গিয়াস উদ্দিন মামুন
তারেক রহমান-মামুনের ৭ বছরের দণ্ডের কার্যকারিতা স্থগিত
অর্থ পাচার মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন মামুনকে দেওয়া সাত বছরের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
একইসঙ্গে এ মামলায় তাদেরকে দেওয়া সাত বছরের দণ্ডের কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও ব্যারিস্টার শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান।
ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বড় সন্তান তারেক রহমান বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার ইমেজকে ক্ষুণ্ন করার জন্য রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় সাত বছরের সাজা দিয়েছিলেন। আজকে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আমাদের লিভ দিয়েছেন (আপিলের জন্য অনুমতি)। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে দুদক ও আমাদেরকে আপিলের সার সংক্ষেপ দিতে বলেছেন।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, সাত বছরের দণ্ড স্থগিত করেছেন। এই মামলায় দুইজন আসামি। দুইজনের ক্ষেত্রেই সাজা স্থগিত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রী থেকে ইউপি সদস্য পর্যন্ত সবার জবাবদিহিতা চান তারেক
২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় এ মামলাটি করে দুদক। এরপর ২০১০ সালের ৬ জুলাই তারেক রহমান ও গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হয়।
২০১১ সালের ৮ আগস্ট এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন আদালত।
মামলাটিতে ১৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়, যাদের মধ্যে অভিযোগ পত্রের বাইরের সাক্ষী হিসেবে ছিলেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) এজেন্ট ডেবরা লেপরোভেট।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, টঙ্গীতে প্রস্তাবিত ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য নির্মাণ কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান খাদিজা ইসলামের কাছ থেকে গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৩ টাকা নেন। সিঙ্গাপুরে এ টাকা লেনদেন হয়।
এরপর মামুন ওই অর্থ সিঙ্গাপুরের ক্যাপিটাল স্ট্রিটের সিটি ব্যাংক এনএতে তার নামের ব্যাংক হিসাবে জমা করেন। এ টাকার মধ্যে তারেক রহমান তিন কোটি ৭৮ লাখ টাকা খরচ করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
এ মামলায় ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দিয়ে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে অর্থপাচার মামলায় ৭ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালত।
রায়ে কারাদণ্ডের পাশাপাশি মামুনকে ৪০ কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়। পাচার করা ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৬১৩ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করারও নির্দেশ দেন আদালত।
এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর আপিল করে দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি এ আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। পাশাপাশি গিয়াস উদ্দিন মামুনও আপিল করেন। দুই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ২১ জুলাই তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ২০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।
একই মামলায় গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের সাত বছরের কারাদণ্ডের সাজা বহাল রাখেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দেন।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে গিয়াস উদ্দিন মামুন আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন। আজ এই লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে সাজার কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: জনগণকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান তারেক রহমানের
১ সপ্তাহ আগে
পৃথক মামলায় খালাস পেলেন বিএনপি নেতা আমান ও গিয়াস উদ্দিন মামুন
চাঁদাবাজির মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া সাত বছরের কারাদণ্ড থেকে খালাস পেলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান।
এছাড়া অর্থপাচারের অভিযোগে করা মামলায় গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে বিচারিক আদালতের দেওয়া সাত বছরের কারাদণ্ডের রায় বাতিল করে তাকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে করা তাদের পৃথক আপিল মঞ্জুর করে বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে আমানের আবেদনের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে ছিলেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও আইনজীবী নাজমুল হুদা। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী তারেক ভূঁইয়া। আদালতে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ওমর সাদাত ও সাব্বির হামজা। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান।
জানা গেছে, ২০০৭ সালের ৬ মার্চ দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় পূর্ব আগানগরের রফিকুল আলম নামে এক ব্যক্তি চাঁদাবাজির অভিযোগে আমান উল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ২০০৪ সালের ২৬ জুনের এক ঘটনায় ২০০৫ সালে দুই পর্বে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। এ মামলায় ২০০৭ সালের ৭ মার্চ আমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিচার শেষে ২০০৮ সালের ৮ মে সাত বছরের কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এই সাজার রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালে হাইকোর্টে আপিল করেন আমান। বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে আপিল মঞ্জুর করে রায় দেন হাইকোর্ট।
অন্যদিকে, অর্থ পাচারের অভিযোগে ২০১১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করে দুদক।
মামলার অভিযোগে বলা হয়,বিটিএল ও গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালের চেয়ারম্যান এম শাহজাদ আলী নেদারল্যান্ডের একটি ঠিকাদারি কোম্পানির বাংলাদেশের এজেন্ট ছিলেন। ওই কোম্পানি রেলওয়ের সিগন্যালিং আধুনিকীকরণের টেন্ডার পান। কিন্তু ২০০৩ সালে কার্যাদেশ চূড়ান্ত করার সময় গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ওই কাজের বিপরীতে তার কাছে অবৈধ কমিশন দাবি করেন। নতুবা কার্যাদেশ বাতিল করার হুমকি দেন। এরপর শাহজাদ আলী ২০০৪ সালে ৬ কোটি ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭৬২ টাকা মামুনের লন্ডনের ন্যাটওয়েস্ট ব্যাংকের হিসাবে জমা করেন।
এ মামলায় ২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন। এছাড়া ১২ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। রায়ে লন্ডনের ন্যাটওয়েস্ট ব্যাংকের হিসাবে থাকা ৪৪ হাজার ৬১০ দশমিক শূন্য ৮ ব্রিটিশ স্টালিং (বাংলাদেশি টাকায় ৬ কোটি ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭৬২ টাকা) বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেন। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন তিনি। সেই আপিলের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার রায় দেন হাইকোর্ট।
২ সপ্তাহ আগে