ঢাকার বায়ুদূষণ
ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা মাঝারি
প্রায় কিছুদিন ধরে ঢাকার বাতাসের মান মাঝারি পর্যায়ে স্থিতিশীল রয়েছে। যা শহরবাসীর জন্য স্বস্তির খবর হলেও সতর্কতার বার্তা নিয়ে এসেছে। রাজধানীর ব্যস্ত রাস্তাঘাট, নির্মাণ কাজের ধূলিকণা আর যানবাহনের ধোঁয়ার মাঝেও সাধারণ মানুষের জন্য তুলনামূলক নিরাপদ পরিবেশ বিরাজ করছে। তবে, শিশু, বয়স্ক ও শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য এই মাঝারি মানও ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
রবিবার (২৭ এপ্রিল) ঘনবসতিপূর্ণ শহর ঢাকার বাতাস মাঝারি পর্যায় রয়েছে। শনিবার সকাল ৮টায় ৯৬ একিউআই স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর তালিকায় ১৩তম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী। এই মাত্রার বাতাসকে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ভারতের দিল্লি, ইরাকের বাগদাদ ও পাকিস্তানের লাহোর শহর যথাক্রমে ২৭৮, ২৪৪ ও ১৮৩ একিউআই স্কোর নিয়ে তালিকার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
আরও পড়ুন: ঢাকার বাতাসের মান মাঝারি, দূষণের শীর্ষে ভারতের দিল্লি
যখন কণা দূষণের একিউআই মান ৫০ থেকে ১০০ এর মধ্যে থাকে, তখন বায়ুর গুণমানকে ‘মাঝারি’ বলে বিবেচনা করা হয়। সূচক ১০১ থেকে ১৫০ এর মধ্যে হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ সময় সাধারণত সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় ধরে বাইরে না থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।
১৫১ থেকে ২০০ এর মধ্যে হলে ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচিত হয়। সেটা বেড়ে ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে চলে এলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলে মনে করা হয়। ৩০১ এর বেশি হলে ‘বিপজ্জনক’ পর্যায়ে পৌঁছায়। এতে বাসিন্দাদের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে।
বায়ুদূষণে যে সমস্যা হতে পারে
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসভিত্তিক দ্য হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বে যেসব কারণে সবচেয়ে বেশি অকালমৃত্যুর ঘটনা ঘটছে, সেই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বায়ুদূষণ। আর প্রথমটি হচ্ছে রক্তচাপ।
স্বল্প সময়ের জন্য বায়ুদূষণের কবলে পড়লে অ্যাজমা, হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোকও হতে পারে। বিশেষ করে যেসব বয়স্ক মানুষের আগে থেকেই চিকিৎসা-সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য এ ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি।
আর দীর্ঘমেয়াদে বায়ুদূষণে থাকলে হার্ট ও ফুসফুসের মারাত্মক সমস্যা দেখা দেওয়ার শঙ্কা আছে, যা মানুষকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যেতে পারে। বায়ুদূষণের কারণে হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) ও ফুসফুসে প্রদাহের মতো শারীরিক জটিলার সৃষ্টি হতে পারে।
জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থার সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে ৫০ কোটির বেশি শিশু অস্বাস্থ্যকর বাতাসে শ্বাস নিচ্ছে। প্রতিদিন পাঁচ বছরের কম বয়সী ১০০টি শিশুর মৃত্যুর সঙ্গে বায়ুদূষণের সম্পর্ক রয়েছে।
ইউনিসেফের পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক জুন কুনিজি বলেন, বায়ুদূষণে শিশুর শারীরিক বিকাশ কমে যায়, ফুসফুসে ক্ষতি করে এবং মানসিক দক্ষতার বিকাশও বাধাগ্রস্ত হয়। প্রতিটি শ্বাসই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু দূষণের কারণে তা বহু শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
আরও পড়ুন: ঢাকার বাতাস আজ ‘মাঝারি’, ঝুঁকিতে সংবেদনশীলরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আব্দুস সালাম এ বিষয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতি বছর দেড় থেকে দুই লাখ মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মারা যান। এতে দেশের মানুষের গড় আয়ু ছয় থেকে আট বছর পর্যন্ত কমে যাচ্ছে। এছাড়া এই দূষণের কারণে মানুষ যে রোগে আক্রান্ত হন, তাতে বাংলাদেশের জিডিপির পাঁচ শতাংশ খরচ হয়ে যায়, যা ১৪ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের সমান।’
বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাবের বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘বায়ুদূষণের কারণে একটি প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে আমাদের উত্তরণ আবশ্যক। তবে সেটি তখনই সম্ভব হবে, যখন যেসব জায়গাগুলো থেকে বায়ুদূষণ হচ্ছে, অগ্রাধিকারভিত্তিতে সেগুলো নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
২২৩ দিন আগে