কেরু অ্যান্ড কোম্পানি
কেরু অ্যান্ড কোম্পানিতে ফের বোমাতঙ্ক
তিনদিনের ব্যবধানে চুয়াডাঙ্গার কেরু অ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এলাকায় আবারও বোমাসদৃশ বস্তু দেখা গেছে। এর ফলে নতুন করে সেখানে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে শুরু হওয়া তল্লাশির একপর্যায়ে দুপুরে কেরু কোম্পানির চিনিকল এলাকায় এই ককটেলসদৃশ বস্তুগুলো দেখা যায়। তারপর থেকে পুলিশ সদস্যরা পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছেন।
স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগের ক্যাডার জয়নাল আবেদিন নফরের কেরু মিলের অফিসের পেছনে ককটেলসদৃশ বস্তুগুলো রাখা হয়। পরে রাজশাহী র্যাব-৫ এর বোম ডিসপোজেল ইউনিটের একটি টিম ঘটনাস্থলে আসার পর সেগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়।
এর আগে, গত ১৩ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি কেরু অ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডে অফিস-সংলগ্ন স্থান থেকে ককটেল উদ্ধার করা হয়। রাজশাহী থেকে র্যাব-৫ এর বোম্ব ডিসপোজাল টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে ককটেল দুটি নিষ্ক্রিয় করেন। ওই ককটেলগুলো শক্তিশালী বলেও জানান তারা।
কেরু অ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের কর্মকর্তারা জানান, এ ধরনের ঘটনা নিয়মিত ঘটছে। ফলে আমরা চরম আতঙ্ক আর অনিশ্চিয়তার মধ্য রয়েছি।
অপরাধীদের শনাক্ত করে যত দ্রুত সম্ভব আইনের আওতায় আনা হোক বলে জানান তারা।
আরও পড়ুন: টেকনাফে ৬৯টি বোমা ও তৈরির সরঞ্জামসহ আটক ২
কেরু অ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান বলেন, ‘এলাকায় বারবার বোমাসদৃশ বস্তু উদ্ধারের বিষয়টি উদ্বেগজনক। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের তাদের আইনের আওতায় আনা হোক।’
দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শহীদ তিতুমীর বলেন, ‘লাল রঙের টেপ দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় রবিবার দুপুরে চারটি ককটেলসদৃশ বস্তু উদ্ধার করে যৌথবাহিনী। পরে রাজশাহী র্যাব-৫ এর বোম ডিসপোজেল ইউনিট এসে বোম সাদৃশ্য বস্তু নিষ্ক্রিয় করে।’
তিনি বলেন, ‘যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য এই বস্তুগুলো রাখা হচ্ছে।’
৩৫ দিন আগে
কেরু অ্যান্ড কোম্পানিতে পাওয়া বোমাটি ১০ ঘণ্টা পর নিষ্ক্রিয়
চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় কেরু অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড (চিনিকল) চত্বরে ঝোপের মধ্যে একটি সন্দেহজনক বোমাসদৃশ বস্তুটি আসলেই বোমা ছিল। কেরুজ ক্লাবের পাশে টানা ১০ ঘণ্টা পাহারা দেওয়ার পর বোমাটি উদ্ধার করে রাজশাহী র্যাব-৫ এর প্রশিক্ষিত দল। শেষপর্যন্ত বোমাটি নিষ্ক্রিয় করে তারা।
র্যাব-৫ এর প্রশিক্ষিত দল গতরাত (বৃহস্পতিবার) ৮টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরে আধুনিক পদ্ধতিতে বোমাটি নিষ্ক্রিয় করা হয়। বিকট শব্দে বোমাটি ফাটিয়ে নিষ্ক্রিয় করে দলটি।
জনবহুল এলাকায় শক্তিশালী বোমা পাওয়ার খবরে পুরো এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কেরু অ্যান্ড কোম্পানির কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী কোম্পানির জেনারেল অফিস ও ক্লাবের পাশের ঝোপের মধ্যে লাল টেপ মোড়ানো বোমাসদৃশ একটি বস্তু দেখতে পান। সন্দেহজনক বস্তুটি দেখে তারা দর্শনা থানা পুলিশ ও সেনাক্যাম্পে খবর দেন। খবর পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) জাকিয়া সুলতানা, দর্শনা থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) মুহম্মদ শহীদ তিতুমীর ও সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পরে সেনাবাহিনী চলে গেলেও পুলিশ ও কেরুর নিরাপত্তাকর্মীরা সেটি পাহারা দেয়। এরপর রাজশাহী র্যাব-৫ এর প্রশিক্ষিত দলটি এসে বোমাটি উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয় করে।
এ বিষয়ে দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শহীদ তিতুমীর বলেন, ‘রাজশাহী র্যাব-৫ এর বোম ডিসপোজাল টিম এসে বোমাটি উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয় করেছে। আমরা প্রকৃত ঘটনা কী এবং কে বা কারা বোমাটি রেখেছে—সে বিষয়ে তদন্ত করছি। শিগগিরই প্রকৃত ঘটনা উন্মোচন ও অপরাধী শনাক্ত করা হবে।’
কেরু অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আল ফারুক ওমর শরীফ গালিব ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হাসান বলেন, বোমাটি নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। আমরা প্রকৃত ঘটনা উন্মোচনে পুলিশকে সাহায্য করছি।
এদিকে, এ ঘটনা নিয়ে নানা গুজব ও জল্পনা শুরু হয়েছে কেরু চিনিকল এলাকায়। কেউ কেউ বলছেন, এই ঘটনা সদ্য স্থগিত হয়ে যাওয়া শ্রমিক ইউনিয়ন নির্বাচন নিয়ে পরিকল্পিতভাবে কোনো পক্ষ করেছে। এটি ষড়যন্ত্রের অংশ বলেও নাম প্রকাশ না করে অনেকে মন্তব্য করেছেন।
৩৭ দিন আগে
দর্শনার কেরু অ্যান্ড কোম্পানিতে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন আজ
দর্শনার কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকলের ২০২৪-২৫ আখ মাড়াই মৌসুমের আজ উদ্বোধন করা হবে। এ উপলক্ষে গত ৬ ডিসেম্বর বয়লারে স্লো-ফায়ারিং শেষ করা হয়েছে।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) বিকাল সাড়ে ৩টায় দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকলে ২০২৪-২০২৫ আখ মাড়াই মৌসুমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাশে চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান ড. লিপিকা ভদ্র উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন কেরু অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাব্বিক হাসান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল বন্ধের পরিকল্পনার প্রতিবাদে কেরু চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ
চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান জানান, চিনিকলের লোকসান কমাতে এবং লাভজনক করতে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আখ রোপণ ও কৃষকদের সুযোগ-সুবিধার দিকে বেশী নজর দেওয়া হচ্ছে। কৃষকদের আখচাষে উদ্বুদ্ধ করতে সভা-সমাবেশ অব্যাহত রয়েছে।
তিনি কৃষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আখ কাটার ক্ষেত্রে দা বা হাসুয়া ব্যবহার না করে কোদালের মাধ্যমে করলে বেশী ফলন ও মুনাফা অর্জন সম্ভব। তাই সকল কৃষককে কোদালের সাহায্যে গোড়া থেকে আখ কাটার পরামর্শ দেন।
চিনিকল সূত্রে জানা গেছে, বাংলাশে চিনি ও খাদ্য করপোরেশন ২০২৪-২৫ আখ মাড়াই মওসুমের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৬৫ মাড়াই দিবসে ৭০ হাজার মেট্রিকটন আখ মাড়াই করে ৪ হাজার ২০০ মেট্রিকটন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার গড় মাড়াই হার ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৫০ মেট্রিকটন। চিনি আহরণের গড় হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ শতাংশ। চলতি মাড়াই মৌসুমে ৫ হাজার ১০০ একর জমিতে আখচাষ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে কৃষকের জমিতে ৩ হাজার ৪৫৫ একর এবং কেরুর নিজস্ব জমিতে ১ হাজার ৬৪৫ একর আখ রয়েছে।
উল্লেখ্য, অর্থ সাশ্রয় ও চিনিকলের লোকসান কমাতে এবার সাশ্রয় নীতিতে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন সাদা-মাটাভাবে শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেরুর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: অনিয়মে জর্জরিত কেরু অ্যান্ড কোম্পানি
৯৩ দিন আগে
অনিয়মে জর্জরিত কেরু অ্যান্ড কোম্পানি
চুয়াডাঙ্গার দর্শনার ঐতিহ্যবাহী ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোম্পানি বিভিন্ন ব্রান্ডের ফরেন লিকারসহ (মদ) এ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন মালামাল চুরি, গায়েব ও নানা অনিয়মই যেন এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ নামমাত্র তদন্ত কমিটি করে দোষীদের সাময়িক শাস্তি দিলেও কিছুদিন পর তারা আবার সেই কারবার করে বহাল তবিয়তে থেকে যাচ্ছে। ফলে তৈরি হয়েছে সিন্ডিকেট।
বিগত সরকারের আমলে যা মাত্রা ছাড়িয়েছে। তবে গণঅভুত্থানের পর অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পরও থেমে নেই সেই সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম। আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে আবারও তারা সক্রিয়। এবার ডিস্টিলারি বিভাগের এক ইলেকট্রিসিয়ানের যন্ত্র রাখা বাক্সে (টুল বক্স) মিলেছে ৬ বোতল ফরেন লিকার ও দুটি খালি বোতল।
গত সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডিস্টিলারি এরিয়ার পাম্প হাউজে নিকট থেকে এগুলো উদ্ধার হয়। বিষয়টি প্রথমে ধামাচাপা থাকলেও পরে জানাজানি হয়ে যায়। এরপর নড়েচড়ে বসে কর্তৃপক্ষ। গেল জুন মাসেও ১৩ হাজার লিটার ডিএস স্পিরিট গায়েব হবার অভিযোগও এই ডিস্টিলারি বিভাগে উঠেছিল। সেসময় তদন্ত কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া সর্বশেষ গত মে মাসে ১০৪ জন শ্রমিক-কর্মচারীর স্থায়ী নিয়োগ নিয়েও অর্থ লেনদেনসহ নানা অভিযোগ উঠে। যা নিয়ে সাবেক এমডি মোশাররফ হোসেন ও শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নে সভাপতি সবুজ, সাধারণ সম্পাদক মাসুদসহ সাতজনের নামে মামলাও করেছেন এক ব্যক্তি।
আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রাণ গেল কেরুর কর্মচারীর
জানা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব চিনিকলগুলোর মধ্যে একমাত্র লাভজনক প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড। এটি একটি সমন্বিত কারখানা। এখানে চিনি, ভিনেগার, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ বিভিন্ন ধরনের স্পিরিট ও দেশি-বিদেশি মদ উৎপাদন করা হয়। কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড কারখানার মূল পণ্য চিনি হলেও কোম্পানিকে বাঁচিয়ে রেখেছে ডিস্টিলারি পণ্য মদ। সেই লাভের খাত কেটে মঝে মধ্যেই চুরির ঘটনা ঘটে কেরু অ্যান্ড কোম্পানিতে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে চোরাই মদসহ একের পর এক গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটলেও কেরু প্রশাসন চুরি ঠেকাতে অনেকটাই নির্বিকার বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সর্বশেষ গত ৩০ সেপ্টেম্বরও চুরির চেষ্টার সময় ধরা পড়ে ৬ বোতল ফরেন লিকার। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলছেন আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষেও বিপুল পরিমাণে মদ চুরির আশঙ্কা রয়েছে। কারণ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই উৎসব ঘিরে কেরুর ফরেন লিকারের (মদ) চাহিদা থাকে তুঙ্গে।
সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে এই কারাখানায় উৎপাদিত দেশি মদ ও বিলাতি মদসহ (ফরেন লিকার) একাধিক চালান ধরা পড়েছে। এমনকি বোতলভর্তি বিলাতি মদ, মদের বোতলের লেবেল ও খালি বোতল উদ্ধারের ঘটনাও ঘটেছে। গ্রেপ্তার হয়েছে কেরুর শ্রমিকও। শ্রমিক সংগঠনগুলোই মূলত বছরের পর বছর এ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া শেখ হাসিনার সরকারের সময় স্থানীয় এমপি আলী আজগর টগর ও তার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলী মুনছুর বাবুই এ সিন্ডিকেটগুলোকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে বেপরোয়া করে তোলে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক বলেন, কোম্পানি থেকে দেশের বিভিন্ন পণ্যাগারে দেশি মদ পরিবহনের সময় তা চুরি ও পাচারের অভিযোগে চালকসহ শ্রমিক গ্রেপ্তারের একাধিক ঘটনা যেমন আছে, তেমনি ডিস্টিলারি থেকে বিলাতি মদ চুরির ঘটনাও একেবারে কম নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও কয়েকজন বলেন, ডিস্টিলারি বিভাগের কর্মকর্তারা মিলে শ্রমিক ইউনিয়ন নেতাদের যোগসাজশে সুযোগ বুঝে শ্রমিকদের দিয়ে এই চুরির কাজটি সম্পন্ন করে। যেটা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই বেশি হয়েছে।
তারা আরও বলেন, এসমস্ত ঘটনায় ফরেন লিকার বিভাগের হিসাব বিভাগের এক কর্মকর্তা এখনো এ সমস্ত সিন্ডিকেট চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে তারা সেই কর্মকর্তার পুরো নাম বলতে রাজী হননি।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (ডিস্টিলারি) রাজিবুল হাসান বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি ডিস্টিলারি বিভাগের কারখানার ভিতরে মো. আব্বাস আলী নামের ইলেকট্রিক হেলপার তার টুল বক্সের ভিতর ৬টি ফরেন লিকারের বোতল নিয়ে চুরির চেষ্টা করছে। তৎক্ষণাত আমি ও আমাদের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইউসুফ আলী স্যারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সেই টুল বক্স ভেঙ্গে ৬টি ফরেন লিকার এবং দুটি খালি বোতল উদ্ধার করি। এরপর ওই কর্মীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল বন্ধের পরিকল্পনার প্রতিবাদে কেরু চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ
তিনি আরও বলেন, পুরো ডিস্টিলারি বিভাগ সিসিটিভি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা শতভাগ সতর্ক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এর আগে গত ৩১ আগস্ট কেরুর প্রধান ফটক থেকে ১০০ লিটার দেশি মদসহ ট্রাকচালক সাইফুল ইসলাম ও তার দুজন সহকারীকে দর্শনা থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়া গত ১৫ জুলাই দর্শনা থানা পুলিশ রামনগর থেকে ৪০ লিটার দেশি মদসহ বাদল শেখ নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দর্শনা পৌর এলাকার আনোয়ারপুরে অভিযান চালিয়ে কেরুর তৈরি ৭৫০ মিলিলিটার পরিমাপের সাত বোতল বিলাতি মদসহ দুজনকে আটক করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এছাড়া ২০২৩ সালের ২৩ অক্টোবর রাতে চুয়াডাঙ্গার লোকনাথপুরে ডিবির তল্লাশির মুখে পড়ে কেরুর একটি কাভার্ড ভ্যানে ১০ লিটার দেশি মদ পায় ডিবি। এই মদ ব্যারেল থেকে চুরি করা হয়েছিল বলেও সেসময় জানায় পুলিশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি চার বোতল বিলাতি মদসহ কেরুর পরিবহন বিভাগের চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক রকি হোসেন নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে ধরা পড়েন। সেযাত্রায় কিছুই হয়নি তার। এরপর গত ১৩ আগস্ট রাতে ডিস্টিলারির গুদামের ভেন্টিলেটর দিয়ে ১৩ নম্বর ভ্যাটে (মদ রক্ষণাগার) পাইপ লাগিয়ে দেশি মদ চুরির চেষ্টা করে নামমাত্র থানা পুলিশ করে তিনি তারপরও অদৃশ্য শক্তিতে পার পেয়ে যায়।
এই ব্যক্তি আরও বলেন, গত পনেরো বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এরকম চুরির ঘটনার শেষ নেই। কিছু ঘটনা সামনে এসেছে, তাই সবাই জেনেছে। কিন্তু অধিকাংশ চুরির ঘটনাই অধরা। আর এর পিছনে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সাবেক সাংসদ সদস্য আলী আজগর টগর এবং তার ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলী মুনছুর বাবুসহ আওয়ামী লীগের দলীয় লোকজনের মদদ থাকায় দিনের পর দিন রাষ্ট্রীয় সম্পদ তছরুপ করেছে এই সংঘবদ্ধ চোরচক্র।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, কোম্পানি থেকে পণ্যাগারগুলোতে দেশি মদ পাঠানোর সময় ব্যারেলের মুখে যে নিরাপত্তা সিল লাগানো হয়, গাড়িতে পরিবহনের সময় চালক ও সহকারীরা সেটি খুলে মদ বের করে নেন। এরপর আগে থেকে সংগ্রহ করা সিল লাগিয়ে দেন। মদ চুরি বন্ধে পণ্যাগার থেকে ফেরা পরিবহন কোম্পানির পক্ষ থেকে এর আগে তল্লাশি চালানো এবং চোরাই মদ উদ্ধার করা হলেও নানামুখী চাপে তা বন্ধ হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসানের সঙ্গে দেখা করতে তার কার্যালয়ে গেলে তিনি ছুটিতে থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরে ডিস্টিলারি বিভাগের কারখানার ভিতরে মো. আব্বাস আলী নামের ইলেকট্রিক হেলপারের টুলবক্সে ৬ বোতল ফরেন লিকার পাওয়া গেছে। আমি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যেয়ে দেখি তার টুল বক্স ভেঙে এগুলো উদ্ধার করি। আমরা তাৎক্ষনিকভাবে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করি। পরবর্তীতে অভিযোগ দায়ের করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তবে অন্যান্য কোনো বিষয়ে এ কর্মকর্তা বক্তব্য দেননি।
অভিযোগের বিষয় অভিযুক্ত আব্বাস আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এমনকি মোবাইল ফোনেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া আব্বাস আলীকে অফিসেও পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত কেরু অ্যান্ড কম্পানি চিনি উৎপাদন ছাড়াও রয়েছে ডিস্টিলারি, কৃষি খামার, পরীক্ষামূলক খামার ও জৈব সার। আর এখানে ৯টি ব্র্যান্ডের বিদেশি মদ উৎপাদন করা হয়। সেগুলো হলো ইয়েলো লেবেল মল্টেড হুইস্কি, গোল্ড রিবন জিন, ফাইন ব্র্যান্ডি, চেরি ব্র্যান্ডি, ইম্পেরিয়াল হুইস্কি, অরেঞ্জ কুরাকাও, জরিনা ভদকা, রোসা রাম ও ওল্ড রাম।
আরও পড়ুন: হ্যান্ড স্যানিটাইজারের পর বাজারে এলো কেরুর ভিনেগার
১৭০ দিন আগে