জুলাই হত্যাকাণ্ড
চট্টগ্রামে জুলাই হত্যাকাণ্ড: ২৩১ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র দাখিল
জুলাই বিপ্লবের এক বছরের মাথায় চট্টগ্রামে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় নিহত একটি হত্যা মামলায় ২৩১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ পত্র জমা দিয়েছে পুলিশ।
গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দুই দিন আগে গুলিবর্ষণে এক দোকান কর্মচারী নিহত হয়। চট্টগ্রামে জুলাই অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের প্রথম কোনো মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দিল পুলিশ।
অভিযোগপত্রে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় হত্যার অভিযোগে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ ২৩১ জনকে আসামি করা হয়েছে। সাক্ষী করা হয়েছে ১২৮ জনকে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগরীর চান্দগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুরুল হক বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) আদালতের প্রসিকিশন শাখায় অভিযোগপত্র জমা দেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, প্রসিকিউশন শাখা থেকে অভিযোগপত্রটি চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে দাখিল করা হয়। আদালত আগামী ২৫ আগস্ট বাদীর উপস্থিতিতে অভিযোগপত্রের ওপর শুনানির সময় নির্ধারণ করেছেন।
পড়ুন: চট্টগ্রাম আদালতের ১,৯১১ মামলার নথি গায়েব
সিএমপির চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব আহমেদ জানান, তদন্ত শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি আইনের ৩০২ ধারায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিচারের আবেদন করা হয়েছে। পরবর্তী ব্যবস্থা আদালত গ্রহণ করবেন।
আসামিদের মধ্যে আরও আছেন- চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, এম এ লতিফ, আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দীন নদভী, মহিউদ্দিন বাচ্চু, আবদুচ ছালাম, দিদারুল আলম দিদার, এস এম আল মামুন ও নোমান আল মাহমুদ, চসিকের সাবেক কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী, এসরারুল হক, নুর মোস্তফা টিনু, পুলক খাস্তগীর, সলিমুল্লাহ বাচ্চু, জিয়াউল হক সুমন এবং নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীসহ যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের ২৩১ নেতা কর্মি রয়েছে।
পুলিশ জানায়, গত বছরের ৩ আগস্ট সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট এলাকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন শহিদুল ইসলাম শহিদ। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর ওই বছরের ১৫ আগস্ট ভুক্তভোগীর ভাই শফিকুল ইসলাম চান্দগাঁও থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত শেষে এক বছরের মাথায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হলো আদালতে।
১২৪ দিন আগে
অক্টোবরের মধ্যে জুলাই হত্যাকাণ্ডের ৩-৪টি মামলার রায় পাওয়া যাবে: আসিফ নজরুল
অক্টোবরের মধ্যে জুলাই হত্যাকাণ্ডের অন্তত ৩ থেকে ৪টি মামলার রায় পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, ‘এসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা, শীর্ষস্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা আসামি হিসেবে রয়েছেন।’
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: সৌদিতে দক্ষ কর্মীর চাহিদা পূরণে কাজ করছে সরকার: আসিফ নজরুল
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই হত্যাকাণ্ডের যে বিচার, সেই বিচারের অগ্রগতি কী হয়েছে—সেটা জানতে চান অনেকে। একটা কমন অভিযোগ হচ্ছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে জুলাই হত্যাকাণ্ড-সংক্রান্ত যে মামলাগুলো আছে, সেগুলোর দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। এ ধরনের অসন্তুষ্টির কথা অনেকে বলেন। আমরা উনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলছি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হওয়া এবং ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের পর ইতোমধ্যে এ আদালতে বিচারের যথেষ্ট অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই আদালত পুরোপুরিভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে ৪ মাস আগে। আদালতে ৩০০টির বেশি অভিযোগ সেখানে করা হয়েছে। আমাদের প্রসিকিউশন টিম যাচাই-বাছাই করে ১৬টি মামলা করেছে। এই ১৬টি মামলার মধ্যে ৪টির তদন্ত কাজ এ মাসের মধ্যেই শেষ হবে। এরপর চার্জশিট গঠনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার কাজ শুরু হবে।’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘আইন অনুযায়ী বিচার কাজ শুরু হওয়ার পর ডিফেন্স আইনজীবীদের প্রস্তুতির জন্য ৩ সপ্তাহ সময় দিতে হয়। আমরা আশা করছি, এই ৩ সপ্তাহ অতিবাহিত হলে আনুষ্ঠানিকভাবে সাক্ষ্য গ্রহণের যে প্রক্রিয়া, সেটা আপনারা খুব ঘন ঘন দেখবেন। এই সাক্ষ্য গ্রহণ প্রক্রিয়াটা শুরু হবে ঈদের পরপর, এপ্রিল মাস থেকে।’
তিনি বলেন, ‘আদালতে অব্যাহতভাবে শুনানি হয় বলে সব মামলার রায় পরবর্তী ৪ থেকে ৬ মাসের মধ্যে, অর্থাৎ এপ্রিল থেকে শুরু করে পরবর্তী ৪ থেকে ৬ মাসের মধ্যে দেওয়া যাবে বলে আশা করি।’
‘যদি পুরো বিচারকার্যটা ধরি, পুরো বিচারকার্যটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের এক বছরের মতো সময় লাগছে। অথচ শেখ হাসিনার আমলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির একজন নেতার বিচার হয়। সেই বিচার কাজ শেষ করতে গড়ে কমপক্ষে আড়াই বছর লেগেছিল। সেখানে আমাদের অর্ধেকেরও কম সময় লাগছে।’
আরও পড়ুন: ছয় কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশ ৮ ফেব্রুয়ারি: আসিফ নজরুল
সময় কম লাগার কারণ ব্যাখ্যা করে আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমাদের প্রসিকিউশন টিম ও তদন্ত টিম অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে দিনরাত কাজ করছে। আরেকটি কারণ হচ্ছে, আগের বিচারগুলো হয়েছিল অনেক দিনের আগের ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে, আর এখন যে বিচার হচ্ছে এটার সাক্ষ্যপ্রমাণ এত বেশি আছে যে আমরা আশা করছি, এক বছরের মধ্যেই আমরা প্রথম কয়েকটি রায় পাব।’
আগামী দুই-একদিনের মধ্যে জাতিসংঘের তদন্ত টিমের প্রতিবেদন পাওয়া যাবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি এই রিপোর্টের ব্যাপারে এখনই আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলব না। তবে একটা জিনিস বলে রাখি, তাদের এই রিপোর্ট আমাদের তদন্ত ও বিচার কাজটাকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার পাশাপাশি বিচার প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও সহজ করতে অনেক অবদান রাখবে।’
২৯৬ দিন আগে