গাজা
গাজায় হামাসবিরোধী সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ
ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় হামাসবিরোধী সবচেয়ে বড় বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে অবরুদ্ধ উপত্যকাটির শত শত মানুষ। এসময় বিক্ষোভকারীদের দমনে হামাসের সদস্যরা বল প্রয়োগ করেছেন। হামাস সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠসোঁটা ও অস্ত্রে সজ্জিত ছিল।
হামাসবিরোধী বিক্ষোভের বেশকিছু ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন হামাসের সমালোচক অ্যাক্টিভিস্টরা। এতে দেখা যায়, বুধবার (২৬ মার্চ) উপত্যকার বেইত লাহিয়ার রাস্তায় বিক্ষোভে অংশ নেওয়া তরুণরা স্লোগান দিয়ে বলছেন, হামাস তুমি চলে যাও, হামাস তুমি চলে যাও।
বিক্ষোভ নিয়ে হামাস সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি। তবে বুধবার(২৬ মার্চ) এক বিবৃতিতে যুদ্ধ পুনরায় শুরু করার জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে দায়ী করেছে হামাস।
আরও পড়ুন: ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য ‘বিশেষ উদ্বেগজনক’ দেশ ভারত, র’য়ের ওপর যুক্তরাষ্ট্রকে নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ
অন্যদিকে হামাসের সমর্থকরা বিক্ষোভটিকে গুরুত্বসহকারে দেখছে না এবং অংশগ্রহণকারীদের বিশ্বাসঘাতক বলে অভিযুক্ত করেছে।
ইসলামিক জিহাদের সদস্যরা ইসরায়েলে রকেট হামলা চালানোর একদিন বেইত লাহিয়ার বিশাল অংশ খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। এর পরই মূলত বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং গাজার উত্তরাঞ্চলে এই বিক্ষোভ শুরু হয়।
প্রায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতির পর গাজায় আবারও সামরিক অভিযান শুরু করেছে দখলদার ইসরায়েল৷ যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রস্তাব হামাস প্রত্যাখান করেছে বলে অভিযোগ ইসরায়েলের৷ অন্যদিকে হামাস অভিযোগ করেছে, জানুয়ারিতে সই করা মূল চুক্তি লঙ্ঘণ করেছে ইসরায়েল।
চলতি মাসের ১৮ তারিখ ইসরায়েলি সামরিক অভিযান পুনরায় শুরুর পর থেকে শত শত ফিলিস্তিনি নিহত এবং হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
বুধবারের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বেইত লাহিয়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ দিয়াব বলেন, এক বছর আগে ইসরায়েলি বিমান হামলায় তার বাড়ি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল এবং তার ভাইকে তিনি হারিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা কারও জন্য, কোনো দলের কর্মসূচি বা বিদেশি রাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য মরতে রাজি নই।’
তিনি বলেন, ‘হামাসকে অবশ্যই ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হবে এবং শোকাহতদের দাবি মানতে হবে, ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উঠে আসা কণ্ঠস্বর- এটি সবচেয়ে বাস্তব কণ্ঠস্বর।’
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া শহরটির ভিডিওতে 'হামাসের শাসন নিপাত যাক, মুসলিম ব্রাদারহুডের শাসন নিপাত যাক' বলে বিক্ষোভকারীদের স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
ফিলিস্তিনি নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে ২০০৭ সাল থেকে গাজা এককভাবে শাসন করছে হাসাস। এর এক বছর আগে সহিংসভাবে প্রতিপক্ষকে উৎখাত করেছিল হামাস।
তবে ২০২৩ সালের শেষ দিকে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজার সড়কে এবং অনলাইনে হামাসের প্রকাশ্য সমালোচনা বেড়েছে। যদিও এখনও এমন অনেকে আছেন যারা প্রচণ্ডভাবে হামাসকে সমর্থন করেন। যদি গোষ্ঠীটি কতটুকু সমর্থন হারিয়েছেন—তা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা কঠিন।
গাজায় যুদ্ধের অনেক আগে থেকেই হামাসের বিরোধিতা ছিল। প্রতিশোধের ভয়ে এর বেশিরভাগই প্রকাশ্যে নয়।
মোহাম্মদ আল-নাজ্জার নামে গাজার এক বাসিন্দা তার ফেসবুকে পোস্টে লিখেছেন, ‘মাফ করবেন, কিন্তু হামাস আসলে কিসের উপর বাজি ধরছে? তারা আমাদের রক্তের উপর বাজি ধরছে, রক্ত যাকে সারা বিশ্ব শুধু সংখ্যা হিসেবে দেখে।’
আরও পড়ুন: ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনকে ‘অপরাধ’ স্বীকৃতি দিচ্ছে আলজেরিয়া
তিনি লিখেছেন, ‘এমনকি হামাসও আমাদের সংখ্যা হিসেবে গণনা করে। পদত্যাগ করুন এবং আমাদের ক্ষতের নিরাময়ের সুযোগ দিন।’
হামাস ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালালে গাজায় যুদ্ধ শুরু হয়। সেসময় হামাসের হামলা প্রায় ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। আর ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।
হামাসকে ধ্বংস করতে গাজায় সামরিক অভিযানের মাধ্যমে ইসরায়েল ওই হামলার জবাব দেয়। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় ৫০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গাজার ২১ লাখ জনসংখ্যার অধিকাংশই এখন বাস্তুচ্যুত। বাস্তুচ্যুতদের অনেকেই বেশ কয়েকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
গাজায় আনুমানিক ৭০ শতাংশ ভবন ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। ধসে পড়েছে জনপদটির স্বাস্থ্যসেবা, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ ও আশ্রয়ের প্রবল সংকটের মুখোমুখি উপত্যকাটির বাসিন্দারা।
সূত্র: বিভিন্ন নিউজ এজেন্সি
২১ ঘণ্টা আগে
গাজায় এমন হামলা হবে, যা আগে কেউ কখনো দেখেনি: ইসরায়েল
হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলিদের মুক্তি না দিলে গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎস। গাজায় এমন তীব্র হামলা চালানো হবে ‘যা আগে কেউ কখনো দেখেনি’ বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
গাজার নেতজারিম করিডোরের একটি অংশ ফের দখলে নেওয়ার পর এ হুমকি দেন কাৎস। স্থানীয় সময় বুধবার (১৯ মার্চ) উত্তর ও দক্ষিণ গাজাকে বিভক্তকারী কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলটিতে সেনা মোতায়নের তথ্য নিশ্চিত করেছে ইসরায়েল প্রশাসন।
জিম্মি ইসরায়েলিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত ও গাজার শাসনক্ষমতা না ছাড়া পর্যন্ত গাজায় হামলার তীব্রতা বাড়তে থাকবে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)।
নেতজারিম করিডোর দখলে নেওয়ার পর বুধবার এ সংক্রান্ত এক বিবৃতিতে আইডিএফ জানায়, জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপ কার্যকর হওয়ার পর এই অঞ্চলটি থেকে ইসরায়েলি সেনাপ্রত্যাহার করা হয়েছিল। এখন আবার সেখানে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: যুদ্ধে জন্ম নিয়ে, যুদ্ধেই শহীদ শিশুটি
এর আগে মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সেহরির সময় নতুন করে আগ্রাসন শুরু করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। এতে নারী-শিশুসহ চার শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হন বলে জানিয়েছে হামাসশাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এতে করে ভেঙে পড়েছে চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তি।
দীর্ঘ পনেরো মাসের সংঘাত শেষে যে একটু আশার আলো দেখতে শুরু করেছিলেন গাজার বাসিন্দারা। মানবিক সাহায্য আসতে শুরু করেছিল, ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন কয়েকশত ফিলিস্তিনি। যাদের মধ্যে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিও ছিলেন।
তবে মঙ্গলবারের হামলায় আশার সব আলো নিভে গেছে। এরইমধ্যে নেতজারিম করিডোরের দখল দুইপক্ষকে ফের সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও মঙ্গলবারের ইসরায়েলি বিমান হামলার পর এখন পর্যন্ত হামাসের কোনো পাল্টা হামলার খবর পাওয়া যায়নি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর পরবর্তী যুদ্ধে প্রায় ৪ মাইল (৬ কিলোমিটার) দীর্ঘ এই করিডোরটিকে একটি সামরিক অঞ্চল হিসেবে ব্যবহার করেছে ইসরায়েল। এটি ইসরায়েলি সীমান্ত থেকে উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত।
আরও পড়ুন: সেহরির সময় ইসরায়েলি হামলা, গাজায় নারী-শিশুসহ নিহত ৪ শতাধিক
যুদ্ধকালীর উত্তর গাজার অনেকেই পালিয়ে দক্ষিণ গাজায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। পনেরো মাসের সংঘাত শেষে করিডোর থেকে আইডিএফ সেনারা সরে গেলে অনেকেই উত্তর গাজায় ফিরেছিলেন।
নেতজারিম করিডোর দখলের পর অঞ্চলটি থেকে সব ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎস। তিনি জানান, ‘মঙ্গলবারের বিমান হামলা তো কেবল শুরু।’
কাৎস বলেন, ‘হামাস যদি জিম্মিদের মুক্তি না দেয়, তাহলে এমন ভয়াবহ হামলা চালানো হবে যা আগে কেউ কখনো দেখেনি।’
ফের আগ্রাসন শুরু করে নিজ দেশেও বিক্ষোভের মুখোমুখি হয়েছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। নিজ দেশের নাগরিকদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে নিজের গদি বাঁচাতে পুনরায় হামলা শুরু করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।
হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলিদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে গতকাল (বুধবার) নেসেটের (ইসরায়েলের পার্লামেন্ট) সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন জিম্মিদের স্বজনরা। এরপর তারা জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর বাসভবনের সামনেও বিক্ষোভ করেন।
তবে এসবকে পাত্তা না দিয়েই হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলের সেনারা। মঙ্গলবারের হামলায় নিহতদের প্রতি শোক জানাতে জড়ো হওয়া মানুষের ওপরও ইসরায়েল হামলা করেছে বলে জানান গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ফারেস আওয়াদ।
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ২০০
ওই হামলায় ১৭ জন নিহত হয়েছেন বলে জানান তিনি। ইসরায়েলি হামলায় এ অবধি প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৪৯ হাজার ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্য অধিকাংশ নারী ও শিশু।
তবে ইসরায়েলের দাবি, তারা কেবল সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করেই হামলা চালায়, হামাস ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে সামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করে বলে অভিযোগ করেন তারা।
গত ১ মার্চ গাজায় প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি শেষ হয়। এরপর প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়িয়ে জিম্মিদের মুক্ত করতে চাইছিল ইসরায়েল।
হামাস সদস্যরাও জানিয়েছে, তারা অবশ্যই ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেবেন। তবে তা কেবল যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে। যেখানে মুক্তি পাবেন ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিরা। এছাড়াও হামাসের দাবি, একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও গাজা থেকে ইসরায়েলের সেনাপ্রত্যাহার।
৭ দিন আগে
সেহরির সময় ইসরায়েলি হামলা, গাজায় নারী-শিশুসহ নিহত ৪ শতাধিক
যুদ্ধবিরতির চলায় প্রাণশঙ্কা একপাশে রেখে পরিবার নিয়ে ভোর রাতে সেহরি খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল গাজার বাসিন্দারা, তখনই মুহুর্মুহু বোমা বর্ষণে কেঁপে ওঠে উপত্যকা। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) হামলা থেকে আবাসিক ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে শরণার্থী শিবির—কিছুই রেহাই পায়নি।
অন্তত চার শতাধিক ফিলিস্তিনি মঙ্গলবারের (১৮ মার্চ) এই বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে বহু নারী ও শিশু রয়েছে। এছাড়া ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়েছে আরও অনেকে। ফলে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের।
ইউনিসেফের মুখপাত্র রোসালিয়া বোলেন বলেছেন, ‘ইসরায়েলি হামলায় ১০ লাখের বেশি (ফিলিস্তিনি) শিশুর জীবন ঝুঁকিতে পড়েছে। তাদের যুদ্ধের ধকল সহ্য করতে হচ্ছে। শিশুদের জীবন এভাবে হুমকিতে পড়ায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ২০০
গাজা সিটির কেন্দ্রস্থলে আত-তলিবিন নামের একটি স্কুলে বাস্তুহারা নারী ও শিশুরা আশ্রয় নিয়েছিল। ইসরায়েলি বিমান হামলায় মাটিতে মিশে গেছে স্কুলটি। এ সময় ঘটনাস্থলেই নারী-শিশুসহ অন্তত ২৫ জন প্রাণ হারান বলে মিডল ইস্ট আইয়ের খবর থেকে জানা গেছে।
গাজায় ইসরায়েল নতুন করে হামলা শুরু করায় দুমাসের অস্ত্রবিরতি চুক্তি ভেঙে গেছে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
খবর বলছে, হামাসের কাছ থেকে জিম্মিদের মুক্ত করতে আরও বলপ্রয়োগের হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর আকস্মিক হামলা চালিয়ে ২৫০ ইসরায়েলিকে জিম্মি করে হামাস, তাদের মধ্যে ৫৯ জন এখনও সশস্ত্র গোষ্ঠীটির কাছে রয়েছে। হামাস অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দিতে অস্বীকার করার পর এই ঘটনা ঘটল।
এই হামলার পর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অস্ত্রবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে হামাস। এর মাধ্যমে স্থায়ী শান্তি চুক্তির জন্য মধ্যস্থতাকারীদের প্রচেষ্টা আরও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি তাদের।
এদিকে, হামাসের বিরুদ্ধে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এই হামলাকে ‘নিবৃত্তিমূলক’ বলে আখ্যায়িত করেছে আইডিএফ।
হামাসের ‘মাঝারি সারির’ সামরিক কমান্ডার, শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ও বিভিন্ন অবকাঠামো হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে।
পুরোনো শত্রু হামাসকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার শপথ নিয়েছেন নেতানিয়াহু। স্থল হামলার পাশাপাশি আকাশ থেকে অবিরত বোমা ফেলা হচ্ছে।
গাজা সিটি ছাড়াও উপত্যকার উত্তর ও দক্ষিণে অবস্থিত বেসামরিক নাগরিকদের বাড়ি ও শরণার্থী শিবিরেও নতুন করে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
গাজা সিটির বাসিন্দা রাবিহা জামাল (৬৫) বলেন, ‘এটা যেন রাতের গভীরতা ভেদ করে নরকের আগুন জ্বলে উঠেছে। যুদ্ধের প্রথম দিনের মতোই হামলা করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ, সুপেয় পানির সংকটে পড়তে যাচ্ছেন গাজাবাসী
পাঁচ সন্তানের মা এই নারী বলেন, ‘সেহরি খাওয়ার জন্য আমরা যখন প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, তখন বিস্ফোরণ শুরু হয় এবং ভবনগুলো কেঁপে উঠতে শুরু করে। ভেবেছিলাম যুদ্ধ শেষ, কিন্তু তা আবার ফিরে এলো!’
নতুন দফায় এই হামলায় নিহতদের মধ্যে হামাসের রাজনৈতিক শাখার দীর্ঘদিনের সদস্য ইসাম আল-দালিসও রয়েছেন। গাজার সরকারের প্রশাসনিক কমিটির প্রধান ছিলেন তিনি। এছাড়া উপ-বিচারমন্ত্রী আহমেদ আল-হাত্তা, উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আবু ওয়াতফাও নিহত হয়েছেন।
ব্যাপক পরিসরে এই হামলায় রমজান মাসেও নতুন করে প্রাণ সংকটে পড়ে গেল গাজাবাসী।
৮ দিন আগে
গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ২০০
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়ার পর গাজার কয়েকটি লক্ষবস্তুতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ২০০ জন। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা এসব হতাহতের কথা নিশ্চিত করেছেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে আলোচনায় অগ্রগতি না হওয়ায় তিনি এসব হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অভিযানটি উন্মুক্ত ছিল এবং এটি বাড়বে হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, 'এখন থেকে ইসরায়েল সামরিক শক্তি বাড়িয়ে হামাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’
এই অতর্কিত হামলা মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাসে তুলনামূলকভাবে শান্ত সময়কে অস্থির করেছে। ফলে ১৭ মাস ধরে চলা যুদ্ধ পুরোপুরি আবার শুরুর সম্ভাবনা বাড়িয়েছে। বিগত ১৭ মাসের যুদ্ধে ৪৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই সময়ে গোটা গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার পর হামাসের হাতে জিম্মি থাকা ইসরায়েলি দুই ডজনের বেশি নাগরিকে বেঁচে থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যাদেরকে এখনো জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ, সুপেয় পানির সংকটে পড়তে যাচ্ছেন গাজাবাসী
হামাস এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের 'বিনা উস্কানিতে উত্তেজনা বৃদ্ধির' নিন্দা জানিয়ে বলেছে, তারা জিম্মিদের ভাগ্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।
তাৎক্ষণিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে মিশর ও কাতারের সঙ্গে মধ্যস্থতা প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেওয়া মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ সতর্ক করে বলেছেন যে, হামাসকে অবশ্যই জীবিত জিম্মিদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে ‘অন্যথায় কঠোর মূল্য দিতে হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা অভিযানের বিষয়ে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেন, হামাসের সামরিক, নেতা ও অবকাঠামোতে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এছাড়া বিমান হামলা ছাড়াও অভিযানের পরিসর বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। হামাসের বিরুদ্ধে নতুন করে হামলার পরিকল্পনা ও পুনর্গঠনের চেষ্টা করার অভিযোগ তোলেন ওই কর্মকর্তা।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে হামাস যোদ্ধা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত ফিরে আসে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, জিম্মিদের মুক্তি না দিলে গাজাকে নরকে পরিণত করা হবে। তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ না আমাদের সব জিম্মি ঘরে ফিরছে এবং আমরা যুদ্ধের সব লক্ষ্য অর্জন না করছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা লড়াই থামাবো না।’
গাজাজুড়ে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং সকালের বিমান হামলায় কমপক্ষে ২০০ জনের অধিক নিহত হয়েছে বলে লাশ গ্রহণকারী বিভিন্ন হাসপাতাল জানিয়েছে।
অঞ্চলটির বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, তাদের কর্মীরা উদ্ধার তৎপরতা চালাতে কঠিন সময় পার করছেন। কারণ, একই সঙ্গে বিভিন্ন এলাকাকে হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হচ্ছে।
৯ দিন আগে
গাজায় মানবিক সহায়তা বন্ধের নির্দেশ দিলেন নেতানিয়াহু
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপের মেয়াদ সাময়িকভাবে বাড়াতে ইসরায়েলের প্রস্তাবে সম্মত না হওয়ায় উপত্যকাটিতে সব ধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
স্থানীয় সময় রবিবার (২ মার্চ) তার কার্যালয় থেকে এক বিবৃতির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের দেওয়া যুদ্ধবিরতির মেয়াদ সাময়িকভাবে বাড়ানোর প্রস্তাবটি মানতে হামাস অস্বীকৃতি জানানোর পরেই এই পদক্ষেপ নিয়েছে নেতানিয়াহু।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ওই বিবৃতিতে বলা হয়, উইটকফের প্রস্তাব না মানায় ও স্থানীয় সময় শনিবার (১ মার্চ) যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপের মেয়াদ শেষ হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: গাজায় যুদ্ধবিরতি: আরেক দফা বন্দি বিনিময়ে সম্মত ইসরায়েল-হামাস
ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে হামাস। নেতানিয়াহুর এই সিদ্ধান্তকে প্রস্তাব মানতে বাধ্য করার উদ্দেশ্যে ‘সস্তা ব্ল্যাকমেইল’ ও যুদ্ধাপরাধ বলে অভিহিত করেছেন হামাসের এক মুখপাত্র।এ সময় গাজায় সহায়তা সরবরাহ পুনরায় চালু করতে ইসরায়েলকে বাধ্য করার জন্য মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।এর আগে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান মতানৈক্য দূর করে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করার জন্য ছয় সপ্তাহের জন্য প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন উইটকফ।
শনিবার রাতে মুসলমানদের পবিত্র রমজান ও ইহুদিদের পাসওভার (বসন্ত) উৎসব উপলক্ষে আগামী ছয় সপ্তাহের জন্য ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ সাময়িকভাবে বাড়ানোর বিষয়টি অনুমোদন করে ইসরায়েল সরকার।
উইটকফের দেওয়া ওই প্রস্তাব অনুমোদন করে ইসরায়েল জানায় জিম্মিদের মুক্তির মাধ্যমে তা কার্যকর করা হবে। এরপরে হামাস জানায়, তারা ইসরায়েলের সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে রাজি আছে। তবে অবশ্যই তা যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে। যেখানে মুক্তি পাবেন ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিরা। এছাড়াও হামাসের দাবি একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও গাজা থেকে ইসরায়েলের সেনাপ্রত্যাহার।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দিতে শুরু করেছে ইসরায়েল
চলতি সপ্তাহে মিসরে ইসরায়েল ও হামাসে মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা শুরু করার থাকলেও বেঁকে বসে ইসরায়েল।
ইহুদি রাষ্ট্রটি চাইছে প্রথম ধাপের মেয়াদই সাময়িকভাবে বাড়াতে। অন্যদিকে হামাদের মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা চুক্তি অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির নিয়ম অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপে হামাসের হাতে বন্দি সব জীবিত জিম্মিদের মুক্তির কথা রয়েছে। এ ছাড়াও গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করে সেনাপ্রত্যাহার করার শর্তও রয়েছে। এরপর তৃতীয় ধাপে হামাসের হাতে বন্দি অবস্থায় মৃত জিম্মিদের লাশ ফেরত আনার কথা।
তবে ইসরায়েল জানিয়েছে হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া না হলে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আর কোনো আলোচনা করবে না তারা।
কিন্তু, মেয়াদ বাড়ানোর পরও যদি আলোচনা ফলপ্রসূ না হয় তাহলে ইসরায়েল পুনরায় হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে হামাস।
এদিকে, প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়ানোর এই প্রস্তাব না মানলে ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হামাসকে হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল প্রশাসন। ইতোমধ্যে গাজায় মানবিক সহায়তা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল।হামাসের মুখপাত্র বলেন, গাজায় মানবিক সহায়তা বন্ধের নির্দেশ দিয়ে ইসরায়েল আরেকবার তাদের নিকৃষ্ট মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে। তিনি ইসরায়েলের এই নিষ্ঠুরতা বন্ধে আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্ববান জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গাজায় গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ কার্যকর হয়। আর এ ধাপে ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে ফিরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে আটক কয়েকশ ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পেয়েছে।
আরও পড়ুন: কেমন কাটছে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজাবাসীর জীবন?
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তে হঠাৎ হামলা চালায় হামাস। সে সময় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি নিহত হন। পাশাপাশি আরও প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যান হামাস যোদ্ধারা।
এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে পরের দিন থেকে গাজাজুড়ে ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। আকাশ ও স্থলপথে গত প্রায় ১৫ মাস ধরে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ৪৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
অন্যদিকে, এই সময়ে হামাসের ১৭ হাজারের বেশি যোদ্ধাকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েল। তবে এই তথ্যের পক্ষে তারা কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি।
ইসরায়েলের হামলায় ধ্বংসনগরীতে পরিণত হয়েছে গাজা। সেখানকার ৯০ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে; ধ্বংস হয়েছে অবকাঠামো, ভেঙে পড়েছে গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা। পাশাপাশি লড়াই চলাকালে প্রয়োজনীয় ত্রাণবাহী ট্রাকগুলোকে গাজায় প্রবেশ করতে না দেওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়েছে গাজাবাসীর।
সূত্র: এপি/বিবিসি
২৪ দিন আগে
মিসরে দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি আলোচনা শুরু, কার্যকারিতা নিয়ে শঙ্কা
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে প্রতিবেশী দেশ মিসরে আলোচনা শুরু হয়েছে। শনিবারে (১ মার্চ) শেষ হতে যাচ্ছে যুদ্ধবিরতির চুক্তির প্রথম ধাপের ছয় সপ্তাহের মেয়াদ। তবে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনার অগ্রগতি নিয়ে রয়েছে আশঙ্কা।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) মিসরের রাজধানী কায়রোতে শুরু হয়েছে এই আলোচনা। দেশটির সরকারি তথ্য সেবা দপ্তর এক বিবৃতির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রথম দিন চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে ইসরায়েল, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে।
মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো গাজাবাসীর জন্য মানবিক সহায়তা বাড়ানোর উপায় নিয়েও আলোচনা করেছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দিতে শুরু করেছে ইসরায়েল
চুক্তির প্রথম ধাপে সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ভোরে ৪ ইসরায়েলি জিম্মির লাশ হস্তান্তর করেছে হামাস। বিনিময়ে গত শনিবারের স্থগিত হওয়া বন্দিসহ ছয় শতাধিক ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির নিয়ম অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপে হামাসের হাতে বন্দি সব জীবিত জিম্মিদের মুক্তির কথা রয়েছে। এ ছাড়াও গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করে সেনা প্রত্যাহার করার শর্তও রয়েছে। এরপর তৃতীয় ধাপে হামাসের হাতে বন্দি অবস্থায় মৃত জিম্মিদের লাশ ফেরত আনার কথা।
ইসরায়েলের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে হামসের হাতে ৫৯ ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতার পঞ্চম পর্যায়ে তিন ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তির পর হামাসকে নির্মূল করার ঘোষণা দেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। পরবর্তীকে তাকে সমর্থন করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।
আরও পড়ুন: গাজায় যুদ্ধবিরতি: আরেক দফা বন্দি বিনিময়ে সম্মত ইসরায়েল-হামাস
অন্যদিকে, প্রায় ১৫ মাস ধরে চলা ইসরায়েলের বর্বর হামলা সত্ত্বেও নতজানু হয়নি হামাস। যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছের হামাসের। এছাড়া নিজেদের অনেক সেনা প্রাণ হারালেও অস্ত্র ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তারা। ফিলিস্তিনের মুক্তির জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল হামাস যোদ্ধারা। এ পরিস্থিতিতে আলোচনার অগ্রগতি নিয়ে আশঙ্কা রয়েই যায়।
অবশ্য চুক্তি অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি চলতে থাকবে।
এদিকে, আলোচনা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানান, যুদ্ধবিরতির শর্তানুযায়ী গাজার ফিলাডেলফি করিডোর থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করা হবে না।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎস জানান, সম্প্রতি করিডোরটি পরিদর্শনকালে তিনি সেখানে একটি সুড়ঙ্গ দেখতে পেয়েছেন। তবে নিজের বক্তব্যের স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ উত্থাপন করেননি।
অবশ্য মিসর ওই সুড়ঙ্গ ধ্বংস করছে বলে জানিয়েছে। পরে দেশটি সেখানে সামরিক বাফার জোন স্থাপন করেছে বলে নিশ্চিত করেছে।
ইসরায়েলের এই ঘোষণাকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে বিবৃতি দিয়েছে হামাস। সংগঠনটি জানিয়েছে, চুক্তি মেনে না চললে বাকি ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে না।
হামাস ও ইসরায়েলের এই কঠোর অবস্থান যুদ্ধবিরতি আলোচনাকে আরও জটিল করে তুলবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
২৭ দিন আগে
গাজায় ‘জাহান্নামের সব দরজা’ খুলে দেওয়ার হুমকি ইসরায়েলের
দুদিনের মধ্যে জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া না হলে গাজাবাসীর জন্য ‘জাহান্নামের সব দরজা’ খুলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎয। বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে তিনি এমন হুমকি দিয়েছেন।তার এই হুমকিকে পরোয়া করছে না বলেও পাল্টা জবাব দিয়েছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। এতে দুই পক্ষের মধ্যে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও চুক্তিটি টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করছে মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার ও মিসর।
গত ১৯ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় আগামী শনিবারে (১৫ ফেব্রুয়ারি) তিন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্ত করে দেওয়ার কথা রয়েছে।
তবে স্থানীয় সময় সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত আর কোনো ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে না বলে জানায় হামাসের সামরিক শাখা কাশেম ব্রিগেডের এক মুখপাত্র।
হামাসের এই সিদ্ধান্তকে ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তির পুরোপুরি লঙ্ঘন’ বলে দাবি করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী।
হামাসকে হুমকি দিয়ে মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, “হামাস যদি জিম্মি মুক্তির সময়সীমা মেনে না চলে, ‘তীব্র লড়াই’ শুরু করবে ইসরায়েল।”
আরও পড়ুন: চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ: জিম্মিদের ফেরত দিচ্ছে না হামাস
নেতানিয়াহু আরও বলেন, তিনি গাজার ভেতরে ও আশপাশে ইসরায়েলি বাহিনীকে জড়ো হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এর কিছুক্ষণ পরই গাজা সীমান্তবর্তী ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে অতিরিক্ত সেনা পাঠানো ও রিজার্ভ সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেয় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী।
এ ছাড়াও হামাসের সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) হোয়াইট হাউসে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘শনিবারের মধ্যে বন্দিবিনিময় সম্পন্ন না করা হলে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিল হওয়া উচিত।’
তবে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর হুমকিকে উড়িয়ে দিয়েছে হামাস। গতকাল মঙ্গলবার হামাসের এক নেতা সব ধরনের হুমকি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘কেবল যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চললেই গাজা থেকে জিম্মিদের ফেরত নিতে পারবে ইসরায়েল।’
এ পরিস্থিতে মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো চুক্তি বজায় রাখতে তৎপরতা শুরু করেছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য হামাসের একটি প্রতিনিধি দল মিসরে অবস্থান করছে।
এই আলোচনায় সংশ্লিষ্ট নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মিসরীয় কর্মকর্তা বলেন, ইসরায়েল ও গাজা একটি সমঝোতায় আসতে চলেছে। গাজায় আরও বেশি তাঁবু, আশ্রয়কেন্দ্র ও ভারী সরঞ্জাম পাঠানোতে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল।
হামাসের কর্মকর্তা মাহমুদ মারদাওই বলেন, শনিবারে ৩ ইসরায়েলি বন্দি মুক্তির ক্ষেত্রে ‘ইতিবাচক ইঙ্গিত’ রয়েছে। তবে চুক্তি মেনে চলার ব্যাপারে ইসরায়েলের প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক বার্তা তারা পাননি।
চুক্তি বজায় রাখার এই চলমান আলোচনা প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েলের কর্মকর্তারা।
৪২ দিন আগে
সাময়িকভাবে গাজাবাসীদের সরাতে চান ট্রাম্প: রুবিও
ফিলিস্তানিদের অন্যত্র পুনর্বাসিত করার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার দখল নেওয়ার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ট্রাম্পের ওই বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদে কিংবা স্থায়ীভাবে নয়, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার পুনর্গঠনের জন্য উপত্যকাটি থেকে সাময়িকভাবে ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।
গুয়েতেমালা সফরকালে স্থানীয় সময় বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুবিও বলেন, প্রেসিডেন্টের (ট্রাম্প) প্রস্তাবটি ‘শত্রুভাবাপন্ন’ নয়, বরং গাজাবাসীর প্রতি এটি একটি ‘উদার পদক্ষেপ’। উপত্যকার পুর্নগঠনে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ দেখাতে চেয়েছেন তিনি।
‘গাজাকে বসবাসযোগ্য করতে সেখান থেকে যুদ্ধের ধ্বংসাবশেষ সরানো প্রয়োজন। সে সময়ে গাজার বাসিন্দারা সেখানে থাকতে পারবেন না।’
এর আগে, মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) হোয়াইট হাউজে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র পুনর্বাসিত করে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার দখল নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন ট্রাম্প। তার এই বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকারবিষয়ক প্রতিষ্ঠানসহ আরব দেশগুলোর নেতারা।
এদিকে, হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিটও একই ধরনের কথা বলেছেন। তার ভাষ্যে, ট্রাম্পের বক্তব্যের উদ্দেশ্য গাজায় ‘সেনা মোতায়েন করে’ উপত্যকাটির দখল নেওয়া নয়। ওই অঞ্চলটি বর্তমানে মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় কাউকে সেখানে বসবাস করতে দেওয়াটাও অমানবিক।
আরো পড়ুন:গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানা ও সেনা মোতায়েনের প্রস্তাব ট্রাম্পের
দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা গ্রহণের পর গাজা থেকে বর্জ্য সরানোর নামে উপত্যকার বাসিন্দাদের অন্যত্র স্থানান্তর করে ‘ক্লিন গাজা’ মিশন পূরণ করতে চেয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এ লক্ষ্যে তিনি ফিলিস্তানিদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য মিসর ও জর্ডানকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে ট্রাম্পের ওই প্রস্তাবকে ‘অনৈতিক’ আখ্যা দিয়ে ওই দুই দেশ ছাড়াও অন্যান্য আরব দেশগুলো তা প্রত্যাখ্যান করে।
এরপর মঙ্গলবার শুধু গাজাবাসীদের সরানোই নয়, গাজার ওপর অধিকার নিতে চান বলেই ঘোষণা দেন ট্রাম্প। গাজাকে তিনি ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরিয়া’ বানাতে চান বলেও সে সময় জানান তিনি।
ট্রাম্পের ওই বক্তব্যের পর বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। মিসর, জর্ডান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশের নেতারা এর তীব্র নিন্দা জানান।
এক প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি) জানিয়েছে, দীর্ঘমেয়াদে কিংবা সাময়িক—কোনোভাবেই গাজাবাসীদের নিজ ভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য করার পক্ষপাতী নন তারা।
তবে নিন্দিত হলেও ট্রাম্পের প্রস্তাবে ‘দোষের কিছু’ দেখছেন না ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট নেতানিয়াহু। ট্রাম্পের বক্তব্যের সমালোচনার মধ্যে নিজের এই অবস্থান স্পষ্ট করেছেন তিনি।
৪৮ দিন আগে
গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানা ও সেনা মোতায়েনের প্রস্তাব ট্রাম্পের
গাজা যুদ্ধে উদ্বাস্তু হওয়া ফিলিস্তিনিদের উপত্যকাটির বাইরে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের পরামর্শ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুদ্ধ বিধ্বস্ত অঞ্চলটি নতুন করে নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি মালিকানা নেওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। এমনকি ভূখণ্ডটিতে সেনা মোতায়েনের কথাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট।
হোয়াইট হাউসে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের সময় তিনি এই পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। এ সময়ে গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তির বিষয়েও দুই নেতার কথা হয়েছে।-খবর অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি)।
ট্রাম্পের এই প্রগলভ প্রস্তাবে হামাস ও ইসরাইলের মধ্যকার ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি দীর্ঘায়িত করার আলোচনার পরবর্তী ধাপে আরও ক্ষোভ তৈরি হতে পারে। দুইপক্ষের হাতে বন্দিদের মুক্তির বিষয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে।
গাজায় মানবিক সহায়তা ও পুনর্গঠন নিয়ে যখন কথা হচ্ছে, তখন এসব উসকানিমূলক কথাবার্তাও বাড়িয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। গেল ১৫ মাসের যুদ্ধে পুরো গাজা অঞ্চল মাটিতে মিশে গেছে। সেখানে মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে বলে খবরে উঠে এসেছে।
এখন গাজার ১৮ লাখ মানুষকে উপত্যকাটির বাইরে নিয়ে পুনর্বাসনের কথা বলছেন যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রেসিডেন্ট। অথচ এ অঞ্চলটি তাদের মাতৃভূমি, এখানেই তাদের জন্ম ও বেড়ে উঠেছেন। অঞ্চলটিকে ট্রাম্প এখন যুক্তরাষ্ট্রের বলে দাবি করছেন, সম্ভবত সেনা মোতায়েনের কথাও ভাবছেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি না, লোকদের ফিরে যাওয়া উচিত। তারা তো এখন গাজায় বসবাস করতে পারবেন না। আমি মনে করি, তাদের জন্য আরেকটি জায়গা দরকার। এটি এমন একটি জায়গা হওয়া উচিত, যা লোকজনকে সুখি করতে পারবে।’
আরও পড়ুন: আমেরিকানদেরও ‘কিছু যন্ত্রণা’ সইতে হবে: ট্রাম্প
‘যুক্তরাষ্ট্রের উচিত গাজার মালিকানা নিয়ে নেওয়া। এরপর ফিলিস্তিনিদের অন্য কোথাও পুনর্বাসন করে উপত্যকাটি পুনর্নির্মাণ করতে হবে, যাতে সেটি‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেয়ারায়’ রূপান্তর হয়ে যায়, যেখানে ‘পৃথিবীর মানুষ’—ফিলিস্তিনিসহ—বসবাস করবেন,’ বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ইতালীয় শব্দ রিভেয়ারা বলতে উপকূলীয় অঞ্চল বোঝায়।
তিনি বলেন, ‘আমি আশ্বস্ত করতে পারি, এটা বিশ্বমানের হবে। লোকজনের জন্য এটা খুবই চমৎকার হবে—ফিলিস্তিনিদের, আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনিদের নিয়েই আলোচনা করছি।’
ট্রাম্পকে সতর্ক করে দিয়ে মিসর, জর্ডান ও অন্য মার্কিন মিত্ররা বলছেন, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের অন্য কোথাও পুনর্বাসন করলে মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা হুমকিতে পড়বে, সংঘাত দীর্ঘায়িত হয়ে যাবে। পাশাপাশি কয়েক দশক ধরে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের যে কথা যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা বলে আসছে, সেটিও দুর্বল হয়ে যাবে।
কিন্তু এই ধ্বংসস্তূপ থেকে ফিলিস্তিনিদের অন্য কোথাও যাওয়ার বিকল্প নেই বলে দাবি করছেন ট্রাম্প। আর তার শীর্ষ সহযোগী বলছেন, পুরো অঞ্চলটি পুনর্নির্মাণে তিন থেকে পাঁচ বছর সময় লাগবে।
গেল সপ্তাহে গাজাবাসীকে অন্য কোথাও পুনর্বাসনে ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন মিসরীয় প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি ও জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ। কিন্তু ট্রাম্পের দাবি, মিসর-জর্ডান ও অন্য কয়েকটি দেশ এ বিষয়ে তার সঙ্গে একমত হয়েছে।
ট্রাম্প বলেন, কয়েক দশক ধরে দেখছেন যে গাজায় সবাই মারা যাচ্ছেন। বছরের পর বছর ধরে এমনটা ঘটছে। এখানের সবাই মৃত। লোকজনকে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করে আমরা একটি সুন্দর এলাকা পেতে পারি, সুন্দর বাড়িঘর, যেখানে তারা সুখে থাকতে পারবেন। কোনো গোলাগুলি হবে না, কেউ হত্যাকাণ্ডের শিকার হবে না, কেউ ছুরিকাঘাতে মরবে না, যেটা গাজায় এখন ঘটছে।
গাজা পুনর্গঠনে সেনা মোতায়েনের কথাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তিনি। অঞ্চলটি নতুন করে গড়ে তুলতে দীর্ঘমেয়াদি মার্কিন মালিকানার স্বপ্ন দেখছেন ট্রাম্প। নিরাপত্তা ঘাটতি পূরণে আমেরিকান সেনা মোতায়েনের সম্ভাব্যতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেটা করা দরকার, সেটিই আমরা করবো।’
এমন এক সময় গাজা নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা বলছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, যখন ভূখণ্ডটিতে হামাস-ইসরাইল যুদ্ধবিরতি এক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের অবস্থান মজবুত করতে বৈঠকে বসছেন ট্রাম্প-নেতানিয়াহু
৫০ দিন আগে
গাজা থেকে মিসর-জর্ডানে শরণার্থী বাড়াতে ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হামাসের
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা থেকে মিসর ও জর্ডানের আরও বেশি শরণার্থী নেওয়া উচিত বলে যে মন্তব্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড করেছেন, তা প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে তাদের পক্ষে ট্রাম্পের এই নির্দেশনা গ্রহণ করা সম্ভব না।
গাজা উপত্যকার জন্য এটি কী অস্থায়ী কিংবা দীর্ঘমেয়াদি সমাধান, প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, ‘দুটোই হতে পারে।’
ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর হামলায় গাজায় ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৪৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: মার্কিন অভিবাসী ফ্লাইট অবতরণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান, নিষেধাজ্ঞার মুখে কলোম্বিয়া
ট্রাম্পের এই মন্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন ইসরাইলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ। তিনি বলেন, এটি একটি চমৎকার আইডিয়া। এটি বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করে দেব।
কিন্তু বিষয়টিকে সন্দেহের চোখে দেখছে হামাস। বাড়িঘর থেকে ফিলিস্তিনিদের স্থায়ীভাবে উচ্ছেদের যে শঙ্কা রয়েছে, ট্রাম্পের বক্তব্যে সেটিই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলে মনে করছে তারা।
হামাসের রাজনৈতিক শাখার সদস্য বাসেম নাইম বলেন, বিষয়টি ভালো উদ্দেশ্য হিসেবে দেখা দিলেও এমন কোনো সমাধান কিংবা প্রস্তাব গ্রহণ করবে না ফিলিস্তিনিরা।
আর পূর্বসূরি জো বাইডেনের মতো ট্রাম্পকেও কোনো ‘ব্যর্থ ধারণার’ পুনরাবৃত্তি না করার আহ্বান জানিয়েছেন আরেক হামাস নেতা সামি আবু জুহরি। তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনিরা মরতে রাজি, কিন্তু তারা নিজেদের মাতৃভূমি ছাড়তে চায় না। কোনো অজুহাতে তারা এই ভূখণ্ড ছেড়ে যাবে না।’
ট্রাম্পের এই নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করেছে জর্ডানও। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি সাংবাদিকদের বলেন, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উৎখাতের বিরুদ্ধে জর্ডানের অবস্থান আগের মতোই অবিচল ও কঠোর।
এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত মিসরের কাছ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূখণ্ড থেকে উৎখাতের বিরোধিতা করে আসছেন তারা।
ফিলিস্তিনি বিশ্লেষক গাসসান আল-খতিব বলন, অধিকৃত পশ্চিমতীর, গাজা উপত্যকাসহ জর্ডান ও মিসরে বাস করা ফিলিস্তিনিরাও ট্রাম্পের এই ধারণাকে গ্রহণ করবেন না। আমি মনে করি না, এমন কিছু ভাবার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
নিজেদের মাটি থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উচ্ছেদে সমর্থন করে না বলে গতবছর জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া গাজার পরিস্থিতি নিয়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বছরজুড়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে।
কিন্তু সমালোচনার মুখে পড়লেও ইসরাইলকে সমর্থন দেওয়া অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। হিজবুল্লাহ, হুতি ও হামাসের মতো মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের প্রতিরক্ষায় সহায়তার কথা বলছে ওয়াশিংটন।
আরও পড়ুন: ইসরাইলি অবরোধ, বাড়িঘরে ফিরতে পারছেন না ফিলিস্তিনিরা
শনিবার জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহর সঙ্গে ফোনকলের পর ট্রাম্প বলেন, ‘আমি তাকে বলেছি, তারা যাতে আরও বেশি শরণার্থী গ্রহণ করেন। কারণ জায়গাটি (গাজা) এখন একেবারে বিশৃঙ্খলায় অবস্থায় আছে। মিসরকেও একই কথা বলবো।
এ বিষয়ে মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
৫৯ দিন আগে