৩২ লাখ
বিকাশ অ্যাপে ডিপিএস ৩২ লাখ ছাড়িয়েছে
ঘরে বসেই কাগজপত্র ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছাড়াই বিকাশ অ্যাপ থেকেই আইডিএলসি ফাইন্যান্স, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক এবং ব্র্যাক ব্যাংকে ৩২ লাখের বেশি ডিপিএস খুলেছেন বিকাশ গ্রাহকরা।
উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ও দেশের শীর্ষ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নেওয়া যৌথ সেবায় আস্থা রেখেই গত তিন বছরে বিকাশ অ্যাপে এই সাপ্তাহিক এবং মাসিক ডিপিএসগুলো খোলা হয়েছে। এরইমধ্যে যে সকল গ্রাহকের ডিপিএসের মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে। তাদের ৯৬ শতাংশই আবার বিকাশ অ্যাপে ডিপিএস খোলার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। গ্রাহকের সঞ্চয়ের মানসিকতা যেমন ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে সুদৃঢ় করছে, তেমনি জাতীয় অর্থনীতিতেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিকাশের যৌথ উদ্যোগে সঞ্চয়কে সার্বজনীন করার এই প্রয়াসকে উদযাপন ও সামনে এগিয়ে নিতে রাজধানীর একটি কনভেনশন সেন্টারে অংশীজনদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বিকাশ।
দেশের বৃহত্তম মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান বিকাশে শীর্ষ আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ফাইন্যান্সে মাসিক ডিপিএস দিয়ে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যাত্রা শুরু হয় বিকাশের ডিজিটাল সেভিংস সেবার। এরপর পর্যায়ক্রমে যুক্ত হয় বাকি চারটি ব্যাংকের ডিপিএস। আর বিকাশ অ্যাপে সাপ্তাহিক ডিপিএস সেবা চালু হয় ২০২৪ সালের প্রথম দিকে।
সাধারণ ডিপিএসের পাশাপাশি যে গ্রাহকরা ইসলামি শরিয়াহ্ মোতাবেক সঞ্চয়ে আগ্রহী, তাদের জন্য আনা হয় সিটি ব্যাংক ও ঢাকা ব্যাংকের ইসলামিক ডিপিএস সেবা।
পারস্পরিক সহযোগিতা ও সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে আরও বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কাছে আর্থিক সেবা পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে কীভাবে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে টেকসই করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করেন বক্তারা।
এই বিশেষ আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. জাকির হোসেন চৌধুরী।
আরও পড়ুন: ঢাকা বিমানবন্দরের বলাকা এক্সিকিউটিভ লাউঞ্জে বিকাশ পেমেন্টের সুযোগ
মতবিনিময় সভায় অংশ নেন আইডিএলসি ফাইন্যান্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম জামাল উদ্দিন, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শেখ মোহাম্মদ মারুফ, সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সেলিম আর. এফ. হোসেন।
উপস্থিত ছিলেন ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আহসান জামান চৌধুরী এবং বিকাশের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও কামাল কাদীর।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. জাকির হোসেন চৌধুরী বলেন, এখন কোনো ঝামেলা ছাড়াই ডিপিএসের টাকা গ্রাহকের বিকাশ অ্যাকাউন্টে চলে আসছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পেমেন্ট সার্ভিস ডিপার্টমেন্ট, পেমেন্টেকে আরও কার্যকরী করে তুলতে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। বিকাশও এই প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখছে।
আইডিএলসি ফাইন্যান্সের সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম জামাল উদ্দিন বলেন, বিকাশেরর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর এত দ্রুত আমরা ১২ লাখ গ্রাহক পেয়েছি যা এর আগে কখনও হয়নি। সঞ্চয়ের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের যে এত আগ্রহ তা বিকাশের সঙ্গে আসার আগে আমরা বুঝিনি।
তিনি আরও বলেন, আমরা দেখেছি, আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বন্যার্তরা তাদের সেভিংসের টাকা তুলে প্রয়োজন পূরণ করেছেন। তারা যখন ভালো অবস্থানে এসেছেন, নতুন করে সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলা শুরু করেছেন আবার।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, কোলাবোরেশন, কো-ক্রিয়েশন ছাড়া ভবিষ্যৎ অচল। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাংকের পক্ষে একা পৌঁছানো ব্যয়সাপেক্ষ। এমএফএস এই ব্যবস্থাকে সহজ করে দিয়েছে। আরও বেশি দক্ষতার সঙ্গে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে ভূমিকা রাখছে এই ধরনের পার্টনারশিপগুলো।
ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মারুফ বলেন, দেশে ফাইন্যান্সিয়াল ইকোসিস্টেম উন্নত করতে সবারই কিছু দায়িত্ব আছে। আর এই সেবাগুলো সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিয়ম-নীতি, পলিসি ফ্রেমওয়ার্ক, সাইবার সিকিউরিটির মতো বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রক সংস্থার তরফ থেকে আসা দরকার। ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে জনগণকে ভরসার জায়গায় আনার জন্য সরকারের উৎসাহ ও প্রণোদনাও প্রয়োজন।
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন বলেন, বিকাশ বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর জন্য ল্যান্ডস্কেপ পরিবর্তন করে দিয়েছে। ব্যাংক-এমএফএস কোলাবোরেশনের মাধ্যমে দেশের সব প্রান্তের মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে ব্যাংকিং সেবা। সিটি ব্যাংকের ইসলামিক ব্যাংকিং সেবার মত বিকাশ অ্যাপে সিটি ব্যাংকের যে ইসলামিক সেভিংস আছে তা শরিয়াহ্ উপদেষ্টা বোর্ডের মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে শরিয়াহ্-ভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণ করে গ্রাহকদের জন্য আনা হয়েছে।
ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সেলিম আর. এফ. হোসেন বলেন, অন্য অনেক দেশের সঙ্গে বাংলাদেশকে তুলনা করলে দেখা যায় সঞ্চয়ের হার এখনও বেশ কম, যার অর্থ হচ্ছে এই খাতে আরও কাজ করার সুযোগ আছে। নানা প্রয়োজনে ব্যক্তি যখন সঞ্চয় করেন তখন দেশের অর্থনীতির জন্যও তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সেভিংস যত বেশি হবে, সেটা চ্যানেল করে ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন ব্যবসায় ব্যবহার করতে পারবে। বিনিয়োগ যে শুধু বিদেশ থেকে আসবে তা নয়, আমাদের দেশীয় বিনিয়োগ আমাদের নিজেদের সঞ্চয় থেকেই হতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিকাশেরর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর বলেন, সমৃদ্ধি শুরু হয় সঞ্চয় থেকে। যেদিন প্রথম এক টাকা সঞ্চয় হয়, সেদিনই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা শুরু হয়। বিকাশ অ্যাপে সেভিংসেরর সৌন্দর্যই এখানে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পলিসি সহায়তা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সঙ্গে অংশীজন হিসেবে কাজ করছে যে ব্যাংকগুলো তাদের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ছাড়া বিকাশেরর পক্ষে এখানে পৌঁছানো সম্ভব ছিল না।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বিকাশ অ্যাপে চারটি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মাসিক ও সাপ্তাহিক ডিপিএস খুলতে পারছেন গ্রাহকরা।
প্রতিষ্ঠান ও ডিপিএসেরর ধরনভেদে (সাপ্তাহিক বা মাসিক) ৬ মাস থেকে সর্বোচ্চ ৪ বছর মেয়াদে ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জমাতে পারছেন গ্রাহকরা। নতুন ডিপিএস খুলতে বিকাশ অ্যাপের হোমস্ক্রিন থেকে ‘সেভিংস’আইকনে ট্যাপ করে কয়েকটি সহজ ধাপ অনুসরণ করে যেকোনো গ্রাহক যেকোনো সময় ডিপিএস খুলতে পারছেন।
আর মেয়াদ পূর্তিতে ক্যাশ আউটের খরচ ছাড়াই মূল অর্থ মুনাফাসহ তুলতে পারছেন গ্রাহক।
আরও পড়ুন: সিলেটে বিকাশ কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাত করে ৩ লাখ টাকা ছিনতাই
২ সপ্তাহ আগে