নিযুক্ত দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূত
ট্রাম্পের কাছে ‘অবাঞ্ছিত’ হলেও আফসোস নেই ইব্রাহিম রসুলের
ট্রাম্প প্রশাসন অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলেও এই নিয়ে কোনো ‘আফসোস’ নেই বলে জানিয়েছেন সম্প্রতি বহিষ্কৃত যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূত ইব্রাহিম রসুল। নিজ দেশে পৌঁছে এসব কথা বলেছেন তিনি।
স্থানীয় সময় রবিবার (২৩ মার্চ) কাতার হয়ে প্রায় ৩২ ঘণ্টার ভ্রমণ শেষে স্ত্রী রাশিদাকে সঙ্গে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখেন রসুল। বিমান বন্দরে প্রায় তিন শতাধিক সমর্থক তাকে স্বাগত জানিয়েছেন।
এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলেও এতে তার কোনো আফসোস নেই, কারণ নিজ দেশের জনগণের ভালোবাসায় তিনি সিক্ত। এর আগে গত ১৫ মার্চ ‘জাতি বিদ্বেষী’আখ্যা দিয়ে ইব্রাহিম রসুলকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।
সামাজিকমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ‘আমেরিকা ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঘৃণা করেন ইব্রাহিম রসুল। তার সঙ্গে আমাদের আলোচনার কিছু নেই, এখন থেকে তাকে ‘পারসোনা নন গ্রাটা’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।” বিদেশি কোনো নাগরিককে স্বাগতিক দেশ অবাঞ্জিত ঘোষণা করলে কূটনৈতিক পরিভাষায় তাকে পারসোনা নন গ্রাটা হিসেবে অভিহিত করা হয়।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূতকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা
সম্প্রতি ওয়াশিংটন ও প্রিটোরিয়ার মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। এরই মধ্যে রসুলকে বহিষ্কারের ঘটনায় পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হবে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বহিষ্কারের আগে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে দেশটির থিংক ট্যাংক মাপুঙ্গুবওয়ে ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক রিফ্লেকশন আয়োজিত এক ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে ট্রাম্পের সমলোচনা করে রসুল বলেন, ‘ক্ষমতার বিরুদ্ধে, দক্ষিণ আফ্রিকায় যারা ক্ষমতায় আছেন, তাদের বিরুদ্ধে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।’
এ কারণেই ওয়াশিংটন তাকে বহিষ্কার করেছে বলে অভিমত দিয়েছেন অনেকে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপে কোনো আফসোস নেই উল্লেখ করে বিমানবন্দরে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, অপমান করার জন্য ট্রাম্প প্রশাসন তাকে পারসোনা নন গ্রাটা ঘোষণা করলেও নিজ দেশের মানুষের ভালোবাসায় সেটি সম্মানে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘মানুষের এমন ভিড় ও তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা পেলে উবুন্টু (আফ্রিকান শব্দ উবুন্তু মানে হলো মানবতা বা অন্যের প্রতি মানবিকতা) অনুভব হয়।’ মানুষের প্রতি ভালোবাসা বোঝাতে এবং একে অপরের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝাতে এই শব্দটি ব্যবহার করা হয়। তাই উবুন্টুর মানে দাঁড়ায় ‘আমি আছি কারণ আমরা আছি।’
সমর্থকদের উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়ে রসুল বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া পারসোনা নন গ্রাটার অপমান আমি সম্মান হিসেবে গ্রহণ করছি। এই বহিষ্কারাদেশ প্রমাণ করে আমরা ঠিক কাজটিই করেছি।’
এ সময় আফ্রিকার কূটনীতি এ বিষয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশে প্রচলিত নীতির পাশাপাশি উবুন্টুর মতাদর্শের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, উবুন্টু কূটনীতি স্বাগতিক দেশকে তোষামোদ করায় বিশ্বাস করে না, বরং যেকোনো বিষয়ে ওই দেশকে সঠিক পথ দেখাতে আগ্রহী।
যুক্তরাষ্ট্রে আফ্রিকার কূটনীতি ব্যর্থ হয়েছে কিনা; সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ইব্রাহিম রসুল বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসন আমাকে বহিষ্কার করেছে, এর মানে আমার বক্তব্য তাদের সরকারের উচ্চপর্যায়ে পৌঁছেছে।’
যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন তার বক্তব্যে অসন্তুষ্ট হলেও তিনি তার সমাজের মূল্যবোধ রক্ষা করেছেন বলে অভিমত দেন তিনি। এতে উবুন্টু কূটনীতি কাজ করেছে বলেও তার ধারণা প্রকাশ করেন রসুল।
শিগগিরই তার জায়গায় যোগ্য কাউকে নিয়োগ দেবেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। আফ্রিকার মূল্যবোধ বিসর্জন না দিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করবেন, এমন কাউকে প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব দেবেন বলে অভিমত দেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে তার অভিজ্ঞতা ও সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে রসুল তাদের প্রেসিডেন্টকে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
১৭ দিন আগে