নয়ামাটি
অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে নারায়ণগঞ্জের বাণিজ্যিক কেন্দ্র নয়ামাটি
নারায়ণগঞ্জ শহরের অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা নয়ামাটির অলি-গলি দিয়ে কখনো চার চাকার গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না। অথচ এখানে বছরে শতশত কোটি টাকার হোসিয়ারি পণ্য বেচাকেনা হয়। এখানকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতেও।
সরেজমিনে দেখা যায়, পুরো এলাকা বৈদ্যুতিক তারের জঞ্জালে মোড়ানো। কিছুকিছু জায়গায় তারের জঞ্জালের কারণে আকাশও দেখা যায় না। বিশাল এলাকাজুড়ে থাকা এই বাণিজ্যিক এলাকার প্রায় প্রতিটি ভবন কাপড়, কেমিক্যাল আর সুতায় ঠাসা। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও প্রবেশ করতে পারে না। সেখানে বড় ধরনের আগুন লাগলে কীভাবে নেভানো হবে সেই প্রশ্নের উত্তর নেই কারো কাছে।
গত ৭ অক্টোবর রাত ১১টায় নারায়ণগঞ্জ শহরের কালীরবাজারে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগ্নিকাণ্ডে ৪০ দোকান পুড়ে যায়। এরপর থেকে নয়ামাটির হোসিয়ারি ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের মাঝে বিরাজ করছে ভয় আর আতঙ্ক।
আরও পড়ুন: জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে: নৌপরিবহন উপদেষ্টা
বাংলাদেশ হোসিয়ারি অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জে ৮ হাজারের মতো হোসিয়ারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার অধিকাংশ এই নয়ামাটি ও এর আশাপাশের এলাকায় অবস্থিত। অথচ নয়ামাটি অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
নয়ামাটির হোসিয়ারি ব্যবসায়ী আব্দুস সেলিম বলেন, ‘এখানে যত মার্কেট আর বাড়ি দেখেন সব জায়গায় কোটি কোটি টাকার খেলা। কিন্তু জীবনের নিরাপত্তা নেই। আপনি ঠিকমতো খুঁজে দেখেন কোথাও আগুন নেভানোর যন্ত্র নেই। পানির রিজার্ভ নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে যেহেতু আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে পারবে না, সেই কথা মাথায় রেখেই ব্যবসা করা উচিৎ। তবে সেটা নিয়ে কারো চিন্তা ভাবনা নেই। এর পেছনে সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানও দায়ী বলে আমি মনে করি।’
রহমান হোসিয়ারির নারী শ্রমিক আবেদা পারভীন বলেন, ‘যেই রাস্তা দিয়ে ঢুকেছেন সেখানে তারের মধ্যে প্রায়ই আগুন লাগে। তখন বিল্ডিং থেকে পানি বালু দিয়া আগুন নেভানো হয়। আমরা এমন এক জায়গায় কাজ করি তা আর কী বলব। ৫-৬ তলার উপরে কারখানায় শ্রমিকেরা থাকে। নিচে আগুন লাগলে আমরাদের সবার মরা ছাড়া উপায় নেই। গার্মেন্ট আর হোসিয়ারিতে অনেক তফাত। গার্মেন্টে দুইটা সিঁড়ি থাকে আগুন নেভানোর মেশিন থাকে। নয়ামাটির হোসিয়ারিতে এগুলো নেই।’
তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘আমাদের মালিকেরা টাকা কম কামায় নাকি? তাদেরটা ধরা পড়ে না। সরকারের উচিত এখানে নজর দেওয়া, না হলে আমাদের আগুনে জ্বলে মরতে হবে।’ নয়ামাটির কয়েকজন ব্যবসায়ীর অভিযোগ, এলাকাটি ভয়াবহ অগ্নিঝুঁকির মধ্যে থাকলেও ফায়ার সার্ভিসের নজর খুব কম এখানে। নয়ামাটির নিরাপদ বাণিজ্যিক পরিবেশ তৈরিতে এই সরকারি প্রতিষ্ঠান তেমন কোনো উদ্যোগ নেয় না।
তবে এ বিষয়ে কথা বলতে নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক ফখরউদ্দীন আহমেদকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাকে অফিস টাইমে ফোন দেবেন। আমি এখন অসুস্থ।’
আরও পড়ুন: ধানমন্ডিতে আবাসিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডে আহত ৩
২ মাস আগে