মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ
ডেমরার মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে ভাঙচুর, লুটপাটের অভিযোগ
ভুল চিকিৎসায় শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি ভাঙচুর ও হামলায় সোমবার ফের উত্তপ্ত ঢাকার ডেমরা। রবিবারের হামলার জের ধরে ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে ভাঙচুর চালান কবি নজরুল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে।
এ সময় কলেজের কম্পিউটারসহ মূল্যবান কাজগপত্র লুটপাটের অভিযোগ করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
এর আগে রবিবার (২৪ নভেম্বর) ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দীর কলেজের সঙ্গে ৩৫ কলেজের সংঘর্ষে ৫০ এর বেশি আহত হয়। এর একদিন পরই সোমবার (২৫ নভেম্বর) আবারও উত্তপ্ত হয়েছে পুরান ঢাকা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ডেঙ্গু শক সিনড্রমে আক্রান্ত হয়ে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিৎ হালদার। ১৬ নভেম্বর সকালে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হন তিনি। ১৮ নভেম্বর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। অভিজিৎ এইচএসসি-২৪ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন।
তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ২০ ও ২১ নভেম্বর হাসপাতাল অবরোধ করেন মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ এদিন ন্যাশনাল মেডিকেলের পক্ষ নিয়ে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের উপর আক্রমণ করেন। পরে প্রায় ৩৫টি কলেজের শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে গত রবিবার কবি নজরুল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজে ভাঙচুর চালান ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে। গতকাল সন্ধ্যায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও আজ আবারও দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা চালান।
আরও পড়ুন: ‘ভুল চিকিৎসায়’ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, হাসপাতাল ও কলেজে ভাঙচুর
এই কলেজের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিজিতের ভুল চিকিৎসা করেছে। তারা এর বিচার চাইতে আসেন। কিন্তু ছাত্রদল তাদের ওপর হামলা করে। এর প্রতিবাদেই অন্য সব কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানাতে এসেছেন। দুপুরে পূর্বঘোষিত 'সুপার সানডে' কর্মসূচির অংশ হিসেবে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের সামনে জড়ো হন ৩৫ কলেজের শিক্ষার্থীরা। "ইউনাইটেড কলেজ অব বাংলাদেশ" নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ অন্যান্য কলেজের শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনে সংহতি জানান।
আন্দোলনে ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ, ঢাকা কলেজ, ঢাকা আইডিয়াল কলেজ, সিটি কলেজ, গিয়াসউদ্দিন কলেজ, সরকারি তোলারাম কলেজ, ইমপেরিয়াল কলেজ, বোরহানউদ্দিন কলেজ, বিজ্ঞান কলেজ, দনিয়া কলেজ, লালবাগ সরকারি কলেজ, উদয়ন কলেজ, আদমজী, নটরডেম, রাজারবাগ কলেজ, নূর মোহাম্মদ, মুন্সি আব্দুর রউফ কলেজ, সিদ্ধেশ্বরী কলেজ, গ্রিন লাইন পলিটেকনিক, ঢাকা পলিটেকনিক, মাহবুবুর রহমান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ঢাকা দনিয়া কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন কলেজ অংশ নেয়।
মৃত শিক্ষার্থী অভিজিতের এক বন্ধু বলেন, ‘আমাদের উপর কেন হামলা হলো? আমরা এখানে এসে কারো সঙ্গে কথা বলব তেমন কেউ নেই। সবাই পালিয়েছে। কথা বলার কেউ থাকলে আমরা আমাদের দাবি জানিয়ে চলে যেতে পারতাম। কিন্ত একজন গার্ডও নেই। আমরা অভিযুক্ত ডাক্তারের লাইসেন্স বাতিল করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই। এছাড়া আমাদের উপর যারা হামলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের পদক্ষেপ নিতে হবে।’
তবে শিক্ষার্থীরা কবি নজরুল কলেজ ছাত্রদলের উপর অভিযোগ করলেও এ ঘটনায় তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানান কবি নজরুল কলেজের ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কাওসার হোসেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের পক্ষে। আমরা কোনো হামলা করিনি।’
কলেজ ভাঙচুরের বিষয়ে সোহরাওয়ার্দী কলেজের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি তাদের একবার বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। পরে দলবল নিয়ে আবার এসেছে। অনেক কম্পিউটার নিয়ে গেছে, ভেঙে ফেলেছে। বিএনসিসির রাইফেল নিয়ে গেছে। ১৭টি ডিপার্টমেন্টই ভাঙচুর করেছে।এক শিক্ষকের কার, চারটা মোটরসাইকেল ভেঙেছে।’
সোহরাওয়ার্দী কলেজের উপাধ্যক্ষ ড. ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘কাল ওই কলেজের প্রিন্সিপাল ও আমাদের প্রিন্সিপাল একটা সমঝোতায় এসেছিলেন। আমরা আশ্বস্ত ছিলাম এমন কিছু হবে না। কিন্ত তারপরও হামলা হলো। পুরো কলেজে হামলা চালিয়েছে। আমার রুম পর্যন্ত ভেঙে ফেলেছে।’
সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কাকলী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘আজ পরীক্ষা ছিল। গতকাল রাত পর্যন্ত কলেজের প্রিন্সিপাল সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বললেন শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলছেন। অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা বললেন কিছু হবে না। সোয়া ১টার দিকে কিছু বোঝার আগেই সিসিটিভিতে দেখি প্রচুর ছেলেমেয়ে এসেছে। গেট ভেঙে ঢুকেছে। ইচ্ছামতো ভাঙচুর করেছে। গাড়ি ভাঙচুর করেছে। গ্যাস লাইন ছেড়ে দিছে।’
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের মার্কশিট, খাতা, ল্যাপটপ কিছুই নেই। আমি ঢাবিতে জানিয়েছে। প্রোভিসি বলেছিলেন অ্যাপ্লিকেশন পাঠাতে। ভাঙচুরের জন্য তাও পাঠাতে পারিনি। এরা কি ছাত্র হতে পারে? এতো নাশকতা তো ছাত্র করতে পারে না।’
এদিকে লালবাগ জোনের ডিসি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘গত ১৮ নভেম্বর মাহবুবুর রহমান কলেজের একজন মারা যান। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যান আমরা জানতে পারি। গত বুধবার কলেজের শিক্ষার্থীরা হাসপাতালের এখানে এসেছিল। এ ঘটনায় একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু এরপরেও গত বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীরা অধিক সংখ্যায় এসেছে। শিক্ষার্থীদের দাবি অবহেলাজনিত মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বার বার বলেছে আমরা শিক্ষার্থী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সঙ্গে নিয়ে তদন্ত করব। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চাপের মুখে রাখা হয়।’
১ ঘণ্টা আগে