অতীতের ভেদাভেদ
অতীতের ভেদাভেদ ভুলে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ভিয়েতনামের
আজ ৩০ এপ্রিল, ২০২৫, ভিয়েতনাম যুদ্ধ অবসানের সুবর্ণজয়ন্তী। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধের সমাপ্তি ও আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের ৫০ বছর পূর্তিতে বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজসহ নানা আয়োজনের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দিনটি পালন করে ভিয়েতনাম সরকার। এ সময় অতীতের সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন দেশটির নেতারা।
১৯৭৫ সালের ৩০ এপ্রিল এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা ভিয়েতনাম যুদ্ধের অবসান হয়। ওই দিন তখনকার মার্কিন মদতপুষ্ট দক্ষিণ ভিয়েতনামের রাজধানী সায়গন দখল করে উত্তর ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট বাহিনী। রাজধানী দখলের মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান হয়। পরের বছর উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনামকে একীভূত করা হয়।
যুদ্ধ অবসানের ৫০ বছর পূর্তিতে দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির নেতা তো লাম বলেন, ‘এদেশের প্রতিটি মানুষ ভিয়েতনামের সন্তান। তাদের সবার এখানে বাস করার, কাজ করার, সুখ ও ভালোবাসা লাভের অধিকার রয়েছে।’
দেশটিতে ক্রমবর্ধমান ঐক্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতের উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে অতীতকে পেছনে ফেলে সব ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে এগিয়ে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ভিয়েতনামের শান্তি, ঐক্য, সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন নিশ্চিতে দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো, সাধারণ জনগণ ও সেনাবাহিনী শপথ নিয়েছে এক হয়ে কাজ করার।’
আরও পড়ুন: কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘টাইট’দেওয়া যায়, তা বের করতেই ভিয়েতনামে শি: ট্রাম্প
এ সময় কুচকাওয়াজ দেখতে আসা এক ভিয়েতনামিজ জানান, ‘এখন আমাদের শান্তির সময়, আসলে সারা বিশ্বেরই চাওয়া এটি।’
কুচকাওয়াজে ভিয়েতনামের সেনাদের সাথে অংশ নেয় চীন, লাওস ও কম্বোডিয়ার সেনারা। ভিয়েতনামের কিছু সৈনিক আবার যুদ্ধ চলাকালীন সাবেক উত্তর ভিয়েতনামের সেনাবাহিনীর মতো পোশাক পরেছেন।
এবারই প্রথমবারের মতো এই অনুষ্ঠানে অংশ নিলে চীনা সেনারা। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ভিয়েতনাম সফরের পর এই পদক্ষেপকে বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ‘বিশ্বস্ত অংশীদার’ হিসেবে নিজেদের তুলে ধরার চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এদিকে, কুচকাওয়াজের সময় দেশটির পতাকাবাহী একটি হেলিকপ্টার ইন্ডিপেনডেন্স প্যালেসের সামনে দিয়ে উড়ে যায়, এ জায়গাটিতে যুদ্ধের দেশ দিকে একটি ট্যাংক নিয়ে গেট ভেঙে প্রবেশ করেছিলেন উত্তর ভিয়েতনামের সেনারা।
লাম বলেন, স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘ ৩০ বছরের যুদ্ধ শেষে সাইগনের পতন ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে জয়লাভ ছিলো একটি ‘গৌরবময় মাইলফলক’।
রাশিয়া (তৎকালীন সোভিয়েতি ইউনিয়ন), চীন, লাওস ও কম্বোডিয়ার আন্তরিক সহায়তা ও সমর্থনের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রগতিশীল কিছু দেশের কারণেই বর্তমান ভিয়েতনাম গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সিঙ্গাপুরের ইউসোফ ইসহাক ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক নগুয়ান খাক গিয়াং বলেন, ‘সামরিক বিজয়ের বিজয়ের পরিবর্তে বর্তমানে সম্প্রীতির দিকে জোর দিচ্ছে ভিয়েতনাম।’ তবে দেশটিতে এখনো সম্প্রীতি পুরোপুরি তৈরি হয়নি বলেন মনে করেন তিনি।
যুদ্ধ-পরবর্তী যুক্তরাষ্ট-ভিয়েতনাম সম্পর্ক
এ বছর যুদ্ধ অবসানের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক প্রতিষ্ঠারও ৩০ বছর পূর্তি পালন করছে দেশটি। চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যেমন কৌশলগত অংশীদারত্বের সম্পর্ক; এই ৩০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক সেই পর্যায়ে নিয়ে গেছে ভিয়েতনাম।
দেশটির কর্মকর্তারা জানান, ‘এজেন্ট ওরেঞ্জ দূষণ ও গ্রামাঞ্চলে এখনও বিস্ফোরণযোগ্য যুদ্ধসামগ্রী রয়ে যাওয়ার মতো যুদ্ধ পরবর্তী সমস্যাগুলো সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টার ওপর ভিত্তি করেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন: ভিয়েতনাম থেকে ১২ হাজার টন চাল নিয়ে জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে
ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় ভিয়েতনামের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে মার্কিন সামরিক বাহিনী ভয়াবহ রাসায়নিক এজেন্ট অরেঞ্জ ছড়িয়ে দিয়েছিল। ‘অপারেশন র্যাঞ্চ হ্যান্ড’ নামের ওই অভিযানে ভিয়েতনামের ৪৫ লাখ একর জমিতে এই বিষাক্ত রাসায়নিক ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কারোপকে কেন্দ্র করে দেশদুটির মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের দাতব্য সংস্থা ইউএসএইডের তহবিল কাটছাঁট করায় এজেন্ট অরেঞ্জ দূষণ মোকাবিলা করায় প্রকল্পগুলো হুমকির মুখে পড়েছে।
অতীতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশের সঙ্গেই সম্পর্কের ভারসাম্য টিকিয়ে রেখে চলছিল দেশটি। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কারোপের পর পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে। গত সপ্তাহে দেশটিতে সফর করেছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এতে আবার কিছুটা চটেছেন ট্রাম্প। দেশটির প্রশাসন কিভাবে এই পরিস্থিতি সামলে এগিয়ে যাবে সেটিই এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২১৯ দিন আগে