সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায়ের রিভিউ শুনানি ১৭ নভেম্বর
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় রিভিউ চেয়ে বিএনপি, জামায়াত ও সুজনের করা রিভিউ শুনানি আগামী ১৭ নভেম্বর হবে।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) শুনানির কার্যতালিকা এলে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় ৪ সপ্তাহ সময় চান। এসময় বিএনপির পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন এবং সুজনের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়াও এর সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন।
এসময় আদালতে জামায়াতের পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনিরও ছিলেন।
একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বিভাগ তিনটি রিভিউ একসঙ্গে শুনানির জন্য আগামী ১৭ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।
এদিকে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার ক্ষেত্রে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের বিচার হওয়া উচিত কি না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের জবাবে বিএনপির পক্ষের সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, তিনি অসাধুতা করেছেন। তার বিচার হওয়া উচিত।’
এর আগে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের দৈনন্দিন কার্যতালিকার ৪২ নম্বর ক্রমিকে অন্তর্ভুক্ত ছিল রিভিউ আবেদনটি।
রিভিউ আবেদনগুলো করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
এর আগে ১৯৯৬ সালে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়। ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এম সলিম উল্লাহসহ তিন আইনজীবী রিট করলে হাইকোর্ট এ ব্যবস্থা বাতিল করেন। এর বিরুদ্ধে আপিল করা হলে শুনানি শেষে ২০১১ সালের ১০ মে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে তা বাতিল করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
তবে পরবর্তী দশম ও একাদশ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ। রায়ে বলা হয়, ‘এ ক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনে সংসদে ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।’
আদালতের রায়ে বলা হয়, ‘আপিল বিভাগের সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতেই আবেদনটি গৃহীত হয়েছে। এর মাধ্যমে সংবিধান (ত্রয়োদশ সংশোধনী) আইন ১৯৯৬ এই নির্দেশের পর থেকে অবৈধ ও সংবিধান বহির্ভূত ঘোষণা করা হলো। তবে আইনসম্মত না হলেও (প্রয়োজনের কারণে আইনসম্মত এবং জনগণের নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ আইন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ আইন— সুপ্রাচীনকাল ধরে চলে আসা নীতিমালার ভিত্তিতে) দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল করা ত্রয়োদশ সংশোধনীর আওতায়ই হতে পারে।’
রায়ে আদালত আরও জানায়, ‘এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতিদের মধ্য থেকে অথবা আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকে একজনকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বিধানটি বাতিল করার পূর্ণ স্বাধীনতাও সংসদের থাকবে। একই সঙ্গে ২০০৫ সালে এ প্রসঙ্গে দায়ের করা লিভ টু আপিলটিও খারিজ করা হলো।’ কিন্তু পরবর্তী সময়ে ওই রায় অনুযায়ী আর দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়নি।
এ অবস্থায় গত আগস্ট মাসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার রিভিউ আবেদন দায়ের করেন।
এরপর গত ১৬ অক্টোবর আরেকটি রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত ২০ অক্টোবর দুটি রিভিউ আবেদন শুনানির জন্য ২৪ অক্টোবর দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
পরে গতকাল বুধবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে রিভিউ আবেদন করেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। এ আবেদনটিও আগের দুটি আবেদনের সঙ্গে একসঙ্গে শুনানির জন্য পাঠান চেম্বার বিচারপতি। সে অনুযায়ী পৃথক তিনটি রিভিউ আবেদনই আদালতের কার্যতালিকায় এসেছে।
৪ সপ্তাহ আগে