সেতুর নির্মাণ কা
থমকে আছে খুলনার গল্লামারী সেতুর নির্মাণ কাজ, জনদুর্ভোগ চরমে
শুরু থেকেই ধীর গতিতে চলছিল কাজ। নানা কারণে এক পর্যায়ে থমকেও যায় নির্মাণকাজ। এর মধ্যে অন্যতম কারণগুলো হলো- ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের প্রযুক্তিগত মতানৈক্য, প্রকল্পের বাজেটের তারতম্য, অবস্থার প্রেক্ষাপটে(ভেরিয়েশন) বাড়তি কাজের ২০ শতাংশ অর্থ ১৩ থেকে ১৪ কোটি টাকার সুরাহা না হওয়া। খুলনাবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এবং প্রত্যাশিত গল্লামারী স্টিল নেটওয়ার্ক আর্চ ব্রিজের নির্মাণকাজ থমকে যাওয়ায় জনভোগান্তি উঠেছে চরমে।
প্রকল্পের বিভিন্ন জটিলতায় নির্মাণ কাজের ধীর গতির কারণে গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যস্ত সড়কের এক পাশ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অন্য পাশে যানবাহনের চাপ বেড়ে গেছে। এতে প্রতিনিয়ত সড়কটি দিয়ে যানবাহন চলাচলে দুর্ভোগ হচ্ছে। তথ্যানুযায়ী ১৬ মাসে কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ১৯ শতাংশ। বাড়তি ২০ শতাংশ অর্থাৎ ভেরিয়েশনের ১৩ থেকে ১৪ কোটির টাকার সুরাহা না হলে সেতুর নির্মাণ কাজের সমাপ্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড (এনডিই)'র প্রকল্প ব্যবস্থাপক।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খুলনা-চুকনগর- সাতক্ষীরা জাতীয় মহাসড়কের ময়ূর নদীর উপর ২ লেন বিশিষ্ট স্টিল আর্চ গল্লামারী সেতু নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর। এরপর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড (এনডিই) ৮ অক্টোবর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্মাণ কাজ শুরু করে। কার্যাদেশ অনুযায়ী সেতুটির নির্মাণ কাজ ১৮ মাসে অর্থাৎ চলতি বছরের ৩০ মার্চ শেষ হওয়ার কথা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় এরই মধ্যে কাজের মেয়াদ ৩০ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির আবেদন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
জানা যায়, সড়ক বিভাগের সেতু নকশা বিভাগের এ জাতীয় স্টিল নেটওয়ার্ক আর্চ ব্রিজ নির্মাণের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে ব্রিজের নকশার ত্রুটিগত সমস্যা সমাধানে নির্মাণ কাজের শুরু থেকেই দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয়। ব্রিজটির ডিজাইনার ভারতীয় পরামর্শক সন্দ্বীপ গুহানিয়োগী। সেতুর নকশার কাঠামোগত সঠিকতা নিরূপণের জন্য বাধ্য হয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এখন সেতুর নকশাকারী ভারতীয় ওই পরামর্শকের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে।
দেখতে হাতিরঝিলের মতো হলেও গল্লামারী স্টিল নেটওয়ার্ক আর্চ ব্রিজের ডিজাইনে অনেক পরিবর্তন আছে এবং প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেক উন্নতমানের হবে। এটিই হবে সড়ক ও জনপদ বিভাগের অধীনে নির্মিত দেশের প্রথম স্টিল নেটওয়ার্ক আর্চ ব্রিজ।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, কার্যদেশ অনুযায়ী ৬৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা চুক্তি মূল্য হলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের হিসাব অনুযায়ী সংযোগ সড়কসহ ২ টা সেতুর কাজ সম্পন্ন করতে মোট ব্যয় হবে ৮২ কোটি টাকা।
এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় গল্লামারী বাজারের কারণে নির্মাণ কাজের শুরু থেকে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া ব্যস্ততম সড়কটি বন্ধ করে বিকল্প সড়কে যান চলাচলের ব্যবস্থা না করে কাজ করতে গিয়েও বেশ জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।
প্রকল্পের কাজে ধীরগতি এবং নির্মাণ কাজ থমকে থাকা সম্পর্কে প্রকল্পের ব্যবস্থাপক অপূর্ব কুমার বিশ্বাস ইউএনবিকে বলেন, প্রকল্পের কাজে ৪০ মিটার পাইলিং ডিজাইনে ধরা ছিল যেটা পর্যাপ্ত ছিল না। এ কারণে প্রথম অবস্থায় লোড টেস্ট ফেল করে। পাইলের লেনথ ওভাবে কাজ করে গেলে প্রকল্পটি হুমকির সম্মুখীন থাকবে। এরপর ৪০ মিটার পাইলিংয়ের জায়গা ৮ মিটার বৃদ্ধি করে ৪৮ মিটার করে পাইলগুলো কাস্টিং করা হয়েছে। শুরুতে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার ক্ষেত্রে বা নকশাটি পুনরায় করার ফলে সময় ক্ষেপণ হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে যথাসময়ে আমাদের বলতে পারেনি এটা করতে হবে কিনা? এভাবে ৩ থেকে ৪ মাস সময় ব্যয় হয়েছে। এরপর সাবেক প্রধানমন্ত্রী সেতু পরিদর্শনে আসবেন। তিনি আসার পূর্বে অগোছালো প্রকল্পের সাইট পরিষ্কার রাখতে হবে। এ কারণে ২ থেকে ৩ মাস কাজ বন্ধ ছিল। এরপর পাইলিংয়ের কাজ শেষ করে যখন পাইল ক্যাপের কাজ করতে যাব, তখন আমরা দেখি গ্রাউন্ড লেভেল থেকে ৪ মিটার নিচে নামতে হবে। এরকম একটা ব্যস্ত এলাকায় এরিয়ায় কোনো প্রত্যাশিত পরিস্থিতি যাতে তৈরি হতে না পারে, সেজন্য আমরা ১২ মিটার সিট পাইল ড্রাইভ করেছি। এর জন্য বাড়তি আমাদের ২ কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে। পাইল করার জন্য যে বাড়তি খরচ ধরা নেই সেটা আমাদের ধরে কাজ করে উঠে আসতে হয়েছে। বাড়তি এই টাকাগুলো আদৌ পাবো কিনা— সেটার সিদ্ধান্ত এখনও সুরাহা হয়নি। সিদ্ধান্ত ঝুলে আছে। সড়ক ও জনপদ বিভাগ তারা আমাদেরকে বলেছে বিবেচনা করবে।
আরও পড়ুন: খুলনা এখন মাদক চোরাচালানের বড় রুট, যাচ্ছে ঢাকা ও সীমান্তের ওপারে
২৯২ দিন আগে