রাশিয়ার আগ্রাসন
পুতিন ‘পুরোপুরি পাগল’ হয়ে গেছে: ডোনাল্ড ট্রাম্প
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ অন্যান্য শহরগুলোতে টানা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর চটেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি পুতিন ‘পুরোপুরি পাগল’ হয়ে গেছেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
রবিবার(২৫ মে) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে আমার বরাবর ভালো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু তার কিছু একটা হয়েছে, সে পুরোপুরি পাগল হয়ে গেছে!’ট্রাম্প বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়াই ইউক্রেনের শহরগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করা হচ্ছে। যা অপ্রয়োজনীয়ভাবে অনেক মানুষ হত্যা করছে।’
মস্কোর এই হামলার কারণে তিনি পুতিনের ওপর থেকে ধৈর্য হারাচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেছেন।
এর আগে, রবিবার রাতে ইউক্রেনের শহরগুলো টানা তৃতীয় রাতের মতো হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এই দিনটি কিয়েভের মানুষের কাছে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ ২৫ মে দিনটি হলো কিয়েভ শহরের প্রতিষ্ঠাবাষির্কী। এ দিনেই ভয়াবহ হামলার শিকার হয়েছে শহরটি।
আরও পড়ুন: হার্ভাডে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তিতে ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত
রবিবারের হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত এবং ডজনখানেক মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের কর্মকর্তারা।
দেশটির সরকারি তথ্যমতে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ আক্রমণ শুরুর পর থেকে এটিই ছিল আকাশপথে সবচেয়ে বড় হামলা।
কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো জানিয়েছেন, রাজধানীতে শত্রুপক্ষের ড্রোনের বিরুদ্ধে আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী কাজ করছে।
খারকিভের সামরিক প্রশাসনের প্রধান ওলেহ সিনিয়েহুবভ জানিয়েছেন, খারকিভ শহর ও আশপাশের এলাকাগুলোতেও ড্রোনের হামলা হয়েছে।
ইউক্রেনের বিমান বাহিনীর মুখপাত্র ইউরি ইহনাতের ভাষ্যে, এই আক্রমণের মাত্রা ছিল বিস্ময়কর। ৩৬৭টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এই হামলাকে যুদ্ধ শুরুর পরর থেকে সবচেয়ে বড় একক আকাশ হামলা বলে অভিহিত করেছেন তিনি।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে ইউরি জানান,হামলায় মোট ৬৯ ধরনের বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র ও ২৯৮টি ড্রোন ব্যবহার করেছে মস্কো, যার মধ্যে ইরানের ডিজাইন করা শাহেদ ড্রোনও রয়েছে।
তবে এই হামলা নিয়ে মস্কোর তরফ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর: আলোচনায় কূটনীতি, উপেক্ষিত মানবাধিকার
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানান, ৩০টির বেশি শহর ও গ্রামকে আঘাত করেছে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন।
এ হামলার পর রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জোরদার করতে পশ্চিমা মিত্রদের প্রতি আহ্বান জানান।
একদিকে হামলা, অন্যদিকে বন্দি বিনিময়
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা চালানোর পরপরই রবিবার দুই দেশের মধ্যে বন্দি বিনিময়ও করা হয়েছে। এ নিয়ে তৃতীয় দফায় বড় পরিসরে বন্দি বিনিময় করল মস্কো-কিয়েভ।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তথ্যমতে, উভয় পক্ষ ৩০৩ জন সৈন্য বিনিময় করেছে। এর আগে, শনিবার (২৪ মে) ৩০৭ জন করে সৈন্য ও বেসামরিক নাগরিকের বিনিময় এবং শুক্রবার (২৩ মে) ৩৯০ জনের বিনিময় হয়।
জেলেনস্কিও রবিবারের বন্দি বিনিময়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি সামাজিক মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটারে) দেওয়া এক পোস্টে বলেন, ‘৩০৩ জন ইউক্রেনীয় যোদ্ধা ঘরে ফিরেছেন।’তারা ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী, ন্যাশনাল গার্ড, সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও স্টেট স্পেশাল ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসের সদস্য বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
১৯৩ দিন আগে
ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউরোপ: ম্যাঁখো
রাশিয়ার আগ্রাসন থেকে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা দিতে প্রস্তাবিত নিজস্ব সেনাবাহিনী মোতায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউরোপ। কিয়েভের গুরুত্বপূর্ণ শহর ও কৌশলগত স্থাপনাগুলোতে এই সেনা মোতায়েন করা হতে পারে জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁখো। বাহিনীতে থাকতে পারে ১০ থেকে ৩০ হাজার সেনা।
এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) প্যারিসে ৩১টি দেশের নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ফরাসি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।
সেনা মোতায়ন নিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান ম্যাঁখো। এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বৃহস্পতিবার প্যারিসের এলিসি প্রাসাদে ৩০টি দেশের নেতাদের অংশগ্রহণে শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করা হবে বলেও জানান তিনি।
ম্যাঁখো বলেন, ‘ইউক্রেনের মাটিতে যারাই হামলা চালাবে, তাদেরও পাল্টা হামলার মুখোমুখি হতে হবে। আমাদের রণকৌশল অনুযায়ী সেনারা শত্রুদের মোকাবিলা করবে।’
ইউক্রেনে সেনা মোতায়েনে যেসব দেশ সহায়তা করতে আগ্রহী; তাদের নিয়ে একটি জোট গঠন করতে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তিনি কাজ করছেন বলে জানান ম্যাঁখো।
আরও পড়ুন: ‘ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে’ থাকা ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চিতের তাগিদ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর
ইউক্রেনে স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত ও রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলা প্রতিহত করতে এই উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে অভিমত দেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। তবে রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলার জবাবে কি ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে; সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি তিনি।
ম্যাঁখো জানান, প্রস্তাবিত সশস্ত্র বাহিনীর সেনারা শুরুতেই ফ্রন্টলাইনে (সম্মুখযুদ্ধে) রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে না। এমনকি এই বাহিনী ফ্রন্টলাইনে অবস্থানও করবে না। ইউক্রেনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহর ও কৌশলগত ঘাঁটিগুলোর নিরাপত্তায় থাকবে তারা।
ম্যাঁখো বলেন, ইউক্রেনকে সমর্থন জানাতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও জোটগুলো এই উদ্যোগ নিয়েছে। যু্দ্ধ জড়াতে নয় বরং ইউক্রেনে সংঘাত বন্ধে এটি একটি শান্তি প্রস্তাব বলে মনে করেন তিনি। এছাড়া সংঘাত একমাত্রই রাশিয়াই চায় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ফরাসি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ৩১টি দেশের নেতার উপস্থিতি আশা করা হচ্ছে। এর আগে, ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে নিরাপত্তা সম্মেলন আয়োজন করে প্যারিস। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোসহ ৭টি দেশের নেতারা সম্মেলনে অংশ নেয়।
এই সম্মেলনে উপস্থিত না থাকলেও আলোচনায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে শান্তিচুক্তির পর ইউক্রেনের স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় সেনা মোতায়েনের প্রস্তাবে প্রকাশ্যে কোনো আগ্রহ দেখায়নি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন।
অবশ্য ইউরোপীয় নেতাদের এই পরিকল্পনায় অনাগ্রহ দেখিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। সেনা মোতায়েনের কোনো প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন না তিনি।
আরও পড়ুন: ইউরোপকে জেগে ওঠার আহ্বান গ্রিসের প্রধানমন্ত্রীর
তবে ইউরোপের নেতারা জানান, রুশ প্রেসিডেন্টের অতীত কার্যকলাপের ফলে তার প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না তারা।
এ সময় ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল ও ২০২২ সালের পূর্ণমাত্রায় ইউক্রেনে হামলা চালানোর ঘটনা উল্লেখ করে তারা বলেন, শান্তিচুক্তি হওয়ার পরও পুনরায় হামলা চালাতে পারে পুতিন। সম্ভাব্য এই হামলা প্রতিহত করতেই ইউক্রেনে সেনা মোতায়ন প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ফরাসী কর্মকতা জানান, ইউরোপীয় জোটের সেনাবাহিনী ফ্রন্টলাইন থেকে কিছুটা দূরে ইউক্রেনের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে, দিনিপার নদীর তীরে মোতায়ন করা হতে পারে।
আবার ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চল বা প্রতিবেশী কোনো দেশেও সেনা মোতায়েন করা হতে পারে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
ব্রিটিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছে, প্রস্তাবিত ওই বাহিনীতে ১০ থেকে ৩০ হাজার সেনা থাকতে পারে। স্নায়ুযুদ্ধের পর সেনা সংকুচিত করা ইউরোপের দেশগুলোর সেনাবাহিনী গঠনের এই উদ্যোগকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
২৫২ দিন আগে