কপ-২৯
কপ-২৯: জলবায়ু সংলাপের অগ্রভাগে বাংলাদেশের তরুণ নেতারা
আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসিসি) কপ২৯-এর জন্য বৈশ্বিক নেতারা জড়ো হওয়ার পাশাপাশি তরুণ নেতা, নীতিনির্ধারক এবং জলবায়ু সমর্থকদের মধ্যে ‘জলবায়ু পরিবর্তন’ একটি শক্তিশালী আলোচনার বিষয় হয়ে উঠছে।
কপ-২৯ পূর্ববর্তী 'ইয়ুথ অ্যাজ এজেন্ট অব চেঞ্জ' শীর্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের তরুণ জলবায়ু কর্মীরা। তারা ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সুইডেন এবং অন্যান্য টিম ইউরোপ সদস্যদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মত বিনিময়, সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের প্রস্তাব দেওয়াসহ জলবায়ু নীতিতে জরুরি অগ্রগতির দাবি জানাবে।
জলবায়ু মোকাবিলায় বাংলাদেশের তারুণ্যের কণ্ঠস্বর
নিজ দেশ যে জলবায়ু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি এবং সেগুলোর মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলোর বিষয়ে জোরালোভাবে কপ-২৯ পূর্ববর্তী সংলাপে তুলে ধরেন বাংলাদেশের তরুণ নেতারা।
বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে থাকায় তরুণ নেতারা জলবায়ু অভিযোজন, অর্থায়ন এবং জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে উত্তরণসহ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে মনোনিবেশ করেছেন।
গোলটেবিল বৈঠকে তরুণ প্রতিনিধিরা বেশ কিছু সুপারিশ করেন। এর মধ্যে আরও উচ্চাভিলাষী নির্গমন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের জন্য জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) বাড়ানো এবং টেকসই শক্তির জন্য দীর্ঘমেয়াদি কৌশল প্রণয়ন অন্তর্ভুক্ত ছিল।
আরও পড়ুন: কপ২৯: আজারবাইজানের পথে প্রধান উপদেষ্টা
বাংলাদেশি তরুণ জলবায়ু কর্মী রিনা আহমেদ বলেন, 'আমরা এমন একটি ভবিষ্যৎ চাই, যেখানে আমাদের সম্প্রদায়গুলো স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে, জাতীয় নীতি গঠনে আমাদের আহ্বানগুলো থাকবে এবং আমাদের জলবায়ু অভিযোজন পদক্ষেপগুলো সামনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় যথেষ্ট শক্তিশালী হবে।’
জলবায়ু পরিবর্তন: জরুরি সংকট
গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের কারণে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা সংকটজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে উল্লেখ করে জলবায়ু বিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ রহমান বলেন, ‘২০২৩ সাল ছিল সবচেয়ে উষ্ণতম বছর।’
তিনি আরও বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন শুধু উষ্ণায়ন নয়, বরং এটি খরাকে তীব্রতর করছে, বন্যা বাড়াচ্ছে, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে এবং বিশ্বব্যাপী ঝড়কে আরও খারাপ করছে। বাংলাদেশের মতো দেশে এর প্রভাব আরও বেড়েছে ‘
অভিযোজন, প্রশমন এবং সমর্থন
গোলটেবিল বৈঠকে জলবায়ু কর্মকাণ্ডের জন্য দুটি প্রধান উপায়ের রূপরেখা দেওয়া হয়েছে-
জলবায়ু অভিযোজন: জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় সম্প্রদায়গুলোকে প্রস্তুত করা। বাংলাদেশের জন্য এর মধ্যে রয়েছে সমুদ্র প্রাচীরের মতো অবকাঠামো নির্মাণ এবং চরম আবহাওয়া সহনশীল কৃষি পদ্ধতির প্রসার ঘটানো।
জলবায়ু প্রশমন: নবায়ণযোগ্য জ্বালানি গ্রহণ, জ্বালানি দক্ষতা উন্নত করা এবং জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমানোসহ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করা।
অভিযোজন এবং প্রশমনের সমন্বয়ে একটি বিস্তৃত পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ বলে জোর দেন এই তরুণ নেতারা।
সুইডেনের জলবায়ু দূত মায়া সোভেনসন বলেন, 'জলবায়ু অভিযোজনের জন্য আমাদের সমর্থন অবশ্যই এই মুহুর্তে জরুরিভিত্তিতে পূরণ করতে হবে। মারাত্মক জলবায়ুর প্রভাবের মুখোমুখি দেশগুলোর ভবিষ্যত সুরক্ষিত করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য।’
ইউরোপ দলের ভূমিকা
আরেকটি মূল বিষয় আলোচনা হয়। আর তা হলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের কার্বন বর্ডার অ্যাডজাস্টমেন্ট মেকানিজম (সিবিএএম), যা ২০২৬ সালে কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই উদ্যোগটি কার্বন নিঃসরণ কমাতে এবং বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পদক্ষেপকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে কম কঠোর জলবায়ু নীতিযুক্ত দেশগুলো থেকে আমদানিতে কার্বন মূল্য প্রয়োগ করবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু উপদেষ্টা মার্গারেটা নিলসন বলেছেন, ‘সিবিএএম দেশগুলোকে তাদের নির্গমনের জন্য দায়বদ্ধ রাখতে এবং বিশ্ব বাজারে একটি সমান ক্ষেত্র তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’
আরও পড়ুন: কপ-২৯ সম্মেলনে যোগ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা
কপ২৯’র বাইরে
জলবায়ু আলোচনা অব্যাহত থাকায় সংস্থাগুলো নির্গমন কমানো এবং জলবায়ু-ইতিবাচক উদ্যোগ উভয়ই অনুসরণে উৎসাহিত করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, জলবায়ু-ইতিবাচক প্রচেষ্টার লক্ষ্য কেবল কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জন করা নয়, বরং বায়ুমণ্ডল থেকে অতিরিক্ত সিও২ অপসারণ করা।
বাংলাদেশসহ টেকসই নেতাদের জন্য জলবায়ু পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুব নেতাদের এসব উদ্যোগ স্থানীয় সম্প্রদায়কে একত্রিত করছে এবং আন্তর্জাতিক পদক্ষেপকে অনুপ্রাণিত করছে।
নির্গমন কমানো, অভিযোজন এবং সবুজ শক্তি রূপান্তরের জন্য ব্যাপক পরিষেবাগুলোর গুরুত্বকেও জোর দিয়ে আসছে পরিবেশগত পরীক্ষা এবং ছাড়পত্র প্রদানকারী একটি বৈশ্বিক সংস্থা এসজিএস। সংস্থার পরিষেবাগুলো জিএইচজি নির্গমন পরামর্শ থেকে শুরু করে কার্বন নিরপেক্ষতা যাচাইকরণ পর্যন্ত বিস্তৃত। বেসরকারি এবং সরকারি উভয় খাতের নেতৃত্বকে সমর্থন করে।
তরুণদের নেতৃত্বে বৈশ্বিক আন্দোলন
কপ২৯ গোলটেবিল বৈঠকে জোর দিয়ে বলা হয়, জলবায়ু কর্মকাণ্ডে তরুণদের সম্পৃক্ততা নিছক প্রতীকী নয়। বরং এটি একটি প্রাণোচ্ছল এবং টেকসই ভবিষ্যত অর্জনের জন্য অপরিহার্য। টিম ইউরোপের সহযোগিতায় বাংলাদেশি তরুণ জলবায়ু নেতারা কার্যকর কৌশল এবং জবাবদিহিতার জন্য চাপ দিচ্ছেন। তাদের বার্তা পরিষ্কার: রূপান্তরমূলক পদক্ষেপের এখনই সময়।
বাকুতে কপ২৯ সম্মেলন যখন শুরু হচ্ছে, তখন এটা স্পষ্ট যে, আজকের তরুণরা কেবল জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত নয়, বরং পরিবর্তনের কঠোর সমর্থকও। বিশ্ব সম্প্রদায় শুনছে, এবং এটি এই প্রজন্মের প্রতিশ্রুতি এবং প্রচেষ্টা যা অবশেষে জলবায়ু পরিবর্তনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।
আরও পড়ুন: কপ-২৯ সম্মেলনের আগে জলবায়ু ন্যায্যতার দাবিতে যুববন্ধন
১ মাস আগে