ব্যাংকখাত
পুঁজিবাজারের প্রধান সূচক বেড়েছে, ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ব্যাংক খাত
গত এক সপ্তাহের লেনদেনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচকের উত্থানের পাশাপাশি বেড়েছে সার্বিক লেনদেন। পাশাপাশি ব্যাংক খাতের শেয়ারেও এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন।
গত পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধানসূচক বেড়েছে ৪৬ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট। ২০ ফেব্রুয়ারি ৫ হাজার ২০০ পয়েন্টে শেষ হওয়া লেনদেন ২৭ ফেব্রুয়ারি এসে ঠেকেছে ৫ হাজার ২৪৭ পয়েন্টে।
প্রধান সূচক বাড়ার পাশাপাশি ঢাকার পুঁজিবাজারে বেড়েছে গড় লেনদেনের পরিমাণ। গত সপ্তাহে ৪৭০ কোটি টাকা থেকে গড় লেনদেন বেড়ে হয়েছে ৫১৮ কোটি টাকা, যা পাঁচ কার্যদিবসের ব্যবধানে ১০ শতাংশের বেশি।
বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘ বিনিয়োগের আস্থায় ব্যাংক খাতের শেয়ারের দাম বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। তালিকাভুক্ত ৩৬ ব্যাংকের শেয়ারের দাম সম্মিলিতভাবে ১৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ খাতে শেয়ারের দাম বাড়ায় লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। ব্রোকারেজ হাউজ এবং বিনিয়োগকারীরা বলছেন, যদিও এক সপ্তাহের বিবেচনায় ব্যাংক খাত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে—সেটি হলফ করে বলা যায় না; তবে ইতিবাচক উত্থানে এ খাতে নতুন করে আশা দেখছেন তারা।
আরও পড়ুন: পুঁজিবাজারের প্রথম ঘণ্টায় ঢাকায় উত্থান, চট্টগ্রামে পতন
গত সপ্তাহের তুলনায় ব্যাংক খাতে শেয়ার লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। লেনদেন হওয়া ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ২২টির, কমেছে ১০টির এবং অপরিবর্তিত আছে ৪টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ব্যাংক খাতের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দামেও লেগেছে উত্থানের সুবাতাস। এক সপ্তাহের লেনদেনে তালিকাভুক্ত ২৩ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ১৫টির, কমেছে ৫টির এবং অপরিবর্তিত আছে ৩টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
গত পাঁচ কার্যদিবসে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দরবৃদ্ধি ছাড়িয়ে গেছে ১০৫ শতাংশ, পাশাপাশি লেনদেন বেড়েছে ৮৬ শতাংশ। অন্যদিকে, সাধারণ বীমা খাতের শেয়ারের দাম বেড়ে ৬৮ শতাংশ ছাড়িয়ে গেলেও জীবন বীমা খাতে দর কমেছে ১৯ দশমিক ৬১ শতাংশ।
এছাড়া, টেলিকম খাতের শেয়ারেও হয়েছে বড় দরপতন। সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে এ খাতের শেয়ারের দাম কমেছে ৪৪ শতাংশের বেশি। সপ্তাহের শেষ দিনেও তালিকাভুক্ত টেলিকম কোম্পানি গ্রামীণফোনের শেয়ারের দাম কমেছে সাড়ে ৪ শতাংশ এবং রবির দাম কমেছে শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে প্রধান সূচক বাড়লেও বাছাইকৃত ব্লু-চিপ কোম্পানির সূচক কমেছে ৪ পয়েন্ট। অপরদিকে, শরীয়াভিত্তিক ডিএসইএসের সূচক ৪ পয়েন্ট বাড়লেও বেহাল দশা এসএমই খাতের শেয়ারে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের এসব কোম্পানির ইনডেক্স ডিএসএমইএক্স কমেছে ১৮ পয়েন্ট।
সপ্তাহজুড়ে ব্লক মার্কেটে সবচেয়ে বেশি শেয়ার বিক্রি করেছে বিচ হ্যাচারি লিমিটেড। বর্তমানে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার বিক্রি হচ্ছে ১০৯ টাকা ৪০ পয়সা দরে। ব্লক মার্কেটে শেয়ার বিক্রিতে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে যমুনা ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ১৯ টাকা ৬০ পয়সায়।
পুরো সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেডের শেয়ার। লেনদেনের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে টেলিকম কোম্পানি গ্রামীণফোন।
৫৩ দশমিক ২৫ শতাংশ রিটার্ন দিয়ে ডিএসইর শীর্ষ কোম্পানিতে জায়গা করে নিয়েছে এস আলম কোল্ড রোলড স্টিলস লিমিটেড নামের ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটি। ২০ ফেব্রুয়ারি এটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৫ টাকা ৪০ পয়সায়, যা গত কার্যদিবসে এসে হয়েছে ২৩ টাকা ৬০ পয়সা মূল্যে।
তবে, প্রায় ১০ শতাংশ দাম হারিয়ে এ সপ্তাহে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে সানলাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। ২০ ফেব্রুয়ারি ৭৫ টাকায় লেনদেন হওয়া কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার শেষ কার্যদিবসে এসে নেমেছে ৬৮ টাকায়।
দরবৃদ্ধি ও পতনের মধ্যে গত সপ্তাহে ঢাকার পুঁজিবাজারের ব্রোকারেজ হাউজের সংগঠন ডিবিএর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৬ বছরে দেশের শেয়ারবাজারের আকার কমেছে ৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ।
আরও পড়ুন: পুঁজিবাজার: সূচকের পতন দিয়েই শেষ হলো সপ্তাহ
এছাড়া, গত ১৫ বছরে পুঁজিবাজারে ১৩৪টি নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে যার ৪২টিই এখন ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে। বাজারে তালিকাভুক্ত ৩৫০টি কোম্পানির মধ্যে বর্তমানে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে থাকা কোম্পানির সংখ্যা ১০৩।
স্পর্শকাতর এ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের গলার কাঁটা হয়ে বিঁধছে মার্জিন ঋণ। বাজার সংস্কারে গঠিত টাস্কফোর্স এ ব্যাপারে কাজ করলেও এখনো হয়নি দীর্ঘস্থায়ী সুরাহা।
ব্রোকারেজ হাউসগুলোর সম্মিলিত হিসাব অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে মার্জিন ঋণের আকার ছাড়িয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণই ৯ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
বর্তমানে সূচকের এই ইতিবাচক অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ থেকে মুক্তি দিতে পারলে আগামীতে বাজারে আবারও আত্মবিশ্বাস ফিরবে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
২৭৮ দিন আগে