আপসহীন সেনাবাহিনী
সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপসহীন সেনাবাহিনী
দেশের স্বার্থ সবার আগে উল্লেখ করে সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আপসহীন বলে জানিয়েছেন সেনা সদরের অপারেশনস পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা।
তিনি বলেন, ‘সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সেনাবাহিনী আপহীন। করিডর একটি স্পর্শকাতর ইস্যু। দেশের স্বার্থ সেনাবাহিনীর কাছে সবার আগে। তাই দেশের স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো ধরনের আপস নয়।’
সোমবার (২৬ মে) দুপুরে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে সেনা সদর এক ব্রিফিংয়ে করিডরের প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, করিডর একটি স্পর্শকাতর ইস্যু। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত পরিস্থিতি যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে সংবেদনশীল। সেনাবাহিনী এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক আছে।
কেএনএফের জন্য চট্টগ্রামে ৩০ হাজার ইউনিফর্ম তৈরির প্রসঙ্গে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিম বলেন, 'কেএনএফ, কুকি জনগোষ্ঠীর সংগঠন পুরো সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা প্রায় ১২ হাজার, তাহলে ৩০ হাজার ইউনিফর্ম কেন বানানো হচ্ছিল? বা এর কতটুকু সত্যতা এবং নেপথ্যে কি আছে- সবগুলো সেনাবাহিনী অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছে।
আরও পড়ুন: সংস্কারে সচিবালয় থেকে বাধা এলে প্রতিহত করা হবে: হাসনাত আব্দুল্লাহ
ভারত থেকে সীমান্ত দিয়ে নাগরিকদের 'পুশ ইন' প্রসঙ্গে ব্রিগেডিয়ার নাজিম বলেন, এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। এটি গ্রহণযোগ্য না। বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সীমান্তে তারা এটি যথেষ্টভাবে মোকাবিলা করছে। তবে, যদি কোনো কারণে প্রয়োজন হয় বা সরকারের আদেশ দিলে এই বিষয়ে সেনাবাহিনীও কাজ করবে—তবে বিষয়টি কোনোভাবেই কাম্য নয়।
এর আগে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে বিগত ৪০ দিনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন অপারেশনস পরিদপ্তরের কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম।
এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মব ভায়লেন্স ও সামাজিক নিরাপত্তা বিঘ্নিতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের সঙ্গে তুলনা করলে বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রে স্থিতিশীল বা কোথাও উন্নতিও আছে। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখভালের দায়িত্ব কেবল সেনাবাহিনীর একার নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও অন্য সংস্থাগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পরিস্থিতির আরও উন্নতি করতে হবে।
তিনি আরও জানান, গত ৪০ দিনে সেনাবাহিনী ২৪১টি অবৈধ অস্ত্র ও ৭০৯ রাউন্ড গোলাবারুদ এবং গত আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সর্বমোট ৯ হাজার ৬১১টি অবৈধ অস্ত্র ও ২ লাখ ৮৫ হাজার ৭৬১ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। এ ছাড়াও গত এক মাসে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত মোট ১ হাজার ৯৬৯ জনকে এবং এ পর্যন্ত সর্বমোট ১৪ হাজার ২৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাদের মধ্যে কিশোর গ্যাং, তালিকাভুক্ত অপরাধী, অপহরণকারী, চোরাচালানকারী, প্রতারক ও দালাল চক্র, চাঁদাবাজ, ডাকাত, ছিনতাইকারী ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
ব্রিফিংয়ে আরও বলা হয়, বিগত ৪০ দিনে যৌথ অভিযানে ৪৮৭ জন মাদক ব্যবসায়ী এবং আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৪ হাজার ৪০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অবৈধ মাদকদ্রব্য, যেমন ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা, অবৈধ মদ ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে, যার মাধ্যমে এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ও নিরাপত্তা বিরাজ করছে।
আরও পড়ুন: ভলকার তুর্কের বার্তা সম্পর্কে সেনাবাহিনী অবগত নয়: আইএসপিআর
নাজিম উদ দৌলা বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ঈদের আগে ও পরে মিলে দুই সপ্তাহের বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে জাতীয় মহাসড়কগুলোয় নির্বিঘ্নে যান চলাচল নিশ্চিত করতে ঢাকাসহ দেশের গুরত্বপূর্ণ বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল ও মহাসড়কে দিন-রাত টহল পরিচালনা, গাড়ির অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য স্পর্শকাতর স্থানে চেকপোস্ট স্থাপনসহ টিকিট কালোবাজারি বা বেশি দামে টিকিট বিক্রি রোধ এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এসব কার্যক্রম ঈদুল ফিতরের মতোই মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। একই সঙ্গে জনসাধারণকে নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানোসহ পরিবার-পরিজনের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও আনন্দঘনভাবে ঈদ উদ্যাপনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
ব্রিফিংয়ে তিনি আরও বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর হাটকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পায়, মূল সড়কের পাশে পশুর হাটের অবস্থান হওয়ায় রাস্তাঘাটে যানজটের সৃষ্টি হয়। যার ফলে জনসাধারণের মাঝে দুর্ভোগ ও জানমালের নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি হয়। সেনাবাহিনী নিয়মিত টহল ও বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে পশুর হাটে চাঁদাবাজি ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সচেষ্ট থাকবে।
১৯২ দিন আগে