মেডিসিন বিভাগ
বিএসএমএমইউতে একসঙ্গে চার অপরিণত নবজাতকের জন্ম
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) একসঙ্গে চার অপরিণত নবজাতকের সফলভাবে জন্ম দিয়েছেন এক মা।
নিওনেটোলজি (নবজাতক) ও ফিটোম্যার্টারনাল মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ডাক্তার, রেসিডেন্ট ছাত্রছাত্রীদের চিকিৎসাসেবা ও নার্সদের নিবিড় নার্সিংসেবাসহ সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এটা সম্ভব হয়েছে।
তাদের চিকিৎসকদের নিয়মিত ফলোআপে থাকতে হবে। তাদের প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে হাসি আর আনন্দে। বর্তমানে চার নবজাতকই সুস্থ আছে।
বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, একসঙ্গে চারজনের জন্মদান অবশ্যই ব্যতিক্রম। চার নবজাতকই কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে, ফলে তাদেরকে সুস্থ রাখা খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল।
তিনি বলেন, সফল সিজারের মাধ্যমে নবজাতাকদের সুস্থভাবে জন্মদান নিশ্চিত করাটাও চ্যালেঞ্জিং ছিল। তবে নিওনেটোলজি ও ফিটোম্যার্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকরা যথাযথ ও গুণগতমানের ওটিসহ চিকিৎসেবা দেওয়ায় তারা সফল হয়েছেন। চার নবজাতকই সুস্থ আছে।
তিনি আরও বলেন, সংশ্লিষ্ট সকলকে আমার অভিনন্দন। আশা করি আগামী দিনে এ ধরণের ব্যতিক্রমী চিকিৎসাসেবায় ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিএসএমএমইউ দেশ ও পৃথিবীর বুকে রোল মডেলে পরিণত হবে।
নিওনেটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মান্নান বলেন, চিকিৎসাসেবার মাধ্যমে নবজাতকদের বাঁচিয়ে রাখা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের ছিল। তারপরেও সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সুস্থ রাখা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, নবজাতকদের চিকিৎসাসেবা ও যথাযথ কেয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জরুরি বিষয় হলো ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার (কেএমসি), হ্যান্ড ওয়াসিং, আরলি ব্রেস্ট ফিডিং বা যথ দ্রুত সম্ভব মায়ের কাছে নবজাতককে শিফট করে মায়ের বুকের দুধ পান করানো।
তিনি আরও বলেন, প্রয়োজন হলে নবজাতকের শ্বাস কষ্ট নিয়ন্ত্রণে রাখতে সিপাপ নামক ডিভাইসের সেবা নিশ্চিত করা। সাধারণত একজন গর্ভধারিণী মা ৪০ সপ্তাহে সন্তান প্রসব করে থাকেন, কিন্তু মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় এই চার নবজাতকের বয়স যখন ৩১ সপ্তাহ তখন তার মায়ের সিজার করতে হয়েছিল। নবজাতকের জন্মের সঙ্গে সঙ্গে মায়ের ত্বকের সঙ্গে অপরিণত নবজাতকের ত্বক লাগিয়ে সেবা প্রদান ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার (কেএমসি) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই চার নবজাতকের চিকিৎসাসেবায় এই বিষয়টিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
ফিটোম্যাটানাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. তাবাসসুম পারভীন বলেন, একসঙ্গে চার সন্তানের গর্ভধারিণী জননীর সফলভাবে ওটি সম্পন্ন করা সার্জনদের জন্য একটি জটিল ও চ্যালেঞ্জিং বিষয় ছিল।
এক্ষেত্রে আমরা সফল হলেও এসকল শিশুদের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য নিয়মিত ফলোআপে থাকতে হবে বলে জানান ডা. তাবাসসুম পারভীন।
ডা. নুজহাত নূয়েরি জুঁই ও ডা. মায়মুনা জানান, কম ওজনের অপরিণত নবজাতকদের ক্ষেত্রে যেকোনো ধরণের সংক্রমণের উচ্চমাত্রার ঝুঁকি থাকে।
তারা আরও জানান, জন্মের পর নবজাতকদের কমপক্ষে পাঁচ দিন ইনকিউভিটরে রাখা হয়েছিল। কম ওজনের শিশুদের অপরিণত খাদ্যনালীর কারণে হজমশক্তির অভাব, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারা, রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারা, অপরিণত ফুসফুসের কারণে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা, ব্রেইনে রক্তক্ষরণসহ বিভিন্ন ঝুঁকি থাকে।
এছাড়া কম ওজনের অপরিণত নবজাতকদের ক্ষেত্রে এসব বিষয়ে বিবেচনা নিয়েই চিকিৎসকদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে হয় বলে জানান তারা।
চার নবজাতকের বাবা গোলাম মোস্তফা বলেন, তার স্ত্রী ফিটোমেটানাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. তাবাসসুম পারভীনের অধীনে ছিলেন। গত ৯ নভেম্বর উক্ত বিভাগে তার স্ত্রীকে ভর্তি করান এবং ১৪ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১১টায় চিকিৎসকরা সফলভাবে সিজার সম্পন্ন করেন।
২ দিন আগে