উপদেষ্টা ফাওজুল
বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে সরকার: উপদেষ্টা ফাওজুল
বর্তমান সরকার একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেল মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেছেন, বিগত সরকার দেশের প্রায় সব ক্ষেত্র ধ্বংস করে গেছে। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর দেশ গড়ার একটি নতুন সুযোগ এসেছে।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় চিটাগং বোট ক্লাবে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রামের বেসরকারি চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির (সিআইইউ) সমাবর্তন-২০২৫ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘এ সরকার গঠন হয়েছে কিছু সময় ধরে। তাই শতভাগ জবাবদিহিতার মাধ্যমে কাজ করার চেষ্টা করছে। সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চায়। আমরা চেষ্টা করছি সব ধরনের বৈষম্য দূর করার।’
আরও পড়ুন: ভবিষ্যতে যারা আসবেন, অতীত থেকে শিক্ষা নেবেন: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা গ্রাজুয়েশন শেষ করেছেন। মনে রাখতে হবে, সব শিক্ষা ক্লাসরুমের ভেতর থেকে পাওয়া যায় না, কিছু শিক্ষা পরিবেশ-প্রকৃতি থেকেও অর্জন করতে হয়। আমি মনে করি, আপনাদের প্রতিষ্ঠান পড়ালেখার পাশাপাশি সততা ও মূল্যবোধের শিক্ষা দিয়েছে, যা আপনারা নিজেদের কর্মজীবনে কাজে লাগাবেন।’
কর্মজীবনে নিজেদের প্রমাণ করতে হবে এবং অন্যের জন্য কাজ করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন উপদেষ্টা।
এ সময় ডিগ্রিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের আগামীর জীবনে নতুন অধ্যায় শুরু হলো বলে উল্লেখ করেন উপদেষ্টা ফাউজুল কবির খান।
চট্টগ্রামের পতেংগা বোডক্লাব মাঠে আয়োজিত এবারের সমাবর্তনে ২ হাজার ১৮৯ শিক্ষার্থীকে রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সলরের পক্ষ থেকে ডিগ্রি প্রদান করেন উপদেষ্টা।
১০৫ দিন আগে
মানুষের যেটা প্রয়োজন সেটাই করব: উপদেষ্টা ফাওজুল
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, এখন থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঢাকায় বসে কোনো পরিকল্পনা করবে না। মানুষের সঙ্গে কথা বলে মানুষের যেটা প্রয়োজন, আমরা সেটাই করব।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক ভবনের সামনে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘কিশোরগঞ্জের হাওরে অলওয়েদার সড়ক নির্মাণের ফলে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে কাজ করছে সরকার। হাওরের উপজেলার সঙ্গে এক দিকে কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের সংযোগ এবং সিলেটের সঙ্গে সংযোগ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখা হবে।’
আরও পড়ুন: বুকের রক্ত দিয়ে স্বাধীনতাকে পূর্ণতা দিয়েছে ছাত্ররা: উপদেষ্টা আদিলুর
এর আগে, সকালে কিশোরগঞ্জ থেকে সড়কপথে হাওরের ইটনা উপজেলায় যান তিনি। ইটনা উপজেলা প্রশাসনের হলরুমে মুক্তিযোদ্ধা, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।
কিশোরগঞ্জ থেকে সড়কপথে ইটনা উপজেলা যাবার সময় তিনি ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম অলওয়েদার সড়ক পরিদর্শন করেন।
এ সময় সড়ক ও সেতু বিভাগের সচিব এহসানুল হক, জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীসহ উপদেষ্টার সফরসঙ্গীরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: ড্যাপ বাস্তবায়নে সরকারের উপদেষ্টা কমিটি গঠন
১৩৩ দিন আগে
কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের লোকসান কমাতে কাজ করছি: উপদেষ্টা ফাওজুল
সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, সঠিক সমীক্ষা ছাড়াই রাজনৈতিক দাম্ভিকতা দেখাতেই কর্ণফুলী টানেল করা হয়েছে। ফলে প্রতিদিন লাভের বদলে লোকসান হচ্ছে।
এই 'অযৌক্তিক' প্রকল্পের বিপুল ক্ষতি কমিয়ে আনতে তারা কাজ করছেন বলেও জানান উপদেষ্টা।
সম্প্রতি ইউএনবিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত টানেলের লোকসান প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘সঠিক সমীক্ষা ছাড়া একটি অবাস্তব প্রকল্প ছিল কর্ণফুলী টানেল। এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, লোক দেখানো একটি প্রকল্প। অন্য দেশে টানেল আছে, আমাদের নদীর তলদেশে একটা টানেল থাকবে না, তা কী হয়! এসব দাম্ভিকতা থেকেই কর্ণফুলী টানেলটি করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: কর্ণফুলী টানেলের দক্ষিণ পাশের কাজ শেষ করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলেন প্রধানমন্ত্রী
আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে এই উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা প্রকল্প নিতে হবে তাই নিয়ে নিল, কারণ প্রকল্প নিলেই তো লাভ। যার ফলে দেশের চিন্তা না করে যারা কাজটি করেছে, তাদের লাভের আশার কারণে দেশের বড় ক্ষতি হয়ে গেল।’
তিনি আরও বলেন, সঠিকভাবে কোনো সমীক্ষা ছাড়াই এত বড় একটা প্রকল্প সম্পন্ন করে ফেলল। ফলে প্রতিদিন লাভের বদলে প্রচুর টাকা লোকসান হচ্ছে। টানেল নির্মাণের আগের সমীক্ষা অনুযায়ী যানবাহন চলাচলের যে ধারণা দেওয়া হয়েছিল তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘বিগত সরকারের ভুলের কারণে এখন তো আর চাইলেও ভাঙতে বা বন্ধ করতে পারব না। এই প্রকল্পে কেন এত লোকসান হচ্ছে এবং কী করে এই লোকসান কমানো যায় আমরা তা নিয়ে পর্যালোচনা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখন সড়ক ও সেতু দুটা বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে আমাদের স্ট্রাটেজি ঠিক করব। সড়ক বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে এই সংকট কাটানোর চেষ্টা করা হবে। অন্যান্য সড়কের সঙ্গে টানেলের সংযোগ বাড়ানো হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখছি কী করলে ট্রাফিক বাড়বে। সেটার জন্য নতুন করে কী পরিমাণ বিনিয়োগ করতে হবে সেটা আমরা দেখব। তবে আমরা কোনো কাল্পনিক সংখ্যা দিয়ে সমীক্ষা করব না। কারণ আমাদের তো লোন পরিশোধ করতে হবে।’
উপদেষ্টা বলেন,টানেলের উচ্চতা কম হওয়ায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। সড়কের ওপর কোনো ফ্লাইওভার বা সমজাতীয় অবকাঠামো করলে যানবাহন নির্বিঘ্নে পারাপারের জন্য সেটির উচ্চতাও এ মানদণ্ড অনুযায়ী করা হয়। অথচ কর্ণফুলী টানেলে হেডরুম রাখা হয়েছে ৪ দশমিক ৯ মিটার। উচ্চতা কম হওয়ায় টানেল দিয়ে ভারী কার্গোর মতো যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। আবার নিরাপত্তাজনিত কারণে দাহ্য পদার্থসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ থাকারও বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
এছাড়া এই টানেল ঘিরে পর্যটন শহর কক্সবাজারসহ চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলে যেসব উন্নয়ন প্রকল্প স্থাপনের কথা ছিল, তা দৃশ্যমান নয়। ফলে টানেল দিয়ে গণপরিবহন তেমন চলছে না। টানেল নির্মাণে বাড়তি খরচ করা হয়েছে। কিন্তু আয় হচ্ছে কম।
গত বছরের ২৮ অক্টোবর এই টানেল উদ্বোধনের পর থেকে দৈনিক আয় ও ব্যয়ের যে হিসাব দিচ্ছে টানেল কর্তৃপক্ষ, তাতে দেখা যাচ্ছে গড়ে প্রতিদিন আয়ের চেয়ে প্রায় চারগুণ বেশি খরচ।
সেতু কর্তৃপক্ষ থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই টানেল দিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় এক বছরে গাড়ি চলাচল করেছে ১৪ লাখ ১১ হাজার ৪১২টি। যার মধ্যে মধ্যে ৭৬ শতাংশই ছিল হালকা যান বা ছোট গাড়ি। বাসের পরিমাণ ১০ শতাংশ, ট্রাক ১২ শতাংশ। আর অন্য বড় ট্রেইলারের পরিমাণ এক শতাংশেরও কম।
টানেল কর্তৃপক্ষের হিসাব বলছে, প্রতিদিন গড়ে টানেল দিয়ে গাড়ি চলাচল করছে তিন হাজার ৯১০টি।
সেতু কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, উদ্বোধনের পর প্রথম মাসে (নভেম্বর) টানেলে গাড়ি চলাচল করেছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৩১২টি। সে হিসেবে ওই মাসে প্রতিদিন গাড়ি চলেছে ৫ হাজার ৫৪৪টি। এতে আয় হয়েছে ৩ কোটি ৯৪ লাখ ৪২ হাজার ৩০০ টাকা। কিন্তু চলতি বছর এপ্রিল মাসে গাড়ি চলাচল করেছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৬৪৮টি। সেই হিসাবে দৈনিক গাড়ি চলেছে ৩ হাজার ৮৫৫টি। চলতি (সেপ্টেম্বর) মাসের প্রথম ২১ দিনে টানেল দিয়ে গাড়ি চলাচল করেছে ৬৪ হাজার ৫৪৯টি। সেই হিসাবে সেপ্টেম্বরে দৈনিক গাড়ি চলেছে তিন হাজার ৭৩টি। অর্থাৎ ক্রমান্বয়ে টানেলে গাড়ি চলাচল কমছে।
সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত গত এক বছরে এই টানেল থেকে সরকারের আয় হয়েছে ৩৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। বর্তমানে টানেল থেকে টোল বাবদ দৈনিক গড়ে আয় হচ্ছে ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু মাটির তলদেশে নির্মিত টানেল হওয়ায় প্রতিদিন টানেলে কৃত্রিম অক্সিজেন ও আলো সরবরাহ, সামগ্রিক নিরাপত্তা ও জরুরি নিরাপত্তা বাবদ একটা বিশাল অংকের অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে প্রতিদিন গড়ে টানেলটির এসব ব্যয় নির্বাহে খরচ হচ্ছে প্রায় ৩৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। সে হিসেবে দৈনিক লোকসান ২৫ লাখ টাকার উপরে।
২০১৭ সালে কর্ণফুলী টানেল চালু হবে ধরে নিয়ে সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় যান চলাচলের প্রাক্কলন করেছিল চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যেখানে বলা হয়েছিলে, ২০২০ সালে টানেল চালু হলে দিনে ২০ হাজার ৭১৯টি যানবাহন চলবে। প্রতি বছর তা ৬ দশমিক ৪ শতাংশ হারে বাড়বে। ২০২৫ সালে দৈনিক গড়ে ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলবে। ২০৩০ সালে সংখ্যাটি দাঁড়াবে দিনে প্রায় ৩৮ হাজার।
২০২০ সালের জায়গায় টানেল চালু হয়েছে ২০২৩ সালে। সেতু কর্তৃপক্ষের হিসাবে চালুর পর গত আগস্ট পর্যন্ত দিনে যানবাহন চলেছে গড়ে ৪ হাজার ৬১৩টি করে। টোল আদায় হচ্ছে দিনে গড়ে ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর মধ্যে অধিকাংশই পর্যটকবাহী পরিবহন। গত ছয়মাসে চলাচল করা যানবাহন আরও কমেছে।
আরও পড়ুন: কর্ণফুলী টানেলের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী
১৮১ দিন আগে