সাম্য হত্যা
সাম্য হত্যা: আসামিদের ধরলেও রহস্য উদঘাটন হবে কবে
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হওয়ার দুই সপ্তাহ পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনের দাবি করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে ২৭ মে বিকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে এ মামলায় আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানানো হয়। এমনকি তাদের মধ্যে দুজন নাকি ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন।
তবে হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কারণ সুস্পষ্ট করে এখনও জানাতে পারেনি ডিএমপি। আবার আদালতে দেওয়া আসামিদের জবানবন্দির সঙ্গে পুলিশের বক্তব্যের মিল নেই বলে দাবি করেছে সাম্যর পরিবার। তাদের দাবি, সাম্যকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
ছাত্রদলও ডিএমপির বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে। সব মিলিয়ে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে।
মামলার বর্তমান অবস্থা
সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কর্মকর্তা নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার দিন একটি মোটরসাইকেলে করে সাম্য ও তার দুই বন্ধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যান। এ সময় তারা মেহেদীর গ্রুপের রাব্বির হাতে একটি টিজার গান (যেটিতে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়) দেখতে পান। টিজার গানটি দেখে সেটি কী— তা জানতে চান সাম্য। এ নিয়ে একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এরপর ওই মাদক ব্যবসায়ীর সহযোগীরা ঘটনাস্থলে আসেন এবং তাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। সাম্যকে ছুরিকাঘাত করেন রাব্বি ওরফে কবুতর রাব্বি।’
হত্যাকাণ্ডের মোটিভ বা নেপথ্যের কারণ সম্পর্কে সে সময় সাংবাদিকরা জানতে চাইলে নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের তদন্ত কার্যক্রম এখন চলমান। তাৎক্ষণিকভাবে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমাদের তদন্ত এ পর্যন্ত আছে। এর নেপথ্যে আর কোনো ঘটনা আছে কি না, সেটিও আমরা নিবিড়ভাবে দেখছি।’
গ্রেপ্তার হওয়া মেহেদীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত সুইচগিয়ারটি উদ্যানের মাজার এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান এই ডিবি পুলিশ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন: সাম্য হত্যায় বড় ষড়যন্ত্র থাকলেও খতিয়ে দেখা হচ্ছে না: ঢাবি ছাত্রদল
পরিবারের সদস্যের বক্তব্য
তবে পুলিশের দাবির ওপর প্রশ্ন তুলেছেন সাম্যর বড় ভাই আমিরুল ইসলাম সাগর। এক আসামির আদালতের দেওয়া জবানবন্দি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এই নিউজটায় বলে হয়েছে আসামি নাকি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দিয়েছে। এই খবর যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে তো সাম্য হত্যা একটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কারণ আকস্মাৎ মারামারির হলে তো দুটো দল প্রস্তুত থাকে না।’
পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়টি আমি পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সেটি বিস্তর তদন্ত করে আমাদের জানাবেন বলেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি পুলিশের কাছে আসামির জবানবন্দির কপি চেয়েছিলাম, কিন্তু পাইনি। পুলিশ জানিয়েছে সেটি আদালত থেকে তুলতে হবে।’
দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ওই সংবাদে বলা হয়েছে, সাম্যকে সুইচগিয়ার দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়। দুই গ্রুপের পরিকল্পনায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। হত্যার পর আসামিরা পালিয়ে কক্সবাজারে চলে যান। সোমবার (২৬ মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমানের আদালতে আসামি মো. রিপন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য জানান।
জবানবন্দিতে রিপন বলেন, সাম্যকে হত্যার পর মূল আসামিকে তিনি মোটরসাইকেলে করে ঘটনাস্থল থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মন্দিরের গেটে নিয়ে যান। সেখান থেকে আরেকটিকে গ্রুপ তাকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। এরপর তারা সবাই কক্সবাজারে পালিয়ে যান।’
তার ‘জবানবন্দি’ অনুযায়ী, হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছে দুটি গ্রুপ। ৫ থেকে ৭ জন সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন। এর মধ্যে দুজন সাম্যকে আঘাত করেন, বাকিরা আশপাশে নজর রাখেন। হত্যাকারীরা সবাই মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত।
আরও পড়ুন: সাম্য হত্যার রহস্য উদঘাটনের দাবি ডিএমপির
সহপাঠীদের বক্তব্য ও পরবর্তী কর্মসূচি
এদিকে, ঘটনাস্থলে থাকা ভুক্তভোগী ঢাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল বায়েজিদ ডিবি কর্মকর্তা নাসিরুল ইসলামের বর্ণনাকে সমর্থন করেছেন। তার দাবি, রাব্বি নামের ছেলেটার হাতেই টিজার গান ছিল।
এর আগে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বায়েজিদ বলেছিলেন, ‘মুক্ত মঞ্চের পাশে (হত্যাকাণ্ডের স্থানের পাশে) দুটি অল্পবয়সী শিশু ছিল। মন্দিরের গেট দিয়ে বের হওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়ি নিয়ে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের একজন আমাদের লক্ষ্য করে টিজার গান সদৃশ কিছু একটা মারে। শিশুদের হাতে এগুলো থাকা নিরাপদ না ভেবে সাম্য গাড়ি ঘোরায়। এ সময় আমরা বাচ্চাটিকে ধরতে গেলে সে পালানোর চেষ্টা করে।’
ঘটনার আকস্মিকতায় অন্য একটি পক্ষের মোটরসাইকেল ধাক্কা লাগে তাদের। আর এ নিয়েই শুরু হয় কথা কাটাকাটি, যা একপর্যায়ে প্রাণঘাতী মারামারিতে রূপ নেয়।
শিশু নাকি তরুণের হাতে টিজার গান ছিল জানতে চাইলে ঢাবির এ শিক্ষার্থী বলেন, ‘তার বয়স খুব একটা বেশি না, ১৮ বা এর কাছাকাছি হবে। তার কাছ থেকেই গানটি কাড়তে গিয়েই ঘটনার সূত্রপাত হয়।’
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার (১৩ মে) দিবাগত রাতে সাম্যর সঙ্গেই ছিলেন তার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু আশরাফুল আলম রাফি ও আব্দুল্লাহ আল বায়েজিদ। ওই সময় খাবার খাওয়ার উদ্দেশ্যে মোটারসাইকেলে চড়ে রমনা কালী মন্দির গেট দিয়ে উদ্যানে প্রবেশ করেন তারা।
হত্যাকাণ্ড নিয়ে তাদের বর্তমান অবস্থান জানতে চাইলে সাম্যর সহপাঠী এ শিক্ষার্থী বলেন, ‘পুলিশ এখনও হত্যার মোটিভ বা হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারো হাত আছে কিনা, সেটি বের করতে পারেনি। আমরা আমাদের জায়গা থেকে এটি বের করার জন্য পুলিশকে চাপ প্রয়োগে তৎপর রয়েছি।’
ছাত্রদলের অবস্থান
সেদিন সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ডিবির একাধিক দল গত কয়েক দিনে কক্সবাজার, মুন্সীগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে মেহেদী হাসান, রাব্বি ওরফে ‘কবুতর রাব্বি’, নাহিদ হাসান পাপেল, সোহাগ, হৃদয় ইসলাম, রবিন, সুজন সরকার ও রিপন— মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
তবে ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব।
গত বুধবার (২৮ মে) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে শুভেচ্ছা বক্তব্যের মাঝে তিনি সাম্য হত্যা নিয়ে ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেন।
রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের মেধাবী ছাত্র ও ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাম্যকে হত্যা করা হয়েছে। সাম্য হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়েছে বলে ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্যকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আমরা আমাদের ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাম্যর পরিবারও ডিএমপির বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে। ছাত্রদলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমরাও সেই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করলাম। সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে ছাত্রদলের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
উদ্যানে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য দমেনি
সাম্য হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নিরাপত্তা জোরদারে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
আরও পড়ুন: সাম্য হত্যা নিয়ে ধোঁয়াশা, প্রধান আসামি গ্রেপ্তার না হলেও পুরস্কৃত পুলিশ
তবে নিরাপত্তা পরিস্থিতি জোরালো হলেও এর মধ্যেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে চলেছে। গত রবিবার (২৫ মে) ছিনতাইয়ের শিকার হন বলে দাবি করেছেন সেখানে ঘুরতে যাওয়া বাপ্পি (১৯) ও তার বন্ধুরা।
তারা ইউএনবিকে জানান, চারটি মোটরসাইকেলে করে ৭-৮ জন তাদের কাছ থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। শুধু তা-ই নয়, ছিনতাইকারীদের মোটরসাইকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোও লাগানো ছিল বলে দাবি তাদের।
এ ঘটনায় উদ্যানের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য হালিমকে (৩০) প্রধান আসামি করে শাহবাগ থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিযোগে বলে হয়েছে, বন্ধুদের সঙ্গে আমি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেড়াতে গেলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রমনা কালী মন্দিরের পেছনে রাস্তার ওপর আনসার সদস্যের নির্দেশে অজ্ঞাতনামা ৭-৮ জন বাইকে করে এসে আমাদের জোর করে একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে যায়। তারা আমাদের পিস্তল দেখিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আমাদের গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধরও করা হয়।
এরপর তাদের কাছে থাকা ১ লাখ ১০ হাজার টাকা মূল্যমানের দুটি ক্যানন ৬ডি ক্যামেরা, ১ লাখ ২৪ হাজার টাকা মূল্যমানের একটি ক্যানন ৬ডি মার্ক-২ ক্যামেরা, ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা মূল্যের তিনটি ক্যামেরার লেন্স, মোট ৫৫ হাজার টাকা মূল্যের তিনটি স্মার্টফোন এবং নগদ সাড়ে ১৮ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ছিনতাইয়ের পর তাদের প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর এ বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আসামিদের গ্রেপ্তারে তারা কাজ করছেন।
সাম্য হত্যাকাণ্ডের দুই সপ্তাহ না যেতেই আবারও ছিনতাইয়ের ঘটনা উদ্যানের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
এর আগে, গত ১৭ মে তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাম্য হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার আটজনের প্রত্যেককে ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহিন রেজা। এরপর ২৩ মে তাদের ফের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ড শেষে ছয়জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
কারাগারে যাওয়া আসামিরা হলেন— তামিম হাওলাদার (৩০), পলাশ সরদার (৩০), সম্রাট মল্লিক (২৮), সোহাগ, হৃদয় ও রবিন।
১৮৭ দিন আগে
সাম্য হত্যায় বড় ষড়যন্ত্র থাকলেও খতিয়ে দেখা হচ্ছে না: ঢাবি ছাত্রদল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রদল নেতা এস এম শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডে পেছনে বড় ধরনের ষড়যন্ত্র থাকতে পারে বলে দাবি করেছে সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। তারা বলছে, অথচ তদন্ত করে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে না।
শনিবার (৩১ মে) ক্যাম্পাসের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানানো হয়। ‘ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার এবং সাম্প্রতিক রাজনীতি’ শিরোনামে এ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
এ সময়ে সাম্য হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার কার্যক্রম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের দাবি, প্রশাসনের অবহেলা ও পুলিশের পক্ষপাতমূলক আচরণের কারণে এই হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।
ঢাবি শাখা ছাত্রদল সভাপতি গণেশচন্দ্র রায় সাহসের অভিযোগ, ‘গত ১৩ মে দিবাগত রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশমুখে সাম্যকে নির্মমভাবে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। ঘটনার সময় পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি সত্ত্বেও তারা যথাযথ পদক্ষেপ না নিয়ে বরং হত্যাকারীদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করে—এমন অভিযোগও উঠে এসেছে প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যে।’
সংগঠনটির ভাষ্যমতে, ঘটনার দীর্ঘ সময় পর তদন্তে গতি আসে এবং ডিএমপি কমিশনারের নেতৃত্বে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত তথ্য ছিল ‘অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর’। সাম্যের নিহত ট্রেজার গান-সংক্রান্ত তুচ্ছ বিরোধের জের ধরে হয়েছে বলে জানানো হলেও চিকিৎসকদের মতে, পরিকল্পিতভাবে তার উরুর গুরুত্বপূর্ণ ধমনি কেটে ফেলা হয়, যা তাৎক্ষণিক মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ছাত্রদল অভিযোগ করে, ‘এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে বড় ধরনের ষড়যন্ত্র থাকতে পারে, অথচ তদন্তে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও তারা প্রশ্ন তোলেন।’
‘ক্যাম্পাস ও হলগুলোতে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের দাপট, মাদক সিন্ডিকেটের বিস্তার এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির মধ্যেও প্রশাসন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে ছাত্রদল বলেছে, ‘শিক্ষার্থীদের আবেগ-অনুভূতির প্রতি উপাচার্যের অপেশাদার আচরণ আরও অসন্তোষ তৈরি করেছে।’আরও পড়ুন: সাম্য হত্যার রহস্য উদঘাটনের দাবি ডিএমপির
পাশাপাশি সাম্য ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে সামাজিকমাধ্যমে গুজব ও অপপ্রচার চালানোর অভিযোগও উত্থাপন করেছে তারা। ছাত্রদলের দাবি, সাম্য হত্যাকাণ্ডের বিচারপ্রক্রিয়াকে ঢাকতে মনোযোগ সরিয়ে নেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
সংগঠনটি মনে করে, ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে স্বাধীন ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের স্বপ্ন দেখা হয়েছিল, প্রশাসনের ব্যর্থতায় তা এখনও অধরাই থেকে গেছে। তাই উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ এবং নতুন প্রশাসনের অধীনে নিরাপদ ক্যাম্পাস গঠনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে ছাত্রদল।
ছাত্রদল জানায়, শহীদ সাম্য হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এবং নিরাপত্তার দাবিতে তাদের আন্দোলন আরও তীব্র হবে।
১৮৮ দিন আগে
সাম্য হত্যা: ঢাবির তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সোমবার (২৬ মে) সকালে উপাচার্য ভবনে এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান প্রতিবেদনটি উপাচার্যের হাতে জমা দেন। এ সময় প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ এবং কমিটির সদস্য সচিব সহকারী প্রক্টর শারমীন কবির উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ জানান, ‘উপাচার্য স্যার আজ (সোমবার) প্রতিবেদনটি রিসিভ করেছেন। আগামীকাল (মঙ্গলবার) সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
হত্যাকাণ্ডে নিহতের বড় ভাই শরীফুল ইসলাম গত ১৪ মে শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মনসুর জানিয়েছে মামলাটি ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সাম্য হত্যার বিচারসহ ঢাবি শিক্ষার্থীদের চার দাবি
গত ১৩ মে রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছুরিকাঘাতে আহত হন শাহরিয়ার আলম সাম্য। রাত ১২টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং এ এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায়।
সাম্য হত্যার ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পরে ব্যারিস্টার নুরুল আজিমকে কমিটিতে কো-অপট করা হয়।
১৯৩ দিন আগে
বৃষ্টির মধ্যেই শাহবাগ মোড়ে ছাত্রদলের অবস্থান, যান চলাচল বন্ধ
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ (বৃহস্পতিবার) ফের রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। এতে শাহবাগ মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের হল পর্যায়ের নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে এই কর্মসূচি পালন করে আসছে ছাত্র সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।
গতকাল (বুধবার) সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার (২২ মে) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শাহবাগ ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে অবস্থানের ঘোষণা দেয় ছাত্রদল। সেই কর্মসূচি বাস্তবায়নেই আজ আরও একবার শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছে তারা।
আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ৯টা থেকেই শাহবাগ মোড়ে জড়ো হতে থাকেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। এর কিছুক্ষণ পরই ঝুম বৃষ্টি নামে। তবে বৃষ্টি তাদের অবস্থান কর্মসূচি পণ্ড করতে পারেনি। ১০টার পরপরই বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাস্তা নেমে যান ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী। তাদের অনুসরণ করেন আরও অনেকে।
এ সময় তারা ‘আর চাই না, আর চাই না, এনএসআইয়ের প্রক্টর’, ‘ক্যাম্পাসে লাশ ঝোলে, প্রক্টর কী করে’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, সাম্য হত্যার বিচার চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
আরও পড়ুন: সাম্য হত্যার বিচারসহ ঢাবি শিক্ষার্থীদের চার দাবি
আজ বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত তাদের এই অবস্থান কর্মসূচি চলবে বলে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
অবস্থান কর্মসূচিতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির রয়েছেন। এ ছাড়াও ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন ইউনিটের নেতারা রয়েছেন।
১৯৭ দিন আগে
সাম্য হত্যার বিচারসহ ঢাবি শিক্ষার্থীদের চার দাবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এ এফ রহমান হল ছাত্রদলের নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডর ঘটনা রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনার বহিঃপ্রকাশ বলে অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির একদল শিক্ষার্থী। এ সময়ে সাম্য হত্যার বিচার নিশ্চিতসহ চার দফা দাবি জানিয়েছেন তারা।
সাম্য হত্যাকাণ্ডর দ্রুত বিচার, দোষীদের গ্রেপ্তারে প্রশাসনিক গাফিলতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থতা, দেশজুড়ে নাগরিক নিরাপত্তার বেহাল দশা এবং নিরাপদ ক্যাম্পাসের প্রসঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করা হয়েছে।
সোমবার (১৯ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে ‘সন্ত্রাসবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। এতে তারা সাম্য হত্যাকাণ্ডের একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও সময়োপযোগী তদন্তের দাবি জানান।
এ ছাড়া, প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা, তদন্তের প্রতিটি ধাপ জনসমক্ষে তুলে ধরা এবং দায়িত্বহীনতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়র প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের জবাবদিহিতা নিশ্চিতের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ে তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ড, রাতের আধাঁরে শেখ হাসিনার ঘৃণাস্তম্ভে গ্রাফিতি মুছে ফেলা, বিশ্ববিদ্যালেয়ের চারুকলার শোভাযাত্রার মোটিফে আগুন দেওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের গাফিলতিকে দায়ী করেন শিক্ষার্থীরা।
সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ৫ আগস্টের পর থেকে দেশজুড়ে রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে নানা স্তরে গভীর শূন্যতা ও সংকট দেখা দিয়েছে এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বেহাল দশা ও অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে।
এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী আবিদুর রহমান মিশু। তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও সময়োপযোগী তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে। প্রকৃত খুনিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। তদন্তের প্রতিটি ধাপ জনসম্মুখে তুলে ধরা এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে তাদের দায়িত্বহীনতার জন্য জবাবদিহির আওতায় আনা।’
আরও পড়ুন: সাম্য হত্যা নিয়ে ধোঁয়াশা, প্রধান আসামি গ্রেপ্তার না হলেও পুরস্কৃত পুলিশ
তিনি আরও বলেন, ‘সাম্য ছিল একজন সদা সক্রিয় তরুণ, যিনি গত জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন। এই হত্যাকাণ্ড তাই ব্যক্তিগত শোক নয়, এটি আমাদের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বুকে এক রক্তাক্ত আঘাত। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচার চাই। পাশাপাশি আমরা চাই এই হত্যার পেছনে কাঠামোগত ব্যর্থতা ও প্রশাসনিক গাফিলতির ও স্থায়ী সংস্কার।’
চার দফা দাবিগুলো হলো— দ্রুততম সময়ে শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা, দায়িত্বগ্রহণের পর গত নয় মাসে ক্যাম্পাসে দুই হত্যাকাণ্ডসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে ভিসি ও প্রক্টরের পদত্যাগ, গত নয় মাসে তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিঘ্নকারী সব ঘটনার যথাযথ বিচার নিশ্চিত করা এবং ক্যাম্পাস এবং নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাঠামোগত ও নীতিগত সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্কার, মাদক-সন্ত্রাস দমন, নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও উদ্যানে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রযুক্তিনির্ভর করাসহ সার্বিক তৎপরতা বৃদ্ধি করা।
১৯৯ দিন আগে
সাম্য হত্যা নিয়ে ধোঁয়াশা, প্রধান আসামি গ্রেপ্তার না হলেও পুরস্কৃত পুলিশ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিলেও এই মামলার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ পর্যন্ত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হলেও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি—মূল হত্যাকারী এখনও পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। এ ছাড়া ঘটনার তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন দাবি করছে পুলিশের দুই পক্ষ।
গত মঙ্গলবার (১৩ মে) দিবাগত রাতে ঢাবি ক্যাম্পাস-সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইআর) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাম্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন তিনি।
হত্যাকাণ্ডের পর পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও যে ব্যক্তির ছুরিকাঘাতে সাম্য নিহত হন, তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি বলে দাবি করেছেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাম্যর সহপাঠীসহ অন্যান্য ঢাবি শিক্ষার্থীরা।
রহস্য উদঘাটন করেই পুরস্কৃত পুলিশ
এদিকে, দ্রুততম সময়ে সাম্য হত্যার রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেপ্তারের স্বীকৃতিস্বরূপ বৃহস্পতিবার (১৫ মে) শাহবাগ থানা পুলিশের সংশ্লিষ্ট টিমকে নগদ এক লাখ টাকা পুরস্কার দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।এ নিয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির গণমাধ্যম বিভাগের উপকমিশনার তালেবুর রহমান বলেন, ‘শাহবাগ থানার তদন্ত টিমের দ্রুত তৎপরতার কারণে ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এর স্বীকৃতিস্বরুপ ও সামনে আরও ভালো কাজের উৎসাহ প্রদানের জন্যই এ পুরষ্কার দেওয়া হয়েছে।’
পুরস্কার দেওয়ার পরের দিনই (শুক্রবার) সাম্য হত্যায় জড়িত মূল হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে শাহবাগ থানা অবরোধ করে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি—সাম্য হত্যার যিনি মূলহোতা, অর্থাৎ যিনি ছুরিকাঘাত করেছেন, সাদা শার্ট বা পাঞ্জাবি পরা সেই ব্যক্তি ও তার সব সহযোগীকে গ্রেপ্তার করতে হবে।
তবে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে হত্যাকারীকে ধরতে পারেনি পুলিশ অভিযোগ তুলে রবিবার (১৮ মে) আবারও শাহবাগ থানা ঘেরাও করেন শিক্ষার্থীরা।
ঘটনার বর্ণনা ও হত্যাকাণ্ড
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার (১৩ মে) দিবাগত রাতে সাম্যর সঙ্গেই ছিলেন তার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু আশরাফুল আলম রাফি ও আব্দুল্লাহ আল বায়েজিদ। ওই সময় খাবার খাওয়ার উদ্দেশ্যে মোটারসাইকেলে চড়ে রমনা কালী মন্দির গেট দিয়ে উদ্যানে প্রবেশ করেন তারা। পরে খাওয়া শেষে একটি শিশুর হাতে থাকা ‘টিজার গান’ কাড়তে গিয়ে অন্য একটি পক্ষের মোটরসাইকেল ধাক্কা লাগে তাদের। আর এ নিয়েই শুরু হয় কথা কাটাকাটি, যা একপর্যায়ে প্রাণঘাতী মারামারিতে রূপ নেয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বায়েজিদ বলেন, ‘সেদিন আমাদের ইনস্টিটিউটের একটি প্রোগ্রাম ছিল। প্রোগ্রাম শেষ করে রাতে খাওয়া-দাওয়া করতে উদ্যানের গেটের দোকানগুলোতে যাই। ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে খাওয়া শেষে সেখান থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলাম। তার মধ্যেই এই বিপত্তি।’
তিনি বলেন, ‘মুক্ত মঞ্চের পাশে (হত্যাকাণ্ডের স্থানের পাশে) দুটি অল্পবয়সী শিশু ছিল। মন্দিরের গেট দিয়ে বের হওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়ি নিয়ে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের একজন আমাদের লক্ষ্য করে টিজার গান সদৃশ কিছু একটা মারে। শিশুদের হাতে এগুলো থাকা নিরাপদ না ভেবে সাম্য গাড়ি ঘোরায়। এ সময় আমরা বাচ্চাটিকে ধরতে গেলে সে পালনোর চেষ্টা করে।’
‘এ সময় সেখানে কয়েকজন বসে ছিলেন। তাদের দিকে আমাদের খেয়াল ছিল না। হঠাৎ তাদের একটি বাইকের সঙ্গে আমাদের (বাইকের) ধাক্কা লাগে। এরপরই ওই ব্যক্তিরা আমাদের ওপর তেড়ে আসে।’
আরও পড়ুন: ঢাবির সাম্য হত্যাকাণ্ড: ৬ দিনের রিমান্ডে তিনজন
ওই ঘটনায় আহত এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘শুরুতে কথা কাটাকাটি হয়, পরে তারা প্রভাব দেখাতে চাইলে আমরাও উত্তেজিত হয়ে যাই। একপর্যায়ে পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হওয়া লাল টি-শার্ট পরা ব্যক্তি আমাকে মাটিতে ফেলে মারধর শুরু করে।’
‘১-২ মিনিটের মধ্যেই ঘটনার আকস্মিকতা সামলে দেখি, সাম্য উঠে দাঁড়িয়েছে। তারপর চোখ যায় তার পায়ের দিকে। দেখি, তার ডান পা রক্তাক্ত। তার পরপরই ধুপ করে পড়ে যায় সে।’কথা বলতে গিয়ে এ সময় কণ্ঠ ভারী হয়ে ওঠে বায়েজিদের।
নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি বলেন, ‘এরপর আমরা ওকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নেওয়ার জন্য প্রত্যক্ষদর্শীদের সাহায্য চাই, কিন্তু কেউ সে সময় এগিয়ে আসেনি। পরে একটি ছোট বাচ্চার সাহায্য নিয়ে ওকে (ঢাকা মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালে নিয়ে যাই।’
মূলত তাদের মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা লাগার পর কথা কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে সাদা শার্ট বা পাঞ্জাবি পরা এক যুবক বড় ছুরি জাতীয় কোনো অস্ত্র দিয়ে সাম্যর পায়ে আঘাত করেন। এর পরপরই তিনটি মোটরসাইকেলে করে তাদের ১০-১২ জনের একটি দল দ্রুত পালিয়ে যান বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘অস্ত্রের আঘাতে সাম্যর ডান পায়ের উরুতে গভীর ক্ষত হয়। কাটা জায়গা থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। হাসপাতালে নিতে নিতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েই মারা যায় সে।’
পরে এ বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের একজন চিকিৎসক বলেন, ‘উরুর পেছনে শরীরের একটি অন্যতম প্রধান রক্তনালী থাকে, যাকে বলা হয় ফিমোরাল আর্টারি। এটিকে বলতে পারেন দেহের প্রধান রক্তনালীর একটি শাখা রক্তনালী, কিন্তু এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
ওই রক্তনালী কেটে যাওয়ার পর হাসপাতালে আনতে দেরি হওয়ায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে নিজের ধারণার কথা জানান ওই চিকিৎসক।
আসামিদের গ্রেপ্তার নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনায় আলোড়ন সৃষ্টি হলে নড়েচড়ে বসে পুলিশ প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরের দিন (বুধবার) সকালে রাজধানীর পৃথক তিনটি স্থান থেকে তিনজনকে আটক করে পুলিশ।
হত্যার ঘটনায় নিহতের ভাই শরিফুল আলম শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আটক তামিম হাওলাদার (৩০), সম্রাট মল্লিক (২৮) ও পলাশ সরদারকে (২৮) আদালতে তোলে পুলিশ। এরপর তাদের প্রত্যেককে ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
তবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন আসামিদের তিনজনই। তারা আদালতকে বলেন, হয়রানি করার জন্য আমাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
অন্যদিকে, গ্রেপ্তারদের অপরাধের বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী বায়েজিদের দাবি, তারা ঘটনাস্থলেই ছিলেন। তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার তিনজন আমাদের আক্রমণ করে মারধর করেছেন। তবে মূল হত্যাকারীকে ধরা হয়নি, তাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।’
ঘটনাস্থলে উপস্থিত আইইআর-এর আরেক শিক্ষার্থী আশরাফুল আলম রাফি হত্যাকারীর বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘যে তিনজনকে ধরা হয়েছে তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন, কিন্ত তারা মূল হত্যাকারী নন। সাদা জামা কিংবা পাঞ্জাবি পরা এক ব্যক্তি সাম্যকে অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। ওই ব্যাক্তির গায়ের রঙ ফর্সা; তাকে দেখতে মোটেও উদ্বাস্তুর মতো নয়।’
একই ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ফারহান শাহরিয়ার চৌধুরী বলেন, ‘হত্যার দিন রাতে আমাদের ইনিস্টিটিউটের একটি প্রোগ্রাম ছিল। রাত প্রায় ১০টা পর্যন্ত আমরা সাম্য ভাইয়ের সঙ্গেই ছিলাম।’
আরও পড়ুন: সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে শাহবাগ থানা ঘেরাও, আসামিদের গ্রেপ্তারে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম
তার দাবি, রাত সাড়ে ১১টার দিকে ছুরিকাঘাত এবং সোয়া ১২টার দিকে সাম্যকে মৃত ঘোষণা করা হলেও হত্যাকাণ্ডের ৬ ঘণ্টা পরও ঘটনাস্থল অরক্ষিত ছিল। ঢাবি শিক্ষার্থীরা নিজেদের উদ্যোগে ঘটনাস্থলটি রক্ষা করে প্রমাণাদি বাঁচানোর চেষ্টা করেন।
তিনি বলেন, ‘প্রধান আসামিকে ধরতে পারল না, অথচ শাহবাগ থানার তদন্ত টিমকে পুরস্কৃত করা হলো। পুলিশের এই ধরনের প্রহসনের তীব্র নিন্দা জানাই আমরা।’
পুলিশ কী বলছে
ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম বলেন, ‘ঘটনার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাৎক্ষণিকভাবে অপরাধীদের ধরতে আমরা শহরের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে তল্লাশি অভিযান শুরু করি। পরে শমরিতা হাসপাতাল থেকে একজন ও বিআরবি হাসপাতাল থেকে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করি।’
তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার ওই দুজনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ফোন নম্বর ট্র্যাক করে তৃতীয়জনকে ফার্মগেটের রাজাবাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি অফিসে নেওয়া হয়।’
পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও দোয়েল চত্বরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব!
এদিকে, পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে বিশ্লেষণ করছে বলে জানালেও রমনা কালী মন্দির ও বাংলা একাডেমি গেটের সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন বায়েজিদ।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পুলিশ বলছে, সিসিটিভি ফুটেজ নাকি তাদের কাছে আছে। অথচ শাহবাগ থানার পুলিশ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান খান আমাকে পার্সোনালি (ব্যক্তিগতভাবে) ডেকে বলেছেন, পুলিশ মন্দিরের গেট ও বাংলা একাডেমি গেটের সিসিটিভি ফুটেজ পায়নি।’
আক্ষেপ করে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘রমনা কালী মন্দির একটি ধর্মীয় সেনসিটিভ (স্পর্শকাতর) জায়গা। মন্দিরের সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ না পাওয়া ও বাংলা একাডেমির ফুটেজ নষ্ট হওয়ায় ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রশাসনের গাফিলতি আছে।’
বায়েজিদের দাবির সত্যতা যাচাই করতে আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘সিসিটিভির ফুটেজ পাওয়া যাচ্ছে না, নাকি কী পাওয়া যায়নি, সেটা এখন বলা যাবে না। আর এটি তদন্তকারী কর্মকর্তা জানেন। আমি তো এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নই। এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কাজ করছেন।’
তিনি বলেন, ‘তাদের (বায়েজিদ) সঙ্গে কথা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ অবশ্যই আছে। তাদের সঙ্গে কথা বলার পর দু-তিন দিন চলে গেছে। আমরা বসেছিলাম না, কাজ করেছি। ঘটনার ক্লু বের করার চেষ্টা করছি।’
পরে এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজ নষ্ট হওয়ার যে দাবি, সে বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজ আমাদের কাছে আছে। আমরা অন্তত ১১টি আলামত জব্দ করেছি। এগুলো নিয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কাজ করছেন।’
বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে হত্যার বিচার
সাম্য হত্যার তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে শনিবার (১৭ মে) ঢাবি প্রশাসন ও ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলীর মধ্যে বৈঠক হয়।
বৈঠক শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যৌথভাবে কাজ করছে।
ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে উপাচার্যও সংহতি প্রকাশ করেছেন। ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী বলেন, অপরাধীদের আগামীকাল (রবিবার) থেকে রিমান্ড শুরু হবে। দ্রুত তদন্ত কাজ শেষ করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।
এ ছাড়া আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটিত হবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে এ হত্যার বিচার কাজ দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন হবে।’
উদ্যানের বর্তমান হালচাল
সাম্য হত্যাকাণ্ডের পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো ঐতিহাসিক একটি স্থানের নিরাপত্তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে উদ্যানের নিরাপত্তা জোরদারে বেশ কয়েকটি উদ্যোগও নিয়েছে সরকার।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১৫ মে) থেকে উদ্যানে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। অভিযানে ভ্রাম্যমাণ দোকানপাটসহ কয়েক শ’ অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছে সিটি করপোরেশন।
এ ছাড়া রাজু ভাস্কর্যের পেছনের গেটটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে ধীরে ধীরে একটি নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক স্থানে রূপান্তর করতে নিয়মিত টহল ও অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ।
ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম জানিয়েছেন, সাম্য হত্যাকাণ্ডের পর থেকে শনিবার পর্যন্ত উদ্যানে অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
তবে শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাম্য হত্যার এক সপ্তাহও এখনও পেরোয়নি, অথচ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রাণচাঞ্চল্য কমেনি একটুও। আঁধার নামলেও উদ্যানের বিভিন্ন স্থানে অনেককে আড্ডা, ঘুরে বেড়ানোসহ একান্তে সময় কাটাতে দেখা যায়।
আরও পড়ুন: সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে জাবি ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচি
এসবের মাঝেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল চোখে পড়ে। টহলদল দেখলেই লোকজনকে সরে যেতে দেখা যায়, কিন্তু তারা চলে গেলে আবারও উদ্যানে ঢুকছিল মানুষ।
উপদেষ্টার ঘোষণার পর টিএসসি-সংলগ্ন গেটে দেওয়াল তুলে দেওয়া হয়েছে। আরও কয়েকটি গেট বন্ধ করে রাখা হয়েছে। তবে নিরাপত্তাবাহিনীর অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট-সংলগ্ন গেট গলে উদ্যানে ঢুকতে দেখা যায় অনেককে। অনেককে আবার ছবির হাটের গেট এবং টিএসসি-সংলগ্ন গেটের দেওয়াল টপকেও উদ্যানে ঢুকতে দেখা যায়।
বিষয়টি নিয়ে উপস্থিত এক আনসার সদস্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘উদ্যানের নিরাপত্তা রক্ষায় রাতের শিফটে আমরা মাত্র ৬ জন। এই ছয়জনের পক্ষে এতো বড় উদ্যানে টহল দিয়ে এসব বিষয়ের সমাধান করা কষ্টসাধ্য।’
২০০ দিন আগে
সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে শাহবাগ থানা ঘেরাও, আসামিদের গ্রেপ্তারে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম
দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে শাহবাগ থানা অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচিতে হত্যায় জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তারে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন তারা।শুক্রবার (১৬ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা ‘বাংলাদেশের সাধারণ ছাত্রসমাজ’ ব্যানারে থানার সামনে অবস্থান নেন।
এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা অনুষদের সামনে জড়ো হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে, মিছিল নিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য হয়ে থানার দিকে এগিয়ে যান তারা।
এ সময় সাম্য হত্যার বিচার ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়। কর্মসূচিতে হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি জানান ঢাবি শিক্ষার্থীরা।
পরে, শিক্ষক-শিক্ষার্থী মিলে গঠিত আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধি দল শাহবাগ থানায় প্রবেশ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা অনুষদের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম, অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক ড. অসীম দাসসহ ৪ জন শিক্ষার্থী এই দলে ছিলেন।
আরও পড়ুন: দুর্বৃত্তের হাতে ঢাবি শিক্ষার্থী খুন: ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের প্রতিবাদ মিছিলে বহিরাগত!
থানা ঘেরাও কর্মসূচি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ইব্রাহিম মুন্সি বলেন, এটি একটি নির্দলীয় আন্দোলন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সাম্যর মৃত্যু নিয়ে নিজেদের ফায়দা লুটার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু আমাদের একমাত্র দাবি সাম্য হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করা।’
তিনি আরও জানান, ‘ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।’
আজ একটি মাত্র দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করেছেন বলে জানান এ শিক্ষার্থী। তবে, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার না করা হলে, আবারও থানা অবরোধের হুশিয়ারি দেন ইব্রাহিম।
মঙ্গলবার (১৩ মে) দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন।
২০৩ দিন আগে
সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে জাবি ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাম্যের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে কালো ব্যাজ ধারণ করে প্রতিবাদ সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রদল।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। এসময় প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এসময় বক্তারা ঢাবি ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচারের দাবিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং প্রক্টরের পদত্যাগ ও দেশব্যাপী নিরাপদ শিক্ষাঙ্গন তৈরির দাবি জানান।
আরও পড়ুন: জাবিতে ‘হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের’ পরিচয়ধারী এক ভুয়া শিক্ষার্থী আটক
এসময় জাবি ছাত্রদলের সদস্য সচিব অসীম আহমেদ অনীক বলেন, কিছুদিন আগে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারভেজ আনোয়ার অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে খুন হয়েছেন। গত পরশুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা নিজ ক্যাম্পাসে খুন হলেন। কিন্তু ইন্টেরিম সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয়ে নির্লিপ্ত।
তিনি আরও বলেন, আমরা ন্যায়বিচার ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছি। যতক্ষণ পর্যন্ত ক্যাম্পাস নিরাপদ হবে এবং শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের নিরাপদ বোধ করবে না ততক্ষণ আমরা কর্মসূচি চালিয়ে যাব।
জাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর বলেন, ইন্টেরিম সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমাদের প্রত্যাশা ছিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার্থীরা নিরাপদে থাকতে পারবে। কিন্তু, দুঃখের বিষয় কিছুদিন আগে ছাত্রদল নেতা পারভেজকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে ও ঢাবির ছাত্রদল নেতা নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য তার নিজের ক্যাম্পাসে খুন হয়েছে। যার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা ইন্টেরিম সরকারকে বলতে চাই, ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন এবং ঢাবির উপাচার্যের ও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি এবং ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। গত জুলাই-আগস্টে ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালিয়েছে এবং তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এছাড়াও ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে মুক্ত রাখতে হবে।
২০৩ দিন আগে
ঢাবি ছাত্র সাম্য হত্যার ঘটনায় আটক ৩
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে আটক করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ।
বুধবার (১৪ মে) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালেদ মনসুর ইউএনবিকে জানান, ঘটনার পরপরই শাহবাগ থানার বেশ কয়েকটি টিম দুর্বৃত্তদের আটকের জন্য বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। পরে শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ওই তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে ওই তিনজন সাম্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তবে তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ করেননি ওসি। এ ছাড়া, পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: খুবিতে শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আটক
গতকাল (মঙ্গলবার) দিবাগত রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চের পাশে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন সাম্য।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে মোটরসাইকেল চালিয়ে ঢাবি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন সাম্য। এ সময় অন্য একটি বাইকের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি এবং ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি শাহরিয়ারকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান।
পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
২০৫ দিন আগে