অতিরিক্ত তাপমাত্রা
জাতিসংঘের আলোচনায় কৃষকদের জন্য জলবায়ু তহবিলের অংশ দাবি
অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে এ বছর ফিলিপাইনের এসথার পেনুনিয়ার ছোট খামারে আনারস নষ্ট হয়ে গেছে।
এশিয়ান ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল পেনুনিয়া জীবিকা নির্বাহের জন্য খামারের উপর নির্ভর করেন না। তাই তিনি বিপর্যস্ত হওয়ার চেয়ে বেশি হতাশ হয়েছেন।
তবে পেনুনিয়া চিন্তিত তার মতো বিশ্বব্যাপী লাখো ক্ষুদ্র কৃষকদের নিয়ে। কারণ তারা ধানখেত, নারকেল বাগান এবং সবজি খেতের উপর নির্ভরশীল। অথচ সবই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হুমকির মুখে।
এটাই কারণে এ বছরের জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করতে বরাদ্দের কিছু অংশ কৃষি খাতে দেবে বলে আশা করছেন তিনি। বিশেষ করে যারা বিশ্বের অনেক অঞ্চলে অধিকাংশ মানুষকে খাদ্য সরবরাহ করে, এমন কৃষিজীবী পরিবারের জন্য।
তিনি বলেন, ‘আপনি যদি ক্ষুদ্র কৃষকদের সাহায্য না করেন, তাহলে আপনি খাবার কোথা থেকে পাবেন? কে আপনার জন্য কৃষিকাজ করবে? কে মাছ ধরবে, কে মধু সংগ্রহ করবে, কে আপনার সবজি রোপণ করবে?’
আরও পড়ুন: মিয়ানমারের রাখাইনে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাস জাতিসংঘের
গ্লোবাল সাউথের অনেক দেশের জন্য অতিরিক্ত অর্থ প্রয়োজন। বিশেষ করে টাইফুনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মাঠের পুনরুদ্ধার, কৃষকদের অত্যাধিক খরা থেকে সুরক্ষিত রাখতে এবং উষ্ণ পৃথিবীর জন্য ভালো বীজ, ভালো সার ও উন্নত সেচ অবকাঠামো প্রস্তুত করতে এই অর্থ প্রয়োজন।
তবে, বিশ্ব সম্পদ ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞদের মতে, দরিদ্র দেশগুলোর প্রয়োজন ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের জলবায়ু অর্থায়ন। অর্থাৎ ধনী দেশগুলো যে পরিমাণ অর্থ দিতে প্রস্তুত তার মধ্যে বিশাল ব্যবধান রয়েছে।
যে চুক্তিই হোক না কেন, এটা নিশ্চিত যে টাকা সংগ্রহ করতে হবে। এখানে একটি বিষয় নিয়ে বিতর্ক রয়েছে-ঠিক কতটুকু অর্থ কৃষির জন্য এবং কতটুকু অর্থ জীবাশ্ম জ্বালানির নির্গমন কমানোর জন্য বরাদ্দ দেওয়া উচিত।
ক্লাইমেট পলিসি ইনিশিয়েটিভের গত বছরের রিপোর্ট অনুযায়ী, ক্ষুদ্র কৃষকরা জলবায়ু অর্থায়নের ১ শতাংশেরও কম পান। একই সময়, খাদ্য ব্যবস্থা—অর্থাৎ খাবার তৈরি, পরিবহন ও নিষ্পত্তির সব প্রক্রিয়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত। পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ উষ্ণায়নের জন্য গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন দায়ী।
উষ্ণ হয়ে যাওয়া জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে কৃষকদের প্রচেষ্টা আরও কঠিন হয়ে ওঠছে বলে মন্তব্য করেছেন সিজিআইএআরের নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইসমাহানে এলৌফি। কপ২৯-এ ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য জলবায়ু-স্মার্ট সমাধান নিয়ে একটি প্যানেল আলোচনা চলাকালে তিনি বলেন, ‘যদি আমরা এই সমস্যার সমাধান করতে চাই, তবে আমরা কীভাবে এমন একটি খাতে বিনিয়োগ না করে থাকব, যা সমস্যার তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী?’
জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে কৃষির অভিযোজনের জন্য কেন দেশগুলোকে সহায়তা করা উচিত তার একটি সহজ কারণ তুলে ধরেন সেভ সয়েল নামে একটি আন্দোলনের প্রধান বৈজ্ঞানিক এবং কারিগরি কর্মকর্তা প্রবীনা শ্রীধর।
যেখানে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর ব্যাপারে সম্মত হওয়া অনেক কঠিন, সেখানে কৃষি সমাধানগুলোর জন্য সহায়তা প্রদান করা তুলনামূলকভাবে সহজ হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও ধাঁধাটি সমাধান করতে পারিনি। কিন্তু সেসব ধাঁধার যেটুকু সমাধান করতে পেরেছি আমরা, সেগুলো দেখে কাজ শুরু করছি না কেন?’
তবুও অন্যরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন, এর ফলে জীবাশ্ম জ্বালানি মোকাবিলান মতো সবচেয়ে বড় সমস্যা থেকে মনোযোগ সরে যাবে।
বার্কলে আর্থের একটি গবেষণা সংস্থার বিজ্ঞানী জেক হাউসফাদার একটি ইমেইল বার্তায় বলেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমন কমাতে ভূমি ব্যবস্থাপনার পরিবর্তনে ‘সত্যিকার সম্ভাবনা’ রয়েছে।
তবে তিনি বলেন, বৈশ্বিকভাবে এর মাধ্যমে প্রতি বছর প্রায় এক বিলিয়ন টন কার্বন ডাইঅক্সাইড কমানো সম্ভব। যদিও বিশ্বে প্রতি বছর যে ৪০ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয়, এটি তার একটি ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ মাত্র।
আরও পড়ুন: যেকোনো হত্যাকাণ্ডের তদন্ত হওয়া উচিত: জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান
১ ঘণ্টা আগে