ফ্যাসিবাদের দোসর
ফ্যাসিবাদের দোসরদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদ ও তাদের দোসর, দুষ্কৃতিকারী, নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ বিদায় নিয়েছে; কিন্তু তাদের দোসররা দেশে বিদেশে সরকারের বিরুদ্ধে নানাবিধ ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সারাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টিকারী এসব অপতৎপরতাকারী এবং তাদের সহযোগীদের আইনের আওতায় আনার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে গত ৮ ফ্রেব্রুয়ারি থেকে অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযান পরিচালনা শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে ‘দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগ’ বিষয়ক কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনির সভাপতিত্বে কর্মশালায় আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।আরও পড়ুন: অপারেশন ডেভিল হান্টে নির্দোষরা যেন শাস্তি না পায়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খন্দকার মাহাবুবুর রহমান। এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী, পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম ও সুপ্রিমকোর্টের অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অপারেশন ডেভিল হান্টের সামগ্রিক কার্যক্রম তদারকি করছে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে স্থাপিত জয়েন্ট অপারেশন সেন্টারের মাধ্যমে অপারেশন ডেভিল হান্টের সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয় করা হচ্ছে। মেট্রোপলিটন এলাকায় মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার এবং জেলা পর্যায়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান পরিচালনায় সমন্বয় করছেন।
উপদেষ্টা বলেন, জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সাথে সরাসরি জড়িত সন্ত্রাসী, নরহত্যায় জড়িত বিশেষ হেলমেট বাহিনী, ফৌজদারি অপরাধে সম্পৃক্ত ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসররা, অর্থ পাচারকারী, লুণ্ঠনকারী, ষড়যন্ত্রকারী, দুষ্কৃতকারী, রাষ্ট্রদ্রোহী, দুদকের মামলায় আসামিদের আইনের আওতায় আনার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের পুলিশ বাহিনী, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা আইনি প্রক্রিয়ায় এসকল অপরাধীদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গ্রেফতার করেছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর আমরা একটি চ্যালেঞ্জিং সময় অতিবাহিত করছি। তারা আইনশৃঙ্খলা, বিচারব্যবস্থা, অর্থনীতিসহ রাষ্ট্রের এমন কোনো কাঠামো নেই যেটা ধ্বংস করেনি। আদালত, প্রসিকিউশন, প্রশাসন ও পুলিশ—রাষ্ট্রের এ চারটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করলে জনগণ ন্যায়বিচার পাবেন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।
তিনি বলেন, পুলিশ ও আদালত ফাংশনাল হলে মবতন্ত্র কমে যাবে। মানুষ দেখতে চায় রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকরভাবে কাজ করছে তথা রাষ্ট্রের প্রকৃত অস্তিত্ব রয়েছে।
তিনি এসময় বিচারকদের হুটহাট করে জামিন না দেওয়া এবং জামিনের যোগ্য ব্যক্তিদের বঞ্চিত না করার আহ্বান জানান।
শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে শতশত গুম ও হাজার হাজার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থার পাশাপাশি রাষ্ট্রের কাঠামোকে ব্যবহার করা হয়েছে ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায়।আরও পড়ুন: সন্ত্রাসী ও দুস্কৃতকারীরা ‘অপারেশন ডেভিল হান্টের’ টার্গেট: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতা ও রাজনৈতিক কর্মীদের পাশাপাশি মানবাধিকার কর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মানুষকে মুক্তি দেওয়া তথা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ শুরু করেছে। সেজন্য পুলিশ, প্রশাসন ও বিচার বিভাগসহ নানা সেক্টরে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে।
‘মৌলিক মানবাধিকার নীতিকে মাথায় রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কাজ করতে হবে এবং আদালতকে সত্যিকার অর্থে কার্যকর করতে হবে।’
কর্মশালায় ঢাকা ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসির সব ম্যাজিস্ট্রেট, সব পাবলিক প্রসিকিউটর, ঢাকা ও গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, ঢাকা ও গাজীপুর মেট্রোপলিটনের সব জোনাল উপপুলিশ কমিশনার ও সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন।
৫৯ দিন আগে