আনসু ফাতি
মায়োর্কার ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে ফাইনালের প্রস্তুতি সারল বার্সেলোনা
পুরো ম্যাচজুড়ে শট নিল চল্লিশটি, অথচ গোল পেল মাত্র একটি। হ্যাঁ, আপনি ঠিকই পড়ছেন। এমনটিই ঘটেছে মায়োর্কার বিপক্ষে বার্সেলোনার ম্যাচে। ফিনিশিংয়ে ব্যর্থতার এমনই এক রাতে অবশ্য জিতেই মাঠ ছেড়েছে কাতালানরা।
মঙ্গলবার রাতে লা লিগার ৩৩তম রাউন্ডের ম্যাচে ঘরের মাঠে মায়োর্কাকে ১-০ গোলে হারিয়েছে বার্সেলোনা। ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেন দানি অলমো।
গত ১৫ বছরে লা লিগার কোনো দল এক ম্যাচে এত বেশি (৪০) শট নিতে পারেনি। ফ্লিকের বার্সেলোনার সৌজন্যে সেই বিরল ঘটনার সাক্ষী হলো ফুটবল বিশ্ব।
চোটে খেলোয়াড়দের অনুপস্থিতি এবং আসন্ন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোর কথা মাথায় রেখে টানা ম্যাচ খেলা একাদশের নিয়মিত খেলোয়াড়দের ছয়জনকে বদল করে নতুন একাদশ সাজিয়ে এদিন শিষ্যদের মাঠে নামান হান্সি ফ্লিক। তবে তাতে তার দলের পারফরম্যান্সে ভাটা পড়েনি।
অপরদিকে, গত কয়েক মৌসুম ধরে কোনোরকমে অবনমন এড়ানো মায়োর্কা চলতি মৌসুমে দারুণ পারফর্ম করে চলেছে। লিগ টেবিলের সাতে থাকা এই দলটির পারফরম্যান্স ছিল একেবারেই হতাশাজনক। ফলে তাদের ওপর পুরো ম্যাচজুড়ে ছড়ি ঘুরিয়েছে বার্সেলোনা।
৭৮ শতাংশ পজেশন ধরে রেখে ম্যাচজুড়ে মোট ৪০টি শট নেয় দলটি, যার ১৩টি ছিল লক্ষ্যে। অপরদিকে, মাত্র চারটি শট নিলেও একটিও লক্ষ্যে রাখতে পারেনি মায়োর্কা।
এর ফলে এক গোলের ব্যবধানে ম্যাচ জিতলেও আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থেকে আগামী শনিবার অনুষ্ঠিত হতে চলা কোপা দেল রের ফাইনালের প্রস্তুতি সেরেছে কাতালান জায়ান্টরা। সেই সঙ্গে অনিয়মিত খেলোয়াড়দেরও ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন ফ্লিক।
চোটে ছিটকে যাওয়া লেভানডোভস্কি এবং রাফিনিয়াকে বিশ্রামে রাখায় এদিন কপাল খোলে আনসু ফাতির। তাকে বাঁ পাশে রেখে ফেররান তোরেস ও লামিন ইয়ামালকে নিয়ে আক্রমণ ত্রয়ী সাজান ফ্লিক।
আরও পড়ুন: গুরুত্বপূর্ণ সময়ে লেভানডোভস্কির চোট, বিপদে বার্সেলোনা
মাঠে নেমে প্রথম মিনিটেই গোলের উদ্দেশ্যে শট নেন ফাতি, তবে শটটি মায়োর্কার রক্ষণে আটকে যায়। এরপর সপ্তম থেকে নবম মিনিটের মধ্যে লামিনের দুটি ও ফেররানের একটি শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। দ্বাদশ মিনিটে ফেররান ও লামিনের জোড়া শট প্রতিহত করেন মায়োর্কা গোলরক্ষক লেও রোমান। সতীর্থের বাড়ানো থ্রু বল ধরে এগিয়ে গিয়ে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের সামনে থেকে জোরালো শট নেন ফেররান, গোলরক্ষক বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে তা ফিরিয়ে দিলে বল চলে আসে ডানপাশে থাকা লামিনের পায়ে। তিনি সেখান থেকে শট নিলেও বল লুফে নেন রোমান।
অষ্টাদশ মিনিটের শুরুতে দুর্দান্ত এক পাল্টা আক্রমণে উঠে গোল করার দারুণ এক সুযোগ তৈরি করে মায়োর্কা। তবে গোলমুখে বাড়ানো নিচু ক্রসে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হওয়ায় এগিয়ে যাওয়ার সুযোগবঞ্চিত দলটি।
২৬তম মিনিটে গোল পেয়েই গিয়েছিলেন অলমো, কিন্তু তার অসাধারণ টোকায় গোলের উদ্দেশে বাড়ানো বলের দিক পরিবর্তন করে দেন রোমান। ২৯তম মিনিটে আত্মঘাতী গোল খাওয়া থেকে দলকে রক্ষা করেন তিনি। পরের মুহূর্তেই গাভির নেওয়া জোরালো শট ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। তার কয়েক মুহূর্ত পর গোলমুখে বল পেয়েও বাইরে মারেন আরাউহো।
এই সময় থেকে মোটামুটি পাঁচ মিনিট মায়োর্কার খেলোয়াড়দের ওপর বুলডোজার চালাতে থাকে বার্সার খেলোয়াড়রা। একের পর এক আক্রমণ, শটে গোল আদায়ের জোরালো প্রচেষ্টা চালাতে থাকে দলটি। কিন্তু কোনোমতে বার্সার আক্রমণগুলো প্রতিহত করে ম্যাচে নিজেদের ধরে রাখে মায়োর্কা।
চল্লিশতম মিনিটে আরও একবার দুর্দান্ত আক্রমণ শানিয়ে তিন তিনবার গোলে শট নেন বার্সেলোনার খেলোয়াড়রা, তবে এবারও মায়োর্কার ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন রোমান। ৪৪তম মিনিটে বাঁ পাশ থেকে বক্সে ঢুকে নেওয়া ফাতির শট পোস্টঘেঁষে বেরিয়ে যায়।
ফিরতি বল থেকেই আক্রমণে উঠে বার্সার রক্ষণ ভেঙে এগিয়ে গিয়ে গোল করেন আন্তোনিও সানচেস, তবে শেষ পর্যন্ত তা অফসাইডে কাটা পড়ে।
আরও পড়ুন: হারের শঙ্কা জাগিয়েও সাত গোলের থ্রিলার জিতল বার্সেলোনা
এর কিছুক্ষণ পর বিরতিতে যায় দুদল। বিরতির আগে প্রতিপক্ষকে চোখ রাঙিয়ে অসংখ্য সুযোগ তৈরি করলেও গোল আদায় করতে ব্যর্থ হয় স্বাগতিকরা। ৭৮ শতাংশ সময় পজেশন রেখে প্রথমার্ধে মোট ২৪টি শট নেয় বার্সেলোনা, যার ৬টি লক্ষ্যে ছিল। প্রথমার্ধে তিনিট ‘বিগ চান্স’ তৈরি করে দলটি, কিন্তু স্কোরবোর্ডে কিছুই যোগ করতে পারে না। অপরদিকে, নিজেদের ঘর সামলাতে ব্যস্ত থাকা মায়োর্কার আক্রমণের খাতা ছিল একেবারে শূন্য।
২২৬ দিন আগে
এবার রিয়ালের মাঠেই বর্ণবিদ্বেষের শিকার বার্সার তিন খেলোয়াড়
প্রতিপক্ষের সমর্থকদের কাছ থেকে বর্ণবাদী স্লোগান শুনতে শুনতে জেরবার রিয়াল মাদ্রিদের ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড ভিনিসিউস জুনিয়র। এ নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই তার; এমনকি রিয়ালের সমর্থকরাও ভিনিসিউসের পক্ষ নিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘৃণ্য এ আচরণের সমালোচনায় মুখর থাকেন। এবার সান্তিয়াগো বের্নাবেউতে সেই রিয়াল সমর্থকদের কাছেই বর্ণবিদ্বেষের শিকার হয়েছেন বার্সেলোনার তিন খেলোয়াড়।
ঘটনাটি ঘটে শনিবার রাতে এল ক্লাসিকো চলাকালে। ৪-০ গোলে বার্সার কাছে বিধ্বস্ত হওয়ার ওই রাতে ম্যাচের ৭৭তম মিনিটে রাফিনিয়ার অ্যাসিস্টে তৃতীয় গোলটি করেন বার্সেলোনার ১৭ বছর বয়সী প্রতিভাবান উইঙ্গার লামিন ইয়ামাল।
এল ক্লাসিকোতে সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে গোলের রেকর্ড করে মাঠেই উদযাপন শুরু করেন তিনি। এ সময় গ্যালারি থেকে তার উদ্দেশে বর্ণবাদী স্লোগান দিতে শুরু করে রিয়ালের কিছু সমর্থক। এমনকি ম্যাচের শেষ দিকে যখন রাফিনিয়ার সঙ্গে কর্নার কিক নিতে যান লামিন, তখন উচ্ছৃঙ্খল সমর্থকরা আরও বেপরোয়া হয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন।
ম্যাচের পর স্পেনের ক্রীড়াবিষয়ক সংবাদমাধ্যম রেলেভো জানায়, শুধু লামিন নন; আনসু ফাতি ও আলেহান্দ্রো বালদেও গ্যালারি থেকে বর্ণবিদ্বেষের শিকার হয়েছেন।
এ ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে গোটা স্প্যানিশ প্রশাসন। সমর্থকদের এমন আচরণে লজ্জা প্রকাশ করে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ।
এছাড়া এ ঘটনার পেছনের কারিগরদের চিহ্নিত করতে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করা হয়েছে বলে ক্লাবটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বর্ণবাদ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে স্পেনে বিশ্বকাপ চান না ভিনিসিউস
এ ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে লা লিগা কর্তৃপক্ষও তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। স্পেনের বর্ণবাদবিরোধী সংস্থার কাছে অভিযোগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
লা লিগা তাদের বিবৃতিতে বলেছে, ‘বার্সেলোনার খেলোয়াড়দের উদ্দেশে ওঠা বর্ণবাদী স্লোগান নিয়ে স্পেনের জাতীয় পুলিশের হেট ক্রাইম ইউনিটে অভিযোগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে লা লিগা। পাশাপাশি স্টেট অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের হেট ক্রাইমস অ্যান্ড ডিসক্রিমিনেশন ইউনিটের সমন্বয়কারী প্রসিকিউটরকেও এ বিষয়ে অবহিত করা হবে।’
‘লা লিগা সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং স্টেডিয়ামের ভেতরে ও বাইরে যেকোনো ধরনের বর্ণবাদী আচরণ ও ঘৃণা দূর করতে নিজেদের অঙ্গীকারে অটল রয়েছে।’
৪০৩ দিন আগে