জাতভেদে ফলন
কম খরচে শীতকালীন ফসলের জাতভেদে ফলন বাড়ানো সম্ভব: বাকৃবি অধ্যাপক হারুন
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. হারুন অর রশিদ বলেছেন, আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ব্যবহার করে ও কম খরচেই শীতকালীন বিভিন্ন ফসলের জাতভেদে ফলন অনেকাংশেই বাড়ানো সম্ভব।
তিনি বলেন, ‘মালচিং, মাচা দেওয়া, ভার্টিকেল ফার্মিং বা উলম্ব কৃষি, পলিটানেল বা নেট হাউস, ভার্মি বা কেঁচো কম্পোস্ট পদ্ধতি ব্যবহার করে কম খরচে ও ফলন বেশি হওয়ায় কৃষকেরা লাভবান হতে পারবেন।
মালচিং সম্পর্কে অধ্যাপক হারুন বলেন, শীতকালে ফসল চাষে পানি একটি বড় সমস্যা। আলু, গাজর, মূলা ছাড়াও ফুলকপি, বাঁধাকপি স্কোয়াশ ও ব্রোকলিতে মালচিং করা হয়। এ পদ্ধতিতে শীতকালেও মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখা যায়। গাছ পর্যাপ্ত পানি পাওয়ায় এ পদ্ধতিতে ফলনও বেড়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, পলিথিন মালচিং ভালো ফলন দিলেও পলিথিন পরিবেশবান্ধব না হওয়ায় এর বিকল্প হিসেবে প্রাকৃতিক ও জৈব মালচিং উপকরণ ব্যবহার করতে পারেন। যেমন বিভিন্ন গাছের শুকনা পাতা (কাঁঠাল পাতা, কলা গাছের পাতা ইত্যাদি), কচুরিপানা, কাঠের গুঁড়ো, গাছের বাকল, খড় ইত্যাদি। এসব উপকরণে তেমন কোনো খরচ হবে না বরং এগুলো পচে মাটির উর্বরতা বাড়াবে। এছাড়া আর্দ্রতা রক্ষার মাধ্যমে ফলন অনেকাংশে বৃদ্ধি করবে।
আরও পড়ুন: এডিবি-ইডিসিএফের অর্থায়নে একসঙ্গে কৃষি গবেষণা করবে ইউজিসি ও বাকৃবি
টমেটোর উৎপাদন বৃদ্ধি প্রসঙ্গে অধ্যাপক হারুন বলেন, বর্তমানে উচ্চ ফলনশীল টমেটো জাতগুলো অনেক বেশি শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট হয়ে থাকে। একক খুঁটি ব্যবহারে ওই সকল টমেটো গাছের শাখা প্রশাখা বৃদ্ধির তেমন সুযোগ পায় না ও গাছ মাটিতে হেলে পড়ে। তবে এক্ষেত্রে মাচা দিলে ফলন অনেকাংশে বৃদ্ধি পেতে পারে। এতে শাখা প্রশাখা বৃদ্ধির সুযোগ পাওয়ায় গাছে ফলন বেশি আসবে এবং টমেটো মাটির সংস্পর্শে আসতে পারবে না বিধায় পচে যাওয়া বা নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে।
এছাড়া অধ্যাপক হারুন তার একটি গবেষণার কথা উল্লেখ করে বলেন, চেরি টমেটোর ক্ষেত্রে মাচা পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ফলন বাড়ানো সম্ভব।
একই জায়গা থেকে কয়েকগুণ বেশি লাভ পেতে ভার্টিকেল ফার্মিং বা উলম্ব কৃষির পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, কৃষি জমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে ভার্টিকেল ফার্মিং বা উলম্ব কৃষি পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, মাটির ওপরে একাধিক স্তরে চাষাবাদ করা হয় বলে অল্প জায়গায় দুই থেকে তিন গুণ বেশি ফলন পাওয়া সম্ভব। একজন কৃষক খুবই কম খরচে উলম্ব কৃষির একটি কাঠামো তৈরি করে কয়েক মৌসুম উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করতে পারবে।
আমাদের দেশে ঋতুর ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে, অসময় বৃষ্টিপাত, খরা ইত্যাদি দেখা দিচ্ছে এবং কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে এটি আমাদের জন্য একটি মারাত্মক হুমকি জানিয়ে অধ্যাপক বলেন, কম খরচে পলিটানেল বা নেট হাউস তৈরি করে কৃষক অনেক বেশি লাভবান হতে পারে। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করে বছরব্যাপী নিরাপদ ফসল উৎপাদনের আধুনিক ও নির্ভরযোগ্য একটি প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তি ব্যবহারে আর্দ্রতা এবং তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে বছরব্যাপী উচ্চমূল্যের ও আগাম ফসল ফলানো যায়। এছাড়া শুধুমাত্র আগাম চাড়া উৎপাদন করেও একজন কৃষক প্রচুর লাভবান হতে পারবে।
জমিতে শুধু গোবর ব্যবহার না করে ভার্মি বা কেঁচো কম্পোস্ট ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ভার্মি বা কেঁচো কম্পোস্ট মাটির উর্বরতা, নাইট্রোজেন, ফসফরাসের পরিমাণ তুলনামূলক বাড়ায়। যা ফলন বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
ফসলের পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে অধ্যাপক বলেন, পোকামাকড় নিয়ন্ত্রেনের জন্য কীটনাশক ব্যবহারের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল না হয়ে ইয়েলোস্টিকি ট্র্যাপ বা হলুদ ফাঁদ, ফেরোমোন ট্র্যাপ ব্যবহার করা যায়।
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে ইয়েলোস্টিকি ট্র্যাপ বা হলুদ ফাঁদ খুবই কার্যকর। এতে পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে কৃষকের কীটনাশক ব্যবহার কমে যাবে।
গাছের রোগ প্রতিরোধ করতে আগাম প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে জানিয়ে অধ্যাপক হারুন বলেন, ফসল চাষের পূর্বে মাটি শোধন করলে গাছের বিভিন্ন রোগের প্রকোপ কমে যাবে। আবার বিভিন্ন ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নিলেও অনেক রোগের প্রকোপ কমে যাবে।
এছাড়া কৃষকদের ফসল চাষের সময় উল্লেখযোগ্য কোনো রোগের ক্ষেত্রে কৃষি কর্মকর্তা ও উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়ার পরামর্শ দেন অধ্যাপক হারুন।
আরও পড়ুন: বাকৃবিতে কৃষকদের বিনামূল্যে টমেটোর চারা ও গাজরের বীজ বিতরণ
ভর্তি পরীক্ষার্থীদের জন্য বাস সার্ভিস চালু বাকৃবি প্রশাসনের
১৪ ঘণ্টা আগে