ওয়াত ফা লাত
থাইল্যান্ডের গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলের চিয়াং মাই ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
এশিয়া-কেন্দ্রিক অবকাশ যাপন মানেই বিচিত্র সংস্কৃতি এবং ঐতিহাসিক স্থাপনার এক প্রাণবন্ত জগতে প্রবেশ করা। নির্জন সৈকত, পর্বত চূড়া এবং বনের গহীন থেকে শুরু করে জনাকীর্ণ বিপণীর গ্রাম পর্যন্ত সর্বত্র ছড়িয়ে প্রাণের স্পন্দন। এর মাঝেই বিস্ময় ও রোমাঞ্চগুলো অমূল্য প্রাপ্তি হিসেবে ধরা দেয়। এর সঙ্গে অকৃত্রিম সৌন্দর্য যোগ করলে অনায়াসেই খুঁজে পাওয়া যাবে এশিয়ার জনপ্রিয় পর্যটন শহর চিয়াং মাইকে। থাইল্যান্ডের বিখ্যাত গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের অন্তর্গত এই প্রদেশটি মন্দির এবং ঝর্ণার জন্য সুপরিচিত। চলুন, ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য্যে সমৃদ্ধ এই পর্যটন অঞ্চলে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য কী কী অপেক্ষা করছে- তা জেনে নেওয়া যাক।
গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলের চিয়াং মাই-এর অবস্থান ও বিশেষত্ব
উত্তর-পূর্ব মায়ানমার, উত্তর-পশ্চিম থাইল্যান্ড এবং উত্তর লাওসে রুয়াক ও মেকং নদীর মিলনস্থলে অবস্থিত প্রায় ২ লাখ কিলোমিটারের এক বিস্তৃত পার্বত্য অঞ্চল গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল।
১৯৭১ সালে তৎকালীন মার্কিন কূটনীতিক মার্শাল গ্রিন আফিম ব্যবসাবিষয়ক একটি প্রেস কনফারেন্সে ‘গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল’ শব্দটি ব্যবহার করেন। দুই নদীর মাঝের সোপ রুয়াক নামের থাইল্যান্ডের অংশটি বর্তমানে একটি পর্যটক আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। এখানে রয়েছে হাউস অফ আফিম মিউজিয়াম, একটি হল অব আফিম এবং গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল পার্ক।
থাইল্যান্ডের যে প্রদেশগুলো নিয়ে এই গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল গঠিত সেগুলোর মধ্যে বৃহত্তম হচ্ছে চিয়াং মাই। ব্যাংকক থেকে ৬৮৫ কিলোমিটার উত্তরে মায়ে পিং নদীর অববাহিকায় প্রদেশটি অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর গড় উচ্চতা ৩০০ মিটার। থাই উচ্চভূমির পর্বতমালা পরিবেষ্টিত অঞ্চলটির ক্ষেত্রফল প্রায় ২২ হাজার ১৩৫ বর্গকিলোমিটার।
আরো পড়ুন: ভুটান ভ্রমণ: জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান, যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
চিয়াং মাইয়ের শাসক থাম্মালাংকা ব্যাংককের রাজা দ্বিতীয় রামাকে একটি সাদা হাতি উপহার দিয়েছিলেন। সেই থেকে সাদা হাতি থাইল্যান্ডের একটি রাজকীয় প্রতীক হিসেবে স্বীকৃত। প্রদেশটির সিলমোহরেও কাঁচের মণ্ডপে সাদা হাতি রাখা হয়েছে। তাছাড়া এটি চিয়াং মাইতে বৌদ্ধ ধর্মের বিকাশের বিষয়টিকেও প্রতিনিধিত্ব করে।
চিয়াং মাই-এর জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলো
.
ওয়াত ফা লাত
ডোই সুথেপের লীলাভূমি বন পাহাড়ে অবস্থিত এই মন্দিরটি ‘গুপ্ত মন্দির’ বা ‘বন মন্দির’ নামেও পরিচিত। নামের মতো জায়গাটি সত্যিকার অর্থেই শহরের কোলাহল থেকে একদম মুক্ত। পুরোনো পাথরের কাঠামো, তাতে অপূর্ব খোদাই, ঝর্ণা এবং শান্ত বাগান সব মিলিয়ে জায়গাটিকে রহস্যময় করে তুলেছে।
ট্রেকারদের কাছে বহুল সমাদৃত পথ ‘মঙ্ক্স ট্রেইল’ ধরে এই মন্দির পর্যন্ত উঠে যাওয়া যায়। বনের মধ্য দিয়ে এঁকেবেঁকে চলে যাওয়া অপরূপ এই হাইকিং পথের শুরু হয় চিয়াং মাই ইউনিভার্সিটির কাছ থেকে। মোটামোটি সহজ এই পথটি হাইক করতে প্রায় ৩০ মিনিট সময় লাগে।
আরো পড়ুন: দিনাজপুরের রামসাগর দীঘি ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
দোই ইন্থানন জাতীয় উদ্যান
একসঙ্গে অনেকগুলো ঝর্ণা দেখতে হলে প্রবেশ করতে হবে এই উদ্যানে। দর্শনার্থীদের জন্য দোই ইন্থাননের প্রবেশ মূল্য ৩০০ থাই বাত বা ১ হাজার ৬১ টাকা (১ থাই বাত = ৩ দশমিক ৫৪ বাংলাদেশি টাকা)। যাওয়ার পথে দেখা মিলবে ওয়াচিরাথান জলপ্রপাতের। তারপর একদম ভেতরে রয়েছে ফা ডক সিউ জলপ্রপাত।
দোই ইন্থাননের চূড়া এবং টুইন প্যাগোডার সবথেকে কাছের গ্রাম বান খুন ক্লাং। এই গ্রামের প্রধান আকর্ষণ বিশাল জলপ্রপাত সিরিফুম। উদ্যান এলাকার বাইরে কাছেই রয়েছে মায়ে ইয়া, যেটি থাইল্যান্ডের সর্বোচ্চ জলপ্রপাতগুলোর একটি।
ওয়াত ফ্রা দোই সুথেপ
চিয়াং মাই-এর সবচেয়ে সমাদৃত মন্দিরগুলোর মধ্যে ওয়াত ফ্রা অন্যতম, যার অবস্থান দোই সুথেপ পর্বত চূড়ায়। ১৩৮৩ সালের দিকে স্থাপিত এই অত্যাশ্চর্য মন্দিরটির কেন্দ্রে রয়েছে একটি স্টুপা বা চেডি। ধ্যানের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া ঢিবির মতো অর্ধ গোলাকার এই স্থাপনাটি বহু বছর ধরে বুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে সংরক্ষিত। এখান থেকে পাখির চোখে চিয়াং মাই ও তার আশেপাশের গ্রামাঞ্চলের শ্বাসরুদ্ধকর মনোরম দৃশ্য অবলোকন করা যায়। সূর্যোদয় দেখার জন্য এই স্থানটি বেশ জনপ্রিয়।
আরো পড়ুন: সুন্দরবনের কটকা সমুদ্র সৈকত: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক ভ্রমণ খরচ
ওয়াত ফ্রা দ্যাত দোই খাম
টেম্পল অব দ্য গোল্ডেন মাউন্টেন নামে পরিচিত এই মন্দিরটি চিয়াং মাইয়ের ঠিক দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি পাহাড়ে অবস্থিত। এখানকার ১৭-মিটার লম্বা বুদ্ধ মূর্তিটি বহুদূর থেকে চোখে পড়ে। প্রায় ১ হাজার ৩০০ বছরেরও বেশি পুরোনো এই মন্দিরের সর্বোত্তম অংশটি হচ্ছে পৌরাণিক নাগা সর্প ঘেরা লম্বা সিঁড়ি। সিঁড়ি ধরে যত ওপরে ওঠা যায় চিয়াং মাই ও পাশ্ববর্তী উপত্যকার মনোরম দৃশ্য ততই উন্মুক্ত হতে থাকে।
২ সপ্তাহ আগে