস বহনের জন্য বেতের ব্যাগ সেরা। স্থায়িত্বের দিক থেকে প্রসিদ্ধ হওয়ায় বেত অল্প ব্যবহারেই অপসারণের প্রয়োজন হয় না। তাই ঘন ঘন বর্জ্য সামলানোর ঝামেলা নেই।
শণের ব্যাগ
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে টেকসই ফাইবারগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে শণ। এর চাষের জন্য অল্প পরিমাণে পানি প্রয়োজন হয়। দ্রুত বেড়ে উঠার জন্য কোনো কীটনাশকের দরকার পড়ে না। শণের ব্যাগ তুলা বা পাটের থেকেও অনেক শক্তিশালী ও পর্যাপ্ত ভারী ওজন নিতে পারে। এছাড়া শণের মধ্যে দূষিত মাটি পরিষ্কার করার গুণ রয়েছে।
কচুরিপানা থেকে তৈরি ব্যাগ
পলিব্যাগের সৃজনশীল বিকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কচুরিপানার ব্যাগ। দ্রুত বর্ধনশীল এই জলজ উদ্ভিদকে ব্যাগের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বায়োডিগ্রেডেবল বৈশিষ্ট্য যুক্ত করা যেতে পারে। এই ব্যাগগুলোর ঘন ঘন উৎপাদন বিভিন্ন জলাধারগুলোতে কচুরিপানার ঘনত্ব কমাবে। এতে করে স্থানীয় বাস্তুতন্ত্র ব্যাহত হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।
মাইক্রো প্লাস্টিক কী? কীভাবে এটি মানবদেহে প্রবেশ করে? কী কী প্রভাব ফেলে?
পলিথিনের বিকল্পগুলোর প্রসারে সীমাবদ্ধতা
.
উচ্চ ক্রয়মূল্য
তুলা বা পাটের ব্যাগের মতো পরিবেশ-বান্ধব বিকল্পগুলো পলিথিনের চেয়ে বেশি দামি হতে পারে। এই উচ্চ মূল্য ভোক্তাদের নিরুৎসাহিত করতে পারে। এখানে উৎপাদন মূল্যের কারণে চূড়ান্ত বিক্রয়মূল্য কমানোটা কঠিন হবে। ওপরন্তু, এই ব্যাগগুলো নিয়ে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রাথমিক বিনিয়োগটিও একটি আর্থিক বোঝা হতে পারে।
সাপ্লাই চেইন ও প্রাপ্যতা সমস্যা
বিভিন্ন সাপ্লাই চেইন অতিক্রম করে বিক্রয়যোগ্য পণ্যের পর্যায় পর্যন্ত আসার প্রক্রিয়াটা জটিল হতে পারে। এতে শুধু যে খরচই বাড়বে তা নয়, সঠিক আউটলেটটি পর্যন্ত আসতে অতিরিক্ত সময়েরও প্রয়োজন হতে পারে। যেমন যে অঞ্চলগুলোতে পাট বা তুলা চাষ হয় না সে জায়গাগুলোতে বেশি পরিমাণে ব্যাগ সরবরাহ করাটা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। ওপরন্তু, দোকানে পর্যাপ্ত পরিমাণে পণ্য আসতে কাল বিলম্ব হলে তা ভোক্তাদের আবার পলিব্যাগ ব্যবহারের দিকে ধাবিত করতে পারে।
পরিবেশগত প্রভাব
চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদনের স্বার্থে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এই সতর্কতাটি তুলার ব্যাগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কচুরিপানা ব্যাগ ব্যবহারের পর তার সঠিক নিষ্কাশন না করা হলে তা জলজ বাস্তুসংস্থানকে বিনষ্ট করবে। তাই প্রতিটি বিকল্পের জীবনচক্র বিশ্লেষণ করে একটি ফিজিবিলিটি স্টাডি প্রয়োজন। বৃহৎ পরিসরে উৎপাদন, পরিবহন ও নিষ্পত্তিতে প্লাস্টিকের মতোই কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে কিনা তা যাচাই করা অতীব জরুরি।
শেষাংশ
পলিথিন বা প্লাস্টিক শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হলে পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য, বন্যপ্রাণী ও আবহাওয়া সুরক্ষিত হবে। তাই বিগত কয়েক দশক ধরে প্রলম্বিত হওয়া এই নিষেধাজ্ঞার অনতিবিলম্বে বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি। এই পরিপ্রেক্ষিতে সদাই বহনের জন্য পাট, তুলা, উল, শণ, বেত, কাগজ, ও কাপড়ের মতো পরিবেশ-বান্ধব ব্যাগগুলো হতে পারে উৎকৃষ্ট বিকল্প। তবে এই পরিবর্তন রাতারাতি সম্ভব নয়। কেননা নতুন ব্যাগগুলো প্রসারের পূর্বে এর শিল্প, অর্থনৈতিক, ও পরিবেশগত প্রভাবগুলো বিবেচনায় আনতে হবে। এর জন্য ভোক্তা স্তরের পাশাপাশি প্রস্তুতকারক পর্যায়েও ফিজিবিলিটি স্টাডি প্রয়োজন।
প্লাস্টিক ও নদী দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ: পরিবেশ উপদেষ্টা
২ মাস আগে
পলিথিন নিষিদ্ধের পক্ষে ক্রেতারা, বিকল্প নিয়ে শঙ্কা
পলিথিন ব্যাগের ওপর সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞায় সমর্থন জানিয়েছেন সুপারমার্কেটের গ্রাহকরা। তবে এর বিকল্প হিসেবে যেসব শপিং ব্যাগ ব্যবহার করতে হয় সেগুলোর জন্য তাদের ব্যয় বেড়েছে বলে জানালেন ক্রেতারা।
তারা মনে করেন, সুপারমার্কেটগুলোতে ছোট পণ্যের জন্য স্বল্পমূল্যের পরিবেশবান্ধব শপিং ব্যাগ বা বিনামূল্যের শপিং ব্যাগ সরবরাহ করা উচিত।
সুপারমার্কেটের কর্মীরাও জানান, তাদের বেশিরভাগ ভোক্তা পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ করার পদক্ষেপকে প্রশংসা করেছেন। তবে স্বল্পসংখ্যক ক্রেতা শপিং ব্যাগের জন্য বাড়তি অর্থ দেওয়ার ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, দেশে পর্যায়ক্রমে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে ১ অক্টোবর থেকে সুপার শপগুলোতে 'নো মোর পলিথিন ব্যাগ' নীতিমালা চালু করেছে সরকার।
এই নিষেধাজ্ঞা চালুর পর দিন ২ অক্টোবর শেওড়াপাড়ায় স্বপ্নের আউটলেটে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতাদের বিভিন্ন দামে বিভিন্ন ধরনের পরিবেশবান্ধব শপিং ব্যাগ দিচ্ছেন তারা।
সেখানে কেনাকাটা করতে আসা শাহিনা সুলতানা বলেন, 'সুপারমার্কেটে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপকে আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি কিন্তু নন-পলিথিন ব্যাগের দাম কিছুটা বেশি, যে কারণে আমাদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে।’
বেসরকারি সংস্থা আরটিএম ইন্টারন্যাশনালের কর্মরত শাহিনা মনে করেন, সুপারমার্কেটগুলোতে ছোট পণ্যের জন্য স্বল্পমূল্যের শপিং ব্যাগ বা বিনামূল্যে শপিং ব্যাগ সরবরাহ করা উচিত, না হলে ক্রেতারা মুদি দোকান থেকেই কেনাকাটা করবে।
আউটলেটে আসা আরেক ক্রেতা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পীযূষ চন্দ্র শীল বলেন, পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করা সঠিক সিদ্ধান্ত। পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে আমরা এটাকে স্বাগত জানাচ্ছি।
স্বপ্ন আউটলেটের ব্যবস্থাপক শাওন ইসলাম জানান, তারা ৬ টাকা থেকে ১৬ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন দামে শপিং ব্যাগগুলো দিচ্ছেন। বেশিরভাগ ক্রেতা স্বেচ্ছায় পরিবেশবান্ধব ব্যাগ কিনলেও কেউ কেউ বলছেন, শপিং ব্যাগের জন্য বাড়তি অর্থ দিতে রাজি নন তারা।
তিনি আরও বলেন, ‘আউটলেটে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের নীতিমালা বাস্তবায়নের পর আমরা বড় ধরনের কোনো সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি না। এখন আমাদের গ্রাহকদের ছোট একটি অংশকে পরিবেশবান্ধব শপিং ব্যাগ কেনার ব্যাপারে রাজি করাতে হবে।’
চাল, মাছ ও ডালসহ বেশকিছু পণ্যের সঙ্গে তারা বিনামূল্যে কাগজের ব্যাগ সরবরাহ করেন বলে জানান শাওন ইসলাম।
শেওড়াপাড়ার আগোরার আউটলেটে কেনাকাটা করতে আসা সাদাত রাসেল বলেন, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় পলিথিন ব্যাগ ২০-২৫ বছর আগেই নিষিদ্ধ করা উচিত ছিল।
এই বেসরকারি চাকরিজীবী আরও বলেন, ‘এটি একটি ভালো উদ্যোগ। আমরা শপিং ব্যাগের জন্য অর্থ দিতে রাজি। পরিবেশ রক্ষায় আমাদের নন-ডিসপোজেবল পলিথিন ও প্লাস্টিক পরিষ্কার করতে হবে। তাছাড়া এসব জিনিস স্বাস্থ্যসম্মত নয়।’
আগোরা আউটলেটের ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন জীবন বলেন, টাকা দিয়ে শপিং ব্যাগ কেনায় অভ্যস্ত হতে ক্রেতাদের আরও সময় লাগবে। সবক্ষেত্রে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হলে পরিবেশবান্ধব শপিং ব্যাগের মূল্য পরিশোধে জনগণের মধ্যে ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে উঠবে।
গত ৯ সেপ্টেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, ১ অক্টোবর থেকে দেশের সব সুপারশপে পলিথিন ও পলি-প্রোপিলিন শপিং ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হবে।
পরে গত মঙ্গলবার পরিবেশ উপদেষ্টা জানান, দেশে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করতে সরকার পলিথিনের উৎপাদন, মজুদ, পরিবহন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে।
আগামী ১ নভেম্বর থেকে দেশের সব কাঁচাবাজারে দেশব্যাপী পলিথিনবিরোধী অভিযান শুরু হবে।
২ মাস আগে