৬ জনকে হত্যা
চাঁনখারপুলে ৬ জনকে হত্যা: ৮ পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল ২৫ মে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে রাজধানীর চাঁনখারপুলে আনাসসহ ৬ জনকে হত্যার ঘটনায় ৮ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিলের জন্য ২৫ মে পর্যন্ত সময় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
প্রসিকিউশনের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধবিষয়ক ট্র্যাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।
ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। আদালতে আজ প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম সরদার ও গাজী এমএইচ তামিম।
তদন্ত প্রতিবেদন যাচাই-বাছায়ের জন্যে চার সপ্তাহ সময় নিয়েছি বলে সাংবাদিকদের জানান চিফ প্রসিকিউটর মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে গত ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুলে গুলি করে ৬ জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে পুলিশের আট সদস্যের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হবে।
আরও পড়ুন: সাগর-রুনির হত্যা: তদন্ত শেষ করতে আরও ছয় মাস সময় পেল টাস্কফোর্স
চিফ প্রসিকিউটর জানান, এই মামলায় তদন্ত সংস্থার জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই শেষে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ হিসেবে দাখিল করতে চার সপ্তাহ সময় চাওয়া হয়েছে। এরপর ট্র্যাইব্যুনাল সময় আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ২৫ মে এই মামলায় পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।
শুনানিতে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, চানখাঁরপুলের ঘটনার মামলার তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে গত রবিবার (২০ এপ্রিল) চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে জমা দিয়েছে তদন্ত সংস্থা।
এখন এই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের জন্য চার সপ্তাহ সময় প্রয়োজন। ট্রাইব্যুনাল এই আবেদন মঞ্জুর করে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের জন্য ২৫ মে পরবর্তী দিন ধার্য করেন আদালত। মামলায় আটজনকে আসামি করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
তারা সবাই পুলিশের সাবেক সদস্য। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় এই প্রথম কোনো মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে তা জমা দিলো ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
আট আসামি হলেন- ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম, রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল, শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম। এই আট আসামির মধ্যে শেষের চারজন এখন কারাগারে, বাকিরা পলাতক। কারাগারে থাকা চার আসামিকে আজ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ মামলার তদন্ত শেষ করতে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সময় লেগেছে ৬ মাস ১৩ দিন। প্রতিবেদনটি ৯০ পৃষ্ঠার। তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে ৭৯ সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনের সঙ্গে ঘটনার তথ্যপ্রমাণ হিসেবে ১৯টি ভিডিও, ২টি অডিও রেকর্ড, সংবাদপত্রের ১১টি প্রতিবেদন ও ৬ জনের মৃত্যুসনদ দাখিল করা হয়েছে। এ ছাড়া জুলাই গণহত্যা নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধান দলের প্রতিবেদনও মূল তদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, গণঅভ্যুত্থানের সময় উল্লেখিত আসামিরা চানখাঁরপুল এলাকায় নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেন। এতে শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। সারসংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে, পলাতক আসামি সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ অন্য আসামিরা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট সকালে শাহবাগের মধ্য দিয়ে গণভবনের দিকে বিক্ষোভকারীদের অগ্রসর হওয়া ঠেকাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের ইউনিটগুলোকে চাঁনখারপুল এলাকায় মোতায়েন করা হয়। প্রাথমিকভাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড এবং রাবার বুলেট ব্যবহার করে।
তবে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কনস্টেবল মো. সুজন হোসেনসহ কিছু অফিসার বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্বিচারে তাজা গুলি চালান, যার ফলে বেশ কয়েকজন হতাহত হন।
আরও পড়ুন: বেনজীরের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ
নিহতদের মধ্যে ছিলেন পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় অবস্থিত আদর্শ একাডেমির দশম শ্রেণির ছাত্র শাহরিয়ার খান আনাস। মিছিলে অংশ নেওয়ার আগে, আনাস তার বাবা-মায়ের কাছে একটি মর্মস্পর্শী চিঠি রেখে যায়, যেখানে সে এই আন্দোলনের প্রতি তার অঙ্গীকার প্রকাশ করে। চাঁনখারপুল এলাকায় পুলিশ তাকে তিনবার গুলি করে হত্যা করে।
পরে তার মরদেহ ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করা হয় এবং জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার মৃত্যুর পর শহীদের সম্মানে গেন্ডারিয়ার ‘দীননাথ সেন রোড’-এর নামকরণ করা হয় ‘শহীদ আনাস রোড’। ঘটনার এক মাসেরও বেশি সময় পরে ১২ সেপ্টেম্বর কনস্টেবল সুজন হোসেনকে গণহত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর গ্রেফতার করা হয় আরও তিন পুলিশ সদস্যকে।
২৫১ দিন আগে