অন্তর্বর্তী উপাচার্য
কুয়েটে এবার অন্তর্বর্তী উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি শিক্ষকদের
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলীর প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। চলমান সংকট নিরসনে অন্তর্বর্তী উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেছেন শিক্ষকরা।
বুধবার (২১ মে) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সভাকক্ষে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। এ সময় একজন যোগ্য উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার জন্যও সরকারের কাছে দাবি জানায় শিক্ষক সমিতি।
এসব দাবিতে বৃহস্পতিবার (২২ মে) বেলা ১১টার দিকে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে শিক্ষক সমিতি।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. ফারুক হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না থাকা, ছাত্র-শিক্ষক সবার দাবির প্রতি অবজ্ঞা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবকের দায়িত্বে থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন না করায় শিক্ষকেরা মনে করেন, বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য কুয়েটের দায়িত্ব পালনে অক্ষম। এজন্য শিক্ষকেরা তার প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন। তাই তাকে দ্রুত পদত্যাগ করতে হবে।’
আরও পড়ুন: কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থীকে শোকজ, ষষ্ঠ দিনেও ক্লাসে ফেরেননি শিক্ষকরা
তিনি আরও জানান, শিক্ষকদের ওপর হামলাকারী শিক্ষার্থীদের শাস্তির দাবিতে তারা ৪ মে থেকে ক্লাস বর্জন ও ১৮ মে থেকে প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জন করে আসছেন। কিন্তু তারপরও উপাচার্য তাদের দাবি বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেননি। এর মাধ্যমে উপাচার্য কুয়েটের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমের প্রক্রিয়া আটকে রেখেছেন। ক্যাম্পাসে সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন অধ্যাপক ফারুক হোসেন।
তিনি বলেন, ‘উপাচার্য দাপ্তরিক কাজের কথা বলে ১৯ মে ঢাকায় যান। পরদিন ফিরে আসার বলেছিলেন শিক্ষকদের। কিন্তু এখনও তিনি ক্যাম্পাসে ফিরে আসেননি। কুয়েটের যে গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন তা-ও ফেরত পাঠিয়েছেন। তিন দিন ধরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করলেও কর্ণপাত করেননি তিনি। উপাচার্য সবার দাবির প্রতি অবজ্ঞা দেখিয়েছেন।’
‘তার অনুপস্থিতিতে যাকে রুটিন মাফিক করার জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন তিনি বুধবার দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না বলে লিখিত ভাবে উপাচার্যকে জানিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে কুয়েট অভিভাবক শূন্য। এ অবস্থায় পূর্ণাঙ্গ উপাচার্য নিয়োগ দিতে হবে’, বলেন অধ্যাপক ফারুক হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকরা বলেন, দাবি আদায়ের জন্য শিক্ষকদের রাস্তায় নামতে হবে, এটা খুবই দুঃখজনক।
এর আগে, বুধবার দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত উপাচার্যের কক্ষ ও প্রশাসনিক ভবন চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীদের এক অংশ এসে তাদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন।
তবে গত ৩ মাস ধরে আন্দোলন করা শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ আপাতত কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
তার আগে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে সংঘর্ষের ঘটনায় ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অচলাবস্থা চলছে।
আরও পড়ুন: কুয়েটের অন্তর্বর্তী উপাচার্য চুয়েটের অধ্যাপক হযরত আলী
পরে শিক্ষার্থীদের এক দফা আন্দোলন ও আমরণ অনশনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ এপ্রিল উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে অপসারণ করে সরকার। এরপর গত ১ মে অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসেবে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো.হযরত আলীকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ মে থেকে ক্লাস শুরুর কথা থাকলেও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে ফেরেননি শিক্ষকরা। ছাত্রদের হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিতের বিচার না পাওয়া পর্যন্ত ক্লাসে ফিরবেন না বলে জানিয়েছে কুয়েট শিক্ষক সমিতি।
এদিকে, ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাড়ে ৭ হাজার শিক্ষার্থী। এখনও শুরু হয়নি নতুন ব্যাচের ক্লাস।
১৯৭ দিন আগে