সিরিয়ান নেতা
২৫ বছর পর সিরিয়ান নেতার সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বৈঠক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দীর্ঘ ২৫ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল শারার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বুধবার (১৪ মে) সৌদি আরবের রিয়াদে এই বৈঠক করেন এই দুই দেশের নেতারা। ধারণা করা হচ্ছে আন্তর্জাতিকভাবে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার জন্য বৈঠকটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে।
উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকের ফাঁকে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। সিরিয়ানরা দীর্ঘ ৫০ বছরের আসাদ পরিবারের শাসন থেকে বেরিয়ে জীবনকে খাপ খাইয়ে নিতে চেষ্টা করছেন। এক সময় আল-শারাকে গ্রেপ্তার করার জন্য এক কোটি মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল মার্কিন প্রশাসন।
আল-শারার সঙ্গে বৈঠক শেষে ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি তরুণ, আকর্ষণীয় ও সাহসী যুবক। তার শক্তিশালী অতীত রয়েছে, যোদ্ধা।’
এর আগে মধ্যপ্রাচ্যে তিনদিনের সফর শুরুর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত বাশার আল আসাদ পরিবারের সদস্যদের নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে দেশটির ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন ঘোষণায় মঙ্গলবার রাতে সিরিয়ার বাসিন্দারা রাস্তায় নেমে এসে আতশবাজি করে উল্লাস প্রকাশ করেন। কারণ এখন তাদের অনেক বেশি বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রয়োজন এবং সেই সুযোগ উন্মুক্ত হয়েছে। একই সঙ্গে সিরিয়ানরা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে আবার যোগ দিতে পারবেন।
আজকের বৈঠকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ, আল শারা বা মোহাম্মদ আল-গোলানি একসময় আল-কায়েদার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের হয়ে যুদ্ধ শুরুর আগে ইরাকে মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। এমনকি তিনি মার্কিন সেনাদের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারেও আটক ছিলেন।
বৈঠকটি এমন সময়ে হলো, যখন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করতে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সবশেষ পদক্ষেপ গাজার হামাস ইস্যুতে হোয়াইট হাউস ও ইসরায়েল সরকারের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষকে আবারও স্পষ্ট করে তুলেছে।
আরও পড়ুন: সংকট নিরসনে পরোক্ষ আলোচনায় সিরিয়া-ইসরায়েল; মধ্যস্থতায় আরব আমিরাত
আল শারার সঙ্গে বৈঠক শেষে ট্রাম্প উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদকে বলেন, ‘আমি সিরিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিচ্ছি, যাতে তারা নতুন করে শুরু করতে পারে।’ ‘এটি তাদের শ্রেষ্ঠ হওয়ার সুযোগ করে দেবে। নিষেধাজ্ঞাগুলো সত্যিই পঙ্গু করে দেয়, খুবই শক্তিশালী।’
ঐতিহাসিক রুদ্ধদ্বার বৈঠক
মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি সিরিয়ার নেতা আল শারার সঙ্গে সৌদি আরবে সরাসরি বৈঠক করবেন। এজন্য সিরিয়ার এই নেতা সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে গিয়েছিলেন।
সিরিয়ায় ২০১১ সালে ধ্বংসাত্মক গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে থেকে কঠোর সমাজতান্ত্রিক শাসন জারি ছিল। সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে ১৯৭৯ সাল থেকে দেশটি মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় রয়েছে।
ট্রাম্পের সঙ্গে আল শারার রুদ্ধদ্বার বৈঠকের সময় সাংবাদিক ও দর্শনার্থীদের জানার সুযোগ দেওয়া হয়নি। পরে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, শারার সঙ্গে ৩০ মিনিট বৈঠক করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। জেনেভায় ২০০০ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সঙ্গে সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সঙ্গে হওয়া বৈঠকের পর শারার সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই বৈঠকটি হলো।
বৈঠকটিতে ফোনকলে যোগ দিয়েছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেফ তাইয়্যেপ এরদোগান ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। আল শারা ও তার নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর প্রধান সমর্থক হলো তুরস্ক।
সিরিয়া সম্পর্কে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি খুব দৃঢ়ভাবে অনুভব করেছি যে এটি তাদের একটি সুযোগ এনে দেবে।’ ‘তবে এটি সহজ হবে না, তবুও তাদের একটি ভালো শক্তিশালী সুযোগ দিয়েছে। তাদের জন্য এটি করতে পারা আমার জন্য সম্মানের।’
নিজের সিদ্ধান্তের বিষয়ে যুবরাজ মোহাম্মদের হস্তক্ষেপকে মূল চাবিকাঠি হিসেবে উল্লেখ করেন ট্রাম্প।
আরও পড়ুন: সিরিয়াকে অস্থিতিশীল করে তুলছে ইসরায়েল: এরদোগান
২০৪ দিন আগে