গ্রামগঞ্জ
ঐতিহ্যের তালপাখা, ব্যস্ত বাগেরহাটের কারিগররা
ঋতুতে বসন্ত। এখনও কিছুটা ঠান্ডা অনুভূত হয়। প্রকৃতি জানান দিচ্ছে গরম আসছে। গরমের মধ্যে শরীর শীতল করতে তালপাতার পাখার ব্যবহার প্রাচীন কাল থেকে। তালপাতার পাখার নাম শোনেনি এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম। প্রযুক্তির এই যুগেও গ্রীষ্মকালে শহর,বন্দর, গ্রামগঞ্জে এখনও তালপাতার পাখার ব্যবহার রয়েছে। তালপাতার পাখার বাতাসে প্রাণ জুড়াতে এরই মধ্যে গ্রামে গ্রামে পাখা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। কয়েকদিন পরে হাট-বাজার, মেলাসহ বিভিন্ন উৎসবকে ঘিরে দোকানে দোকানে নানা রঙের তালপাতার পাখা দেখা মিলবে। যুগযুগ ধরে তালপাতার পাখা তৈরিতে খ্যাতি রয়েছে বাগেরহাটের ফকিরহাটের মানসা গ্রামের। এখানে তালপাতার পাখা তৈরি করে জীবন চলে অনেকের। এখন ওই গ্রামের কয়েকটি পরিবার পাখা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
শুক্রবার(২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার বাহিরদিয়া-মানসা ইউনিয়নের মানসা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, তালগাছ থেকে বিভিন্ন সাইজের কাঁচা পাতা কেটে মাঠ-ঘাটসহ বিভিন্ন ফাঁকা জায়গায় রোদে শুকানো হচ্ছে। শতশত তালের পাতা যেখানে সেখানে ছড়ানো রয়েছে। আবার কোনো কোনো স্তুপ করে রাখা রয়েছে পাতা। রিক্সাভ্যানে করে বিভিন্ন এলাকা থেকে কাঁচা পাতা আনা হচ্ছে গ্রামে। দিনে রোদ আর রাতে শিশির মাখার পরের দিন ওই পাতা কেটে মাপমতো আকার দেওয়া হচ্ছে। এর পর পাখা তৈরির কারিগড় নারী-পুরুষ বেশ কয়েকজনের হাত বদল হয়ে তালপাতার পাখা পূর্নতা পাবে।
আরও পড়ুন: বর্ণিল আয়োজনে ঢাবিতে বসন্ত বরণ
তালগাছের নানা ব্যবহার রয়েছে আমাদের সমাজে। তালগাছ, তালপাতা এবং তালপাতার পাখা নিয়ে গান, গল্প, কবিতা এবং প্রবন্ধ রয়েছে। তালগাছের নানা ব্যবহারের পাশাপাশি নানা গল্পকাহিনী রয়েছে।
মানসা গ্রামের তালপাতার পাখা তৈরির কারিগড় নয়ন ফকির জানান, তাদের গ্রামের কমপক্ষে ১০টি পরিবার সরাসরি তালপাতার পাখা তৈরির সঙ্গে জড়িত। বংশপরম্পরায় তারা তালপাতার পাখা তৈরি করে আসছে। তাদের গ্রামে তৈরি তালপাতার পাখার অনেক সুনাম রয়েছে। একারণে হাটে-বাজারে তাদের তৈরি পাখার ব্যাপক চাহিদা। ফাল্গুন মাসের প্রথম দিন থেকে তাদের গ্রামে তালপাতার পাখা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এখন পাখা তৈরির প্রাথমিক কাজ চলছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তাদের হাতে পরিপূর্ণভাবে পাখা তৈরি হবে।
নয়ন ফকির আরও জানান, প্রথমে তারা কাঁচা তালপাতা ক্রয় করে বাড়িতে এনে একদিন রোদে শুকায় এবং একরাত শিশিরে রাখে। এর পর কেটে পাখার মাপমতো করে স্তুপ দিয়ে রাখা হয়। তার পর বাঁশ, রঙ এবং সুতার ব্যবহার করে একাধিক হাত বদল হয়ে পরিপূর্ণ পাখা তৈরি হয়। পাইকারদের অর্ডার অনুযায়ী ছোট-বড় নানা সাইজের বিভিন্ন রকম পাখা তৈরি করেন তারা।
আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় আবারও জেঁকে বসেছে শীতের তীব্রতা
৩৯ দিন আগে