চামড়া সংরক্ষণ
চামড়ার বাজারে এবারও হতাশা, গোড়ায় গলদ রেখে দাম নির্ধারণ
এবারের ঈদুল আজহায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোরবানির পশুর চামড়ার বর্ধিত নতুন দাম নির্ধারণ করে দিলেও নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি হয়নি বলে অভিযোগ মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। ট্যানারি মালিকরা বলছেন, মূল সমস্যা সমাধান না করে চামড়ার দাম বাড়ালেই বাজার চাঙ্গা হবে না।
কোরবানির প্রথম ৭২ ঘণ্টায় ঢাকার বাজারে সবচেয়ে বেশি চামড়া এসেছে লালবাগের পোস্তায়। কাঁচা চামড়ার এ আড়তে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা শহরের নানা জায়গা থেকে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে এসেছেন চামড়া। তবে তাদের অভিযোগ, সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি করতে পারছেন না তারা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন দর অনুযায়ী, এ বছর ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।
ট্যানারির হিসাব অনুযায়ী, ৩০ বর্গফুট কিংবা এর চেয়ে বেশি আকারের চামড়াকে বড়, ২০ বর্গফুটের ওপরের চামড়াকে মাঝারি এবং ২০ বর্গফুটের নিচের চামড়াকে ছোট চামড়া হিসেবে ধরা হয়।
এ হিসাবে সর্বনিম্ন দাম ধরলেও একটি বড় চামড়ার দাম দাঁড়ায় ১ হাজার ৮০০ টাকা, মাঝারি ১ হাজার ২০০ টাকা এবং ১৫ ফুটের ছোট চামড়ার দাম হয় ৯০০ টাকা। কিন্তু মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা সর্বোচ্চ ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায় চামড়া বিক্রি করতে পারছেন। এর চেয়ে বেশি দামে কোনোভাবেই চামড়া বিক্রি করা সম্ভব হয়নি।
চামড়া ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন বলেন, ‘কোরবানির দিন বিকালে প্রতি পিস চামড়া ৬০০ টাকায় বিক্রি করেছি। ৯০০ টাকা দাম বলে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরও ক্রেতা পাওয়া যায়নি।’
একই অভিযোগ জানিয়ে আরেক মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী মিলন সরকার বলেন, ‘কেউ ফুট মেপে চামড়া কেনেনি। পিস হিসেবে গড়পড়তা ৬০০ থেকে ৯০০ টাকায় চামড়া বিক্রি করেছি। সরকার দাম বাড়িয়েছে শুনে মাদরাসা–লিল্লাহ বোর্ডিং থেকে বেশি দামে চামড়া কিনে বড় বিপদে পড়তে হয়েছে।’
আরও পড়ুন: অনভিজ্ঞতার কারণে চামড়া নষ্ট হয়েছে, মেলেনি কাঙ্ক্ষিত দাম: শিল্প উপদেষ্টা
কেন সরকারের নির্ধারিত দামে চামড়া কেনা হচ্ছে না—এমন প্রশ্নের জবাবে পোস্তার আড়তদাররা জানান, এবার চামড়ার বাজার আগেরবারের চেয়েও খারাপ। নির্ধারিত দামে চামড়া কিনলে লোকসান দিয়ে ট্যানারির কাছে চামড়া বিক্রি করতে হবে।
এ বিষয়ে কাঁচা চামড়ার সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) মহাসচিব টিপু সুলতান বলেন, ‘যারা চামড়ায় অর্থলগ্নি করত, এবার তাদের অনেকেই এ ব্যবসা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। অনেক ব্যবসায়ী আগের সরকারের রাজনীতিতে সরাসরি জড়িত ছিলেন, তারা পলাতক। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের হাতে নেই নগদ টাকা। আগে যে ব্যবসায়ী ১০ হাজার পিস চামড়া কিনতেন, এবার তারা কিনছেন ৫ হাজার পিস করে।’
এ ছাড়া পোস্তায় প্রচুর নষ্ট চামড়াও এসেছে উল্লেখ করে টিপু বলেন, ‘৩০ শতাংশেরও বেশি চামড়া পচে গেছে। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা লবণ না লাগিয়ে কাঁচা চামড়া নিয়ে এসেছেন। বিক্রি করতে করতে অনেক চামড়া হয় পচে গেছে, না হলে মান হারিয়েছে। সরকার লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করলেও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা লবণ না দিয়ে চামড়া এনেছেন। এতেও দাম অনেক কমেছে।’
১৭৭ দিন আগে
সিলেট বিভাগে ২০৯৩৪৫ কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণ
সিলেট বিভাগে ঈদের চার দিনে মোট ২ লাখ ৯ হাজার ৩৪৫টি কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বিভাগীয় প্রশাসন থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, সিলেট বিভাগে মোট ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩৪৫ গরু এবং মহিষের চামড়া ও ২২ হাজার ছাগল ও ভেড়ার চামড়া সংরক্ষণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ১০ বছরের মধ্যে এবার সর্বোচ্চ দামে চামড়া বিক্রি হয়েছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
এরমধ্যে সিলেট জেলায় সর্বোচ্চ ১ লাখ ১০ হাজার ৩৫০ পিস কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণ করা হয়েছে। এরমধ্যে গরু ও মহিষ ৯৭ হাজার ৮৫০ পিস এবং ছাগল ১২ হাজার ৫০০টি।
এ বিভাগে সবচেয়ে কম চামড়া সংরক্ষণ করা হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলায়, মোট ১৭ হাজার ৩০০টি। এর বাইরে হবিগঞ্জে ৩২ হাজার ৭০টি এবং মৌলভীবাজারে ৪৯ হাজার ৬২৫টি চামড়া সংরক্ষণ করা হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের সবচেয়ে কম পশু কোরবানি হয়েছে সিলেট বিভাগে। বিভাগটিতে ৩ লাখ ১৯ হাজার ৮২৩ পশু কোরবানি হয়েছে।
১৭৭ দিন আগে