জাহাজ ম্যাডলিন
গ্রেটা থুনবার্গসহ গাজার জন্য ত্রাণবাহী জাহাজ ‘ম্যাডলিন’ আটক করেছে ইসরায়েল
গাজা অভিমুখে ত্রানবাহী ‘ম্যাডলিন’ জাহাজ দখলে নিয়ে জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গসহ ১২ কর্মীকে আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
স্থানীয় সময় সোমবার (৯ জুন) ভোরে তাদের আটক করা হয় বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে এই যাত্রার আয়োজনকারী আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার সময় কর্মীদের অপহরণ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘জাহাজটিতে বেআইনিভাবে অভিযান চালানো হয়েছে, নিরস্ত্র বেসামরিক নাবিকদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং শিশুখাদ্য, খাবার ও চিকিৎসা সরঞ্জামসহ জীবন রক্ষাকারী ত্রাণ জব্দ করা হয়েছে।’
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ম্যাডলিন নিয়ে এক সপ্তাহ আগে যাত্রা শুরু করেছিলেন গ্রেটাসহ ওই কর্মীরা।
তবে এই যাত্রাকে একটি ‘জনসংযোগমূলক স্ট্যান্ট’ বলে অভিহিত করেছে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তারা বলেছে, ‘সেলফি ইয়টে’ করে আসা ‘সেলিব্রেটিরা’ এখন নিরাপদে ইসরায়েলের উপকূলের দিকে এগোচ্ছে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলি দূতাবাসের দুই কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যা তারা জানায়, ওই কর্মীরা নিজ নিজ দেশে ফিরে যাবেন এবং ত্রাণ সহায়তা তাদের পরিচালিত চ্যানেলের মাধ্যমে গাজায় পাঠানো হবে।
পরে আটক কর্মীদের স্যান্ডউইচ ও পানি বিতরণের একটি ভিডিও প্রকাশ করে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে দেখা যায়, আটকরা কমলা রঙের লাইফ জ্যাকেট পরে আছেন।
গাজায় চলমান আগ্রাসনকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অন্যতম ভয়াবহ এবং ধ্বংসাত্মক সামরিক অভিযান বলে মনে করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে মানবিক সহায়তা প্রবেশে ইসরায়েলের বিধিনিষেধ ২০ লাখ মানুষের এই ভূখণ্ডে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি তৈরি করেছে।
সপ্তাহব্যাপী যাত্রা
জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ ছিলেন ম্যাডলিনে থাকা ১২ জন অ্যাক্টিভিস্টের একজন। এক সপ্তাহ আগে সিসিলি থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন তারা।
যাত্রাপথে গত বৃহস্পতিবার (৫ জুন) জাহাজটি লিবীয় উপকূলরক্ষী বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার আশঙ্কায় সাগরে ঝাঁপ দেওয়া চার অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করে।
ইসরায়েলি বাহিনী জাহাজ থামানোর আগে এক ভিডিও বার্তায় গ্রেটা বলেন, ‘আমি আমার বন্ধু, পরিবার ও সহযোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন সুইডিশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যাতে আমাকে ও অন্যদের দ্রুত মুক্তি দেওয়া হয়।’
ওই জাহাজে আরও ছিলেন ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত ফরাসি ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য রিমা হাসান। ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের নীতির বিরোধিতা করায় তাকে ইসরায়েলে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, হামাসকে চাপে রাখতে দুই মাসেরও বেশি সময় পুরোপুরি অবরোধের পর, গত মাসে ইসরায়েল গাজায় কিছু মৌলিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেয়।
তবে অবরোধ তুলে না নেওয়া হলে ও সামরিক অভিযান বন্ধ না করলে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন মানবিক সহায়তাকর্মী ও বিশেষজ্ঞরা।
গত মাসেও ফ্রিডম ফ্লোটিলার গাজায় পৌঁছানোর আরেকটি চেষ্টা ব্যর্থ হয়। সে সময় আন্তর্জাতিক জলসীমায় মাল্টার কাছে যাত্রাকালে তাদের আরেকটি জাহাজ ড্রোন হামলার শিকার হয়। জাহাজটির সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই হামলার জন্য তারা ইসরায়েলকে দায়ী করেছে।
এদিকে, গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে এ পর্যন্ত ৫ হাজরের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। বাস্তুচ্যুত হয়েছে গাজার প্রায় প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ। সেখানকার জনগণ এখন প্রায় সম্পূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।
কয়েক মাস ধরেই অচল অবস্থায় রয়েছে আরেকটি যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতার চেষ্টা। হামাস বলছে, তারা কেবল স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহারের বিনিময়ে অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দেবে।
আরও পড়ুন: গাজায় রাতভর ইসরায়েলি হামলায় সাংবাদিকসহ নিহত ৮২
অন্যদিকে, যতক্ষণ না সব জিম্মিকে মুক্ত করা, হামাস পরাজিত বা নিরস্ত্র ও নির্বাসিত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে বলে অঙ্গীকার ইসরায়েলের।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাস অভিযান চালায়। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন। আর ২৫১ জন ইসরায়েলিকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস যোদ্ধারা। এরপর গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এখন পর্যন্ত গাজায় ৫৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। কয়েক দফা বন্দি বিনিময়ের পর এখনো হামাসের হাতে ৫৫ জন ইসরায়েলি বন্দী রয়েছেন। জিম্মিদের অনেকে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন।
১৭৯ দিন আগে