শুল্কারোপ
ভারতকে কি চীনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন ট্রাম্প?
সীমান্ত-বিরোধসহ এশিয়ার আধিপত্য নিয়ে চীন-ভারত দ্বন্দ্ব নতুন নয়। দশকের পর দশক ধরে চলে আসা এই দ্বন্দ্ব নিয়ে যুদ্ধের ময়দানেও নেমেছে এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী। এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি করেছে ভারত। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার বন্ধুত্ব গোটার বিশ্বের নজরে আসে।
চীন দুই দেশেরই অভিন্ন শত্রু হওয়ায় ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বন্ধুত্বকে অনেকেই স্বাভাবিক হিসেবে দেখছিল। তবে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক শুল্কারোপের সিদ্ধান্তে মোদি-ট্রাম্পের ‘ভালো বন্ধুত্বে’ বাজছে ভাঙনের সুর। যুক্তরাষ্ট্রের চড়া শুল্কের খড়গের নিচে পড়ে চীনের দিকে ঝুঁকছে ভারত। অন্তত নরেন্দ্র মোদির আসন্ন চীন সফর এই সম্ভাবনার প্রদীপ নতুন করে জ্বালানি পেয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীতে আগ্রহী অনেকের মনেই এখন একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে— তবে কী ট্রাম্পের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে শি জিনপিংয়ের দিকে ঝুঁকছেন মোদি?
নিষেধ সত্ত্বেও রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখায় মোদির ওপর চটেছেন ট্রাম্প। সে কারণেই ভারতের ওপর নেমে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কশাস্তি। দিল্লির ওপর প্রথমে ২৫ শতাংশ, পরে আরও ২৫ শতাংশসহ মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প।
তবে ট্রাম্পের কাছে নতি স্বীকার করে রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করা তো দূর, যেদিন ভারতের ওপর অতিরিক্ত শুল্কের হুমকি দিলেন তিনি, সেদিনই জানা গেল চীন সফরে যাচ্ছেন মোদি। শুধু মোদি নন, সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও যাচ্ছেন চীনে।
সিএনএন বলছে, ভারত-চীন সম্পর্কের টানাপোড়েনের বরফ যদিও আগেই গলতে শুরু করেছিল, তবে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ মূলত সেই প্রক্রিয়ায় গতির সঞ্চার করেছে বলে মত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের।
ওয়াশিংটনের সঙ্গে এখন খুবই অস্থিতিশীল অবস্থানে রয়েছে নয়াদিল্লি ও বেইজিংয়ের সম্পর্ক। কারণ কৌশলগত অংশীদার হোক কিংবা ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী, ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রশাসন কার সঙ্গে কেমন আচরণ করবে তা বলা মুশকিল। গত মে মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বাণিজ্য প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের ওপর ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছিলেন ট্রাম্প। অথচ সেটি পরে আবার ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনেন তিনি।
আরও পড়ুন: চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধবিরতি আরও ৯০ দিন বাড়ালেন ট্রাম্প
আবার রাশিয়ার তেল কেনা নিয়ে ভারতের ওপর খড়গহস্ত হলেও চীনের ওপর মোটেও বিমাতাসুলভ আচরণ করতে দেখা যাচ্ছে না ট্রাম্পকে। রাশিয়ার তেল ভারতের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে কেনে চীন, কিন্তু বেইজিংয়ের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা বা বাণিজ্য শুল্ক আরোপ করা তো হয়নি-ই, উল্টো চীনের ওপর পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপসহ অন্যান্য বাণিজ্যনীতি কার্যকর করার দিনক্ষণ আরও ৯০ দিনের জন্য পিছিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অথচ একই কারণে চীনকে বাগে রাখতে বহু বছর ধরে যে দেশটিকে বিকল্প শক্তি হিসেবে গড়ে তুলেছিল যুক্তরাষ্ট্র, সেই ভারতকে এবার শাস্তির মুখে দাঁড় করিয়েছেন ট্রাম্প।
এসবের মাঝেই গত সাত বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো চীন সফরে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আগামী ৩১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিয়ানজিন শহরে অনুষ্ঠিতব্য এসসিও সম্মেলনে যোগ দিতে চীন সফর করবেন তিনি। এর আগে, ২০১৮ সালে মোদির সর্বশেষ চীন সফরও ছিল এই সম্মেলনে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যেই।
১১২ দিন আগে
আরও ৬৯ দেশের ওপর নতুন হারে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপ
আবারও প্রায় ৬৯টি বাণিজ্যিক অংশীদারের ওপর ১০ থেকে ৪১ শতাংশ পর্যন্ত পাল্টা শুল্কারোপের ঘোষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী সপ্তাহে এই শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) এই শুল্ক ঘোষণা করেন ট্রাম্প।
এর আগে, গত এপ্রিলে বাণিজ্য ঘাটতি মেটাতে বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্কারোপ করেছিলেন ট্রাম্প। পরে তা তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। সে সময় শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্ন দেশকে আলোচনার সুযোগও দেয় ওয়াশিংটন।
বৃহস্পতিবার ‘সংশোধিত পাল্টা শুল্ক হার’ (Further Modifying the Reciprocal Tariff Rates) শিরোনামে প্রায় ৬৯টি বাণিজ্য অংশীদার দেশের নাম ও তাদের জন্য নির্ধারিত সংশোধিত শুল্কহারের তালিকা ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
দেশটির সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের ওপর সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ হারে ভিত্তিমূল শুল্ক ধার্য করা হয়েছে। বাকি দেশগুলোর ওপর ১৫ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি হারে শুল্কারোপ করা হয়েছে।
দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে অংশীদারদের সঙ্গে পারস্পরিক ঘাটতি মেটাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, নির্বাহী আদেশ ১৪২৫৭-এ ঘোষিত জাতীয় জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় নির্দিষ্ট কিছু বাণিজ্য অংশীদার দেশের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত অ্যাড ভ্যালোরেম (মূল্যভিত্তিক) শুল্ক আরোপ করা প্রয়োজন ও যৌক্তিক।’
আরও পড়ুন: মার্কিন পণ্যে পাল্টা ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ব্রাজিলের
এদিকে, কানাডার সঙ্গে ২৫ শতাংশ শুল্ক সমঝোতা হওয়ার পরও নতুন করে তা বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করা হবে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন। কানাডা থেকে ফেন্টানিলসহ অন্যান্য মাদক যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ঠেকাতে কানাডার ব্যর্থতার কারণ হিসেবে নতুন করে এই শুল্কহার ঘোষণা করা হয়েছে বলে নির্বাহী আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
কানাডার ওপর আরোপিত এই শুল্ক আজ (১ আগস্ট) থেকেই কার্যকর হবে এবং বাকি দেশগুলোর ওপর ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রত্যাশা বনাম ফলাফল
গত এপ্রিলে শুল্ক ধার্যের পর অনেক দেশই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে শুল্কের পরিমাণ নিয়েও দ্বিমত রয়েছে অনেকের।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক হিনরিচ ফাউন্ডেশনের বাণিজ্য নীতিবিষয়ক প্রধান ডেবোরা এলমস আল জাজিরাকে বলেন, ‘এই শুল্ক আরোপের ঘোষণা এসেছে সর্বশেষ সময়সীমার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে।’
তবে নতুন এই শুল্কহার ‘অস্বাভাবিক হিসাবের’ ওপর ভিত্তি করে করার হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
তার ভাষ্যে, আগের শুল্ক নির্ধারণের পদ্ধতিটা হয়তো বাজে ছিল, কিন্তু অন্তত একটা যুক্তি ছিল। নতুন শুল্কহার বাস্তবতার সঙ্গে একদম খাপ খায় না। কিছু দেশ কঠিন দরকষাকষি করেও ভালো ফল পেয়েছে, কেউ কেউ পায়নি। আবার কেউ আলোচনার সুযোগ না পেয়েও কম শুল্ক পেয়েছে, আবার কিছু দেশের ক্ষেত্রে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: কানাডায় ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের, অনিশ্চয়তায় ইউএসএমসিএ চুক্তি
কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের ট্রেড পলিসি ফেলো ইনু মানাক বলেন, নতুন হারে শুল্ক কার্যকর হতে সাত দিন সময় লাগবে। এই সময়ে যেসব দেশ আগেই আলোচনা শুরু করেছিল, তারা চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য বাড়তি সময় পেয়েছে।
কীভাবে নির্ধারিত হলো এই শুল্কহার
নতুন করে ঘোষিত এই শুল্কে যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে, এমন বেশিরভাগ দেশের ওপরই সর্বজনীন ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
তবে যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, তাদের ওপরই আরোপিত এই শুল্কহারে মূলত পরিবর্তন এসেছে। ওই দেশগুলোর ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভিত্তিমূল শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। যদিও ট্রাম্পের সঙ্গে কোনো চুক্তি হওয়া সাপেক্ষে এবং ওই দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় শুল্কহারে দেশভেদে তারতম্য দেখা গেছে।
এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে শুল্ক চুক্তির ঘোষণা দিয়েছিল হোয়াইট হাউস। তাছাড়া সেমিকন্ডাক্টর, মোটরযান, গাড়ির যন্ত্রাংশ, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ও রপ্তানি পণ্যের জন্য পৃথক শুল্ক নির্ধারণ করা হচ্ছে।
যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, তাদের বেশিরভাগের জন্যই শুল্কহার কিছুটা কমানো হয়েছে, যদিও কিছু ক্ষেত্রে বিস্ময়কর সিদ্ধান্তও দেখা গেছে।
আরও পড়ুন: শুল্ক আলোচনা: বৃহস্পতিবারের বৈঠকেও অগ্রগতির দেখা নেই
তাইওয়ানের প্রাথমিক শুল্কহার ৩২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে, যেখানে প্রতিবেশী জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার চুক্তির তুলনায় এই হার এখনো বেশি।
আবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও ভারতের জন্য ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের জন্য শুল্ক ২৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৯ শতাংশ করা হয়েছে।
তবে সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো, সুইজারল্যান্ডের শুল্কহার ৩১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৯ শতাংশ করা হয়েছে। আবার যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার জন্য ৪১ শতাংশ এবং মিয়ানমারের জন্য ৪০ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণও বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য শুল্কহারগুলোর মধ্যে রয়েছে— লাওসের জন্য ৪০ শতাংশ, ইরাক ও সার্বিয়ার জন্য ৩৫ শতাংশ এবং আলজেরিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, লিবিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য ৩০ শতাংশ।
এ ছাড়া শ্রীলঙ্কার ওপর ২০ শতাংশ, বাংলাদেশের ওপর ২০ শতাংশ, ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ, কম্বোডিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ ও পাকিস্তানের ওপর ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দেশভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণ করে মনে করেন সিঙ্গাপুরভিত্তিক এপ্যাক অ্যাডভাইজর্সের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী স্টিভ ওকুন।
তার মতে, প্রতিটি দেশের জন্য নির্ধারিত শুল্কহারের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সামগ্রিক বা নির্দিষ্ট তত্ত্ব নেই। বাণিজ্য-সংক্রান্ত হোক বা অন্য যেকোনো কারণে, দেশগুলোর ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্টের মনোভাবের ওপর ভিত্তি করেই আলাদা শুল্ক নির্ধারিত হয়।
১২৫ দিন আগে
ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে পুতিনকে সময় বেঁধে দিলেন ট্রাম্প
ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দেওয়া ৫০ দিনের সময়সীমা কমিয়ে ১০ থেকে ১২ দিন নির্ধারণ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তা না-হলে রাশিয়ার ওপর কড়া শুল্কারোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় সময় সোমবার (২৮ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘অপেক্ষা করার কোনো মানে নেই। আমরা কোনো অগ্রগতি দেখছি না।’
এর আগে ১৪ জুলাই ট্রাম্প বলেছিলেন, সেপ্টেম্বরের শুরু পর্যন্ত শান্তিচুক্তি না হলে তিনি রাশিয়ার ওপর কড়া শুল্কারোপ করবেন। তবে এখন সেই সময়সীমা কমিয়ে ১০–১২ দিন নির্ধারণ করেছেন তিনি।
এই পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা এবং রাশিয়ার বাণিজ্যিক অংশীদারদের লক্ষ্য করে মাধ্যমিক শুল্কারোপের বিষয়টি। এ সম্পর্কিত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা সোমবার অথবা মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দেওয়া হবে বলেও জানান ট্রাম্প। এ বিষয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানালেও ইউক্রেনে অব্যাহত হামলা চালানোর জন্য পুতিনের সমালোচনা করেন ট্রাম্প। পুতিনের প্রতি হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি, বিষয়টি এভাবে করা উচিত নয়।’
আরও পড়ুন: ইউক্রেনের সঙ্গে ফের আলোচনায় বসতে চায় রাশিয়া
পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প জানান, তিনি এখন আর সেই বিষয়ে আগ্রহী নন। তবে ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া নিয়ে কিছুটা দ্বিধাও প্রকাশ করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমি রাশিয়ার জনগণকে ভালোবাসি। আমি তাদের সঙ্গে এটা করতে চাই না।’
এদিকে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি পুতিনের বিরুদ্ধে আরও কঠোর অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইউক্রেন। রাশিয়াকে দেওয়া সময়সীমার জন্য ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্টের দপ্তরের প্রধান আন্দ্রেই ইয়ারমার্ক।
টেলিগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘পুতিন কেবল শক্তির ভাষা বোঝেন। সেটিই এখন স্পষ্ট ও জোরালোভাবে তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রাতভর রাশিয়া ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে ৩০০টির বেশি ড্রোন, চারটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং তিনটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। ট্রাম্পের যুদ্ধ বন্ধের চাপ সত্ত্বেও রাশিয়ার হামলা অব্যাহত রয়েছে।
১২৮ দিন আগে
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতিতে কি ‘উইন-উইন’ অবস্থান হারাচ্ছে বাংলাদেশ?
এপ্রিলে বাংলাদেশের ওপর আরোপিত যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ বাণিজ্য শুল্ক মাত্র ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ ‘উইন-উইন’ অবস্থান হারিয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যা কার্যকর হবে আগামী ১ আগস্ট থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের এই বড় শুল্কের বোঝা পড়বে দেশের পোশাকখাতের ওপর, যেখানে এ খাতে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের শুল্ক ৪৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে।
এপ্রিলে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর আলোচনার জন্য বাংলাদেশ ৯০ দিন সময় পেলেও কেন সুবিধা করতে পারল না, এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) গবেষণা পরিচালক মাহফুজ কবির বলেন, ‘এতদিন আমরা উইন-উইন অবস্থান নিয়ে ভেবেছিলাম, সেই সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেল। ৯০ দিনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর আলোচনা হয়েছে বলে মনে হয়নি। যদিও আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তবে বাংলাদেশকে যা করার এক সপ্তাহের মধ্যেই করতে হবে।’
ভিয়েতনাম বড় অঙ্কের শুল্ক কমিয়ে এনেছে। এখন যদি ভারত-পাকিস্তান আলোচনার টেবিলে নিজেদের সুবিধা আদায় করে নিতে সক্ষম হয় এবং বাংলাদেশ যদি দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিতে পারে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশি পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপ ট্রাম্পের, ১ আগস্ট থেকে কার্যকর
শুল্ক কমানো প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের চিঠির জবাব দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের শুল্ক ও অশুল্ক নীতিসমূহ এবং বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতার কারণে যে দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী বাণিজ্যঘাটতি তৈরি হয়েছে তা থেকে সরে আসতে হবে। ২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো বাংলাদেশের যেকোনো ধরনের পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা সব খাতভিত্তিক শুল্কের অতিরিক্ত হিসেবে প্রযোজ্য হবে।
উচ্চ শুল্কহার এড়াতে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে পণ্য পাঠানো হলে তার ওপরও উচ্চ শুল্কহার আরোপ হবে। ৩৫ শতাংশ শুল্ক বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে বাণিজ্য ঘাটতি আছে, তার তুলনায় অনেক কম বলে জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যদি বাংলাদেশ এই শুল্কের জবাবে আরও শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ৩৫ শতাংশের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করবে। বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাধা দূর করতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
ব্যবসায়ীদের বড় একটি অংশ মনে করছেন, দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমেও এত স্বল্প সময়ে শুল্ক কমিয়ে আনা সম্ভব নয়। বিশেষ করে শুল্ক কমাতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে যেসব প্রস্তাব দিয়েছে, তা যথেষ্ট আকর্ষণীয় নয় বলে মনে করছেন তারা।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) পরিচালক আশরাফ আহমেদ বলেন, ‘এলপিজি, সয়াবিন ও তুলা নিয়ে বাংলাদেশ যেসব সুবিধার প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়েছে তা দেশটির কাছে আকর্ষণীয় মনে হয়নি। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় পোশাক কোম্পানিগুলো আগাম পোশাক মজুদ করে রেখেছে। এতে করে সামনে পোশাকের অর্ডার কমে যাবে। সমাধানে আসতে হাতে যা সময় আছে তা একেবারেই কম। এতে করে নতুন সিদ্ধান্তে আসা মুশকিল।’
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উভয়ের জন্য লাভজনক শুল্ক চুক্তির আশায় ঢাকা: শফিকুল আলম
তবে শুল্ক কমে আসার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছেন, বাণিজ্য উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। প্রতিনিধিদলের সঙ্গে যোগ দিতে আজই ঢাকা ছাড়ছেন বাণিজ্য সচিব। রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের (ইএসটিআর) সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আগামীকাল শুল্ক প্রসঙ্গে আবারও আলোচনা হবে।
‘ওয়ান টু ওয়ান নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে’ শুল্ক কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থ উপদেষ্টা।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-জুন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ৭.৬০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যা ওই সময়ের মোট রপ্তানির ১৭.০৯ শতাংশ।
এ সময়ে বাংলাদেশের ওভেন পোশাকের ২৫.৯৩ শতাংশ, নিট পোশাকের ১১.৭১ শতাংশ ও হোম টেক্সটাইলের ১৬.১২ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতিতে সবচেয়ে বড় ধাক্কা পোশাক খাতে আসবে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী প্রেসিডেন্ট ফজলে শামীম এহসান গতকাল (মঙ্গলবার) বলেন, ‘আগামীকালের (বুধবার) মিটিংয়ের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। মিটিং ফলপ্রসূ হলে শুল্ক কমে আসার বড় সম্ভাবনা আছে।’
শামীম জানান, যদিও ভারতের ওপর আরোপিত শুল্ক ২৭ শতাংশ, তবে ট্রাম্প ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর ওপর আলাদা ১০ শতাংশ শুল্কারোপ করতে পারেন। যদি চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক সমঝোতায় পৌঁছায় তাহলে বাংলাদেশ বিপদে পড়বে। কিন্তু চীন আর ভারতের ওপর উচ্চ শুল্কহার বহাল থাকলে, বিশেষ করে চীনের ওপর শুল্কারোপ অব্যাহত রাখলে বাংলাদেশের এখনো বাণিজ্য সুবিধা নেওয়ার সুযোগ আছে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনা থেকে ইতিবাচক ফলের আশা অর্থ উপদেষ্টার
১ আগস্টের পর শুল্ক বিষয়ে আর কোনো আলাপ-আলোচনার সুযোগ যুক্তরাষ্ট্র রাখবে কিনা সোমবার সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প নির্দিষ্ট করে কিছু জানাননি। তবে আলোচনার পথ একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি—এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি। এ অবস্থায় শুল্ক কমাতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ এবং ব্যবসা সংশ্লিষ্টরা।
১৪৯ দিন আগে
বাংলাদেশি পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপ ট্রাম্পের, ১ আগস্ট থেকে কার্যকর
বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যা কার্যকর হবে আগামী ১ আগস্ট থেকে। এর আগে ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপ করেছিলেন তিনি, সেই তুলনায় এবার ২ শতাংশ কম। তবে রপ্তানি পোশাক খাতে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের তুলনায় এটি অনেক বেশি। কারণ ভিয়েতনামের পণ্যে এই শুল্কারোপ হয়েছে ২০ শতাংশ।
স্থানীয় সময় সোমবার (৭ জুলাই) নিজের ট্রুথ সোশ্যালে এই ঘোষণা দেন তিনি।
এরপর বাংলাদেশ সময় সোমবার দিবাগত রাত ২টা ৩৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো এ সম্পর্কিত একটি চিঠিও প্রকাশ করেন ট্রাম্প। একই ধরনের চিঠি তিনি অন্যান্য দেশের নেতাদের কাছেও তিনি পাঠিয়েছেন, যেখানে তাদের জন্য নির্ধারিত শুল্কহার উল্লেখ ছিল।
আগামী ১ আগস্ট থেকে নতুন শুল্কহার কার্যকর হওয়ার কথা ওই চিঠি থেকেই জানা গেছে।
এর আগে, গত এপ্রিলে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। তখন আগ্রাসী এই শুল্কহার কার্যকর করার আগে সময় দেওয়ার জন্য ট্রাম্পকে চিঠি লিখেছিলেন অধ্যাপক ইউনূস। এরপর বাড়তি এই শুল্ক কার্যকরের আগে তিন মাস সময় দিয়েছিলেন ট্রাম্প। ওই তিন মাসের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে সোমবার তা আরও বাড়িয়ে ১ আগস্ট পর্যন্ত করেছেন তিনি।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানা যায়, বাংলাদেশ ছাড়াও মিয়ানমার ও লাওসের পণ্যে শুল্ক হবে ৪০ শতাংশ, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডে ৩৬ শতাংশ, সার্বিয়ার পণ্যে ৩৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ৩২ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় ৩০ শতাংশ এবং জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, কাজাখস্তান, মালয়েশিয়া ও তিউনিসিয়ার পণ্যে বসবে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক। এ ছাড়াও আরও কিছু চিঠি আসতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন: শুল্ক চুক্তি নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে ঢাকা
যেসব দেশের ওপর শুল্কারোপ করেছেন, যদি এই দেশগুলো তাদের পক্ষ থেকে পাল্টা শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ওপর আরও শুল্ক চাপাবে বলেও সতর্ক করেছেন ট্রাম্প।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টাকে পাঠানো চিঠিতে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘যদি কোনো কারণে আপনি আপনার শুল্ক বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেন, তখন আপনি যে পরিমাণ শুল্ক বাড়াবেন, তা আমাদের আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্কের ওপর যোগ করা হবে।’
অন্যদিকে, বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল শেষ মুহূর্তের আলোচনা চালিয়ে যেতে এখনও ওয়াশিংটনে অবস্থান করছে। তবে আপাতত ট্রাম্পের ঘোষণা চূড়ান্ত বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে।
যদিও চিঠিতে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের শুল্ক ও অশুল্ক বাধা কমালে বিষয়টি নতুন করে বিবেচনা করা যেতে পারে। চিঠিতে তিনি বলেছেন, ‘আপনি যদি এখন পর্যন্ত বন্ধ রাখা আপনার বাণিজ্য বাজার যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উন্মুক্ত করতে চান এবং শুল্ক, অশুল্ক নীতি ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা দূর করেন তাহলে আমরা সম্ভবত এই চিঠির কিছু অংশ পুনর্বিবেচনা করতে পারি।’
ট্রাম্প তার চিরাচরিত কৌশলেই চিঠিগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে পরে সেগুলো ডাকযোগে পাঠাবেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।
এই চিঠিগুলো কোনো পারস্পরিক সমঝোতা চুক্তি নয়, বরং ট্রাম্প নিজেই এসব শুল্কহার নির্ধারণ করেছেন। তাই যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া বিদেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়নি বলে এপির প্রতিবদেনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-ভিয়েতনাম বাণিজ্য চুক্তি সই, শুল্কবাধা দূর করার পরামর্শ
এপির তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত কেবল যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনামের সঙ্গেই পূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনের সঙ্গে আংশিক চুক্তি হয়েছে, আর ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি শিগগিরই হতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
তবে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে সরাসরি প্রতিযোগী এই দুই দেশ।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, নতুন চুক্তি অনুযায়ী ভিয়েতনামের পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে, যা এর আগে ঘোষিত ৪৬ শতাংশ থেকে অনেক কম। এই ২০ শতাংশ শুল্ক আগামী ৯ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।
ভিয়েতনাম তাদের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে কোনো শুল্ক আরোপ না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে— এ কারণেই এই দেশটির ওপর কম শুল্কারোপ করেছেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।
এদিকে সরকারি হিসাবমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্য থেকে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে বাংলাদেশ।
শুল্ক বা ট্যারিফ হলো আমদানি করা পণ্যের ওপর আরোপিত কর, যা আমদানিকারককে দিতে হয়। এতে বিদেশি পণ্যের দাম বাড়ে, ফলে সেগুলো স্থানীয় বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে, যদি আমদানিকারকরা বাড়তি শুল্ক দিতে না চান, তবে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের বাধ্য হয়ে দাম কমাতে হতে পারে।
ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার আগে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে গড় শুল্কহার ছিল ১৫ শতাংশ।
১৫০ দিন আগে
ট্রাম্পের শুল্কারোপ: জরুরি বৈঠক ডাকলেন প্রধান উপদেষ্টা
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যে প্রবেশে অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপের ঘটনায় জরুরি বৈঠক ডেকেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার (৫ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এমন তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, শীর্ষপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ, উপদেষ্টা এবং কর্মকর্তারা বৈঠকে যোগ দেবেন।
আরও পড়ুন: অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করব: প্রধান উপদেষ্টা
গেল ৩ এপ্রিল আকস্মিক এই শুল্কারোপে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ বাংলাদেশের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানির ওপর নির্ভরশীল, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত। এককভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রফতানি গন্তব্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা কিছুটা কমে আসবে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিল্পখাত সংশ্লিষ্টরা। এতে ভারত ও পাকিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে যাবে বলেও মনে করেন তারা।
তাদের ভাষ্যে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে, পাশাপাশি টিকফা চুক্তির আলোকে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে বসতে হবে।
আরও পড়ুন: সেভেন সিস্টার্স নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা সৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কথাই বলেছেন: হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ
দুদেশের স্বার্থের ব্যাপারে সমঝোতা করলে বাংলাদেশের ওপর যে শুল্কারোপ করা হয়েছে, মার্কিন প্রশাসন তা তুলে নিতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তারা। বাংলাদেশ যদি যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে তৈরি পোশাক খাতের অর্ডার ভারত, তুরস্ক, মিসর ও হন্ডুরাসের মতো দেশগুলোতে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
২৪৩ দিন আগে
ট্রাম্পের শুল্কারোপ: বাণিজ্যযুদ্ধ এড়াতে কী ভাবছে দেশগুলো?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব বাণিজ্যিক অংশীদারদের ওপর বহুল আলোচিত পাল্টা শুল্কারোপ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতির বিদ্যমান ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়ে বাণিজ্যযুদ্ধের সূত্রপাত করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে যেকোনো ধরনের বাণিজ্যযুদ্ধ এড়িয়ে চলতে চান বলে অভিমত দিয়েছেন শুল্কের আওতাধীন কয়েকটি দেশের নেতারা। ভিন্নমতও রয়েছে অনেক দেশের। স্থানীয় সময় বুধবার (২ এপ্রিল) হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে শুল্কারোপের ঘোষণা করেন ট্রাম্প। শত্রু-মিত্র পরোয়া না করেই তিনি শুল্কারোপ করেছেন।
নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘যেসব দেশ তাদের পণ্যে শুল্কারোপ করে থাকে, সেসব দেশের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্কারোপ করবেন তিনি, কথা রেখেছেনও।’
আরও পড়ুন: যুদ্ধ পরিকল্পনার চ্যাটগ্রুপে ভুলে সাংবাদিককে যুক্ত করলেন ট্রাম্প কর্মকর্তারা
আবার সমপরিমাণ না করে অর্ধেক শুল্কারোপ করে নিজের উদারতার পরিচয় দিয়েছেন—এমন দাবি তিনি নিজেই করেছেন। যেমন: বাংলাদেশ আমেরিকান পণ্যে ৭৪ শতাংশ শুল্কারোপ করে, জবাবে এবার তিনি বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭ শতাংশ শুল্ক বেঁধে দিয়েছেন।
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতিতে সব আমদানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্কের একটি ভিত্তিরেখা দেওয়া হয়েছে।
পাল্টা পদক্ষেপ নিয়ে কী ভাবছে দেশগুলো
যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেশ যুক্তরাজ্যের পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্কারোপ করেছেন ট্রাম্প। জবাবে দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী জোনাথন রেনল্ডস বলেন, ‘ওয়াশিংটন এখনো তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র। দেশটির আরোপিত শুল্কের প্রভাব কমাতে যুক্তরাজ্য একটি বাণিজ্যচুক্তি করতে আগ্রহী।’
রেনল্ডস বলেন, ‘কেউই বাণিজ্যযুদ্ধ চায় না, আমাদের উদ্দেশ্য একটি চুক্তি নিশ্চিত করা।’ তবে বিকল্প পদক্ষেপ নিয়েও প্রস্তুতি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশের স্বার্থ সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবে যুক্তরাজ্য প্রশাসন।’
অনেকটা একই সুরে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের আরেক মিত্র জাপান। শুল্কারোপের বিষয়টি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করার কথা জানিয়েছেন জাপানের প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি।
তিনি জানান, ‘প্রতিশোধমূলক কোনো পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র-জাপানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।’
এ কারণে টোকিও এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার থেকে বিরত থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই উদ্যোগ না যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য ফলপ্রসূ হবে, না যেসব দেশের ওপর শুল্কারোপ করা হয়েছে তাদের কোনো কাজে আসবে।’
এক ফেসবুক পোস্টে তিনি জানান, ‘বাণিজ্যযুদ্ধ ঠেকাতে শুল্কারোপের বিষয়ে একটি সমঝোতায় আসতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে তার প্রশাসন।’
এ সময়, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ পশ্চিমাদের দুর্বল করে অন্যান্য বৈশ্বিক শক্তিকে সুবিধা দেবে বলে মত দেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী।
অন্যদিকে, ট্রাম্পের আরোপিত ১০ শতাংশ শুল্কের জবাবে পাল্টা শুল্কারোপের কথা জানিয়েছে ব্রাজিল প্রশাসন। দেশটির পার্লামেন্টে এ সম্পর্কিত একটি বিলও পাশ করা হয়েছে বলে এপির খবরে বলা হয়েছে।
একই পথে হাঁটতে চলেছেন কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী ম্যাক কার্নি। তিনিও পাল্টা শুল্কারোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এছাড়া পাল্টা পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী। তবে কি ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে তা সুষ্পষ্ট করে জানাননি তিনি।
বিশ্ব বাণিজ্যে বড় আঘাত
ট্রাম্পের আকস্মিক এই শুল্কারোপে বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় বড় ধাক্কা লাগবে বলে আশঙ্কা করেছিলেন অনেকে। এরইমধ্যে এই আশঙ্কা বাস্তবে ফলতেও শুরু করেছে। বুধবারের ঘোষণার পরেই বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের শেয়ারবাজারে পতন দেখা গেছে। তেলের দাম বেড়েছে ২ ডলারের বেশি।
এই শুল্কারোপ দীর্ঘায়িত হলে কয়েক দশক ধরে গড়ে ওঠা সাপ্লাই চেইন (সরবরাহ ব্যবস্থা) ভেঙে যেতে পারে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে শিগগিরই যেসব সমস্যা তৈরি হতে যাচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম বিশ্ব বাণিজ্যে মন্দার ঝুঁকি।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফিচ রেটিংসের প্রধান ওলু সোনোলা বলেন, চলতি বছরে বিভিন্ন দেশের পণ্য আমদানিতে গড়ে ২২ শতাংশ শুল্কারোপ করেছেন ট্রাম্প, যা গত বছর ছিল মাত্র ২.৫ শতাংশ।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ শুধু যুক্তরাষ্ট্রেরই নয়; বরং বিশ্ব অর্থনীতির মোড় ঘুরিয়ে দেবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত অনেক দেশেই মন্দায় পড়তে যাচ্ছে বলেও মত দেন তিনি।
এই শুল্ক ধার্য করায় অর্থনৈতিকভাবে সমস্যায় জর্জরিত প্রশান্ত-মহাসাগরীয় দেশগুলোতে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে শঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
নিজ নিজ দেশে অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেই এই অতিরিক্ত শুল্ক যেন ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’। ট্রাম্প প্রশাসন লাওসের ওপর ৪৮ শতাংশ, কম্বোডিয়ার ওপর ৪৯ শতাংশ ও মিয়ানমারের ওপর ৪৪ শতাংশ শুল্কারোপ করেছে।
মিয়ানমারের অর্থনীতি এরইমধ্যে চরম সংকটে, গত সপ্তাহে দেশটিতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত অন্তত ৩ হাজারের বেশি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বেশিরভাগ স্থাপনা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ট্রাম্প বলেছিলেন তিনি দুর্যোগ মোকাবিলায় সহায়তা করবেন, করেছেন মিয়ানমারের পণ্যে ৪৪ শতাংশ শুল্কারোপ।
ক্ষতি কমাতে কি করতে পারে দেশগুলো
এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বেশিরভাগ পণ্য আমদানি করে থাকে। ট্রাম্পের শুল্কারোপের কারণে নিজ দেশের অর্থনীতির নেতিবাচক প্রভাব এড়াতে গাড়িনির্মাতাসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোতে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন বৃহৎ রপ্তানিকারক দেশগুলো।
দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করেছেন ট্রাম্প। এতে সেখানকার অর্থনীতিতে কেমন প্রভাব পড়তে পারে, সে সম্পর্কে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হান ডাক সু নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান দক্ষিণ কোরিয়ার বানিজ্যমন্ত্রী। এর ফলে তারা অতিরিক্ত শুল্কের নেতিবাচক প্রভাব কমাতে পারবেন বলে আশা করছেন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই চীনা পণ্যে শুল্কারোপ করেই যাচ্ছেন। চুপ হয়ে বসে নেই বেইজিংও। ট্রাম্পের শুল্কের জবাবে তারাও পাল্টা শুল্কারোপ করেছেন। এবারও পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বেইজিং।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কারোপে ইইউ প্রধানের নিন্দা
পাশাপাশি একতরফাভাবে শুল্কারোপ না করে অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বাণিজ্যিক সমস্যাগুলো সমাধান করতে ওয়াশিংটনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চীন।
তবে যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে ট্রাম্পের আরোপিত নতুন এই শুল্ক মেক্সিকোর ওপর কি ধরণের প্রভাব ফেলতে পারে, তা পর্যবেক্ষণ করবেন বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেনবাম।
তিনি বলেন, ‘কেউ আমাদের ওপর শুল্কারোপ করলেই যে একই কাজ আমাদেরও করতে হবে; এমন কোনো কথা নেই। আমাদের দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে যা কিছু প্রয়োজন, আমরা তাই করবো। এটিই আমাদের উদ্দেশ্য।’
ট্রাম্পের শুল্কারোপ অযৌক্তিক
হোয়াইট হাউস ঠিকঠাকভাবে হিসেব না করেই শুল্কারোপ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।
অষ্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আন্থনি আলবানিজ বলেছেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই শুল্কারোপ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, তবে ক্যানবেরা কোনো পাল্টা পদক্ষেপ নেবে না।’
আলবানিজ বলেন, ‘ট্রাম্প বলেছিলেন তিনি পাল্টা শুল্কারোপ করবেন। অষ্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মুক্তবাণিজ্য চুক্তি রয়েছে, তা সত্ত্বেও তিনি ১০ শতাংশ শুল্কারোপ করেছেন, এটি হওয়ার কথা ছিল শূন্য। ট্রাম্প যেটি করেছেন, সেটি কোনো বন্ধু আচরণ হতে পারে না।’
সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় হলো দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের অষ্ট্রেলিয়ার মালিকানাধীন ছোট্ট দ্বীপ নরফকের ওপর ২৯ শতাংশ শুল্কারোপ করেছেন ট্রাম্প। অঞ্চলটিতে মাত্র দুই হাজার মানুষের বসবাস, অর্থনীতি পর্যটননির্ভর।
দ্বীপটির প্রশাসক জর্জ প্লান্ট জানান, ‘যুক্তরাষ্ট্রে তারা কোনো পণ্য রপ্তানি করেন না। তাই শুল্কারোপের প্রশ্নও ওঠে না। অথচ ট্রাম্প তাদের ওপর ২৯ শতাংশ পাল্টা শুল্কারোপ করেছেন।
নিউজল্যান্ডের বাণিজ্যমন্ত্রী টড ম্যাকক্লেও জানান, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে তারা ২০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করেননি। তবে তারা কোনো পাল্টা পদক্ষেপ নেবেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের লাভবান হওয়ার আশা ক্ষীণ
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে এই পাল্টা শুল্কারোপ করার দাবি করেছেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রশাসনের জন্য শত শত বিলিয়ন ডলার রাজস্ব আনতে এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যে ন্যায্যতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই তিনি এই পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে জানান।
তবে এই ধরনের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নিয়ন্ত্রণে বিদ্যমান নীতিগুলোকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে বলে মন্তব্য করেছেন চিলির প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বোরিক।
এ বিষয়ে সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো বলেন, ‘ট্রাম্পের এই শুল্কারোপের মাধ্যমে মুক্ত বাণিজ্য নীতির মূলে থাকা নয়া-উদারতাবাদের মৃত্যু ঘটেছে।’
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের শুল্কারোপ কতটা ভোগাবে বাংলাদেশকে?
ট্রাম্পের এই শুল্কারোপ দেশটির অর্থনীতির জন্য খুব কমই ফলপ্রসূ হবে; বরং বাণিজ্যযুদ্ধের শঙ্কা তৈরি করবে— এমনটাই মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
ইতালির আন্তর্জাতিক রাজনীতি অধ্যয়ন নামক প্রতিষ্ঠানের প্রধান ম্যাট্টেও ভিল্লা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু শুল্কারোপ করেছে, ইউরোপকেও অবশ্যই এর জবাব দিতে হবে। সম্ভবত ব্রাসেলস আশা করছে, তারা যদি কঠোর কোনো পদক্ষেপ নেন, তাহলে ট্রাম্প বাধ্য হয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন এবং শুল্কারোপ থেকে সরে আসবেন।’
২৪৫ দিন আগে
ট্রাম্পের শুল্কারোপ কতটা ভোগাবে বাংলাদেশকে?
নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্প। এতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের চাপ পড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদ ও পোশাক খাত সংশ্লিষ্টরা। তাদের ভাষ্যে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে, পাশাপাশি টিকফা চুক্তির আলোকে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে বসতে হবে।
দুদেশের স্বার্থের ব্যাপারে সমঝোতা করলে বাংলাদেশের ওপর যে শুল্কারোপ করা হয়েছে, মার্কিন প্রশাসন তা তুলে নিতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তারা। বাংলাদেশ যদি যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে তৈরি পোশাক খাতের অর্ডার ভারত, তুরস্ক, মিসর ও হন্ডুরাসের মতো দেশগুলোতে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে এই প্রতিবেদকের কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের (বিস) গবেষণা পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর ও নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমে সঙ্গে।
রফতানি বহুমুখী করতে হবে
মার্কিন শুল্কারোপের চাপ কমাতে বাংলাদেশের রফতানিকে বহুমুখীকরণ করতে হবে বলে অভিমত দিয়েছেন ঢাবির সাবেক অধ্যাপক এম এম আকাশ। তিনি বলেন, ‘বহু দেশে বহুরকম পণ্য আমদানি করে এটা আমাদের সামলাতে হবে।’
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কারোপে ইইউ প্রধানের নিন্দা
যদিও সেরকম প্রস্তুতি আমাদের কম আছে উল্লেখ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আমাদের স্ট্র্যাটেজিক ট্রেড (কৌশলগত বাণিজ্য) করতে হবে। আমরা আগে ফ্রি ট্রেডের কথা বলতাম, আরও আগে প্রটেকশনিস্ট ট্রেডের (রক্ষণশীল বাণিজ্য) কথা বলতাম। এখন দুটো কৌশলই অকেজো হয়ে যাবে। আমাদের কৌশলগত বাণিজ্যের দিকে এগোতে হবে।’
‘কোথাও আমাদের রক্ষণশীল হতে হবে, কোথাও ফ্রি ট্রেড করতে হবে, কোথাও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে হবে, কোথাও ভারতের সঙ্গে বাড়াতে হবে। কোথাও ভিয়েতনামের বাজার আমরা দখল করে নেব, কোথাও ভিয়েতনাম আমাদের বাজার দখল করে নেব। আমেরিকান কোনো কোনো পণ্যের ওপর আমরাও শুল্ক বসিয়ে দেব। এই ধরনের নানা রকম কৌশল নিয়ে চলতে হবে।’
এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ‘আমরা অর্থনীতি কতটুকু রক্ষা করতে পারবো, সেটা নির্ভর করছে আমাদের রফতানি কতটা বহুমুখীকরণ করতে পারবো, তার ওপর। দুদিক থেকে বহুমুখীকরণ হয়ে থাকে, একটি পণ্যের ক্ষেত্রে, অন্যটি ডেস্টিনেশনের (গন্তব্য) ক্ষেত্রে।’
তবে এ বিষয়ে দ্বিমত দিয়েছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের (বিস) গবেষণা পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর। তিনি বলেন, ‘আমরা চাইলেও হুট করে আমাদের পণ্য রফতানি অন্যদিকে ডাইভার্ট (সরিয়ে নিতে) করতে পারব না। আমাদের রফতানির ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। সেটা ইনট্যাক্ট (অক্ষত) রাখতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদে হয়ত আমরা ডাইভার্ট পজিশনে যেতে পারি, পণ্য রফতানিতে বৈচিত্র্য আনতে পারি।’
বাণিজ্য যুদ্ধে হারজিত
ট্রাম্পের শুল্কারোপকে বাণিজ্য যুদ্ধ আখ্যায়িত করে এম এম আকাশ বলেন, ‘এটা একটি শুল্ক যুদ্ধ, এই যুদ্ধে আমরা নিশ্চিতভাবে হারবো, সেটা বলা যায় না। ট্রাম্পও হারতে পারেন।’
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘দেশীয় বাজারকে রক্ষা করে নিজ দেশের শিল্প ও কর্মসংস্থান বাড়াতে এই পদক্ষেপ নিয়েছেন ট্রাম্প। কিন্তু এটাতে দুরকম বিপদের শঙ্কা আছে। একটি হচ্ছে—সস্তায় যেসব জিনিস স্থানীয় লোকজন উপভোগ করতেন, সেটা তারা ভোগ করতে পারবেন না।’
‘বিশেষ করে চীনের দিকে থেকে সস্তায় পণ্য আমদানি হতো, সেগুলো আর হবে না। সেগুলোর দাম বেড়ে যাবে। এতে তাদের স্থানীয় লোকজনের জীবনযাত্রার মান বেড়ে যাবে। সুতরাং একদিকে তার দেশের কর্মীদের আয় বাড়বে, কিন্তু ইনকামের রিয়েল ভ্যালু কমে যাবে।’
তার ভাষ্য, ‘এটা মূলত চীনের সঙ্গে তার একটা বোঝাপড়ার বিষয়। কিন্তু পাশাপাশি বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকেও আগে যে রকম শুল্কমুক্ত আমদানি করতো, এখন আর সেটা করতে পারবে না। এতে আমাদের দেশের রফতানি পণ্যের দাম ওদের দেশে বেড়ে যাবে। ফলে এগুলো বিক্রি কমে যাবে। এতে আমাদের দেশের বৈদেশিক মুদ্রার আয় কমে যাবে।‘
বাংলাদেশের ওপর কতটা প্রভাব পড়বে?
বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপ হওয়ায় এটির একটি বড় প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন এম এম আকাশ। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে ৭৬ শতাংশ রফতানি আয় যেখান থেকে হয়, সেটাতো পোশাক শিল্প। কাজেই সেটার যদি ৩৭ শতাংশ দাম বেড়ে যায়। তাহলে বড় প্রভাব তো পড়বেই।’
‘যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের কতটা যায়, ইউরোপে কতটা যায়, অন্যান্য দেশে কতটা যায়, সেই হিসাবের ওপর নির্ভর করবে, আমাদের কত শতাংশ এটির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পোশাক শিল্পের বড় একটি অংশ যুক্তরাষ্ট্রে যায়, কাজেই সেখানে বড় একটা ক্ষতি হবে,’ বলেন এম এম আকাশ।
মাহফুজ কবীর বলেন, এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রে যে পণ্য রফতানি হচ্ছে, সেটা মূল রফতানির ১৯ শতাংশ। পাঁচ ভাগের একভাগ যেখানে রফতানি হচ্ছে, সেখানে ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপ বড় ধাক্কা নিয়ে আসবে।’
সুবিধা নেবে ভারত-পাকিস্তান
বাংলাদেশি পণ্যে মার্কিন শুল্কারোপে সবচেয়ে বেশি সুবিধা নেবে ভারত-পাকিস্তান বলে অভিমত দিয়েছেন ড. মাহফুজ কবীর। তিনি বলেন, ‘এটির পুরো সুবিধা নেবে ভারত ও পাকিস্তান। বাংলাদেশের অনেক অর্ডার তাদের কাছে চলে যাবে। এটি বড় দুশ্চিান্তর বিষয়।’
‘ভারতের বিরুদ্ধে ২৬ শতাংশ ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ২৯ শতাংশ শুল্কারোপ করা হয়েছে। আবার ভারত যে পণ্য রফতানি করে, সেগুলো মোটামুটি বাংলাদেশের রেঞ্জের মতোই। এই জায়গায় বাংলাদেশকে বড় অসুবিধায় পড়তে হবে।’
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, শুল্কারোপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের দাম এমনিতেই বাড়বে। এতে তাদের ক্রেতারা বাংলাদেশকে আর প্রাধান্য দেবে না। তারা প্রাধান্য দেবে ভারত ও পাকিস্তানকে। পাশাপাশি, হন্ডুরাসের মতো কাছাকাছি দেশগুলোর কাছে যাবেন মার্কিন ক্রেতারা।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপ
‘ভিয়েতনামের সঙ্গে যদিও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তি আছে, তবুও তাদের ওপর ৪৪ শতাংশ শুল্কারোপ করা হয়েছে। এটা বাংলাদেশের চেয়েও বেশি। শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে একইরকম। তবুও এ ক্ষেত্রে এসব দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না। যার ফলে ভিয়েতনামের তুলনায় বাংলাদেশের রফতানি কিছুটা বাড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু আমরা দুই দেশই চাপে পড়বো।’
২৪৫ দিন আগে
বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপ
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ‘পারস্পরিক শুল্ক’ নীতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) হোয়াইট হাউস থেকে প্রকাশিত তালিকা অনুসারে, মার্কিন সরকার দাবি করেছে, বাংলাদেশ কার্যকরভাবে আমেরিকান পণ্যে ৭৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। জবাবে, মার্কিন বাজারে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশে ৩৭ শতাংশ ‘ছাড়প্রাপ্ত পারস্পরিক শুল্ক’ আরোপ করা হবে।
আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে ট্রাম্প এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন। মার্কিন পণ্য রফতানির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশ যে ব্যাপক বাধা তৈরি করে রেখেছে, সেই ‘অন্যায় বাণিজ্য চর্চা’ প্রতিরোধেই ট্রাম্প প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতিতে সব আমদানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্কের একটি ভিত্তিরেখা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, যেসব দেশ—মার্কিন প্রশাসনের ভাষায়—মুদ্রার অপব্যবহার, সুরক্ষাবাদ কিংবা অন্যান্য অ-শুল্ক বাধা তৈরি করে রেখেছে, তাদের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্যহারে উচ্চমাত্রায় শুল্ক আরোপ করা হবে।
আকস্মিক এই শুল্কারোপে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। কারণ বাংলাদেশের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানির ওপর নির্ভরশীল, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত। এককভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রফতানি গন্তব্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
আরও পড়ুন: অতিরিক্ত শুল্কারোপ, বেনাপোল বন্দর দিয়ে ফল অমদানি বন্ধ
এতে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা কিছুটা কমে আসবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিল্পখাত সংশ্লিষ্টরা। একইসাথে ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোর ওপরও এই শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
ভারতীয় পণ্যে ২৬ শতাংশ পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, দেশটিতে মার্কিন পণ্য রফতানিতে ৫২ শতাংশ বাধা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর পাকিস্তানের ওপর ২৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে মার্কিন প্রশাসন। তাদের দাবি, পাকিস্তানি বাজারে মার্কিন পণ্যের জন্য ৫৮ শতাংশ বাণিজ্য বাধা রয়েছে।
গেল কয়েক দশক ধরে একপাক্ষিক এই বাণিজ্য সম্পর্ক চলে আসছে, যা অনেক আগেই সংশোধন করা উচিত ছিল বলে দাবি করেছে হোয়াইট হাউস। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, এতে দেশগুলো থেকে পাল্টা পদক্ষেপ আসতে পারে এবং মার্কিন ব্যবসা ও পরিবারগুলোতে খরচ বেড়ে যেতে পারে।
২৪৬ দিন আগে
চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ: ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক শি জিন পিংয়ের
মার্কিন শুল্কারোপ মোকাবিলাসহ অর্থনীতিকে আরও জোরদার করতে দেশের প্রযুক্তিখাতের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং। বৈঠকে বেশ কয়েক বছর পর জনসমক্ষে দেখা গিয়েছে আলীবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা-কে।
স্থানীয় সময় সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) চীনের অন্যতম প্রধান কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ও খ্যাতনামা ব্যবসায়ীদের সাথে শি বৈঠক করেন। এ সময়ে সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি প্রযুক্তি খাতগুলোর বিকাশে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
অনেকদিন ধরেই মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুর কারণ দেখিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ (এআই) চীনের প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগসহ নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।
দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরপরই চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্কারোপ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যা কার্যকর হয়েছে ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে।
আরও পড়ুন: মেক্সিকো-কানাডা ও চীনা পণ্যে ট্রাম্পের শুল্কারোপ, বাণিজ্যযুদ্ধের শঙ্কা
জবাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কয়লা আমদানির ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ এবং অপরিশোধিত তেল, খামারের সরঞ্জামাদি ও কিছু যানবাহন আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করে বেইজিং।
পাল্টাপাল্টি এসব পদক্ষেপের ঘটনা নতুন কিছু নয়। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা বাণিজ্যিক বিরোধের জেরে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ২০১৮ সাল থেকেই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক আরোপের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালেও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন শি জিন পিং। সে সময় তিনি কর ছাড়সহ আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ব্যবসায়ীদের।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও উন্নতি ঘটেছে এ খাতে। যার সর্বশেষ সংযোজন ডিপসিক। মুক্তির মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই এর মোবাইল অ্যাপটির ২৬ লাখ ডাউনলোড হয়। বর্তমানে বিশ্বে সর্বাধিক ব্যবহৃত কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার প্লাটফর্মগুলোর মধ্যে রয়েছে এটি।এ কারণে বিশ্বের বৃহৎ দুই অর্থনীতির চলমান উত্তেজনার মধ্যে চীনের প্রেসিডেন্টের এই উদ্যোগ দেশটির বেসরকারি প্রযুক্তি নির্মাতাদের নিয়ন্ত্রণের নীতির মোড় ঘুরিয়ে দেবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বৈঠকে আমন্ত্রিত ছিলেন, আলীবাবার জ্যাক মাসহ ডিপসিক, হুয়াই, বিওয়াইডির মতো বড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নির্মাতারা।
আরও পড়ুন: মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ চীনের, গুগলের বিরুদ্ধে তদন্তের ঘোষণা
এ বিষয়ে, হংকংয়ের গেভিকল ড্রাগোনোমিকস কোম্পানির উপ-গবেষণা পরিচালক ক্রিস্টোফার বেদ্দর বলেন, ‘প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রকে মোকাবিলা করতে হলে চীনকে অবশ্যই বেসরকারি প্রযুক্তি খাতে মনোনিবেশ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই চীন সরকারের।’
চীনের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, চীনের অর্থনীতিতে বেসরকারি প্রযুক্তির অবদান দেশটির মোট রাজস্ব আয়ের অর্ধেক। এছাড়াও অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রায় ৬০ শতাংশ ও প্রযুক্তির উদ্ভাবনে বেসরকারি খাতের অবদান ৭০ শতাংশ।
এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির ওপর যে চাপ তৈরি হয়েছে , তা লাঘব করতে বেসরকারি খাতকে দেশের সরকার উৎসাহ দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
চীনের বেসরকারি প্রযুক্তিখাত এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আধিপত্য বিস্তার শুরু করেছে উল্লেখ করে ডিপসিকের নির্মাতা লিয়াং ওয়েনফেং বলেছেন, ‘চীনের ডিপসিক যুক্তরাষ্ট্রের ওপেনেএআইয়ের জন্য হুমকি হিসেবে গণ্য হচ্ছে।’
বেইজিংয়ের সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি অধ্যাপক শিয়াওয়ান ঝাং বলেছেন, ‘সোমবারের বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল বেসরকারি খাতের গুরুত্ব তুলে ধরা এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করা।
তিনি বলেন, ‘এই বৈঠকের মূল লক্ষ্য হল সরকারের সমর্থনের বিষয়ে ব্যবসায়ীদের নিশ্চিত করা। চীনের প্রযুক্তিগত উন্নয়নে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের ভূমিকা রাখা প্রয়োজন বলেও মত দেন তিনি।
বিশ্লেষকদের মতে, বৈঠকে বিশেষত জ্যাক মা-এর উপস্থিতি বিনিয়োগকারীদের আস্থাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
এক সময়ের বিখ্যাত এই উদ্যোক্তা ২০২০ সালে তার ফিনটেক কোম্পানি অ্যান্ট গ্রুপের আইপিও বাতিল হওয়ার পর থেকে অনেকটা আড়ালে চলে যান। সে সময় চীনের নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থার সমালোচনা করায় সরকারের ব্যাপক চাপের মুখে পড়েছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন পরে তার উপস্থিতি চীনের ব্যবসাজগতে পরিবর্তনের দিকেই নির্দেশ করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২৮৯ দিন আগে