গাজায় যুদ্ধবিরতি
গাজায় যুদ্ধবিরতি: আরেক দফা বন্দি বিনিময়ে সম্মত ইসরায়েল-হামাস
ইসরায়েলি বন্দিদের মরদেহ হস্তান্তর ও বিনিময়ে শতাধিক ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি দেওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছে ইসরায়েল প্রশাসন ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরই মধ্যে দিয়ে ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপে আরেক দফা বন্দি বিনিময় হতে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল ও হামাসের কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
চলতি সপ্তাহে শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ৬০০ ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও তাদের মুক্তি দেয়নি হামাস। স্থানীয় সময় রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে এক ঘোষণার মাধ্যমে বন্দি বিনিময় স্থগিত করে ইসরায়েল। হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তির সময়ে ‘অপমানজনক অনুষ্ঠান’ করার প্রতিবাদে এ সিদ্ধান্ত নেয় নেতানিয়াহু প্রশাসন।
শনিবার হামাসের জিম্মি মুক্তির সময় জিম্মিদের সমবেত জনতার উদ্দেশে হাত নাড়তে দেখা যায়। এমনকি হামাসের দুই যোদ্ধার কপালে এক জিম্মি চুমু খাওয়ার ছবি, ভিডিও ভাইরাল হয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে এক বিবৃতিতে ইসরায়েল লেছে, ‘লজ্জাজনক অনুষ্ঠান ছাড়াই পরবর্তী জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত শনিবারের নির্ধারিত ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি বিলম্বিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
ইসরায়েলের এ পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানায় হামাস। একে যুদ্ধবিরতির চুক্তির ‘গুরুতর লঙ্ঘন’ আখ্যা দিয়ে হামাস এক বিবৃতিতে জানায়, বন্দিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপের আলোচনায় বসবে না তারা।
এই অচলাবস্থার কারণে চলমান ছয় সপ্তাহের প্রথম ধাপের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি স্থগিত করল ইসরায়েল: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়
তবে মঙ্গলবার আরেক বিবৃতিতে হামাস জানায়, সশস্ত্র দলটির শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা খলিল আল হায়ারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল কায়রো সফরকালে এই বিরোধ নিষ্পত্তির একটি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে।
আলোচনায় অগ্রগতির ফলে চার ইসরায়েলি জিম্মির লাশ ও যুদ্ধবিরতির আওতায় মুক্তি পাওয়া কয়েকশ অতিরিক্ত ফিলিস্তিনি বন্দিকে ঘরে ফেরানোর পথ সুগম হয়েছে বলে জানানো হয়।
গত শনিবার যেসব ফিলিস্তিনির মুক্তি স্থগিত করা হয়েছিল, তাদের সমন্বয়ে চুক্তি অনুযায়ী নতুন বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলি জিম্মিদের লাশ হস্তান্তর করা হবে বলে নিশ্চিত করেছে হামাস।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা হামাসের হাতে নিহত জিম্মিদের লাশ ফিরিয়ে আনার চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, আজই (বুধবার) এই বিনিময় কার্যকর হতে পারে। কোনো প্রকাশ্য অনুষ্ঠান ছাড়াই মিসরীয় কর্তৃপক্ষের কাছে দেহগুলো হস্তান্তর করা হবে বলে ইয়নেট নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এর আগে, শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) হামাস জিম্মিদের মুক্তির সময় একটি সমাবেশের আয়োজন করে। সেখানে ইসরায়েলি জিম্মিদের সমাবেশের উদ্দেশে হাত নাড়তে দেখা যায়। এমনকি এক জিম্মিকে হামাসের দুই যোদ্ধার কপালে চুমু খেতেও দেখা যায়। পরবর্তীতে এ ঘটনার ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ইসরায়েল এ ঘটনার প্রতিবাদ জানায়।
তবে মঙ্গলবারের ঘোষণা অনুযায়ী, নতুন চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের চুক্তির শর্ত পূরণ হবে। গাজায় গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ কার্যকর হয়। আর এ ধাপে ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে ফিরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে আটক কয়েকশ ফিলিস্তিনি ও বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে।
বন্দি বিনিময়ে এই অগ্রগতির পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের মধ্যপ্রাচ্যে সফরের পথও সুগম হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দ্বিতীয় ধাপের আলোচনায় অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি এবং যুদ্ধ সমাপ্তির বিষয়ে আলোচনায় উইটকফের অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন: দুই জিম্মিকে ছাড়ল হামাস, ইসরায়েল মুক্তি দিল ৬০২ বন্দিকে
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তে হঠাৎ হামলা চালায় হামাস। সে সময় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি নিহত হন। পাশাপাশি আরও প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যান হামাস যোদ্ধারা।
এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে পরের দিন থেকে গাজাজুড়ে ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। আকাশ ও স্থলপথে গত প্রায় ১৫ মাস ধরে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ৪৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
অন্যদিকে, এই সময়ে হামাসের ১৭ হাজারের বেশি যোদ্ধাকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েল। তবে এই তথ্যের পক্ষে তারা কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি।
ইসরায়েলের হামলায় ধ্বংসনগরীতে পরিণত হয়েছে গাজা। সেখানকার ৯০ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে; ধ্বংস হয়েছে অবকাঠামো, ভেঙে পড়েছে গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা। পাশাপাশি লড়াই চলাকালে প্রয়োজনীয় ত্রাণবাহী ট্রাকগুলোকে গাজায় প্রবেশ করতে না দেওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়েছে গাজাবাসীর।
৩৩ দিন আগে
হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি: চলতি সপ্তাহে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা
চলতি সপ্তাহে গাজায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায় নিয়ে ‘পরোক্ষ’ আলোচনা শুরু করবে ইসরায়েল ও হামাস। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও ইসরায়েল প্রশাসন।—খবর আল জাজিরার
এদিকে হামাসের নেতা খলিল আল-হায়া বলেছেন, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ইসরায়েলের বিবাস পরিবারের সদস্যসহ চার জিম্মির মরদেহ ফেরত দেওয়া হবে। এরপর শনিবার জীবিত ছয় জিম্মিকে হস্তান্তর করা হবে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। তারা জানায়, বৃহস্পতিবার চার জিম্মির মরদেহ, শনিবার ছয় জীবিত জিম্মি ও এরপর আরও চারজনের মুক্তি নিশ্চিত করতে মিসরের কায়রোতে একটি চুক্তি হয়েছে।
তবে জিম্মিদের পরিচয় প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়েছে নেতানিয়াহুর কার্যালয়। মৃত জিম্মিদের নাম প্রকাশের আগে তাদের শনাক্তকরণের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন: পশ্চিমতীরে এক হাজার অবৈধ বসতি নির্মাণ করবে ইসরায়েল
যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা গত ৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তা শুরু হয়নি বলে জানায় কাতার। ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার জেরুজালেমে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘এটি (দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা) এ সপ্তাহেই হবে।’
তিন ধাপের যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপের আলোচনায় অংশগ্রহণের বিষয়ে ইসরায়েল গত কয়েক সপ্তাহে মিশ্র সংকেত দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গাজায় ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ কার্যকর হয়। চুক্তি অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ ৪২ দিন স্থায়ী হওয়ার কথা রয়েছে। এ ধাপে ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে ফিরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে আটক কয়েক শ ফিলিস্তিনি ও বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে।
চুক্তি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগে বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলেও মিসর ও কাতারের মধ্যস্ততায় এখনো চুক্তিটি কার্যকর রয়েছে।
আরও পড়ুন: গাজায় ‘জাহান্নামের সব দরজা’ খুলে দেওয়ার হুমকি ইসরায়েলের
দ্বিতীয় ধাপে ৬৪ ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তির কথা রয়েছে, বিনিময়ে মুক্তি পাবেন কয়েক শ ফিলিস্তিনি। তবে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা কঠিন হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, এ ধাপে চুক্তির শর্তে যুদ্ধ পরবর্তী গাজার প্রশাসনের রূপ কেমন হবে, সে বিষয়টি রয়েছে।
এ বিষয়ে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে বড় মতপার্থক্য রয়েছে। গাজায় হামাসের অস্তিত্ব মেনে নেবে না বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের কর্মকর্তারা।
৪০ দিন আগে