জুলাই গণঅভ্যুত্থান
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দায়ের
চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এলাকায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুলিতে আহত হওয়ার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১৮২ জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম আদালতে আরও একটি মামলা দায়ের হয়েছে।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বক্কর সিদ্দিকের আদালতে মামলাটি করেন চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র একেএম নুরুল্লাহ (২৩)।
মামলায় পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীসহ ১৮২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আদালত বাদীর বক্তব্য গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাসমিন আক্তার নিসাত।
পড়ুন: শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি ফখরুলের
মামলার অন্য আসামিরা হলেন, তৎকালীন নগর পুলিশের সাবেক কমিশনার সাইফুল ইসলাম, সাইফ পাওয়ার টেকের এমডি তরফদার রুহুল আমিন, আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত, এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদ, শেখ হাসিনার সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক এমপি আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সাবেক এমপি মুজিবুর রহমান ও শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান প্রমুখ।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট নগরের নিউমার্কেট–সংলগ্ন রেলওয়ে জামে মসজিদের সামনে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেন বাদী। আসামিদের নির্দেশে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা ও অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তার উপর হামলা চালান। সেদিন বাদী গুলিবিদ্ধ হন।
বাদীর দুই পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লাগে। বাদী চিকিৎসাধীন থাকায় ও জড়িত আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করতে সময় লাগে, যার কারণে মামলা করতে দেরি হয়েছে।
৯৪ দিন আগে
‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও আগামী দিনের জনপ্রশাসন’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত
বাংলাদেশ আডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের উদ্যোগে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও আগামী দিনের জনপ্রশাসন’ শীর্ষক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) এসোসিয়েশনের প্রধান কার্যালয়ে, বিয়াম ফাউন্ডেশন অডিটরিয়ামে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া। মুখ্য আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয় সচিব ড. মো. সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া
আলোচক ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দা পাসনা কবীর, অফিসার্স ক্লাব ঢাকার সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সচিব জনাব এ. বি. এম. আবদুস সাত্তার, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবলতার সচিব কানিজ মওলা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাফিউল।
সেমিনারে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্যরা বিশেষ আলোচনায় অংশ নেন। এসময় শাহরিয়ার খান আনাসের মা সানজিদা খান, শহীদ মাহামুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তি, শহীদ আবু সাঈদের ভাই মো. রমজান আলী ও শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুখ' ভাই নীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বক্তব্য দেন। তারা আগামী দিনের জনপ্রশাসনের কাছে জুলাই গণঅভ্যূত্থানের শহীদ পরিবার এবং দেশবাসীর প্রত্যাশা তুলে ধরেন।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মনলয়ের সচিব ও বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি জনাব মো. নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের সিনিয়র সচিব ও সচিবসহ সকল ব্যাচের কর্মকর্তাদের সরব ও নবম উপস্থিতি ছিল।
সেমিনারে প্রধান অতিথি প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া বলেন, কোনো একটি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে পৃথিবীতে এত মানুষ আর কোথাও মারা যাননি। ২০১৮ সালের আন্দোলন বৃথা যায়নি। তখন শিশু কিশোরের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখয়েছিলো রাষ্ট্রপরিচালনাকারীরা ব্যর্থ। তাদের সেই বার্তা কেউ গ্রহণ করেনি। ২০২৪ সালে তারা তা বাস্তবায়ন করেছে। সিভিল সার্ভিসের সামনে দুটি পথ রয়েছে। এর যেকোনো একটি পথ বেছে নিতে হবে। সিভিল সার্ভিসকে পুরনো পথে নেওয়া যাবে না। বর্তমান সরকারের আমলে একটি মহাসুযোগ তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঢাকায় ‘নি হাও! চায়না-বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা উন্নয়ন প্রদর্শনী’ সেমিনার অনুষ্ঠিত
এ সময় প্রশাসন ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উপর দলীয়করণ নিয়মের বাইরে গিয়ে কাজ করার কোনো চাপ নেই। সরকার কর্মকতাদের আইন কানুনের ভিতরে থেকে কাজ করার সুযোগ দিচ্ছে। এ সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, গত সরকারের আমলে রাজনীতিকরণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে। অভ্যূত্থানের ফলে বঞ্চিত অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছেন। এখন রাজনীতি থেকে প্রশাসনকে দূরে রাখতে হবে। প্রশাসনে যোগ্য মানুষ থাকবেন। পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করবেন। তবে দলীয় নীতি বাস্তবায়ন করার কারণে সমস্যাটা হয়েছে। আমাদের গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করতে হবে। মাঠ প্রশাসনে মনিটরিংয়ের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে জনগণ ও শহীদ পরিবারকেও যুক্ত করার দরকার। সিভিল সার্ভিসের যেমন বহু পুরোনো ইতিহাস রয়েছে, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সভ্যতার সূতিকাগার। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে প্রশাসনের মেলবন্ধন শক্ত করতে হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রাণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থানীয় সরকারের কাজগুলো প্রশাসনের কর্মকর্তারা বাস্তবায়ন করছেন। আমরা পিছনে তাকাবো না। সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের সহকর্মীদের মধ্যে সাহস ও সততা রক্ষায় করতে হবে। কর্মকর্তাদের কেউ দুর্নীতি করলে এ দায় কেউ নেবে না। পাঠ্য বইতে শহীদ আনাসের চিঠি যুক্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সরকার গুরুত্ব দিয়ে সংস্কার বাস্তবায়ন করছে।
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব কানিজ মওলা বলেন, আমরা কাজ করতে আগ্রহী। আমাদেরকে কাজে লাগান। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আজ্ঞাবাহী হওয়ার জন্য জনগণের টাকায় আমাদের বেতন দেওয়া হয় না। জনগণের সেবার জন্যই বেতন দেওয়া হয়। আর কেউ যাতে ফ্যাসিস্ট না হতে পারে, সে জন্য আমরা কাজ করব।
অফিসার্স ক্লাব ঢাকার সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সচিব জনাব এ. বি. এম. আবদুস সাত্তার বলেন, দলবাজি ও দুর্নীতি বন্ধ করা না গেলে প্রশাসন ক্যাডারের অস্তিত্ব বিলীন হবে। আগমী নির্বাচনে কেউ যাতে আমলাদের ব্যবহার করতে না পারে সে জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপকড. সৈয়দা লাসনা কবীর বলেন, বিগত আমলে রাজনীতির সঙ্গে প্রশাসনকে যুক্ত করা হয়েছিল। দুর্নীতির জন্য প্রশাসনকে ব্যবহার করা হয়েছিল। ফলে সরকারি কর্মচারীরা জনগণের সেবকের স্থলে জনগণের প্রভু হয়ে গিয়েছিল। জুলাই গণঅভ্যুত্থান শুধু কোটার জন্য হয়নি; জনগণের প্রত্যাশা পূরণে প্রশাসনকে সেবামূলক মানসম্মত ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম সততা, দক্ষতা, নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে প্রশাসনের ভবিষ্যত কর্মকাণ্ড পরিচালনার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সেমিনারে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের সচিব ড. মো. সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া জনপ্রশাসনের বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করেন এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের মহাসচিব ও ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী। তিনি বলেন, বৈষম্যহীন সমাজ, মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে দেশ গড়ার প্রত্যয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল। আমাদের অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি ছিল। ৫ আগস্ট থেকে ৮ আগস্ট দেশে সরকার ছিল না। সে সময়ে প্রশাসনের সদস্যরা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করেছেন।
আরও পড়ুন: সক্ষমতা বাড়াতে এনবিআরের ডিজিটাল রূপান্তর প্রয়োজন: সেমিনারে বক্তারা
সেমিনারে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রশাসনের কর্মকর্তা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ও দর্শনকে ধারণ করে আগামী দিনে দলীয় চিন্তা ও মতাদর্শের ঊধ্বে উঠে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে ব্রতি হবে মর্মে সেমিনারে জোরালো প্রত্যয় ও প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়।
১১৮ দিন আগে
৪ আগস্ট রাতে যেভাবে গুজব রুখে দিয়েছিল একটি ছবি
২০২৪ সালের ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল প্রথমে কোটা সংস্কারের আন্দোলন। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে ধাপে ধাপে এ আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। দেশের কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষের অভিন্ন আন্দোলনে পরিণত হয় এটি।
তবে এই আন্দোলন রুখতে তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের চেষ্টার কমতি ছিল না। শুধু তা-ই নয়, আন্দোলন যতটা খাটো করে বিশ্বমঞ্চে উপস্থাপন করা যায়, তার প্রচেষ্টাও ছিল অবিরত। একটা পর্যায় থেকে তো ইন্টারনেট সেবাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
আন্দোলনের সেই সময়টায় ছাত্রজনতাকে বিভ্রান্ত করতে তৎকালীন সরকারপক্ষের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল গুজব। ৫ আগস্ট আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নেওয়ার আগের রাতে, অর্থাৎ ৪ আগস্ট রাতে তেমনভাবেই আরও একবার গুজব ছড়িয়ে শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে একটি ছবি সেই সময় গুজবের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল।
সেদিন রাতে আমরা কয়েকজন সাংবাদিক বন্ধু মিলে তোলা একটি ছবি তাই আজ হয়ে গিয়েছে ইতিহাসের অংশ।
গণঅভ্যুত্থান চলাকালে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সাংবাদিক টিএসসির অতিথি কক্ষে অবস্থান নিয়ে সারা দেশে মানুষের কাছে ন্যায় ও নিষ্ঠার সঙ্গে সংবাদ পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টায় ব্রতী ছিলাম।
এর মাঝে ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে সরকার পতনের এক দফা ঘোষণা করা হয়। তখন থেকে আমাদের ব্যস্ততা আরও বেড়ে যায়। পরের দিন ৪ আগস্ট সারা দিনের প্রোগ্রাম কভার করে রাতে ক্লান্ত শরীরে গিয়েছিলাম বিশ্রাম নিতে। এ সময় ফেসবুক স্ক্রল করতে গিয়ে দেখি, আওয়ামী লীগ–ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের গুজবমূলক পোস্টে সয়লাব ফেসবুকের ফিড।
সেসবের মধ্যে অন্যতম ছিল— সারা দেশ থেকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের লাখ লাখ নেতাকর্মী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার রাজু ভাস্কর্য, টিএসসি ও শাহবাগে অবস্থান নিয়ে পুরো এলাকার দখল নিয়েছে। ওই দাবির সত্যতা প্রমাণে পুরনো একটি ভিডিও শেয়ার করে তারা, যার শিরোনাম ছিল, ‘৭ মিনিটে টিএসসি-শাহবাগ দখল।’
এসব ভিডিও দেখে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরিচিত ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা ফোন দিয়ে ঘটনার সত্যতা জানতে চান। দীর্ঘ সময় ধরে স্বৈরাচারের শাসনে অতিষ্ট এসব মানুষের মনে মুক্তির যে সম্ভাবনার কুঁড়ি পাপড়ি মেলতে শুরু করেছিল, তা বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়েই একের পর এক ফোন দিচ্ছিলেন নানাজন।
অথচ, সারা দিন বাইরে ঘুরে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতে হোস্টেলের কক্ষে ফেরার আগে আমি যা দেখেছি, সেই সত্যের পুরোপুরি বিপরীত ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ওইসব পোস্ট ও ভিডিও। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সেই রাতে কোনো মানুষ ছিল না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় ছিল পিনপতন নীরবতা।
ফলে এমন একটি আন্দোলন গুজবে বিভ্রান্ত হয়ে তার পথ হারাবে, গতি হারাবে, তা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল ভীষণ। তাই সহকর্মী-বন্ধুদের সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি জানাই এবং এ বিষয়ে মানুষকে সতর্ক করার বিষয়টি আমাদের আলোচনায় উঠে আসে। আমরা সিদ্ধান্ত নিই, ফেসবুকের ওই গুজবকে উন্মোচন করে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের ষড়যন্ত্র রুখে দেব।
এরপর আজকের পত্রিকার ঢাবি প্রতিনিধি ছিদ্দিক ফারুক, দৈনিক সমকালের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি যোবায়ের আহমদ, দৈনিক নয়া দিগন্তের হাসান আলী, আমাদের সময়ের আশিকুল হক রিফাত, ইত্তেফাক পত্রিকার নেসার উদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে আমি টিএসসিতে আসি। এরপর দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের প্রতিনিধি জোবায়ের হোসেনের তোলা ছবিটি আমরা নিজেদের প্রোফাইল থেকে শেয়ার করি। সেইসঙ্গে লিখে দিই, আমরা ছাড়া টিএসসিতে আর কেউ নেই। পাশাপাশি, কেউ যেন গুজবে বিভ্রান্ত না হয়, সেই আহ্বান জানাই।
মুহূর্তের মধ্যে ছবিটি ভাইরাল হয়ে যায়। বিভিন্ন গ্রুপ, পেজ ও প্রোফাইলে ছবি ছড়িয়ে যায়। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও এ নিয়ে খবর বের হয়।
আমাদের ওই ছবিটি শেয়ার করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা দেশের সকল স্তরের মানুষকে ভয় না পেয়ে রাস্তায় নেমে আসার ঘোষণা দেন।
ফেসবুকে এ ছবি দেওয়ার পর বিভিন্নজনের কাছ থেকে সাধুবাদ পেলেও আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে আমরা পাই নানা ধরনের হুমকি। ছবিটি আপলোড করার পর থেকেই গণহারে আমাদের আইডিগুলোকে রিপোর্ট করা শুরু হয়। মৃত্যুর হুমকিসহ অসংখ্য গালাগালপূর্ণ মেসেজে ভরে যায় ইনবক্স।
তবে এতকিছু করেও সত্যকে চাপা দিতে পারেনি তারা। স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। তারপর গণভবন অভিমুখে জনস্রোত শুরু হলে একপর্যায়ে দেশে ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে দীর্ঘ ১৭ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটে।
মুক্তিকামী মানুষের মনোবল জোগাতে আমদের সেই ছবিটি যে একটি মাইলফলক ছিল, গণঅভ্যুত্থানের অংশীদার অনেকেই তা স্বীকার করেন আজও। গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া সমন্বয়করা, অংশগ্রহণকারীরা দেখা হলেই ছবিটির প্রসঙ্গ তোলেন; আমাদের উপস্থিত বু্দ্ধির প্রশংসা করেন। নিজেদের আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার গল্প বলেন।
শুধু এই ছবিটি নয়, এমন অনেক ছবি, গল্প ও ভিডিও জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে এগিয়ে নিয়েছিল, দিয়েছিল পূর্ণতা।
তবে শহীদদের রেখে যাওয়া আমনত রক্ষা, তাদের আত্মত্যাগের যথাযথ মূল্যায়নই গণঅভ্যুত্থানের সত্যিকারের ফসল ঘরে তুলতে পারার মহৌষধ হিসেবে কাজ করবে। আজ জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আমাদের চাওয়াও কেবল সেটিই।
১২১ দিন আগে
ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন করে জুলাইয়ের চেতনার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে: রাষ্ট্রপতি
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন করে জুলাইয়ের চেতনার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ছিল— দীর্ঘদিনের বঞ্চনা, দুঃশাসন, দুর্নীতি, লুটপাট, গুম, খুন, অপহরণ, ভোটাধিকার হরণসহ সব ধরনের অত্যাচার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্ম ও আপামর জনতার ক্ষোভের বিস্ফোরণ। এই বৈষম্যমূলক ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপ করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জনগণের ক্ষমতায়ন এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সুনিশ্চিত করাই ছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্য।’
সোমবার (৪ আগস্ট) জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আজ ঐতিহাসিক জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস। বৈষম্যমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা ও ফ্যাসিবাদী অপশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-শ্রমিক-জনতা সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলে ২০২৪ সালের আজকের এই দিনে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে।
ঐতিহাসিক এই অর্জনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে দেশের মুক্তিকামী ছাত্র-জনতাকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান তিনি।
তিনি বলেন, আমি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সকল শহীদকে— যারা দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করতে গিয়ে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আমি তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। এ গণ-অভ্যুত্থানে আহত, পঙ্গুত্ব বরণ করা ও দৃষ্টিশক্তি হারানো সকল বীর জুলাই যোদ্ধার ত্যাগ ও অবদানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন তিনি।
পড়ুন: চট্টগ্রামে গেস্ট হাউসে সাবেক সেনাপ্রধান হারুন অর রশিদের মৃত্যু, লাশ উদ্ধার
রাষ্ট্রপতি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার ও আহতদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের পবিত্র দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্র অঙ্গীকারবদ্ধ।
তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্র একটি ব্যাপক সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। এই সংস্কারের মধ্য দিয়ে গণ-অভ্যুত্থানের আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হবে। প্রকৃত গণতান্ত্রিক উত্তরণের মধ্য দিয়ে একটি ন্যায় ও সাম্যভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠবে বলেও আশা করেন রাষ্ট্রপতি।
‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে নেওয়া সকল কর্মসূচির সফলতা কামনা করেন তিনি।
১২২ দিন আগে
গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার রূপকল্প হচ্ছে জুলাই ঘোষণাপত্র: তথ্য উপদেষ্টা
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার রূপকল্প হচ্ছে জুলাই ঘোষণাপত্র বলে দাবি করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, এটি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার দালিলিক প্রমাণ। আগামী ৫ আগস্ট বা তার আগেও জুলাই ঘোষণাপত্র হতে পারে।
শনিবার (২ আগস্ট) ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ র্যালি’ পরবর্তী বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা।
জুলাই সনদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে জুলাই সনদ তৈরির কাজ চলছে। আগামী ৫ আগস্ট বা তার আগেই এই সনদ স্বাক্ষরিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, অভ্যুত্থানকে জনস্মৃতিতে ধরে রাখতে মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীন ১৫টি দপ্তর–সংস্থার অধিকাংশই জুলাই গণঅভ্যুত্থানকেন্দ্রিক ঘটনাপ্রবাহের তথ্য প্রচার, দলিল সংরক্ষণ ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে কাজ করছে। বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভি গণঅভ্যুত্থানকেন্দ্রিক প্রামাণ্যচিত্র ও অনুষ্ঠান প্রচার করছে।
তথ্য অধিদপ্তর (পিআইডি) ও প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) গণঅভ্যুত্থান নিয়ে গবেষণাধর্মী কাজ করছে। এর পাশাপাশি চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর (ডিএফপি) জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে বেশ কিছু প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছে। বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের দলিল সংরক্ষণে ইতিমধ্যে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহত সাংবাদিকদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।
পড়ুন: জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত, প্রকাশিত হবে মঙ্গলবার
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতিচারণা করে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেন, দল–মত–নির্বিশেষে মানুষ এই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছেন। গণঅভ্যুত্থানের শেষ পর্যায়ে সব পেশাজীবী, বিশেষ করে শিক্ষক, সমাজকর্মী ও সংস্কৃতিকর্মীরা রাজপথে নেমে এসেছিলেন।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারকে প্রতিবাদ ও বিজয়ের অনুষঙ্গ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এখান (কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার) থেকে গণঅভ্যুত্থান শুরু করেছিলাম, এখানে এসে বিজয় উদ্যাপন করতে পেরেছিলাম।
মাহফুজ আলম বলেন, গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের আমরা যত দিন স্মরণে রাখব, আহতদের মর্মপীড়া যত দিন অনুভব করব, তত দিন আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার কাজে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকব। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত এক বছরে সরকার অনেকগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে; এর মধ্যে একটি বড় অংশের বাস্তবায়নের পথে সরকার অগ্রসর হয়েছে।
গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের স্মরণ করে তিনি বলেন, আমরা শহিদদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে নতুনভাবে স্বাধীনতা পেয়েছি, নতুনভাবে দেশ গড়ার সুযোগ পেয়েছি। তিনি দেশ গড়ার কাজে মনোনিবেশ করতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে র্যালি–পরবর্তী সমাবেশে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা, মন্ত্রণালয় ও এর অধীন দপ্তর–সংস্থার কর্মকর্তা–কর্মচারী এবং সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।
১২৪ দিন আগে
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছরেও প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরেনি
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্ণ হলেও প্রশাসনে, মন্ত্রণালয়ে শৃঙ্খলা ফেরেনি। তবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।
গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রশাসনের বিভিন্ন পদমর্যাদার কিছু সরকারি কর্মকর্তা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সমাবেশ, অবস্থান ধর্মঘট, মানববন্ধন, কলম বিরতিসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পুনর্গঠন ও বিভাজনের পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনে নামা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপও নিয়েছে সরকার।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মুখলেস উর রহমান ইউএনবিকে বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শৃঙ্খলাবহির্ভূত আচরণের বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর হচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এসব নিয়ন্ত্রণ করে দেশ পুনর্গঠনে কঠোর অবস্থানে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এখন থেকে কোনো সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী বিনা কারণে সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছে। সরকারের পক্ষ থেকে এখন আর আন্দোলন বা অকারণ কর্মবিরতি সহ্য করা হবে না। নির্বাচনের আগে প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরাতে এটি সরকারের সবচেয়ে কঠোরতম প্রয়াস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
আন্দোলন, অনিয়মে প্রশাসনে অস্থিরতা
গত এক বছরে এনবিআর, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, মাঠ প্রশাসন ও সচিবালয়ের বেশ কিছু স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দাবি-দাওয়ার নামে ধর্মঘট, সমাবেশ, মানববন্ধন, কলম বিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে গেছেন। বিশেষ করে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন সরাসরি দেশের অর্থনীতি, রাজস্ব আদায় ও আমদানি-রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ব্যবসায়ীরা সরবরাহব্যবস্থা ও কাস্টমস প্রক্রিয়ায় জটিলতার কারণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
আরও পড়ুন: সচিবালয়ে পুলিশের লাঠিচার্জে আহত ৭০ শিক্ষার্থী
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমানকে অপসারণ দাবির মধ্যে জারি করা সবশেষ দুটি বদলি আদেশকে ‘প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক’ দাবি করে তা ছিঁড়ে ফেলে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সেই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ায় মোট ১৪ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সরকার। তাদের মধ্যে প্রথমে আটজন, পরে আরও ছয়জনকে বরখাস্ত করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সতর্কতা জারি
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ও সচিব এবং বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে চিঠি পাঠিয়ে মন্ত্রণালয় বলেছে, সতর্ক না হলে প্রয়োজনে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চিঠিতে বলা হয়, প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড ও আচরণ বিধি লঙ্ঘনের শামিল। অনেক ক্ষেত্রে তা জাতীয় নিরাপত্তা হানিকারক এবং সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী অসদাচরণের পর্যায়ভুক্ত অপরাধ।
চিঠিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা, ২০১৯’ এর সুষ্ঠু ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশনা দিয়ে এ ধরনের প্রতিটি ব্যত্যয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯, সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা, ২০১৯ এবং সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা, ২০১৮ অনুসারে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আইন সংশোধনে নমনীয়তা: তদন্ত ছাড়া শাস্তি নয়
প্রশাসনিক অস্থিরতা ও সচিবালয়ে কর্মচারীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ‘সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর খসড়ায় কিছু নমনীয় সংশোধনী এনেছে। আগের নোটিশভিত্তিক শাস্তির বিধান বাতিল করে এখন থেকে কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হলে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন বাধ্যতামূলক। অভিযোগ গঠনের ৭ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ এবং জবাবের পর ৭ কর্মদিবসের মধ্যে সিদ্ধান্ত দিতে হবে।
আরও পড়ুন: মূল সংস্কার ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হিমশিম খাচ্ছে কমিশন
আগের সংশোধনীতে অনেকটা নোটিশ দিয়েই শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুযোগ ছিল। এ ছাড়া অপরাধের ধরনেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, গত ২৫ মে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করে সরকার। তাতে চারটি বিষয়কে অপরাধের আওতাভুক্ত করা হয়। সেগুলো হলো সরকারি কর্মচারী যদি এমন কোনো কাজে লিপ্ত হন, যা অনানুগত্যের শামিল বা যা অন্য যেকোনো সরকারি কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি করে বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে, অন্যান্য কর্মচারীর সঙ্গে সমবেতভাবে বা এককভাবে ছুটি ছাড়া বা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া নিজ কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন বা কর্তব্য সম্পাদনে ব্যর্থ হন, অন্য যেকোনো কর্মচারীকে তার কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকতে বা বিরত থাকতে বা তার কর্তব্য পালন না করার জন্য উসকানি দেন বা প্ররোচিত করেন এবং যেকোনো সরকারি কর্মচারীকে তার কর্মে উপস্থিত হতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন, তাহলে তিনি অসদাচরণের দায়ে দণ্ডিত হবেন।
সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর দ্বিতীয় সংশোধিত অধ্যাদেশে যা আছে
সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর দ্বিতীয় সংশোধিত অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। গত ২৩ জুলাই আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরীর স্বাক্ষরে অধ্যাদেশটি জারি করা হয়।
নতুন সংশোধিত অধ্যাদেশ অনুযায়ী কোনো সরকারি কর্মচারী আন্দোলনে গেলে, অর্থাৎ নিজে নিয়ম লঙ্ঘন করে একজন সরকারি কর্মচারী আরেকজন সরকারি কর্মচারীর কাজে বাধা দিলে বা তাকে তার কাজ থেকে বিরত রাখলে, তাকে বাধ্যতামূলক অবসরসহ চাকরি থেকে বরখাস্ত করা যাবে।
শৃঙ্খলা ফেরাতে পদোন্নতি ও পুনর্বিন্যাস
প্রশাসনের অভ্যন্তরে দীর্ঘদিনের পদোন্নতি ও পদায়নের বৈষম্য দূর করতেও কাজ শুরু করেছে সরকার। গত ১৭ বছর ধরে রাজনৈতিক কারণে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ইতোমধ্যে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে আন্তঃবৈষম্য নিরসনে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে।
সচিবালয়ের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে ক্যাডার-নন ক্যাডার মিলিয়ে নতুন নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বিধিমালা জারি করেছে। ইতোমধ্যে মাঠ প্রশাসন থেকে সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: উত্তরাধিকার বিরোধে জুলাই শহীদ পরিবারের সহায়তা বিতরণে বিলম্ব
তবে সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে তারা আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব আব্দুল আওয়াল মজুমদার ইউএনবিকে বলেন, ‘শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনে কখনোই নরম থাকা চলে না। যাদের হাতে রাষ্ট্রের ক্ষমতা ও জনগণের ভাগ্য, তাদের ওপর জবাবদিহিমূলক কঠোর নজরদারি ছাড়া দুর্নীতি ও গাফিলতি রোধ অসম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭৯ সালের বিশেষ বিধানটি অনেক কঠোর, কেউ কেউ কালো আইন বললেও বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রশাসন চালাতে গেলে এই আইনের প্রয়োজনীয়তা আছে। সরকার চাইলে চাকরিতে অনুপস্থিত কর্মচারীকে আট দিনের নোটিশে চাকরিচ্যুত করতে পারবে। এর জন্য পিএসসির মতামত বা তদন্তের প্রয়োজন হবে না।’
সাবেক এই সচিব বলেন, ‘সরকার যেসব কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে তা প্রশংসনীয় হলেও তা যেন কাগুজে নির্দেশনা হয়েই না থাকে। আগেও এমন অনেক আইন, নির্দেশনা, কমিটি হয়েছে; কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। সুতরাং চূড়ান্ত সফলতা নির্ভর করবে আইনের প্রকৃত অনুসরণ ও স্বচ্ছতামূলক প্রয়োগের ওপর।’
১৩১ দিন আগে
উত্তরাধিকার বিরোধে জুলাই শহীদ পরিবারের সহায়তা বিতরণে বিলম্ব
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারে এককালীন আর্থিক সহায়তা ও মাসিক ভাতা বিতরণে দেখা দিয়েছে নানা জটিলতা। ফলে সহায়তা বিতরণ নিয়ে চরম দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। একদিকে শহীদদের মা–বাবা, অন্যদিকে স্ত্রী—উভয় পক্ষই নিজেদের অধিকারের প্রশ্নে মুখোমুখি অবস্থানে। এই পারিবারিক দ্বন্দ্ব এখন সহায়তা কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে, ভোগান্তিতে ফেলেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে। ফলে বিলম্বিত হচ্ছে সরকারি সহায়তা কার্যক্রম।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শহীদ পরিবারের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে গেছেন। একদিকে শহীদের স্ত্রী, অন্যদিকে মা–বাবা, উভয় পক্ষই নিজেদের অধিকারের প্রশ্নে সরকারের কাছে দাবি তুলছেন। এতে করে প্রশাসনিক কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম (বীর প্রতীক) ইউএনবিকে বলেন, ‘কে কত টাকা পাবে, তা নিয়ে এখন দ্বন্দ্বের শেষ নেই। কেউ বলছেন, বউ বেশি পাচ্ছেন, আবার কেউ বলছেন, মা–বাবা বেশি পাচ্ছেন। শহীদের মা–বাবা বলছেন, বউ তো আবার বিয়ে করে চলে যাবে, কিন্তু আমরা সন্তান হারিয়েছি। অন্যদিকে স্ত্রীদের দাবি, তারাও স্বামী হারিয়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন।’
জানা গেছে, সহায়তা নিয়ে দ্বন্দ্ব এতটাই তীব্র যে, শহীদের মা–বাবা ও স্ত্রীদের মধ্যে বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক গ্রুপ তৈরি হয়েছে। ওই গ্রুপ থেকে সংগঠিত হয়ে তারা দল বেঁধে মন্ত্রণালয়ে আসছেন, একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মুসলিম পরিবারগুলোতে ‘মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১’ এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে ‘হিন্দু উত্তরাধিকার আইন, ১৯৫৬’-এর ভিত্তিতে সহায়তা বণ্টন করা হচ্ছে। কিন্তু অনেকেই এই আইনি কাঠামো মানতে চাইছেন না। বিশেষ করে স্ত্রীদের পক্ষ থেকে বেশি আপত্তি আসছে বলে দাবি করেছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
ফারুক ই আজম বলেন, ধর্মীয় আইন মেনে হিসাব করে টাকা দিলেও তা নিয়ে অনেকে সন্তুষ্ট নন। ফলে আমাদের ওয়ান-টু-ওয়ান সমাধান করতে হচ্ছে। এতে সময় ও কর্মঘণ্টা অপচয় হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, টাকা–পয়সা আর স্বার্থ যখন সামনে আসে, তখন কেউ শহীদের মহিমা বা আত্মত্যাগের গৌরব নিয়ে ভাবেন না। অথচ সরকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে—এই আত্মত্যাগের মহিমা ও চেতনা ধরে রাখা।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সরকার জুলাই শহীদদের পরিবারকে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে মোট ৩০ লাখ টাকা এককালীন সহায়তা দিচ্ছে। এর মধ্যে গত অর্থবছরে ১০ লাখ টাকা ও চলতি (২০২৫–২৬) অর্থবছরে ২০ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এছাড়া পরিবারগুলো মাসিক ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবে।
এ পর্যন্ত ৮৪৪ জন শহীদের গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম কিস্তি হিসেবে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে ৭৭৪ পরিবারকে। উত্তরাধিকার সংক্রান্ত জটিলতার কারণে বাকি ৭০টি পরিবার এখনো প্রথম কিস্তির অর্থ পায়নি। এ কারণে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ বিতরণও শুরু করা যাচ্ছে না।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মশিউর রহমান ইউএনবিকে বলেন, আমরা নিয়ম অনুযায়ী অর্থ বণ্টন করছি। কিন্তু পরিবারগুলো দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ায় আমাদের প্রতিদিন দেন–দরবার করতে হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার ৫৯ জন স্ত্রী মন্ত্রণালয়ে এসে সমবেতভাবে দাবি জানিয়েছেন। এর আগেও মা–বাবাদের পক্ষ থেকেও প্রতিনিধিরা এসেছেন।
তিনি জানান, একজন শহীদের একাধিক উত্তরাধিকার থাকায় কার অ্যাকাউন্টে কত টাকা যাবে, তা নির্ধারণ করতে সময় লাগছে। এ জন্য সহায়তা কার্যক্রমে ধীরগতি দেখা দিয়েছে।
এদিকে আহতদের ক্ষেত্রেও সহায়তা কার্যক্রম চলছে।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী—ক-শ্রেণির (অতি গুরুতর আহত) ৪৯৩ জন আহত ব্যক্তি এককালীন ৫ লাখ টাকা ও মাসিক ২০ হাজার টাকা পাবেন। এর মধ্যে ২ লাখ টাকা ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে, বাকি ৩ লাখ টাকা চলতি অর্থবছরে বিতরণ করা হবে।
খ-শ্রেণির (গুরুতর আহত) ৯০৮ জন আহত ব্যক্তি এককালীন ৩ লাখ টাকা ও মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। এদের মধ্যে ১ লাখ টাকা আগেই দেওয়া হয়েছে। গ-শ্রেণির (সাধারণ আহত) ১০ হাজার ৬৪২ জন আহত ব্যক্তি এককালীন ১ লাখ টাকা এবং মাসিক ১০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন।
তিন শ্রেণির আহতরা আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা পাবেন, বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ থাকবে এবং পুনর্বাসন সুবিধাও নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া সরকারি/আধা-সরকারি চাকরিতে শহীদ পরিবারের উপযুক্ত সদস্যরা অগ্রাধিকার পাবেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী ইউএনবিকে বলেন, ‘সহায়তার কাজ শেষ হলেই আমরা পুনর্বাসন কার্যক্রমে যাব। আমরা চাই সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে সরাসরি টাকা প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দিতে।’
তিনি আরও বলেন, আমরা চেষ্টা করছি অন্তত একটি বিভাগে আগামী সপ্তাহে ভাতার অর্থ বিতরণ শুরু করতে। পরিবারগুলো যত দ্রুত তথ্য পাঠাবে, আমরা তত দ্রুত কাজ শেষ করতে পারব।
সচিব বলেন, কেউ যদি গ-শ্রেণি থেকে ক-শ্রেণিতে যেতে চান, তবে তা নির্ধারণ করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
১৩৬ দিন আগে
রাজনীতিতে সমস্যা থাকবে, তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই: ফখরুল
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্যের কারণে হতাশ হওয়ার কোনো যুক্তি নেই বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাদের দল বহুত্ববাদকে ধারণ করে একটি রেইনবো স্টেট গঠনের স্বপ্ন দেখে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
রবিবার (২০ জুলাই) সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জিয়া উদ্যানে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, এখানে একজন শহীদের পিতা আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেছেন যে, আমরা আশা করেছিলাম গণঅভ্যুত্থানের পরে অতিদ্রুত রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত হবে, রাজনৈতিক কাঠামো তৈরি হবে, আমরা একটা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারব।
‘বিষয়টা হচ্ছে যে, রাজনীতিটা অত সহজ পথ নয়, গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো থাকে না, এখানেও সমস্যা থাকবে, সেটাই রাজনীতি। কিন্তু এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।’
রাজনীতিতে বিএনপির অবস্থান নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, ভিন্নমত থাকবে, বহুমাত্রিক পথ থাকবে, কেউ গণতন্ত্রের বিশ্বাস করবে, কেউ সমাজতন্ত্রের বিশ্বাস করবে, কেউ আপনার ওয়েলফেয়ার স্টেটে বিশ্বাস করবে। সবগুলোকে মিলিয়ে সেই রকম একটা রাষ্ট্র নির্মাণ করা হবে, অনেক আগেই আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেই স্বপ্ন দেখেছিলেন ‘
রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে বিএনপির দেওয়া অতীতের ৩১ দফা সংস্কার নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৩১দফা দিয়েছেন, সেই দফার মধ্যে আজকে যে সংস্কারের প্রশ্নটা উঠেছে, সংস্কারের যে প্রস্তাবগুলো আসছে তার প্রত্যেকটি প্রস্তাব আমরা ২০২২ সালে দিয়েছি।’
জুলাই আন্দোলন পরবর্তী সময়ে দেশের রাজনীতি নিয়ে যে সংকট প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে ‘হতাশ হওয়ার কিছু নেই বলেও জানান বিএনপির এই নেতা। উদ্ভূত সমস্ত সংকট এড়াতে অন্তর্বতীকালীন সরকার ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তারিখ দেবে বলেও প্রত্যাশা রেখেছেন তিনি।
জুলাই আন্দোলনে শহিদের সংখ্যা নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি সেই বিষয়গুলো নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করতে চাই না। আমার কতজন শহীদ হয়েছেন, আমার কতজন নিহত হয়েছেন, আমরা কত ত্যাগ স্বীকার করেছি, কারা কী কাজ করেছি এই বিতর্কে আমি যেতে চাই না।
‘কারণ ওটা আমার কাছে মনে হয় স্বার্থপরতার একটা ব্যাপার আছে। আমার দায়িত্ব হচ্ছে এই জাতিকে আমাকে উপরে তুলতে হবে।যে প্রাণগুলো গেছে, যারা জীবন দিয়েছে তারা কিন্তু জীবন দিয়েছে ঘোষণা করেই দিয়েছে যে, আমরা ফ্যাসিস্টকে সরাবো, জাতিকে একটা স্বাধীন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাই।’
সত্যিকার অর্থে একটি উদারপন্থি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে বিএনপি কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমরা মানুষ যেন সুস্থভাবে স্বাধীনভাবে কমফোর্টেবল ওয়েতে স্বস্তির সঙ্গে যেন চলাফেরা করতে পারে সেই ধরণের একটা রাষ্ট্র চাই।
মির্জা ফখরুল আশা করেন, সরকার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দেওয়ার বিষয়ে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা তারা রক্ষা করবে।
‘সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা জনগণের একটা সরকার তৈরি করতে পারব। যে সরকার আমার এই শহিদদের মূল্যায়ন করবেন, তাদের মর্যাদা দেবেন, একই সঙ্গে যেজন্য সংগ্রাম করেছেন বাংলাদেশে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবার সবরকম ব্যবস্থা গ্রহন করবে।’
এ সময়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুলসহ চার শহিদের স্বজনরা বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল একেএম শামসুল ইসলাম শামস, বাদলুর রহমান বাদল, সাইফ আলী খান, মোকছেদুল মোমিন মিথুন, জাহিদুল ইসলাম রনি, শফিকুল হক সাজু ও হাসনাইন নাহিয়ান সজীবসহ কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: হাসিনা কখনোই ক্ষমা পাবে না: মির্জা ফখরুল
১৩৭ দিন আগে
হাসিনা কখনোই ক্ষমা পাবে না: মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও বর্বরতার জন্য ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা কখনো ক্ষমা পাবেন না।
তাকে ‘মানবতার এবং সব মায়েদের প্রতি লজ্জা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি। ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪: জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক যাত্রা, চিরসবুজ স্মৃতিচারণ’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে ফখরুল এসব কথা বলেন।
জাতীয়তাবাদী কৃষক দল ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ যৌথভাবে শের-ই-বাংলা নগরে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে এই কর্মসূচি আয়োজন করে, যেখানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে নিম গাছের চারা রোপণ করা হয়।
একজন শোকাহত মায়ের কান্নার কথা স্মরণ করে আন্দোলনে তার ছেলেকে হারানোর কথা উল্লেখ করে আবেগঘন ভাষণে বিএনপির এই মহাসচিব বলেন, ‘ওই মা তার ছেলের মাধ্যমে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু তার ছেলেকে প্রথমে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর তাকে গুলি করে অন্যদের সঙ্গে তাকে ভ্যানে করে ফেলে দেওয়া হয়—সে জীবিত নাকি মৃত, তাও পরীক্ষা করা হয়নি। পরবর্তীতে আগুন দিয়ে এসব মরদেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভাবুন তো—আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক।’
আরও পড়ুন: হাসপাতালে জামায়াত আমিরকে দেখতে গেলেন ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিনিধিদল
বিএনপি নেতা বলেন, তারা ১৯৭১ সালে স্বাধীন দেশের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন।
‘এই দেশের পুলিশ ও প্রশাসন, যারা জনগণকে রক্ষা করার কথা ছিল, যাদের বেতন করদাতাদের টাকায় দেওয়া হয়, তারা আমাদের সন্তানদের পুড়িয়ে ও হত্যা করেছে। এর চেয়ে নির্মম ও নিষ্ঠুর কিছু হতে পারে?’
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রথম কাজ হলো তাদের বিচারের মুখোমুখি আনা। দ্বিতীয়ত, শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন করা। যারা আহত হয়েছেন এবং চোখ হারিয়েছেন, তাদের যথাযথ চিকিৎসা ও সহায়তা দিতে হবে। যদি আমরা ব্যর্থ হই, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।’
ফখরুল আরও জানান, বিএনপি আন্দোলনে নিহত ও আহতদের পরিবারগুলোর জন্য একটি তহবিল গঠন করবে।
তিনি বলেন, ‘আমি গতকাল (শনিবার) বলেছি, আজও বলছি—নির্বাচন হবে। ক্ষমতা পাওয়া যাবে কি না তা আলাদা বিষয়। আমরা আমাদের পার্টির পক্ষ থেকে একটি তহবিল গড়ে তুলব, এবং এই তহবিল থেকে আমরা যতটা সম্ভব এই পরিবারগুলোকে সহায়তা করব।’
ফখরুল বলেন, তিনি পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তহবিল গঠনের বিষয়ে কথা বলবেন। যদিও ‘আমরা বিএনপি পরিবারের’ মাধ্যমে ইতিমধ্যে শহীদ ও আহতদের পরিবারকে সহায়তা করে আসছেন তারেক রহমান।
তিনি বলেন, তাদের দল শহীদদের ইচ্ছা অনুযায়ী একটি সত্যিকারের লিবারেল গণতান্ত্রিক নতুন বাংলাদেশ গড়তে চায়।
আরও পড়ুন: দিন যত যাচ্ছে, পরিস্থিতি তত জটিল হচ্ছে: ফখরুল
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য একটি সত্যিকারের লিবারেল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করা। আমরা নতুন বাংলাদেশ চাই। আমরা পরিবর্তন চাই। আমরা দুর্নীতি চাই না। আমরা ঘুষ চাই না। আমরা হত্যা চাই না। আমরা নির্যাতন চাই না। আমরা এমন একটি দেশ গড়তে চাই যেখানে মানুষ নিরাপদে, স্বাধীনভাবে ও শান্তিতে থাকতে পারে।’
১৩৭ দিন আগে
হত্যাচেষ্টা মামলায় চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসের জামিন
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময়কার রাজধানীর ভাটারা থানার একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় ঢাকাই চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসকে জামিন দিয়েছেন আদালত।
রবিবার (১৩ জুলাই) শুনানি শেষে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্টেট মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান দশ হাজার টাকা মুচলেকায় এই জামিন আদেশ দেন।
এর আগে, গত ২ জুন হাইকোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন পান অপু বিশ্বাস। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, তিনি গত বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে জামিননামা দাখিল করেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত বছর ১৯ জুলাই আন্দোলেনের সময় এনামুল হক নামের এক ব্যক্তিকে ভাটারা থানার সামনে গুলি করা হয়। এতে, এনামুল পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন।
এ ঘটনায় চলতি বছরের মার্চ মাসে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৮৩ জনকে আসামি করে ভুক্তভোগী এনামুল নিজেই বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে ভাটারা থানায় গত ২৯ এপ্রিল এজাহার হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়।
আরও পড়ুন: সোহাগ হত্যা: বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন চেয়ে রিট
এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঢাকাই সিনেমার নায়িকা নুসরাত ফারিয়া, অপু বিশ্বাস, নিপুণ আক্তার, আশনা হাবিব ভাবনা, নায়ক জায়েদ খানসহ ১৭ অভিনয়শিল্পীকে আসামী করা হয়।
ছাত্র- বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া এ সব অভিনেতা-অভিনেত্রীদের আসামি করা হয়। মামলায় তাদের আওয়ামী লীগের ‘অর্থের জোগানদাতা’ বলা হয়েছে।এর পরিপ্রেক্ষিতে, গত ১৮ মে নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে, ২০ মে আদালত নুসরাত ফারিয়ার জামিন মঞ্জুর করেন।
১৪৪ দিন আগে