বাংলাদেশের সংস্কার
সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন ২৭ দেশের রাষ্ট্রদূত
বাংলাদেশের সংস্কার ও উন্নয়নে সমর্থন এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উচ্চ পর্যায়ের সহযোগিতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইউরোপের ২৭ দেশের রাষ্ট্রদূত শিগগিরই ঢাকায় আসছেন বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে রবিবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে একথা জানান প্রধান উপদেষ্টা।
ড. ইউনূস জানান, দিল্লিতে বর্তমানে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) ২০ দেশের ২০ জন রাষ্ট্রদূত অবস্থান করছেন। এছাড়া ঢাকায় রয়েছেন আরও ৭ দেশের রাষ্ট্রদূত। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশ্যে মোট ২৭ দেশের রাষ্ট্রদূতরা ঢাকায় মিলিত হতে চলেছেন।
আরও পড়ুন: ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে অহেতুক আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা হয়েছে
আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দিল্লি থেকে ২০ দেশের রাষ্ট্রদূত ঢাকায় আসছেন জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘দিল্লি থেকে ২০ রাষ্ট্রদূতসহ মোট ২৭ দেশের রাষ্ট্রদূত সমবেতভাবে আমার সঙ্গে বৈঠক করবেন।’
এত সংখ্যক রাষ্ট্রদূত একসঙ্গে বৈঠক করতে কখনও বাংলাদেশে আসেননি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এবার এ কাজটি করার পেছনে রয়েছে (বাংলাদেশের প্রতি) ইইউ-এর সমর্থন প্রকাশ এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উচ্চ পর্যায়ের সহযোগিতা গড়ে তোলা।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ব্রাজিল, তুরস্ক, রাশিয়া, ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও লিবিয়াসহ অনেক দেশের রাষ্ট্রদূত আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। সাক্ষাৎকালে দ্বিপাক্ষিক নানা সহযোগিতাসহ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির আশ্বাস দিয়েছেন তারা।’
আরও পড়ুন: দ্রব্যমূল্য নিয়ে আমাদের কোনো লুকোছাপা নেই: ড. ইউনূস
৪ দিন আগে
ইউরোপীয় ইউনিয়ন আপনাদের সঙ্গে আছে: অধ্যাপক ইউনূসকে পাম্পালোনি
বাংলাদেশের সংস্কার উদ্যোগ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা করতে ইরোপীয় ইউনিয়ন প্রস্তুত রয়েছে বলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জানিয়েছেন ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা পাম্পালোনি।
বুধবার (৬ নভেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অধ্যাপক ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘বার্তাটা খুব পরিষ্কার। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আপনাদের সঙ্গে আছে। আমরা আপনাদের সংস্কার (উদ্যোগ) সমর্থন করতে চাই। বাংলাদেশের প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থনের বিষয়টিও নিশ্চিত করেন তিনি। ‘
আরও পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে শহীদ আবু সাঈদের পরিবারের সাক্ষাৎ
তিনি বাংলাদেশকে সমর্থন দিতে ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রস্তুতির কথা ব্যক্ত করেন। এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও ডেলিগেশন প্রধান মাইকেল মিলার উপস্থিত ছিলেন।
পামপালোনি বলেন, সংস্কারের জন্য তহবিলের কোনো অভাব হবে না এবং তারা কাজটি সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রযুক্তিগত সহায়তাও দেবেন।
প্রধান উপদেষ্টা এই সৌজন্যের প্রশংসা করেন এবং গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েনের সঙ্গে তার বৈঠকের কথা স্মরণ করেন।
তিনি উল্লেখ করেন যে, ভন ডার লিয়েন এই ক্ষেত্রে তার বিশাল অভিজ্ঞতা দিয়ে দুর্নীতি মোকাবিলা এবং নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে বাংলাদেশের রূপান্তরকে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
পাম্পালোনি স্বীকার করেছেন যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং আর্থিক সহায়তা ব্যবহার করে অন্যান্য অনেক দেশের সঙ্গে এটি করেছে।
তিনি বলেন, 'আমরা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে আপনাদের বক্তব্য মনোযোগ সহকারে শুনছিলাম এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, এখন আমাদের এমন একজন আছেন যার সঙ্গে বাংলাদেশে কাজ করা যেতে পারে। আপনার একা বোধ করার দরকার নেই। আমরা সত্যিই সমর্থন করতে আগ্রহী।’
ইইউ কর্মকর্তা বাংলাদেশকে আরও বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির আহ্বান জানান, যা আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং বাণিজ্য বৃদ্ধি করবে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে যে, রাষ্ট্রদূত মিলার প্রধান উপদেষ্টাকে বলেন, ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্যবসার আরও সুযোগ খুঁজে বের করতে জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরের পরিকল্পনা করছেন।
প্রধান উপদেষ্টা শ্রম অধিকার সংস্কারে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতির বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করেন, যা আরও বিনিয়োগ আনার পথ প্রশস্ত করবে।
প্রধান উপদেষ্টা ইইউ কর্মকর্তাদের বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে, আমরা আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখছি ... কোনো লুকোচুরি থাকবে না। আমরা আর এই খেলা খেলতে চাই না।’
ইইউ কর্মকর্তারা বিভিন্ন খাতের সংস্কারে অধ্যাপক ইউনূসের রাজনৈতিক অঙ্গীকারের প্রশংসা করেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ ও দ. কোরিয়ায় শ্রমিক নিয়োগ করুন: রাষ্ট্রদূতকে অধ্যাপক ইউনূস
পাম্পালোনি বলেন, 'এই প্রথম আমরা এমন কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক অঙ্গীকার দেখলাম, যা আমরা নির্ধারণ করেছি। সুতরাং, আমরা আপনার উপর নির্ভর করছি।’
প্রধান উপদেষ্টা আঞ্চলিক বিদ্যুৎ সংযোগ বাড়াতে নেপাল ও ভারতের সঙ্গে কাজ করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, নেপালের বিশাল জলবিদ্যুৎ রয়েছে, যা অপচয় হচ্ছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু সমর্থন পেলে নেপাল, বাংলাদেশ এবং ভারত সকলেই এটি থেকে উপকৃত হতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বাংলাদেশের তরুণদের প্রতি মনোনিবেশ করার আহ্বান জানান এবং দক্ষিণ এশীয় ফুটবল দলে বাংলাদেশি মেয়েদের সাম্প্রতিক সাফল্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, 'তারা এসেছে এবং জয় করেছে, শুধু একবার নয়, দু'বার।
বাংলাদেশি নারীদের অনুপ্রাণিত করতে ইউরোপীয় ফুটবল দল পাঠাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি অনুরোধ জানান প্রধান উপদেষ্টা।
আরও পড়ুন: স্বল্প সময়ের জন্যও বাংলাদেশে আ. লীগের কোনো স্থান নেই: ফিনান্সিয়াল টাইমসকে ড. ইউনূস
২ সপ্তাহ আগে