ভবদহের জলাবদ্ধতা
‘ভবদহের জলাবদ্ধতায় অভয়নগরে পূরণ হয়নি আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা’
ভবদহ এলাকার জলাদ্ধতায় যশোরের অভয়নগরে পূরণ হয়নি আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা। ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে দুঃশ্চিন্তা গ্রাস করছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের। প্রতিবছরই রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়ে থাকলেও এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন।
উপজেলার কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৮ ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভার রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল হাইব্রিড ১ হাজার ৭৯০ হেক্টর, উফসী ৫ হাজার ৮২৫ হেক্টর এবং স্থানীয় ২৫ হেক্টর মিলে মোট ৭ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে অর্থাৎ ৭ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে চাষ হলেও ভবদহে জলাবদ্ধতার কারণে ১ হাজার ৮২৬ হেক্টর জমির আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ফলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আমন ধানের উৎপাদন কম হবে প্রায় ৯ হাজার ৩৮ মেট্রিক টন। এবার আমন উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৫ হাজার ৮১৪ হেক্টর জমিতে। গতবছর আমন উৎপাদন হয়েছিল ৭ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। এ বছর ১ হাজার ৭৩৬ হেক্টর কম জমিতে রোপা আমন উৎপাদন হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুন্দলী ইউনিয়নের পুরো ৮৩৫ হেক্টর জমির আমন উৎপাদন।
কৃষি কার্যালয় আরও জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার নওয়াপাড়া পৌরসভায় আমন আবাদ হয়েছিল ৮৫০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু ভবদহ জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩১০ হেক্টর জমির ধান। উপজেলার প্রেমবাগ ইউনিয়নে রোপা আমন ধানের চাষ হয়েছিল ১ হাজার ১৫৪ হেক্টর জমিতে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৩৩ হেক্টর জমির ধান। সুন্দলী ইউনিয়নে চাষ হয়েছিল ৮৩৫ হেক্টর জমিতে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুরো ৮৩৫ হেক্টর জমির ধান। চলিশিয়া ইউনিয়নে চাষ হয়েছে ১ হাজার ১১ হেক্টর জমিতে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬০ হেক্টর জমির ধান। পায়রা ইউনিয়নে চাষ হয়েছে ৬০৫ হেক্টর জমিতে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮৮ হেক্টর জমির ধান। সবচেয়ে বেশি আমন আবাদ হয়েছে শ্রীধরপুর ইউনিয়নে চাষ হয়েছে ১ হাজার ৩৯২ হেক্টর জমিতে। বাঘুটিয়া ইউনিয়নে চাষ হয়েছে ১ হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে, শুভরাড়া ইউনিয়নে চাষ হয়েছে ৪৬০ হেক্টর জমিতে। সিদ্দিপাশা ইউনিয়নে চাষ হয়েছে মাত্র ১৪০ হেক্টর জমিতে।
উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নের আড়পাড় গ্রামের কৃষক উজ্জ্বল দাস বলেন, ‘শুড়িরডাঙ্গা বিলে বর্গা নিয়ে রোপা আমন ধান লাগিয়েছিলেন ১ একর জমিতে। জলাবদ্ধতার কারণে পুরো ধানই নষ্ট হয়ে গেছে। পরের জমি বর্গা নিয়ে স্বর্ণা জাতের আমন ধান চাষ করেছিলাম।’
উপজেলার চলিশিয়া ইউনিয়নের কোটা গ্রামের রবিউল ইসলাম বলেন, ‘চাত্রার বিলে দুই বিঘা জমিতে রোপা আমন লাগিয়েছি। একে তো বাড়ির উঠানে পানি। তারপর পুরো ধানই নষ্ট হয়ে গেল। পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে কিভাবে চলব, তাই নিয়ে ভীষণ দুঃশ্চিন্তায় আছি। সরকার যদি একটু ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে তাহলে বাঁচা যায়।’
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, ‘ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধতা সমস্যার জন্য আমনের এই উৎপাদন কম হয়েছে। জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য সরকার সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। তবে যেসব জলাবদ্ধ এলাকা থেকে আগামী ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে পানি নেমে যাবে সেখানে স্বল্পমেয়াদি ও উচ্চফলনশীল বিনা-১৪ ধান আবাদের পরিকল্পনা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বর্তমান সময়ের সবজি উৎপাদন বাড়ানোর ওপরেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় সবজি চাষ বাড়ানোর জন্য ৪৭৫ জনকে উফশী সবজি বীজ ও জনপ্রতি নগদ ১ হাজার দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বোরো মৌসুমে যাতে বেশি ধান উৎপাদন করা যায় সেদিকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করব।
৩ দিন আগে