জাবির চিকিৎসাকেন্দ্র
শিক্ষার্থীর মৃত্যু, দেরিতে অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানোর অভিযোগে জাবির চিকিৎসাকেন্দ্র ঘেরাও
সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলা ও দেরিতে অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানোর অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র ঘেরাও করেছেন ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (২২ জুন) রাত সোয়া ৯টায় চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রধান ফটক আটকে শিক্ষার্থীরা এই ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন।
নিহত জোবায়ের হোসাইন জাবির নৃবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। রবিবার সকালে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
এর আগে, শনিবার (২১ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে তার জন্য দেরিতে অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়েছে এবং বারবার যোগাযোগ করার পরও কার্যকর সাড়া পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
তারা জানান, জোবায়ের দীর্ঘদিন ধরে হিমোফিলিয়া রোগে আক্রান্ত ছিলেন। হঠাৎ করে অসুস্থ হওয়ায় শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান তিনি। কিছুটা সুস্থ হলে ক্যাম্পাসে ফেরার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে যোগাযোগ করেন জোবায়ের।
সেখান থেকে জানানো হয়, অ্যাম্বুলেন্স নষ্ট, ঢাকায় পাঠানো যাবে না। এর চার ঘণ্টা পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সেই তিনি ক্যাম্পাসে ফেরেন।
এদিকে, রবিবার আবারও তার পেটে ব্যথা শুরু হলে তাকে সাভারের এনাম মেডিকেলে নেওয়া হয়। সেখানে একপর্যায়ে মৃত্যু হয় তার।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ইতিহাস বিভাগের শাকিল আহমেদ বলেন, ‘জোবায়েরের সঙ্গে আমার অনেক ভালো সম্পর্ক ছিল। অসুস্থতা নিয়ে তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হতো। শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঢামেক হাসপাতাল থেকে কল দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে জোবায়ের। সে সময় বুকে প্রচণ্ড ব্যথা করছে বলে জানায় সে এবং ক্যাম্পাসে ফিরতে চায়। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অনেকবার কল দিয়েও লাভ হচ্ছে না বলে জানায় সে।’
ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘দায়িত্বরত চিকিৎসা কর্মকর্তা জোবায়েরকে নাকি বলেছিলেন, অ্যাম্বুলেন্স নষ্ট, ঢাকায় পাঠানো যাবে না। অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারকে কল দিলে তিনিও নানা অজুহাত দেখান। এভাবে তাকে চার ঘণ্টা অপেক্ষা করিয়েছে বলে জানায় সে।’
সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জিয়া উদ্দিন আয়ান বলেন, ‘আমরা দেখেছি, দেশের এত বড় একটি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পরও জাবিতে পর্যাপ্ত চিকিৎসাসামগ্রী নেই। ক্যাম্পাসে অনেক শিক্ষার্থী সময় মতো চিকিৎসা না পেয়ে অকালে মারা গেছে। মেডিকেলে পর্যাপ্ত জনবল নেই। বছরের পর বছর মেডিকেল সেন্টার সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চললেও তাতে কোনো ফল আসে না।’
এ কারণে অতি দ্রুত মেডিকেল সেন্টারের কার্যকর সংস্কার নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রধান কর্মকর্তা ডা. মো. শামসুর রহমান বলেন, ‘জোবায়েরের অসুস্থতার কথা মেডিকেলের সবাই জানে। যখনই সে অ্যাম্বুলেন্স চেয়েছেন, তখনই পেয়েছে। তবে শনিবার যখন সে অ্যাম্বুলেন্স চায়, তখনই দেওয়া সম্ভব হয়নি। তিনি দেরিতে অ্যাম্বুলেন্স পেয়েছেন, এটা সত্য।’
তিনি দাবি করেন, ‘জোবায়েরের অ্যাম্বুলেন্স না পাওয়ার কারণ অ্যাম্বুলেন্স–স্বল্পতা। বর্তমানে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স সচল রয়েছে। গতকাল সচল অ্যাম্বুলেন্সগুলো বাইরে ছিল, অ্যাম্বুলেন্স পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার জন্য পাঠানো হয়েছিল।’
উপাচার্যের শোক
এদিকে, জোবায়েরের মৃত্যুর ঘটনায় শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ কামরুল আহসান।
গতকাল (রবিবার) দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, ‘জোবায়ের হোসাইনের অকালমৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় একজন মেধাবী শিক্ষার্থীকে হারাল। তার পরিবারের জন্য এ ক্ষতি অপূরণীয়।’
তিনি জোবায়ের হোসাইনের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। এর পাশাপাশি তিনি তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান এবং সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান।
১৬৫ দিন আগে