গাজা
গাজায় নিহতের সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়াল
ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনিদের নিহতের সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু।
গত ১০ অক্টোবর সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও এই সংখ্যা বাড়ছে। ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের অভিযোগে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, আর ইতোমধ্যে ধ্বংস্তুপে পরিণত হওয়া গাজা থেকে আরও মরদেহ উদ্ধার করা হচ্ছে।
শনিবার (২৯ নভেম্বর) হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ফিলিস্তিনিদের নিহতের সংখ্যা এখন ৭০ হাজার ১০০।
এদিকে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলি হামলায় আরও দুই ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে নাসের হাসপাতাল।
ওই হাসপাতালের কর্মীরা জানিয়েছেন, ৮ ও ১১ বছর বয়সী দুই শিশুর মরদেহ সেখানে আনা হয়। স্থানীয় বেনি সুহাইলায় শরণার্থীদের একটি স্কুলের কাছে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় নিহত হয় ওই দুই ভাই।
তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রবেশ করে ‘সন্দেহজনক কার্যক্রম’ চালাচ্ছিল এবং সৈন্যদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল—এমন দুই ব্যক্তিকে তারা হত্যা করেছে। বিবৃতিতে শিশুদের কথা উল্লেখ করা হয়নি। এ ছাড়া দক্ষিণে পৃথক একটি ঘটনায় তারা আরও একজনকে হত্যা করেছে বলেও উল্লেখ করেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ১০ অক্টোবর ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৫২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তবে নিহত বেসামরিক নাগরিক ও যোদ্ধাদের তালিকা মন্ত্রণালয় আলাদা করে উল্লেখ করে না।
যুদ্ধবিরতি ভঙ্গকারী যোদ্ধারাই তাদের লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে বলে দাবি করে আসছে ইসরায়েল। তবে ইসরায়েল ও হামাস উভয় পক্ষই পরস্পরকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ করে আসছে। শনিবার আবারও ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ বন্ধে চাপ প্রয়োগ করতে মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হামাস।
গত ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করে এবং প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়ার পর এই সংঘাত শুরু হয়।
তবে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এ সংঘাতের মাঝে যুদ্ধবিরতি বা অন্যান্য চুক্তির মাধ্যমে প্রায় সব জিম্মি বা তাদের মরদেহ ইসরায়েলে ফেরত গেলেও এখনো দুই জিম্মির মরদেহ (এক ইসরায়েলি ও এক থাই নাগরিক) ফেরত আসেনি। শনিবার রাতে তাদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে আবারও তেল আবিবে বিক্ষোভ করেছে ইসরায়েলিরা।
৫ দিন আগে
গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাবে হামাসের সম্মতি
গাজায় ৬০ দিনের নতুন যুদ্ধবিরতির সর্বশেষ প্রস্তাবে রাজি হয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির বিষয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তি করতে আঞ্চলিক মধ্যস্থতাকারীদের প্রস্তাব মেনে নিয়েছে হামাস।
স্থানীয় সময় রবিবার (১৭ আগস্ট) কাতার ও মিসর যে প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিল, সেটি গ্রহণ করেছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে হামাস।
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর জ্যেষ্ঠ সদস্য বাছেম নাইম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন, মধ্যস্থতাকারীদের নতুন প্রস্তাব গ্রহণ করেছে হামাস। এর মধ্য দিয়ে গাজার মানুষ সহিংসতা থেকে মুক্তি পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
দ্য গার্ডিয়ান জানিয়ছে, নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব অনুযায়ী, ৬০ দিনের প্রাথমিক যুদ্ধবিরতির মধ্যে ২০ জন জীবিত জিম্মির প্রায় অর্ধেককে দুই দফায় মুক্তি দেবে হামাস, বিনিময়ে কারাবন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেবে ইসরায়েল। একইসঙ্গে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনাও চলবে বলে জানিয়েছে মিসরের একটি সূত্র।
হামাসের সম্মতির বিষয়টি ইসরায়েলি সরকারও অবগত রয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির দুই কর্মকর্তা। তবে তারা সিএনএনকে বলেন, সব জিম্মির মুক্তি, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ, গাজার পূর্ণ সামরিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার শর্তেই কোনো চুক্তি যাবে তেল আবিব।
এমন একটি সময়ে এই প্রস্তাবে হামাসের সম্মতি এল, যখন গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করে জিম্মিদের মুক্তির জন্য রোববার সবচেয়ে বড় গণবিক্ষোভের মুখে পড়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এসব বিক্ষোভ হামাসের দর কষাকষির অবস্থানকে আরও শক্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: জেলেনস্কি চাইলে মুহূর্তেই যুদ্ধ বন্ধ করতে পারেন: ট্রাম্প
কাতার ও মিসরের নতুন প্রস্তাবটি গতকাল সোমবার ইসরায়েলের কাছে উপস্থাপনের কথা ছিল। তবে ইসরায়েল আর কোনো আংশিক চুক্তিতে আগ্রহী নয় বলে জানান নেতানিয়াহু।
তিনি বলেছেন, যুদ্ধ কেবল তখনই শেষ হবে, যখন হামাস একসঙ্গে সব জিম্মিকে মুক্তি দেবে, নিরস্ত্র হবে এবং গাজার সামরিকীকরণ শেষ করতে সম্মত হবে। হামাসের সম্মতির খবর প্রকাশ হওয়ার পর এক ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, ‘হামাস তীব্র চাপে রয়েছে।’
এদিকে, সম্প্রতি সম্পূর্ণ গাজা উপত্যকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা। গাজায় প্রায় ১০ লাখ বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে এই অভিযান শুরুর পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম।
গত বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল পুরো গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়।
তবে দীর্ঘমেয়াদে দখলে রাখার পরিকল্পনা নেই জানিয়ে তিনি জানিয়েছেন, ‘আমরা গাজাকে নিজেদের দখলে রাখতে চাই না। আমরা সেখানে একটি নিরাপত্তা বলয় চাই।’
তবে এই পরিকল্পনা দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তাছাড়া, ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজায় খাদ্য সংকট ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। অনাহারে একের পর এক মৃত্যু ঘটে চলেছে। এ পরিস্থিতি যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক চাপ জোরালো হচ্ছে।
আরও পড়ুন: চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধবিরতি আরও ৯০ দিন বাড়ালেন ট্রাম্প
গত জুলাই মাসে যুদ্ধবিরতির আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর নতুন করে আলোচনা শুরু করতে নতুন এই প্রস্তাব এনেছে কাতার ও মিসর।
সিএনএন বলছে, মিসর ও কাতারের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রস্তাবটি গত জুনে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের দেওয়া দুই পর্যায়ের কর্মপরিকল্পনার ভিত্তিতেই তৈরি হয়েছে। তার প্রস্তাবের ৯৮ শতাংশই সর্বশেষ প্রস্তাবে বজায় রাখা হয়েছে। ইসরায়েল ওই প্রস্তাবে আগেই সম্মতি দিয়েছিল। মধ্যস্থতাকারীরা হামাসকে প্রস্তাবটি গ্রহণ করতে চাপ দিয়েছেন।
হামাসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সিএনএনকে জানিয়েছেন, প্রস্তাবে ১০ জন জীবিত জিম্মি এবং ১৮ জনের মরদেহ হস্তান্তরের কথা বলা হয়েছে। এর বিনিময়ে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ১৪০ জন ফিলিস্তিনি বন্দি এবং ১৫ বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত ৬০ জন বন্দিকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল। এ ছাড়া সব অপ্রাপ্তবয়স্ক ও নারী বন্দিকেও মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
আলোচনা সংশ্লিষ্ট এক কূটনীতিক বলেছেন, পরিস্থিতির উন্নয়ন বিবেচনায় উইটকফকে কায়রোয় আসার আমন্ত্রণ জানাবে মধ্যস্থতাকারীরা।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় অভিযান শুরু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত দুই দফা যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি-মুক্তির চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।
১০৮ দিন আগে
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আল-জাজিরার ৫ সাংবাদিক নিহত
গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলায় কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার পাঁচজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় রোববার (১০ আগস্ট) গাজা উপত্যকার আল-শিফা হাসপাতালের বাইরে একটি তাঁবুতে হামলা চালালে তারা নিহত হন।
আলনজাজিরার বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, নিহত সাংবাদিকরা হলেন— সংবাদদাতা আনাস আল-শরিফ ও মোহাম্মেদ কুরেইকেহ, ক্যামেরাম্যান ইব্রাহিম জাহের, মোহাম্মেদ নৌফাল এবং মোয়ামেন আলিয়া। এ হামলায় পাঁচ সাংবাদিকসহ মোট সাতজন নিহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।
হামলার সময় তারা হাসপাতালের মূল গেইটের কাছে সাংবাদিকদের জন্য তৈরি করা একটি তাঁবুতে অবস্থান করছিলেন বলে আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে।
এক বিবৃতিতে এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আল জাজিরা। এতে বলা হয়েছে, এই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডটি ছিলো প্রেস ফ্রিডমের ওপর আরেকটি স্পষ্ট ও পূর্বপরিকল্পিত হামলা।
এই হামলার কিছুক্ষণ পরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, সাংবাদিক আনাস আল-শরিফকে লক্ষ্য করে তারা হামলা চালিয়েছে। ওই সাংবাদিক হামাসের সন্ত্রাসী সেলের প্রধান হয়ে কাজ করতেন বলে দাবি করেছে তারা। এমনকি তিনি ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিক ও সেনাদের ওপর রকেট হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলি হামলায় আইআরজিসি গোয়েন্দা প্রধান ও দুই জেনারেল নিহত
এদিকে সাংবাদিকদের ওপরে হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সাংবাদিক সুরক্ষা কমিটি (সিপিজে) বলেছে, আল-শরীফের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে ইসরায়েল।
সিপিজের প্রধান নির্বাহী জোডি গিন্সবার্গ বিবিসিকে বলেন, ইসরোয়েলের বহু পুরনো কৌশল এটি। যখনই তারা কোনো সাংবাদিককে হত্যা করে, এরপর দাবি তোলে ওই সাংবাদিক সন্ত্রাসী ছিলেন। যদিও এসব দাবির পক্ষে খুব কমই প্রমাণ হাজির করে তারা।
আল-জাজিরার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মোহাম্মদ মোয়াওয়াদ বলেন, আল-শরীফ একজন সুপরিচিত সাংবাদিক ছিলেন। গাজা উপত্যকায় যা ঘটছে, তা বিশ্ববাসীর জানার জন্য একমাত্র কণ্ঠস্বর ছিলেন তিনি।
যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের গাজায় প্রবেশ করে স্বাধীনভাবে সংবাদ সংগ্রহের অনুমতি দেয়নি ইসরায়েল। ফলে অনেক গণমাধ্যমই স্থানীয় সাংবাদিকদের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হয়েছে।
মোয়াওয়াদ জানান, তারা তাদের তাঁবুতেই হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন। তারা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে কাভার করছিলেন না।
তিনি আরও বলেন, বাস্তবতা হলো গাজার ভেতর থেকে যে কোনো চ্যানেলের সংবাদ পরিবেশন বন্ধ করে দিতে চায় ইসরায়েলি সরকার।
নিহত হওয়ার কিছুক্ষণ আগে এক্সে (সাবেক টুইটার) আল-শরীফ লিখেছেন, গাজা নগরীর পূর্ব ও দক্ষিণ অংশে তীব্র বোমাবর্ষণ শুরু করেছে ইসরায়েল। তার শেষ ভিডিওতে ইসরায়েলের ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার তীব্র বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এতে অন্ধকার আকাশ মুহূর্তের জন্য কমলা আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে।
বিবিসির যাচাই করে নিশ্চিত করা হামলার পরের দুটি ভয়াবহ ভিডিওতে দেখা যায়, নিহতদের মরদেহ বহন করছেন কয়েকজন।
কারও কারও মুখে শোনা যায় কুরেইকেহ-এর নাম। আর একজন মিডিয়া ভেস্ট পরা ব্যক্তি বলেন, মৃতদেহগুলোর একটি আল-শরীফের।
আরও পড়ুন: শাসক পরিবর্তনে গাজার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় ইসরায়েল: নেতানিয়াহু
এর আগেও গাজায় আল-জাজিরার সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করে হত্যা করেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। পরে তারার হামাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে দাবি করেছেন। গত বছরের আগস্টে নিজ গাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছিলেন সাংবাদিক আল গোল।
সিপিজের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৮৬ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। গত মাসে গাজায় কর্মরত সাংবাদিকদের ব্যাপারে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করে যৌথ বিবৃতি দেয় বিবিসি, রয়টার্স, এপি ও এএফপি।
১১৬ দিন আগে
আমরা ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছি: ক্ষুধার্ত গাজাবাসীর আর্তনাদ
একটা সময় পর্যন্ত বিশ্ব মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর মানুষের চরম বিশ্বাস ছিল। কিন্তু ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে গাজার আজকের বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে সেসব যেন ধুলোয় ঢাকা কোনো গল্প।
এখন সেখানে প্রতিদিনকার দৃশ্য— শুকিয়ে যাওয়া শিশুদের কঙ্কালসার দেহ, খাবারের আশায় হাত বাড়িয়ে থাকা মানুষের সারি এবং বাবা-মায়ের অসহায় কান্না—যাদের চোখের সামনেই অনাহারে ধুঁকে ধুঁকে মরছে সন্তানরা।
‘আমার ৫ বছরের মেয়ের ওজন এখনও মাত্র ১১ কেজি,’ বলছিলেন গাজার ৩৮ বছর বয়সী জামিল মুঘারি। তিনি বলেন, আমার ছেলের শরীরে চামড়া আর হাড় ছাড়া কিছু নেই। যুদ্ধ শুরুর পর আমি নিজেও ৩০ কেজি ওজন হারিয়েছি।
এটিই এখন গাজার প্রত্যাহিক চিত্র— শুধু যুদ্ধ নয়, এখন ক্ষুধাই হয়ে উঠেছে এখানকার নতুন মারণাস্ত্র।
দুর্ভিক্ষ: এখন আর আশঙ্কা নয়, বাস্তবতা
গত সপ্তাহে জাতিসংঘ-সমর্থিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেইজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) জানিয়েছে, গাজা এখন চরম মাত্রার দুর্ভিক্ষে পতিত হয়েছে।
আইপিসি জানায়, গাজায় ২২ লাখ মানুষকে যেন একটি বন্দি চেম্বারে আটকে রাখা হয়েছে। সেখানে বাইরে থেকে ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে, আর ভেতরে কোনো খাদ্য নেই, কর্মসংস্থান নেই, আশ্রয় নেই— আছে শুধু ধ্বংসস্তূপ আর কান্না।
পড়ুন: গাজায় আগ্রাসনের প্রতিবাদে ইসরায়েলের সঙ্গে অস্ত্র বাণিজ্য বন্ধ করল স্লোভেনিয়া
মুঘারি বললেন, ‘আমি ও আমার পরিবার এমনও দিন কাটাই যেদিন খাবারের জন্য একেবারেই কিছু খুঁজে পাই না। সেসব দিন শুধু পানি খেয়ে পেট ভরাতে হয়। খাবার না পেয়ে এমন হয়েছে, মাঝেমধ্যে হাঁটতে গিয়েও দুর্বলতার কারণে পড়ে যেতে যেতে নিজেকে সামলাই। কারণ, সন্তানরা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।’
১২৫ দিন আগে
অনাহারে ১২৭ প্রাণহানির পর গাজায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি ইসরায়েলের
অনাহারে একের পর এক ফিলিস্তিনি মৃত্যুবরণ করায় আন্তর্জাতিক চাপের পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে গাজায় বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েল। ইতোমধ্যে মিসর থেকে ত্রাণের ট্রাকগুলো গাজার থেকে যাত্রা শুরু করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ব আল কাহেরা নিউজ টিভি।
স্থানীয় সময় শনিবার (২৬ জুলাই) গাজায় ত্রাণ প্রবেশের জন্য পুনরায় মানবিক করিডর চালুসহ আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলার (এয়ারড্রপ) কার্যক্রম শুরু করার কথা জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
গাজায় চলমান দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজায় মানবিক পরিস্থিতির অবনতি মোকাবিলায় নেওয়া পদক্ষেপের অংশ হিসেবে তিনটি এলাকার চলমান অভিযানে ‘কৌশলগত বিরতি’ ঘোষণা করা হবে। রবিবার থেকে পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মুওয়াসি, দেইর আল-বালাহ ও গাজা শহরে সামরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
যদিও বর্তমানে এসব এলাকায় সক্রিয়ভাবে অভিযান চালাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তারা। তবে গত কয়েক সপ্তাহে এসব এলাকায় লড়াই ও হামলা হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আরও জানিয়েছে, গাজায় ত্রাণ সংস্থাগুলোকে খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তা পৌঁছাতে সহায়তার জন্য নিরাপদ রুটও নির্ধারণ করবে তারা।
রবিবার (২৭ জুলাই) আল কাহেরা টিভির সংবাদদাতা জানিয়েছেন, মিসর ও গাজার মধ্যবর্তী রাফাহ সীমান্ত থেকে দক্ষিণ গাজার কারাম আবু সালেম (কেরেম শালোম) ক্রসিংয়ের উদ্দেশে বেশ কয়েকটি ট্রাকে করে শত শত টন ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হয়েছে।
এর পাশাপাশি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ‘বিতর্কিত’ এয়ারড্রপও শুরু করেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সিএনএন।
আরও পড়ুন: ‘গাজায় বোমার চেয়ে বিধ্বংসী হয়ে উঠেছে ক্ষুধা’
এদিকে, মিডল ইস্ট আইয়ের খবরে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় পরিচালিত এয়ারড্রপে সাতটি প্যালেটে ময়দা, চিনি এবং টিনজাত খাদ্যদ্রব্যের মতো সামগ্রী থাকবে, যেগুলো বিদেশি অংশীদাররা সরবরাহ করবে।
তবে মানবিক সংস্থাগুলোর মতে, এই ধরনের এয়ারড্রপ মূলত প্রতীকী পদক্ষেপ এবং এটি কোনোভাবে স্থলপথে ত্রাণ সরবরাহের বিকল্প হতে পারে না।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আরও জানিয়েছে, তারা গাজায় একটি পানি পরিশোধন প্ল্যান্ট সম্প্রসারণে সহায়তা করবে এবং সেটিকে ইসরায়েলি বিদ্যুৎ সংযোগে যুক্ত করবে, যদিও গত ২১ মাসের অব্যাহত অভিযানে গাজার অধিকাংশ পানি ও বিদ্যুৎ অবকাঠামো ধ্বংস করেছে ইসরায়েল।
এরই মধ্যে গাজার দিকে ত্রাণবাহী জাহাজ নিয়ে আসার পথে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ফ্রান্সের ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য ও গাজামুখী হানদালা মিশনের সদস্য এমা ফোরো জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনী তাদের জাহাজের কাছে চলে এসেছে।
তিনি আরও জানান, নিজেদের মোবাইল ফোন তারা সাগরে ছুঁড়ে ফেলার পরিকল্পনা করছেন।
এদিকে, গাজায় পুনরায় ত্রাণ প্রবেশ করতে দেওয়ার সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন কট্টরটন্থি নেতা ও ইসরায়েলে জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গাভির।
আরও পড়ুন: খাবার নিতে গিয়ে নিহত আরও ৯৩ ফিলিস্তিনি, ‘বর্বরতা’ বন্ধের আহ্বান পোপের
সিএনএননের খবরে অনুযায়ী, গাজায় এই ত্রাণ প্রবেশ করতে দেওয়াকে ‘হামাসের কাছে আত্মসমর্পণ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
গত মার্চে গাজায় জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার ত্রাণ প্রবেশ নিষিদ্ধ করে ইসরায়েলে। এতে প্রায় ২০ লাখ গাজাবাসী চরম খাদ্যসংকটে পড়েন। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা অনেকদিন ধরেই দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা জানিয়ে আসছিলেন। পাশাপাশি অবরোধ পুরোপুরি প্রত্যাহার করে এবং মানবিক সহায়তার জন্য অবাধ প্রবেশাধিকার দিতে ত্রাণ সংস্থাগুলো এবং জাতিসংঘের কর্মকর্তারা ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন।
তবে হামাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে জাতিসংঘ বা অন্য কোনো মানবাধিকার সংস্থার ত্রাণ এত দিন ঢুকতে দেয়নি ইসরায়েল। মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে চলতি বছরের মে থেকে গাজা হিউম্যানেটিরিয়ান ফাউন্ডেশন চালু করে তারা। তবে এই সংস্থাটির দেওয়া ত্রাণ ছিল গাজাবাসীর জন্য খুবই অপ্রতুল। ফলে উপত্যকাটিতে ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ।
দুর্ভিক্ষে এখন পর্যন্ত ১২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে মিডল ইস্ট আই। এর মধ্যে অন্তত ৮৫টি শিশু বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দুই শিশুসহ পাঁচ ফিলিস্তিনির অনাহারে মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক।
১৩১ দিন আগে
মার্কিন উপদেষ্টাকে গাজার ক্ষুধার্ত শিশুদের ছবি দেখালেন তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট
সম্প্রতি তিউনিসিয়া সফরে গেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরব, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা বিষয়ক শীর্ষ উপদেষ্টা মাসাদ বুলোস। এ সময় তাকে গাজা উপত্যকার ক্ষুধার্ত শিশুদের ছবি দেখিয়েছেন তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদ। এর মাধ্যমে গাজা উপত্যকার ভয়াবহ পরিস্থিতিকে তিনি গোটা মানবজাতিকে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন।
স্থানীয় সময় বুধবার (২৩ জুলাই) লিবিয়ায় তার প্রথম সরকারি সফর শুরু করেন মাসাদ। ওই উদ্দেশ্যে বর্তমানে তিউনিসিয়ায় অবস্থান করছেন তিনি। সেখানে দেশটির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে ওই ছবি দেখানো হয়। লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য মিডল ইস্ট আইয়ের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
তিউনিসিয়ান সংবাদমাধ্যম কার্থেজের বরাত দিয়ে তারা জানিয়েছে, দেশটির রাজধানী তিউনিসের কার্থেজ প্রাসাদে উপদেষ্টা মাসাদকে ওই ছবি দেখান প্রেসিডেন্ট সাইদ। এ নিয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করে ওই সংবাদমাধ্যমটি।
ভিডিওতে দেখা গেছে, ট্রাম্পের উপদেষ্টা বুলোসকে প্রেসিডেন্ট বলছেন, ‘এখন আমি আপনার সঙ্গে এবং আপনার উদ্দেশে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলব, যা আমাদের এবং সমগ্র বিশ্বকে উদ্বেগে ফেলেছে।’
অধিকৃত ফিলিস্তিনে একটি শিশু ধুলোবালি খাচ্ছে আর কাঁদছে—এমন একটি ছবি দেখিয়ে সাইদ বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি আপনি এই ছবিগুলোর বিষয়ে ভালো করেই জানেন। অনেকগুলো ছবির মধ্যে এটি একটি। একবিংশ শতাব্দীতে এসে সে বালি খায়, কারণ সে আর কিছুই খেতে পায়নি।’
এরপর হাড্ডিসার আরেকটি শিশুর ছবি দেখিয়ে সাইদ বলেন, ‘এই শিশুটি প্রায় মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে, কারণ সে কিছু খেতে পায়নি।’
সাইদ ট্রাম্পের উপদেষ্টাকে আরও বেশ কয়েকটি ছবি দেখিয়ে বলেন, ‘এটি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। এটা সমগ্র মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।’
এ সময় মার্কিন উপদেষ্টাকে নীরবে মাথা নেড়ে এসব শুনতে দেখা যায়। এদিকে, বুধবার শতাধিক মানবাধিকার সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, গাজা উপত্যকায় একটি ‘গণ দুর্ভিক্ষ’ ছড়িয়ে পড়ছে। কারণ চলতি বছরের মার্চ মাসের শুরুর দিকে গাজায় সব ধরনের মানবিক সহায়তা বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল।
এরপর মে মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের আওতায় (জিএইচএফ) ত্রাণ দেওয়া শুরু হয়। যা ২০ লাখ গাজাবাসীর জন্য খুবই অপ্রতুল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, মার্চে মানবিক সহায়তা বন্ধের পর থেকে শতাধিক ফিলিস্তিনি ক্ষুধায় প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে ৮০ জনই শিশু। এর মধ্যে গত সোমবার অপুষ্টিতে ভুগে ১৫টি শিশু মারা গেছে।
তাছাড়া, জিএইচএফ-এর পরিচালিত ত্রাণকেন্দ্র থেকে খাবার আনতে গিয়ে এ পর্যন্ত এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে দ্য মিডল ইস্ট আই।
আরও পড়ুন: ‘গাজায় বোমার চেয়ে বিধ্বংসী হয়ে উঠেছে ক্ষুধা’
১৩৪ দিন আগে
‘গাজায় বোমার চেয়ে বিধ্বংসী হয়ে উঠেছে ক্ষুধা’
ইসরায়েলি আগ্রাসনে ক্ষুধার রাজ্যে পরিণত হওয়া গাজা উপত্যকায় খাবার না পেয়ে আরও অন্তত ১০ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে মধ্য গাজা থেকে সাংবাদিক তারেক আবু আজ্জুম বলেছেন, ‘এখানে ক্ষুধা বোমার চেয়ে বিধ্বংসী হয়ে দাড়িঁয়েছে। বাসিন্দারা এখন পর্যাপ্ত খাবারের আশা করেন না। তারা যেকোনো খাদ্যবস্তুর জন্যই আশায় বুক বাঁধছেন।’
কাতারভিত্তিক মার্কিন সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এই প্রতিবেদক বলেন, ‘ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর সৃষ্ট দুর্ভিক্ষের ফলে এখানকার মানুষ ধীরে ধীরে যন্ত্রণাদায়ক পাশবিক মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ছে।’
২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া সংঘাতে এখন পর্যন্ত ১১১ জন ফিলিস্তিনি খাদ্য সংকটে মারা গেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে বলে জানিয়েছেন গাজার স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
বুধবার (২৩ জুলাই) গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ ত্রাণপ্রত্যাশীসহ অন্তত ১০০ ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য মতে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ২১টি শিশু অপুষ্টিতে ভুগে মারা গেছে। মার্চ থেকে মে পর্যন্ত প্রায় ৮০ দিন তারা ত্রাণ সরবরাহ করতে পারেনি। এর ফলেই অপুষ্টিতে মৃত্যুর ঘটনা বেড়েছে। সংস্থাটি জানায়, গাজায় খাদ্য সরবরাহ পুনরায় চালু হলেও তা চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়।
মার্সি কর্পস, নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল, রিফিউজি ইন্টারন্যাশনালসহ ১১১টি মানবিক সংস্থা এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘ক্ষুধাস্ত্র’ ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছে, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
বিবৃতিতে বলা হয়, উপত্যকায় ‘গণঅনাহার’ ছড়িয়ে পড়ছে। অথচ হাজার হাজার টন খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসাসামগ্রী গাজা সীমান্তের কাছেই ফেলে রাখা হয়েছে। সেখানে সাহায্য সংস্থাগুলোর কার্যক্রমকেও বাধা দেওয়া হচ্ছে।
পড়ুন: ‘ফিলিস্তিনপন্থি’ বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করল কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
গত মার্চে ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ সহায়তা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এরপর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গত ২৬ মে থেকে ইসরায়েলের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচটি) নামে নতুন ত্রাণ বিতরণ কাঠামো চালু হয়েছে।
গাজায় চলমান চরম মানবিক সংকটের মধ্যে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ইসরায়েল গাজায় খাদ্য সরবরাহ কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে, যেখানে সীমান্তে ত্রাণবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকলেও তা বিতরণের সুযোগ নেই।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির পরিচালক রস স্মিথ বলেন, ‘মে মাস থেকে ত্রাণ সাহায্য বিতরণকেন্দ্রে গুলিতে শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ডব্লিউএইচওর ফিলিস্তিন প্রতিনিধি রিক পিপারকর্ন বলেন, ‘ত্রাণ নিতে আসা ব্যক্তিদের ওপর বারবার হামলার ফলে গাজায় অবশিষ্ট কয়েকটি হাসপাতাল ‘বৃহৎ ট্রমা ওয়ার্ডে’ পরিণত হয়েছে।
তিনি জানান, খাদ্যাভাব এতটাই প্রকট যে শিক্ষক, সাংবাদিক, এমনকি স্বাস্থ্যকর্মীরাও স্বাভাবিক কাজ করতে পারছেন না।
গাজার আল-শিফা হাসপাতালের যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী চিকিৎসক নূর শরাফ বলেন, ‘মানুষ কয়েকদিন ধরে কিছু খেতে পায়নি। অনেক সময় ডাক্তাররাও না খেয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন।’
এদিকে গাজা সিটিসহ বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর তীব্র হামলা অব্যাহত। সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় আরও দুই ফিলিস্তিনি সাংবাদিক— ফটোজার্নালিস্ট তামের আল-জা’আনিন ও সম্পাদক ওয়ালা আল-জাবারিকে হত্যা করা হয়েছে।
এর ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ২৩১-এ দাঁড়িয়েছে।
এর মধ্যে আল-জা’আনিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফটোজার্নালিস্ট হিসেবে কাজ করতেন এবং ওয়ালা আল-জাবারি বিভিন্ন সংবাদপত্রে সম্পাদকীয়র দায়িত্বে ছিলেন।
পড়ুন: খাবার নিতে গিয়ে নিহত আরও ৯৩ ফিলিস্তিনি, ‘বর্বরতা’ বন্ধের আহ্বান পোপের
এমন পরিস্থিতিতে, গাজা যুদ্ধবিরতি ও বন্দিমুক্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে ইউরোপের পথে রওনা হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, তিনি মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ও বন্দিমুক্তি আলোচনার বিষয়ে আলোচনা করবেন।
কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতি ও অন্তত ৫০ বন্দির মুক্তি নিয়ে আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দিচ্ছে। তবে মার্চে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভেঙে দেওয়ার পর থেকে এ নিয়ে কোনো কার্যকর অগ্রগতি হয়নি।
১৩৪ দিন আগে
খাবার নিতে গিয়ে নিহত আরও ৯৩ ফিলিস্তিনি, ‘বর্বরতা’ বন্ধের আহ্বান পোপের
গাজায় ত্রাণকেন্দ্রে খাবার নিতে গিয়ে ইসরায়েলি হামলায় আরও ৯৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি মধ্য গাজা থেকে নতুন করে ফিলিস্তিনিদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল, যেখানে বিপুলসংখ্যক বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। ইসরায়েলের এসব কার্যকলাপকে ‘বর্বরতা’ ও ‘নির্বিচারে ক্ষমতার প্রয়োগ’ আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন পোপ লিও চতুর্দশ।
স্থানীয় সময় রবিবার (২০ জুলাই) গাজার উত্তরের জিকিম সীমান্ত দিয়ে জাতিসংঘের ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের সময় সেগুলোর জন্য অপেক্ষারত মানুষের ওপর ওই হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
দ্য গার্ডিয়ানকে গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানিয়েছেন, গাজার দক্ষিণের রাফাহ শহরের কাছাকাছি একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের কাছে আরও ৯ জন গুলিতে নিহত হয়েছেন। একইভাবে খান ইউনিসে আরেকটি ত্রাণকেন্দ্রের কাছে আরও ৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন ইসরায়েলি হামলায়।
এদিকে, ত্রাণকেন্দ্রের কাছে চালানো হামলার বিষয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, হুমকি মনে করে উত্তর গাজায় জড়ো হওয়া মানুষের ওপর গুলি ছুড়েছে তারা। তবে নিহতের যে সংখ্যা গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তা তাদের প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া সংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
গাজার আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়া জানান, রবিবার সকাল থেকে তারা ৪৮টি লাশ ও ১৫০ জন আহত ফিলিস্তিনিকে এই হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। জিকিম সীমান্ত থেকে এসব হতাহতদের আনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মানবিক সহায়তা নিতে আসা মানুষের ওপর যেকোনো ধরনের হামলা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য।
গাজায় বর্বরতা বন্ধের আহ্বান পোপের
ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলার খবর প্রকাশের আগেই অবিলম্বে গাজা যুদ্ধের বর্বরতা বন্ধ করে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন পোপ লিও চতুর্দশ। রোমের ক্যাসেল গানদলফোতে অ্যাঞ্জেলাস প্রার্থনার শেষে তিনি এসব বলেন।
এ সময় গাজার একমাত্র ক্যাথলিক গির্জায় ইসরায়েলের চালানো হামলা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
পোপ বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই হামলা গাজার বেসামরিক জনগণ ও তাদের প্রার্থনাস্থলের ওপর চালানো হামলার একটি নতুন সংযোজন মাত্র।’
এ সময় মানবাধিকার আইন মেনে চলার পাশাপাশি বেসামরিক মানুষের সুরক্ষা, সামগ্রিকভাবে শাস্তি দেওয়া বন্ধ করা, নির্বিচারে বলপ্রয়োগ ও জোরপূর্বক জনগণকে উচ্ছেদ করার মতো কার্যকলাপ বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে, ইসরায়েলে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় কার্যালয়ের (ওসিএইচএ) প্রধান জোনাথন হুইটলের আবাসনের অনুমতিপত্র (রেসিডেন্সি পারমিট) বাতিল করেছে তেল আবিব। জোনাথন গাজার মানবিক পরিস্থিতি বারবার নিন্দা জানিয়েছিলেন।
জোনাথন কোনো প্রমাণ ছাড়াই গাজা যুদ্ধ নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার করছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সার।
মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়ে দিশেহারা ফিলিস্তিনিরা
নতুন করে মধ্য গাজার বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অসহায় মানুষগুলো। ওই এলাকায় বহু বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাছাড়া সেখানকার খুব কম স্থানই রয়েছে যেখানে স্থল অভিযান চালায়নি ইসরায়েল। এ ছাড়া, ওই এলাকাগুলোতে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাগুলো ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করে থাকে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ শহরের তিনটি আবাসিক ভবনে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এরপরই সেখান থেকে পালাতে শুরু করেছেন বাসিন্দারা।
এক স্থানীয় বলেন, ‘তারা (ইসরায়েলি সেনাবাহিনী) লিফলেট ছুড়ে আমাদের সরে যেতে বলেছেন। কিন্তু আমরা জানি না কোথায় যাব, আমাদের জন্য কোনো আশ্রয় বা কিছুই নেই।’
এই নির্দেশ গাজা উপত্যকার মানুষগুলোর জীবন রক্ষায় যে সামান্য নাজুক কিছু অবলম্বন এখনো টিকে আছে, তার ওপর আরও একটি ভয়াবহ আঘাত বলে মন্তব্য করেছে ওসিএইচএ।
এদিকে, গাজায় খাদ্যসংকট ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ থাকার পরও তা গাজাবাসীর কাছে পৌঁছে দিতে পারছে না বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনিদের জন্য কাজ করা সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ। ইসরায়েল ১০ লাখ শিশুসহ গাজার বেসামরিক মানুষদের ‘অনাহারে মারছে’ বলে অভিযোগ করেছে সংস্থাটি।
এসব অসহায় মানুষকে সহায়তা করতে অবরোধ তুলে নিয়ে ইউএনআরডব্লিউএ-কে গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
হামাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গাজায় এই সংস্থাটির প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় ইসরায়েল। যদিও এই অভিযোগের স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেখায়নি।এই সংস্থাটিই ছিল গাজায় প্রধান ত্রাণ বিতরণকারী এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ মৌলিক সেবার অন্যতম প্রধান সরবরাহকারী। ইসরায়েলের অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে সংস্থাটি।
তবে ইউএনআরডব্লিউএ’র ওপর থেকে এখনো নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়নি ইসরায়েল। পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় চালু করেছে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)।
মে থেকে চালু হওয়া এই জিএইচএফ-এর ত্রাণকেন্দ্র থেকে খাবার নিতে গিয়ে এরই মধ্যে আট শতাধিক ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন বলে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
১৩৭ দিন আগে
ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে নির্বিচারে গুলি, ৩২ ফিলিস্তিনি নিহত
গাজায় ত্রাণ নিতে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর আবারও নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এতে ৩২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আহত আরও অনেকে। যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলো থেকে খাবার নিতে গেলে এ হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্থানীয় সময় শনিবার (১৯ জুলাই) দক্ষিণ গাজায় জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বক্তব্য, দক্ষিণ গাজার রাফা শহরের কাছে ত্রাণ কেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সন্দেহভাজন কয়েক ব্যক্তি তাদের (সেনা) দিকে অগ্রসর হলে, দূরত্ব বজায় রাখার জন্য বলা হয়। কিন্তু তারা সেনাদের কথা না শুনলে সতর্কতামূলক গুলি ছোঁড়া হয়।
জিএইচএফ জানিয়েছে, তাদের ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে কিংবা আশেপাশে এমন কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। সংস্থাটির ভাষ্যে, আমরা বারবার ত্রাণ নিতে আসা মানুষদের সতর্ক করেছি যে তারা যেন রাতে কিংবা ভোরে এখানে না আসে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে ভিন্ন কথা
শনিবারের হামলায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটেছে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে অবস্থিত জিএইচএফের একটি ত্রাণকেন্দ্রের ৩ কিলোমিটারের মধ্যে।
মাহমুদ মোকেইমার নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তিনিসহ আরও কয়েকজন তরুণ ত্রাণকেন্দ্রের দিকে যাচ্ছিলেন। তখন ইসরায়েলি সেনারা প্রথমে সতর্কতামূলক গুলি ছোঁড়ে, এরপর সরাসরি তাদের ওপর গুলি চালানো হয়।
আরও পড়ুন: ত্রাণ নিতে গিয়ে মে থেকে প্রায় ৮০০ ফিলিস্তিনি নিহত
তিনি বলেন, ‘সেনারা আমাদের ওপর নির্বিচিারে গুলি চালিয়েছে। নিজের চোখের সামনেই তিনজনকে নিহত হতে দেখেছি আমি। অনেকে দৌঁড়ে পালিয়ে কোনোমতে প্রাণ বাঁচিয়েছে।’
আকরাম আখের নামে আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ভোর আনুমানিক ৫টা থেকে সকাল ৬টার মধ্যে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলি সেনারা চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলে সরাসরি আমাদের ওপর গুলি চালায়।’ এত বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে জানান আকরাম।
সানা আল-জাবেরি নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ত্রাণকেন্দ্র খোলার পরও হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি সেনারা।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এটা কি আসলে খাবার দেওয়া হচ্ছে নাকি মৃত্যু? তারা আমাদের সঙ্গে কোনো কথা বলে না, শুধু গুলি চালায়।’
বেড়েই চলেই লাশের সংখ্যা
এই হামলার পর ২৫টি লাশ পাওয়ার কথা জানিয়েছে খান ইউনিসের নাসের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া, রাফায় অবস্থিত জিএইচএফের আরেকটি ত্রাণকেন্দ্রের ১০০ মিটারের মধ্যে এক নারীসহ ৭ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
নাসের হাসপাতালের নার্সিং ডিপার্টমেন্টের প্রধান ডা. মোহামেদ শাকের বলেছেন, ওই হাসপাতালে প্রায় ৭০ জন আহত রোগী এসেছেন, তাদের বেশিরভাগ মাথায় ও বুকে গুলি লেগেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জরুরি বিভাগের প্রধান ফারেস আওয়াদ জানান, গাজা শহরের একটি তাঁবুতে ইসরায়েলের চালানো বিমান হামলায় দুইজন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে, মধ্য গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নবজাতক ও নারীসহ ১২ জন নিহত হয়েছেন। বুরেঝিতে নিহত হয়েছেন আরও দুই ফিলিস্তিনি এবং মধ্য গাজায় রাস্তায় প্রাণ গেছে এক শিশুর।
এসব মৃত্যুর বিষয়ে বা নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তবে শনিবার দিনভর অন্তত ৯০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
আরও পড়ুন: খাবার নিতে আসা শিশুদের ওপর ইসরায়েলের ‘অমার্জনীয়’ হামলা
এদিকে, ২১ মাসের এই হামলায় ৫৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তাছাড়া, গাজায় খাদ্য সংকট নিয়ে বারবার সতর্ক করে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
টানা অবরোধের পর মে মাস থেকে সীমিত পরিসরে ত্রাণ দেওয়া শুরু করে জিএইচএফ। এ সংস্থাটির অধীনে পরিচালিত ত্রাণকেন্দ্র থেকে খাবার আনতে গিয়ে এরই মধ্যে আট শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে।
১৩৮ দিন আগে
এবার গাজার গির্জায় ইসরায়েলের হামলা, নিহত ৩
গাজা উপত্যকার একমাত্র ক্যাথলিক গির্জায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ ঘটনায় ৩ জন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছেন। হলি ফ্যামিলি ক্যাথলিক চার্চ নামের ওই গির্জাটির সঙ্গে প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিস নিয়মিত যোগাযোগ করতেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) গির্জাটিতে হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছেন গির্জার কর্মকর্তারা।
এদিকে, গির্জায় হামলার ব্যাপারটিকে দুর্ঘটনা হিসেবে অভিহিত করে দুঃখ প্রকাশ করেছে ইসরায়েল। তারা এ ঘটনার তদন্ত করবে বলেও জানিয়েছে।
এই হামলার পর ফের যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছেন পোপ লিও চতুর্দশ। এক টেলিগ্রাম বার্তায় তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
গির্জায় হামলার ঘটনায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে দুঃখপ্রকাশ করার জন্য ফোন করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে দুঃখপ্রকাশ করে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: গাজায় গণহত্যার ভিডিও দিয়ে ‘অস্ত্রের বিজ্ঞাপন’ দিচ্ছে ইসরায়েলি কোম্পানি
গত ২১ মাস ধরে চলা অব্যাহত হামলার সময় গাজার হাজারো মানুষ এই গির্জাটিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
গাজার আল-আহলি হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ফাদের নাইম বলেন, এই গির্জাটি খ্রিষ্টান ও মুসলিম উভয় ধর্মের লোকদের একটি আশ্রয়স্থল ছিল। বিশেষত প্রতিবন্ধী শিশুরা এখানে আশ্রয় নিয়েছিল।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করার সময় ভুলবশত একটি শেলের টুকরা গির্জায় আঘাত হেনেছে। এ ঘটনায় আরও তদন্ত চলছে।
যদিও ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে হামাসের সদস্য লুকিয়ে আছে—এমন অভিযোগে গাজার স্কুল, আশ্রয়কেন্দ্র, হাসপাতালসহ অন্যান্য বেসামরিক স্থাপনায় অব্যাহত হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, তারা শুধু সামরিক লক্ষ্যবস্তুতেই হামলা চালায়। বেসামরিক ও ধর্মীয় স্থাপনায় ক্ষতি কমাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে।
আরও পড়ুন: ত্রাণ নিতে গিয়ে মে থেকে প্রায় ৮০০ ফিলিস্তিনি নিহত
এদিকে, গির্জায় হামলার জন্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করেছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি। তিনি বলেন, ‘বেসামরিক লোকজনের বিরুদ্ধে মাসের পর মাস ধরে ইসরায়েল যে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়।’
যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অগ্রগতির ইঙ্গিত
চলমান হামলার মধ্যেও চলছে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি আলোচনা। এতে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মোরাগ করিডরে সেনা উপস্থিতি নিয়ে আলাচনায় যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছিল, সেদিকে কিছুটা অগ্রগতির ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
আলোচনা সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেসকে জানান, মোরাগ করিডরে সেনা উপস্থিতির বিষয়ে কিছুটা ‘নমনীয়’ হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইসরায়েল। তবে যেসব ফিলিস্তিনিদের মুক্ত করা হবে তাদের তালিকা কিংবা যুদ্ধ পুরোপুরি শেষ করা হবে কিনা এসব বিষয় এখনো অমীমাংসিত রয়েছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, একটি চুক্তি হওয়ার আশা দেখা দিয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে মনে করেন না তিনি।
১৪০ দিন আগে