বাংলাদেশ থেকে জার্মান অপরচুনিটি কার্ড আবেদন পদ্ধতি
জার্মান অপরচুনিটি কার্ড: বাংলাদেশ থেকে আবেদন পদ্ধতি ও বিস্তারিত
ইউরোপের যে রাষ্ট্রগুলো কর্মজীবন ও অবকাশ যাপনের মধ্যে ভারসাম্য রেখে চলেছে, সেগুলোর মধ্যে প্রথম সারির দেশ জার্মানি। দেশটির কর্মজীবীদের ন্যূনতম পারিশ্রমিক হার যে কোনো ইউরোপীয় দেশের তুলনায় যথেষ্ট বেশি। শেনজেনভুক্ত দেশটির কর্মচারীদের সাপ্তাহিক গড় কর্মঘণ্টার সংখ্যা গোটা ইউরোপের গড় কর্মঘণ্টার থেকে কম। সঙ্গত কারণেই ইইউ (ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন) সদস্য রাষ্ট্রটিতে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য রয়েছে অপার সম্ভাবনা। সম্প্রতি তাদের অপরচুনিটি কার্ডের প্রণয়ন এই সুযোগকে একটি নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রূপ দিয়েছে। চলুন, জার্মান অপরচুনিটি কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা, সুবিধা ও আবেদন পদ্ধতি বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
জার্মান অপরচুনিটি কার্ড কি
ইইউ, ইইএ (ইউরোপীয়ান ইকোনমিক এরিয়া) কিংবা সুইজারল্যান্ডের বাইরের দেশগুলোর দক্ষ কর্মীদের জন্য চাকরির উদ্দেশ্যে জার্মানিতে প্রবেশের অনুমতি হলো অপরচুনিটি কার্ড। এটি মূলত একটি রেসিডেন্ট পার্মিট, যার মেয়াদ থাকে সর্বোচ্চ ১ বছর এবং এই সময়ের মধ্যেই কার্ডধারীকে চাকরির ব্যবস্থা করতে হয়। স্বভাবতই কার্ডটি সংগ্রহের জন্য প্রার্থীকে সংশ্লিষ্ট কর্মসংস্থানের যোগ্যতা স্বরূপ যথাযথ প্রমাণ পেশ করতে হয়।
আরো পড়ুন: কীভাবে আইইএলটিএস পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করবেন?
জার্মান অপরচুনিটি কার্ড কাদের জন্য
ইইউ, ইইএ বা সুইজারল্যান্ডের বাইরের দেশগুলোর প্রধানত দুই ধরনের নাগরিকদের এই কার্ড সরবরাহ করা হয়।
১/ সম্পূর্ণ জার্মানি স্বীকৃত পেশাগত বা শিক্ষাগত যোগ্যতার অধিকারী:
যাদের পেশাগত দক্ষতার প্রমাণ করতে পারে এমন জার্মানি স্বীকৃত কোনো শিক্ষাগত বা পেশাগত সনদ রয়েছে। এই যোগ্যতা অর্জন নিজ দেশে জার্মানি স্বীকৃত কোনো প্রতিষ্ঠান অথবা জার্মানিতে অবস্থিত কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে হতে পারে
২/ যারা এখনও নির্দিষ্ট কোনো দক্ষতায় প্রতিষ্ঠিত কর্মী নন, তবে নিম্নোক্ত শর্তগুলো পূরণ করেছেন-
· জার্মানির কোনো বিশ্ববিদ্যালয় অথবা নিজ দেশে জার্মানি স্বীকৃত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একাডেমিক ডিগ্রি অর্জন
· জার্মানির কোনো প্রতিষ্ঠান অথবা নিজ দেশে জার্মানি স্বীকৃত কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে ২ বছরের ভোকেশনাল ট্রেনিং নেওয়া
· কমন ইউরোপিয়ান ফ্রেমওয়ার্ক অব রেফারেন্স ফর ল্যাঙ্গুয়েজেস বা সিইএফআর অনুসারে কমপক্ষে লেভেল-এ১ জার্মান ভাষা দক্ষতা বা কমপক্ষে লেভেল-বি২ ইংরেজি ভাষা দক্ষতা। আইইএলটিএস স্কোর ৫ দশমিক ৫ থেকে ৬ দশমিক ৫, আর টোফেল আইবিটি-তে ৭২ থেকে ৯৪ সিইএফআর লেভেল বি২ এর সমতুল্য।
আরো পড়ুন: তুলনামূলক কম দামে বিমানের টিকিট কেনার কৌশল
জার্মান অপরচুনিটি কার্ডের পয়েন্ট সিস্টেম
২য় ক্যাটাগরির শর্তগুলো সুক্ষ্মভাবে যাচাইয়ের জন্য সেগুলোতে নির্দিষ্ট কিছু পয়েন্ট আরোপ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে যারা ন্যূনতম ছয় পয়েন্ট অর্জন করতে পারে তাদের কার্ড পাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। মানদণ্ডগুলোতে পয়েন্ট বণ্টন পদ্ধতি নিম্নরূপ-
যোগ্যতার সমতা: (৪ পয়েন্ট)
সম্পন্নকৃত ডিগ্রি বা ট্রেনিং আংশিকভাবে সমতুল্য প্রমাণিত হলে ৪ পয়েন্ট যুক্ত হবে। যে দক্ষতাগুলো চূড়ান্তভাবে অনুশীলনের জন্য লাইসেন্স নিতে হয়, সেগুলোর লাইসেন্স হওয়ার আগেও ৪ পয়েন্ট পাওয়া যাবে। তবে রেসিডেন্ট পার্মিটের আগে অবশ্যই লাইসেন্স পরীক্ষা উত্তীর্ণ হতে হবে।
সর্বাধিক চাহিদা সম্পন্ন পেশার যোগ্যতা: (১ পয়েন্ট)
জার্মানির চাকরির বাজারে যে ডিগ্রি বা ভোকেশনাল ট্রেনিংগুলোর সর্বাধিক চাহিদা রয়েছে সেগুলোর জন্য নির্ধারিত ১ পয়েন্ট। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- মাইনিং ম্যানেজার, হেল্থ সার্ভিস ম্যানেজার, কেমিস্ট, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, গ্রাফিক এবং মাল্টিমিডিয়া ডিজাইনার এবং সফটওয়্যার ডেভেলপার।
জার্মানিতে সর্বাধিক চাহিদা সম্পন্ন পেশাগুলোর পূর্ণ তালিকা এই লিংকে পাওয়া যাবে-
https://www.make-it-in-germany.com/fileadmin/1_Rebrush_2022/a_Fachkraefte/PDF-Dateien/3_Visum_u_Aufenthalt/2024_Mangelberufe_EN.pdf
পেশাগত অভিজ্ঞতা: (২ থেকে ৩ পয়েন্ট)
স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর তার প্রাসঙ্গিক পেশায় বিগত সর্বোচ্চ ৫ বছরের মধ্যে কমপক্ষে ২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে প্রার্থী ২ পয়েন্ট পাবেন। আর বিগত সর্বোচ্চ ৭ বছরের মধ্যে কমপক্ষে ৫ বছরের অভিজ্ঞতার জন্য দেওয়া হবে ৩ পয়েন্ট পাবেন।
ভাষা দক্ষতা: (১ থেকে ৪ পয়েন্ট)
জার্মান ভাষা পারদর্শিতার জন্য সিইএফআর অনুযায়ী এ২ লেভেলের জন্য রয়েছে ১ পয়েন্ট। লেভেল বি১-এ ২ এবং লেভেল বি২ বা তার উপরের স্তরের জন্য নির্ধারিত ৩ পয়েন্ট। এর সঙ্গে অতিরিক্ত ১ পয়েন্ট যোগ হবে যদি ইংরেজি ভাষা দক্ষতা লেভেল সি১ বা তার উপরে থাকে, অথবা প্রার্থী যদি নেটিভ স্পিকার হন।
বয়স: (১ থেকে ২ পয়েন্ট)
অনুর্ধ্ব ৩৫ বছর বয়সি প্রার্থীদের জন্য থাকবে ২ পয়েন্ট। ৩৫ থেকে ৪০ বছর বয়সিরা পাবেন ১ পয়েন্ট।
জার্মানিতে বসবাসের রেকর্ড: (১ পয়েন্ট)
বিগত সর্বোচ্চ ৫ বছরের মধ্যে অন্তত ৬ মাস ধরে জার্মানিতে বৈধভাবে বসবাস করলে তার জন্য ১ পয়েন্ট যুক্ত হবে। এই বসবাস বেড়ানো, অধ্যয়ন, কিংবা কাজ যে কোনো উদ্দেশ্যে হতে পারে।
স্বামী বা স্ত্রীর দক্ষ কর্মী হওয়া: (১ পয়েন্ট)
আবেদনকারী দম্পতির যে কোনো একজন অপরচুনিটি কার্ডের শর্ত পূরণ করলে অন্যজন ১ পয়েন্ট পাবেন।
চূড়ান্ত ভাবে আবেদন প্রস্তুতি শুরুর পূর্বে আবেদনের যোগ্যতা নিচের লিংকে যেয়ে যাচাই করে নেওয়া যেতে পারে-
https://www.make-it-in-germany.com/en/visa-residence/self-check-opportunity-card#c52628
আরো পড়ুন: জার্মানিতে স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়
জার্মান অপরচুনিটি কার্ডের সুবিধাগুলো
এই কার্ডের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে সর্বোচ্চ ১ বছরের জন্য জার্মানিতে কাজ খোঁজার অনুমতি দেওয়া হয়। ১ বছর পর জার্মানিতে থাকা অবস্থায় কার্ডের মেয়াদ ২ বছর পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য আবেদন করা যায়। এখানে কার্ডধারীরা চাকরি বা স্ব-নিযুক্ত হওয়ার জন্য চেষ্টা করতে পারেন।
এই পার্মিটের মাধ্যমে সপ্তাহে সর্বমোট ২০ ঘণ্টা এক বা একাধিক খণ্ডকালীন চাকরি করা যায়। চাকরি অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে কার্ডধারীরা প্রতি কোম্পানিতে সর্বোচ্চ ২ সপ্তাহের জন্য জব ট্রায়াল করতে পারবেন।
১ মাস আগে