জার্মান আউসবিল্ডুং
জার্মানির আউসবিল্ডুং: যোগ্যতা, সুযোগ-সুবিধা ও আবেদন পদ্ধতি
উদ্ভাবন এবং স্থায়িত্বের দিক থেকে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) প্রসিদ্ধ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অন্যতম জার্মানি। পরিবেশবান্ধব, তথ্য-প্রযুক্তি এবং উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করণে ক্রমশ এগিয়ে চলেছে শেনজেন ভুক্ত দেশটি। ফলে বিস্তৃত পরিসরে চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে দক্ষ জনগোষ্ঠীর। এখানে যোগ্যতার ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে শাস্ত্রীয় জ্ঞান এবং হাতে-কলমে কাজের অভিজ্ঞতাকে। শুধু তাই নয়, এই কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা রয়েছে দেশটিতে। তেমনি একটি ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার নাম আউসবিল্ডুং। এই সুযোগ গ্রহণে আন্তর্জাতিক চাকরিপ্রার্থীদের সাদরে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে ইউরোপীয় দেশটি। চলুন, আউসবিল্ডুং-এ আবেদনের যোগ্যতা, সুযোগ-সুবিধা, আবেদন ও ভিসা প্রক্রিয়ার ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
জার্মানির আউসবিল্ডুং কী
তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক জ্ঞান সমৃদ্ধ জার্মানির ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ কর্মসূচির নাম আউসবিল্ডুং। শিক্ষা ব্যবস্থায় তরুণ শিক্ষককেরা একই সঙ্গে স্কুলের ক্লাসরুম পাঠ্যক্রম এবং কর্পোরেট পরিবেশ দুই অভিজ্ঞতারই সম্মুখীন হন। এর নেপথ্যে যৌথভাবে কাজ করে দেশটির সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো।
হাতে-কলমে এই প্রশিক্ষণের সময়কাল সাধারণত কমপক্ষে ২ থেকে সর্বোচ্চ ৪ বছর পর্যন্ত। প্রার্থীরা নিজেদের দক্ষতা ও পছন্দ অনুযায়ী নির্দিষ্ট বিষয় নির্বাচন করতে পারেন। শুধুমাত্র জার্মান ভাষায় পাঠদান করা এই প্রোগ্রামে বিদেশি নাগরিকরা জার্মানদের মতো একই সুযোগ-সুবিধাসহ একটি নির্দিষ্ট জার্মান কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। এই চুক্তির জন্য বিদেশি প্রার্থীরা জার্মানির বাইরে থেকে ট্রেনিং কোম্পানি ঠিক করে আসতে পারেন অথবা জার্মানিতে এসেও কোম্পানির খোঁজ করতে পারেন।
আরো পড়ুন: জার্মান অপরচুনিটি কার্ড: বাংলাদেশ থেকে আবেদন পদ্ধতি ও বিস্তারিত
জার্মানির আউসবিল্ডুং কাদের জন্য
বয়স, একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড এবং দেশ নির্বিশেষে যেকোনো ব্যক্তি আউসবিল্ডুং-এ অংশ নিতে পারেন। তবে যারা জার্মানিতে গিয়ে ট্রেনিংয়ের জন্য কোম্পানি খুঁজতে চান তাদের অবশ্যই অনূর্ধ্ব ৩৫ বছর বয়সি হতে হবে। জার্মানির বাইরে থেকে যারা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে আসবেন, তাদের ক্ষেত্রে বয়সের এই বাধ্যবাধকতা নেই।
তবে এই প্রোগ্রামে নিবন্ধিত হওয়ার প্রধান শর্ত হচ্ছে জার্মান ভাষা দক্ষতা। সিইএফআর (কমন ইউরোপীয়ান ফ্রেমওয়ার্ক অব রেফারেন্স) অনুযায়ী ন্যূনতম যোগ্যতা লেভেল বি১।
দ্বিতীয়ত, যারা একাডেমিক শিক্ষাক্ষেত্রে কমপক্ষে ৯ বা ১০ বছর অতিবাহিত করেছে, তারা এই প্রোগ্রামে নিবন্ধিত হতে পারবে। এক্ষেত্রে তাদের সনদপত্র বা মার্কশিটগুলো অবশ্যই জার্মান একাডেমিক যোগ্যতার সমতূল্য হতে হবে। এর জন্য জেডএবি (সেন্ট্রাল অফিস ফর ফরেন এডুকেশন) (https://zab.kmk.org/en/app/zeugnisbewertung) থেকে শংসাপত্রগুলোর মূল্যায়ন বা তুলনামূলক বিবৃতি নিতে হবে।
আরো পড়ুন: কীভাবে আইইএলটিএস পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করবেন?
জার্মানির আউসবিল্ডুংয়ের সুবিধা
এই দ্বৈত শিক্ষাপদ্ধতিতে প্রশিক্ষণার্থীরা নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান থেকে মাসিক ভাতা পান। এর পরিমাণ সাধারণত প্রতি মাসে ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ ইউরো বা ১ লাখ ৫ হাজার ৪১৬ থেকে ১ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫ টাকার (১ ইউরো = ১৩১ দশমিক ৭৭ টাকা) মতো। এর কমবেশি হওয়াটা নির্ভর করে মূলত নিয়োগকর্তা, কোম্পানির শহর এবং প্রশিক্ষণের বিষয়ের ওপর। নিয়োগকর্তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রার্থীদের বাসা ভাড়া বাবদ আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে।
জার্মানির বাইরে থেকে কোম্পানি ঠিক করা অথবা জার্মানিতে পৌঁছে ট্রেনিং কোম্পানি খোঁজা; উভয় ক্ষেত্রে প্রতি সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত পৃথক খণ্ডকালীন চাকরি করার সুযোগ রয়েছে। এমনকি সর্বোচ্চ ২ সপ্তাহ পর্যন্ত ট্রায়াল জবও করা যাবে।
আর কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে আসার পর পুরো ট্রেনিং প্রোগ্রামের সময়কালের জন্য দেওয়া হবে রেসিডেন্ট পারমিট।
এর বাইরে অতিরিক্ত উপযোগিতা হিসেবে রয়েছে ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ শেষে চাকরির সম্ভাবনা। প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করার পর সংশ্লিষ্ট কোর্সের ওপর ভিত্তি প্রায় ২ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ ইউরোর (৩ লাখ ১৬ হাজার ২৪৯ থেকে ৪ লাখ ৬১ হাজার ১৯৭ টাকা) মাসিক বেতনের কাজ পাওয়া যেতে পারে। এগুলোর মধ্যে তালিকার শীর্ষে রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা, বিশেষত নার্সিং পেশা। তথ্য ও প্রযুক্তির ক্রমশ অগ্রসর হওয়ায় উচ্চ চাহিদা রয়েছে দক্ষ আইটি (ইনফরমেশন টেকনোলজি) পেশাদারদের। সবচেয়ে আকর্ষণীয় পেশা হচ্ছে নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর এবং সফ্টওয়্যার ডেভেলপার। এছাড়াও যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে ইলেক্ট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল এবং অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জার্মানির নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাওয়ায় এর স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং বিকাশের জন্য শত শত দক্ষ কর্মীর চাহিদা বাড়ছে। এই জনগোষ্ঠীর একটা বিরাট অংশের যোগান দাতা হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে এই আউসবিল্ডুং।
তাছাড়া প্রোগ্রামের পরীক্ষাগুলোতে সাফল্যের সঙ্গে কৃতকার্য হওয়ায় পর প্রশিক্ষণের কোম্পানিতেই থাকছে কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ। এমনকি উচ্চশিক্ষায় আগ্রহীরা এই ফলাফল নিয়ে জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি হতে পারবেন।
সর্বসাকূল্যে, এই কার্যক্রমে অংশ গ্রহণের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদে একটি উচ্চ মান সম্পন্ন জীবনযাত্রার দেশে বৈধভাবে বসবাসের সম্ভাবনা।
আরো পড়ুন: তুলনামূলক কম দামে বিমানের টিকিট কেনার কৌশল
জার্মানির আউসবিল্ডুং-এ আবেদন পদ্ধতি
এই ভোকেশনাল প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশি নাগরিকরা প্রধাণত দুই ভাবে আবেদন করতে পারেন।
এক, বাংলাদেশে থেকেই আউসবিল্ডুংয়ের জন্য জার্মান কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়া। অতঃপর ট্রেনিং-এ অংশগ্রহণের জন্য এন্ট্রি ভিসায় আবেদন করা।
দুই, জার্মানিতে পৌঁছে ভোকেশনাল ট্রেনিং কোম্পানি খোঁজার জন্য নির্ধারিত এন্ট্রি ভিসায় আবেদন করা।
বাংলাদেশ থেকে আউসবিল্ডুংয়ের জন্য জার্মান কোম্পানি খোঁজার উপায়
জার্মানিতে আন্তর্জাতিক চাকরিপ্রার্থীদের জন্য বিভিন্ন ধরণের জব পোর্টাল রয়েছে। এগুলোতে প্রশিক্ষণের জন্য আবেদন করা যায়। এই সাইটগুলোর অধিকাংশই জার্মান ভাষার।
যেমন-
• সরকারি জব প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে রয়েছে-
• ফেডারেল এম্প্লয়মেন্ট এজেন্সির জব সাইট (https://www.arbeitsagentur.de/jobsuche/)
• সিভিল সার্ভিসের জন্য,
• https://www.service.bund.de/Content/DE/Stellen/Suche/Formular.html
• https://karriere.bund.de/
• সাধারণ জব সাইট:
(https://www.make-it-in-germany.com/en/working-in-germany/job-listings)
• আঞ্চলিক সরকারি পোর্টাল:
(https://www.thaff-thueringen.de/thueringer-stellenboerse/stellenboerse)
বেসরকারি জব পোর্টাল
স্টেপস্টোন (https://www.stepstone.de/en/)
• মনস্টার (Monster.de)
• এছাড়াও সরাসরি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যেয়েও আবেদন করা যেতে পারে। যেমন-
• জার্মান রেলওয়ে কোম্পানি ডয়েচে বাহ্ন:
(https://jobs.deutschebahngroup.careers/en_US/jobsGlobal/SearchJobs)
• আলডি নর্থ অ্যান্ড সাউথ:
• https://www.aldi-nord.de/karriere/
• https://karriere.aldi-sued.de/
• রিটেইল টেইন কোম্পানি লিড্ল (https://jobs.lidl.de/)
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের মধ্যে রয়েছে-
• ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন:
(https://www.awo-mittelrhein.de/en/awo/careers-portal/vacancies-and-job-offers/)
• ডায়াকোনি: (https://www.diakonie.at/jobplattform/offene-stellen)
এছাড়াও এই সাইটগুলোর নিউজলেটারে সাবস্ক্রাইব করে রাখা যেতে পারে। এতে করে বিভিন্ন সময়ে স্বনামধন্য কোম্পানিগুলোর নতুন জব পোস্টগুলো সম্পর্কে জানা যাবে।
আরো পড়ুন: জার্মানিতে স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়
আউসবিল্ডুং-এর জন্য আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
• ইউরোপাস ফর্ম্যাট (https://europass.europa.eu/en/create-europass-cv) অনুযায়ী টেবিল আকারে সিভি (একাডেমিক শিক্ষাগ্রহণ বা চাকরি করার সময়গুলোতে মাঝে দীর্ঘকালীন কোনো বিরতি থাকা যাবে না। যদি এক মাসের বেশি সময় ধরে চাকরি না করা হয়, তাহলে তার স্বপক্ষে উপযুক্ত কারণ উল্লেখ করতে হবে।)
• এক পৃষ্ঠার কভার লেটার বা মোটিভেশন লেটার: যোগাযোগ ও দক্ষতার তথ্যসহ প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা সংক্ষেপে উল্লেখ করতে হবে
• পূর্ববর্তী কর্মসংস্থান থেকে কাজের রেফারেন্স বা পূর্ববর্তী নিয়োগকর্তাদের নিকট থেকে সুপারিশের চিঠি কিংবা নিদেনপক্ষে পূর্ববর্তী নিয়োগকর্তাদের যোগাযোগের তথ্য (কোম্পানির নাম, ফোন নাম্বার, ই-মেইল ঠিকানা ও প্রার্থীর পদবি)
• মাধ্যমিক পরীক্ষার সার্টিফিকেট এবং মার্কশিট: সংযুক্তিতে থাকবে জেডএবি থেকে মূল্যায়ন বা তুলনামূলক বিবৃতি (এই নথিপত্র যদি বাংলা ভাষায় থাকে তবে সেগুলোর জার্মান বা ইংরেজি যেকোনো ভাষায় প্রত্যয়িত অনূদিত সংস্করণ জমা দিতে হবে)
• জার্মান ভাষা দক্ষতার প্রমাণ (সিইএফআর অনুযায়ী ন্যূনতম বি১)
• সম্পূর্ণ পূরণকৃত তথ্য সুরক্ষা ঘোষণা ফর্ম
আরো পড়ুন: ডুওলিঙ্গো ইংলিশ টেস্ট কী? কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
নিয়োগ প্রক্রিয়ার সময়কাল
আবেদনসহ যাবতীয় নথি পাঠানোর পর অন্তত এক সপ্তাহের মধ্যে কোম্পানির পক্ষ থেকে ই-মেইলের মাধ্যমে অনলাইন সাক্ষাৎকারের দিনক্ষণ জানানো হবে।
আবেদনের কাগজপত্র যাচাই এবং সাক্ষাৎকারের পর চূড়ান্ত নিয়োগের সিদ্ধান্ত আসতে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। এর মাঝে ১ থেকে ২ সপ্তাহ অপেক্ষা করে আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা বা পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে ই-মেইল ফলোআপ করা যেতে পারে।
আউসবিল্ডুং-এর জন্য ভিসার আবেদন
দীর্ঘকালীন এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের জন্য জার্মানির যে ভিসাটি পেতে হবে তা হচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদী টাইপ-ডি বা ন্যাশনাল ভিসা। ট্রেনিংয়ের জন্য কোম্পানি ঠিক করা হোক বা না হোক; উভয় ক্ষেত্রেই এই ভিসায় আবেদন করতে হবে। এই এন্ট্রি ভিসার মেয়াদ ৯০ দিন থেকে সর্বোচ্চ ১ বছর পর্যন্ত থাকে। তাই জার্মানিতে পৌঁছে কোম্পানি খোঁজার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৯ মাস পাওয়া যাবে।
জার্মানির আবেদন পোর্টাল ভিআইডিইএক্সয়ের টাইপ-ডি ভিসার আবেদন ফর্মের লিঙ্ক: https://videx-national.diplo.de/videx। এটি পূরণের পর তা প্রিন্ট করে আবেদনকারী তা নিজে সই করবেন।
আরো পড়ুন: জার্মানিতে বিনামূল্যে স্নাতকোত্তর পড়ার জন্য কিভাবে আবেদন করবেন
আউসবিল্ডুং ভিসার আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
• আবেদনকারীর সইকৃত এবং সম্পূর্ণরূপে পূরণকৃত আবেদন ফর্ম
• জার্মানিতে পৌঁছার দিন থেকে পরবর্তী কমপক্ষে ১২ মাসের মেয়াদ সম্পন্ন বৈধ পাসপোর্ট: বিগত ১০ বছরের মধ্যে ইস্যুকৃত হতে হবে এবং তাতে ভিসার সীল যুক্ত করার জন্য কমপক্ষে ২টি খালি পৃষ্ঠা থাকতে হবে)
• সদ্য তোলা ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি (বিগত ৬ মাসের বেশি পুরাতন হওয়া যাবে না)
• প্রদানকৃত তথ্যের সুরক্ষার্থে সই করা সম্মতির ঘোষণাপত্র:
(https://dhaka.diplo.de/bd-en/service/visa-einreise/-/2669542)
• স্বাস্থ্য বিমা: (ভিসা সংগ্রহের সময় এই প্রমাণ দেখাতে হবে) প্রশিক্ষণের সম্পূর্ণ সময়কালের জন্য ন্যূনতম ৩০ হাজার ইউরো (৩৯ লাখ ৫৩ হাজার ১১৭ টাকা)
• অথবা, একটি সরকারি জার্মান স্বাস্থ্য বিমার প্রমাণ: জার্মান স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর পক্ষ থেকে একটি চিঠি এবং সঙ্গে প্রথম ৩ সপ্তাহের একটি স্বাস্থ্য ও ভ্রমণ বিমা
• পূর্ণ ঠিকানাসহ জার্মানিতে বাসস্থানের প্রমাণ: (কোনো পরিবারের সঙ্গে থাকা হলে তাদের পক্ষ থেকে লিখিত আমন্ত্রণপত্র, অথবা হোটেল বুকিং)
আরো পড়ুন: বাংলাদেশে থেকে জার্মান ভাষার আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেট পাওয়ার উপায়
ভোকেশনাল ট্রেনিং-এ যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত যে কাগজগুলো প্রয়োজন হবে
• জার্মানিতে একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অধীনে প্রশিক্ষণের চুক্তিপত্র
• আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণ: প্রতি মাসে কমপক্ষে ৯০৩ ইউরো (১ লাখ ১৮ হাজার ৯৮৯ টাকা)। অন্তত প্রথম বছরের তহবিলের (১০ হাজার ৮৩৬ ইউরো বা ১৪ লাখ ২৭ হাজার ৮৬৬ টাকা) ব্লক অ্যাকাউন্ট। কোম্পানিরে পক্ষ থেকে প্রাপ্ত ভাতা প্রমাণ হিসেবে দেখানো যাবে। তবে তা অপর্যাপ্ত হলে বাকি অর্থ ব্লক অ্যাকাউন্টে দেখাতে হবে।
ভোকেশনাল ট্রেনিং কোম্পানি খোঁজার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত যে নথি সংযুক্ত করতে হবে
• মাধ্যমিক পরীক্ষার সার্টিফিকেট এবং মার্কশিট: শংসাপত্র জার্মানি মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থা কর্তৃক স্বীকৃত কিনা তার জন্য জেডএবি থেকে তুলনামূলক বিবৃতি
• বয়সসীমা: সর্বোচ্চ ৩৫ বছর
• জার্মানিতে জীবনযাত্রার খরচ ও রিটার্ন ফ্লাইটের পর্যাপ্ত তহবিল: জীবনযাত্রার খরচ বাবদ মাসে কমপক্ষে ১ হাজার ২৭ ইউরো (১ লাখ ৩৫ হাজার ৩২৮ টাকা) করে অন্তত প্রথম বছরের জন্য ১২ হাজার ৩২৪ ইউরো (১৬ লাখ ২৩ হাজার ৯৪১ টাকা)
আরো পড়ুন: ইতালিতে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা, স্কলারশিপ ও আনুষঙ্গিক খরচ
অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং এবং ইন্টারভিউ
জার্মান দূতাবাসের ওয়েবসাইটে (https://dhaka.diplo.de/bd-en/service/kontakt-formular) যোগাযোগের মাধ্যমে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে।
এখানে প্রথম ই-মেইলের ফিরতি ই-মেইল হিসেবে সব নথি জমা দিতে বলা হবে। অতঃপর পরবর্তীতে আরও একটি ই-মেইলের মাধ্যমে সাক্ষাৎকারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়া হবে। অ্যাপয়েন্টমেন্টের দিন ভিসার সবগুলো কাগজপত্রের হার্ড কপি সাথে নিয়ে যেতে হবে।
জার্মান দূতাবাসের ঠিকানা: ফেডারেল রিপাবলিক অব জার্মানির দূতাবাস, ১১ মাদানী এভিনিউ, বারিধারা ডিপ্লোম্যাটিক ইনক্লেভ, ঢাকা-১২১২।
ভিসা ফি এবং ভিসাপ্রাপ্তির সময়
আউসবিল্ডুংয়ের জন্য ভিসা প্রক্রিয়াকরণ খরচ ৭৫ ইউরো (৯ হাজার ৮৮৩ টাকা)। মূলত দেশ থেকে জার্মান কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলে এই ধরণের এন্ট্রি ভিসার কাজ খুব দ্রুত হয়ে যায়। সাধারণত এক সপ্তাহ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ দিন লাগতে পারে।
আরো পড়ুন: থাইল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, পড়াশোনার খরচ, ও স্কলারশিপসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
জার্মানিতে পৌঁছে চূড়ান্ত রেসিডেন্ট পারমিট সংগ্রহ
এন্ট্রি ভিসা নিয়ে জার্মানি পৌঁছে প্রথম কাজ হচ্ছে রেসিডেন্স রেজিস্ট্রেশন অফিসে যেয়ে জার্মানিতে প্রার্থীর বাড়ির ঠিকানা নিবন্ধন করা। তারপর স্থানীয় ভিসা অফিসে রেসিডেন্ট পারমিটের আবেদনের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। এটিই সেই পারমিট, যার মাধ্যমে আউসবিল্ডুংয়ের পুরো সময়টাতে জার্মানিতে থাকার অনুমতি পাওয়া যাবে।
ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের সঙ্গে আগে থেকে চুক্তি না করে জার্মানি এলে বাড়ির ঠিকানা নিবন্ধনের পরপরই শুরু করে দিতে হবে কোম্পানি খোঁজা। কেননা রেসিডেন্ট পারমিট আবেদনের প্রথম শর্তই হচ্ছে আউসবিল্ডুংয়ের চুক্তিপত্র।
এন্ট্রি ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই রেসিডেন্ট পারমিট নেওয়া অপরিহার্য। এই পারমিট সংগ্রহের জন্য খরচ হতে পারে ১০০ ইউরো (১৩ হাজার ১৭৭ টাকা)।
শেষাংশ
জার্মানির আউসবিল্ডুং বা ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা তত্ত্বীয় জ্ঞান ও হাতে-কলমে শিক্ষার এক কার্যকর সমন্বয়। বাংলাদেশের দক্ষ কর্মীদের মানোন্নয়নের জন্য তো বটেই, অদক্ষ নাগরিকদের জন্যও এটি এক যুগান্তকারি সম্ভাবনা। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি পারিশ্রমিক লাভের এই সুযোগ অর্জন করার প্রথম শর্ত হলো জার্মান ভাষা শিক্ষা। বাকি থাকে জার্মান কোম্পানির কাছ থেকে প্রশিক্ষণের চুক্তিপত্র গ্রহণ। বাংলাদেশে থাকা অবস্থাতেই এটি সম্ভব হলে ভিসাসহ পুরো প্রক্রিয়া আরও সহজ হয়ে যায়। বিশেষ করে জার্মানিতে পৌঁছে কোম্পানি খোঁজার বিড়ম্বনা থাকে না।
আরো পড়ুন: সুইজারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা, স্কলারশিপ ও আনুষঙ্গিক খরচ
১ মাস আগে