দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকি
বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকিতে বাংলাদেশ
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের দুই জলবায়ু বিশেষজ্ঞ।
বুধবার (১৯ মার্চ) বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) বৈশ্বিক জলবায়ু পরিস্থিতি সম্পর্কিত প্রতিবেদন ‘স্টেট অব দ্য গ্লোবাল ক্লাইমেট রিপোর্ট’ প্রকাশিত হলে বাংলাদেশের ঝুঁকি নিয়ে কথা বলেন তারা।
বিশ্ব হিমবাহ দিবস (২১ মার্চ), বিশ্ব পানি দিবস (২২ মার্চ) ও বিশ্ব আবহাওয়া দিবসকে (২৩ মার্চ) সামনে রেখে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে ডব্লিউএমও।
ডব্লিউএমওয়ের প্রতিবেদনে ২০২৪ সালকে বিশ্বের বিগত ১৭৫ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণতম বছর হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। গত বছর পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পযুগের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: খুরুশকুল জলবায়ু উদ্বাস্তু পুর্নবাসন প্রকল্প পরিদর্শনে যা বললেন প্রধান উপদেষ্টা
ডব্লিউএমওয়ের মতে, চরম আবহাওয়াজনিত কারণে ২০২৪ সালটি ছিল বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক দুর্যোগে রেকর্ড ক্ষয়ক্ষতির বছর। অতি গরম ছাড়াও ঘুর্ণিঝড়, টাইফুনসহ নানা কারণে গত ১৬ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে ২০২৪ সালে।
প্রতিবেদনের ফলাফল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ সেন্টার ফর এডভান্সড স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক ও জলবায়ু বিজ্ঞানী ড. আতিক রহমান ও আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক।
তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধিসহ পরিবেশের ক্ষতি এমন মাত্রায় পৌঁছাচ্ছে, যা অতীতে কখনো দেখা যায়নি। বিশেষত বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো এর সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা করছে বলে মন্তব্য করেন তারা।
২০২৩-২৪ সালের চরম জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশে দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে অভিমত দেন তারা। এ কারণে ক্ষতি ঠেকানো, জনগণ ও পরিবেশ রক্ষার জন্য জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর জলবায়ু নীতি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দিয়েছেন তারা।
জলবায়ু বিজ্ঞানী ড. আতিক রহমান বলেন, ‘জলবায়ুর কম ক্ষতি করেও বাংলাদেশ বেশি ভুক্তভোগী, আবার বৈশ্বিক ক্ষতিপূরণও পাচ্ছে না। ফলে নিজের জনগণকে রক্ষায় নিজস্ব জলবায়ু কৌশল নীতি থাকতে হবে। বিশেষ করে দূষিত জ্বালানির পরিবর্তে পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে কিভাবে যাওয়া যায় সে পথ খুঁজতে হবে।’
আরও পড়ুন: দেশে জলবায়ু ন্যায়বিচার ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় অব্যাহত সহযোগিতার আশ্বাস অস্ট্রেলিয়ার
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেছেন, ‘বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে জরুরি বনায়ন, পানির উৎসগুলো সংরক্ষণ এবং কার্বণ নিঃসরণ কমানো দরকার।’
বিশেষত জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর ওপর জোর দেন তিনি। এজন্য দ্রুত সমন্বিত জাতীয় নীতিমালা গ্রহণ করার আহ্বান জানান এই আবহাওয়াবিদ। ডব্লিউএমওয়ের প্রতিবেদনে বিশ্বের জনগণ ও অর্থনীতির জন্য সস্তা, পরিচ্ছন্ন নবায়নযোগ্য শক্তির সুযোগের বিকাশ ঘটানোর উপদেশ দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার অঙ্গীকার করে।
২০২৩-২৪ সালের রেকর্ড তাপমাত্রার মূল কারণ হিসেবে ক্রমবর্ধমান গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন, সৌর চক্রের পরিবর্তন, একটি বিশাল আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ও শীতলকারী অ্যারোসোলের পরিমাণ হ্রাসসহ কয়েকটি অন্যান্য কারণ এর সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে বলে ডব্লিউএমওয়ের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
২৯ দিন আগে