গোলাগুলি, ভাঙচুর-লুটপাট
কুষ্টিয়ায় সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের গোলাগুলি, ভাঙচুর-লুটপাট
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় সার্চ কমিটির বৈঠককে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে গোলাগুলির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়াও হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) রাত ১০টা থেকে দিবাগত রাত পর্যন্ত ধরমপুর ইউনিয়নের গো-হাট সংলগ্ন এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে সেখানে প্রথমে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খায়। পরে সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় পাঁচটি গুলির খোসা ও চারটি গুলি উদ্ধার করা হয়।
এদিকে বুধবার (১৮ জুন) সকাল পর্যন্ত এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি। থানায় কেউ অভিযোগও করেনি বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির কমিটি গঠনের জন্য মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় ধরমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সার্চ কমিটির সমন্বয়ে ওয়ার্ড কমিটির ভোটার তালিকা গঠনের প্রস্তুতি চলছিল। রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বৈঠক চলে। বৈঠকে সার্চ কমিটির সদস্য রবিউল ইসলাম সরকার, আসাদুজ্জামান মিঠু ও শামসুল ইসলামসহ অন্য সদস্যরা ছিলেন। সেখানে রবিউল ও আসাদুজ্জামানের সঙ্গে শামসুলসহ তার পক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। বৈঠক শেষ মূহুর্তে হঠাৎ সেখানে গুলি ছোঁড়ার ঘটনা ঘটে। এতে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। দুই পক্ষের লোকজন দুইদিকে অবস্থান নেয়। পরবর্তীতে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সেনাবাহিনীকে খবর দেয়।
সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। সংঘর্ষে বিএনপি কর্মী হামিদুল ও আরিফ আহত হন। অপর পক্ষের বিএনপি কর্মী টিপু আহত হন। তাদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়।
ধরমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিঠু বলেন, ‘বৈঠক শেষ হওয়ার পর যে যার মত সভাস্থল ত্যাগ করেন। ঠিক সেই মূহূর্তে সার্চ কমিটির সদস্য শামসুলসহ তার লোকজন হামলা চালায়। তারা গুলি ছোড়ে। এতে তাদের দুই কর্মী আরিফের মাথায় ও হামিদুলের ডান হাতের কনুইতে গুলি লেগে আহত হন।’
ধরমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি রবিউল ইসলাম সরকার বলেন,‘শামসুল ইসলাম খুবই বেপরোয়া আচরণ করেন। তিনি তার ছেলেসহ অন্যদের দিয়ে আজ আক্রমণ চালিয়েছেন। আমরা কোনোভাবেই এই হামলার সঙ্গে জড়িত না।’
অপরদিকে ধরমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সার্চ কমিটির সদস্য শামসুল বলেন, ‘ধরমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী হওয়ার কারণেই মূলত আজকের এই নাটক শুরু করেছে। সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে আজকের এই ঘটনা ঘটনা হয়েছে। মিটিং শেষে আসাদুজ্জামান মিঠু আমাকে গাড়িতে তুলে দিয়েছে। আমি চলে আসার পরেই মূলত এই ঘটনা ঘটেছে। এখানে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ওরা মূলত আমাকে আর আমার ছেলে রাজনকে টার্গেট করেছে। এই ঘটনা আসাদুজ্জামান মিঠু, রবিউল সরকার আর ধরমপুর ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক নান্টুন নেতৃত্বে ঘটেছে। তারা কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক আকাশের বাড়িতেও হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে।’
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় ছাত্রাবাসে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীর মৃত্যু
কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক আকাশের বোন চাঁদনী খাতুন বলেন, ‘লুটপাটকারীরা বাড়িঘর ভাঙচুরের পাশাপাশি সোনার গহনা ও টাকা লুট করেছে। আমার ভাই সবেমাত্র রাজনীতিতে যোগ দিয়েছে।’
ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘একজন মাথায় ও আরেকজন হাতের কনুইতে আঘাত নিয়ে রাতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।’
ভেড়ামারা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপি সার্চ কমিটির বৈঠককে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছিল। তিনজন আহত হয়েছেন। তবে তারা গুলিতে আহত হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে গুলির ৫টি খোসা ও ৪টি তাজা গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।’
এ বিষয়ে থানায় এখনো কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি বলেও জানান ভেড়ামারা থানার পরিদর্শক।
১৯৪ দিন আগে