শিক্ষার্থী চাঁদনী
২ ফিট ৮ ইঞ্চি লম্বা শিক্ষার্থী চাঁদনী, ভবিষ্যৎ চিন্তায় দিশাহারা মা-বাবা
দুই ফুট ৮ ইঞ্চি লম্বা নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী চাঁদনী খাতুন, জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী (বামনাকৃতির)। প্রতিবন্ধকতাকে পেরিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে গেলেও মেয়ের ভবিষ্যৎ চিন্তায় বাবা-মায়ের চোখে ঘুম নেই। মেয়েকে নিয়ে কী করবেন, কোথায় যাবেন কোনো কিনারা করতে পারছেন না তারা। মেয়ের চিন্তায় অনেকটা দিশাহারা পরিবারটি।
চাঁদনী খাতুনের বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের জ্যোতিন্দ্র নারায়ণ গ্রামে। বাবা দিনমজুর চাঁন মিয়া। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। স্থানীয় মিয়া পাড়া নাজিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী চাঁদনী।
চাঁদনীর বাবা চান মিয়া ও মা রত্না বেগম জানান, ‘চাঁদনী জন্মের সময় সুস্থ সবল ছিল। কিন্তু পরে নানামুখী সমস্যা দেখা দেয়। এরপর সে আস্তে আস্তে অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমাদের ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’, সেখানে কীভাবে তার চিকিৎসা করাই। সামর্থ্য না থাকায় দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার ফলে তার বাড়ন্ত কমে যায়। উচ্চতা আশানুরূপ হয়নি।’
আরও পড়ুন: সিসি ক্যামেরা স্থাপনের টাকা নিয়ে হাওয়া, ছিনতাই-ডাকাতি আতঙ্কে ফেনী পৌরবাসী
তারা আরও জানান, ‘এক দিকে মেয়ের চিন্তা অন্যদিকে সংসার চালানোটাও কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক কষ্টে মেয়েটির প্রতিবন্ধী ভাতাটুকু করে নিতে পেরেছি। এতো কষ্ট থাকার পরেও আমাদের ভাগ্যে কোনো ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাইনি।’
সামনে ঈদ আসছে, মেয়েটার জন্য নতুন পোশাক নিতে পারবো কি না বলেই কেঁদে ফেলেন চাঁদনীর মা। বলেন, ‘রমজান মাসে মানুষ কত কি ভালো মন্দ খাচ্ছে। কোনো রকম ডাল-ভাত খেয়ে দিন পাড় করছি আমরা। এছাড়া মেয়েটার সমস্ত কাজ করে দিতে হয়। বাথরুমে পানি পৌঁছে দেয়া, এরপর হাত-মুখ ধুয়ে দেয়া, গোসল করানো, পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করা এবং অনেক সময় খাবারও মুখে তুলে দিতে হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেয়েটা এতো নার্ভাস, তার মনে সবসময় ভয় কাজ করে। অপরিচিত কেউ আসলেই মুখ থেকে কথা বের হয় না। ভয়ে চোখের পানি বের হয়। তার সমস্ত কাজ মা হয়ে করতে হচ্ছে। আমি যখন থাকবনা তখন মেয়েটার কি হবে।’
চাঁদনীর আন্টি মনিরা খাতুন বলেন, ‘চাঁদনীকে প্রতিদিন সাইকেলে করে স্কুল নিয়ে যাই। আমাকে ছাড়া চাঁদনী স্কুলে যায় না। আমার কোনো কারণে সমস্যা হলে বা তার মা কিংবা বাবা যদি স্কুলে নিয়ে না যায়, সেই দিন তার মনটা মোটেও ভালো যাবে না। আমরা চাই চাঁদনী পড়ালেখা করে অন্তত নিজের জীবনটা যেন চালাতে পারে৷’
চাঁদনী খাতুন বলেন, ‘স্কুল খোলা থাকলে আন্টির সাইকেলে চড়ে প্রতিদিন স্কুলে যাই। কোনো কারণে আন্টি স্কুল না গেলে সেই দিনটিতে আমার স্কুলে যাওয়া হয় না। স্কুলে সবাই আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে। বাবার আয়ে আমাদের সংসার চলে।’
তিনি বলেন, ‘স্কুলের উপবৃত্তি ও আমার প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা দিয়ে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার একটু কষ্ট হলেও চেষ্টা করে যাচ্ছি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।’
আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স
২ দিন আগে