ফিলিস্তিনি অ্যাক্টিভিস্ট আটক
ফিলিস্তিনি অ্যাক্টিভিস্ট আটক: যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাহমুদ খলিল নামে এক ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছেন মার্কিন অভিবাসন কর্মকর্তারা। খলিল কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের শিক্ষার্থী।
যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের গ্রিনকার্ড রয়েছে তার। এই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থী ও গ্রিনকার্ডধারীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
গত বসন্তে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে সংঘঠিত বিক্ষোভের জড়িত থাকার কারণেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটির কর্মকর্তারা।-খবর অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি)।
গত শনিবার (৮ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসভবন থেকে মাহমুদ খলিলকে গ্রেপ্তার করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) কর্মকর্তারা। বর্তমানে তাকে লুইজিয়ানার জেনায় একটি অভিবাসী আটককেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের গলফ রিসোর্টে হামলা
সেখানে তিনি পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। ধারণা করা হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া হতে পারে।
একজন শিক্ষার্থী ও গ্রিন কার্ডধারীর সঙ্গে এহেন কর্মকান্ডে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ফিলিস্তিনকে সমর্থন করায় তিনি সন্ত্রাসবাদীদের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে অভিযোগ করে ফেডারেল সরকার যা করছে, তা অবৈধ ও অন্যায় বলে অভিহিত করেছেন সমালোচকরা।
গ্রিনকার্ড থাকার পরও কি যুক্তরাষ্ট্র থেকে নির্বাসিত হতে হয়?
সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীরা গ্রিনকার্ড নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পেয়ে থাকেন। তবে খলিলের গ্রিনকার্ড থাকার পরও তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়ার শঙ্কা থাকায় এই বিষয়টি আলোচনায় এসেছে গ্রিনকার্ড মূলত কতটুকু সুরক্ষা দেয় অভিবাসীদের?
এ বিষয়ে কর্নেল ল স্কুলের ইমিগ্রেশন আইনের অধ্যাপক জ্যাকলিন কেলি-উইডমার বলেন, গ্রিনকার্ডধারীদের সাধারণত অনেক সুরক্ষা থাকে এবং নাগরিকত্ব ছাড়া এরা সবচেয়ে বেশি সুরক্ষিত হওয়ার যোগ্য।’
তবে এই সুরক্ষারও সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। উদাহরণস্বরূপ, নির্দিষ্ট কিছু অপরাধের জন্য, ঠিকানা পরিবর্তনের তথ্য ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে না জানানো, বা জালিয়াতির মাধ্যমে বিয়ে করলে গ্রিনকার্ডধারীরাও নির্বাসিত হতে পারেন বলে জানান অধ্যাপক জ্যাকলিন।মাহমুদ খলিলের গ্রেপ্তারের বিষয়টি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইহুদিবিদ্বেষী কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের নিবার্হী আদেশের আওতায় করা হয়েছে বলে জানিয়েছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ।
ট্রাম্প গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউসে ফিরেই অঙ্গীকার করেছিলেন, গত বছর কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনিপন্থি প্রতিবাদী আন্দোলনে জড়িত কিছু বিদেশি শিক্ষার্থীকে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেবেন। এই আন্দোলনকে তিনি ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে অভিহিত করেন।
ট্রাম্পের মতে, গাজার ক্ষমতায় থাকা ‘সন্ত্রাসী সংগঠন হামাসকে’ সমর্থন করে ওই শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অধিকার হারিয়েছেন।
তবে ট্রাম্পের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনে জড়িত শিক্ষার্থীরা। তারা জানিয়েছেন, তারা যুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন, এমনকি তাদের সঙ্গে কিছু ইহুদি শিক্ষার্থী ও তাদের কয়েকটি সংগঠনও ছিল।
অবশ্য কখনো-কখনো আন্দোলনকারীদের হামাস ও হিজবুল্লাহর নেতাদের সমর্থন করতে দেখা গিয়েছে। এই দুটি সংগঠনকেই যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে গণ্য করে থাকে।
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা, যা দেশের জন্য হুমকি হতে পারে এই অজুহাতেই খলিলকে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া করা হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও খলিল কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত নন, তাকে এমন কোনো অভিযোগে গ্রেপ্তারও করা হয়নি।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও জাতীয়তা আইন অনুযায়ী, গ্রিনকার্ডধারীদের কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত না করেও তাদের ‘বহিষ্কারযোগ্য’ ঘোষণা করা যায় বলে জানান জ্যাকলিন।
আরও পড়ুন: কেমন কাটছে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজাবাসীর জীবন?
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি বা অ্যাটর্নি জেনারেলের যদি যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকে যে তারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত ছিলেন বা ভবিষ্যতে জড়িত হতে পারেন, তাহলে তাদের নির্বাসন দেওয়া যেতে পারে বলে ব্যাখ্যা করেন তিনি।
তবে গত বছরের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনে মামলা হওয়ার মতো কোনো ঘটনা তার চোখে পড়েনি বলে মত দেন জ্যাকলিন। একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় কিভাবে খলিলকে সন্ত্রাসমূলক কার্যক্রমে অভিযুক্ত করা যায় এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেন তিনি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। এর জবাবে গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ইসরায়েলকে হামলায় সমর্থন দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এরই জেরে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ফিলিস্তিনিপন্থি ও ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে। কয়েক মাস ধরে চলে এই বিক্ষোভ।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় ফিলিস্তিনিপন্থি শিক্ষার্থী বিক্ষোভকারীদের পক্ষের প্রধান আলোচকদের একজন ছিলেন মাহমুদ খলিল। এই ভূমিকার জন্য বেশ পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। এ কারণেই তাকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়েই ইহুদীবিদ্বেষী কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে ট্রাম্পের নিবার্হী আদেশের কার্যকারিতা শুরু হয়েছে বলে মনে করেন সমালোচকরা।
এ ঘটনার পর রবিবার (৯ মার্চ) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, ‘আমেরিকায় হামাস সমর্থকদের ভিসা ও গ্রিনকার্ড বাতিল করবে প্রশাসন, যাতে তাদের নির্বাসন দেওয়া যায়।’
এদিকে, খলিলের আইনজীবীরাও তার আটকের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই শুরু করেছেন। আদালত মামলাটি বিবেচনা করা পর্যন্ত খলিলকে নির্বাসন না দেওয়ার জন্য আদেশ দিয়েছেন নিউ ইয়র্ক সিটির একজন ফেডারেল জজ। আগামী বুধবার (১২ মার্চ) এই মামলার শুনানির দিন নির্ধারিত হয়েছে।
৬ দিন আগে