রণধীর জয়সওয়াল
ট্রাম্পের হুমকি সত্ত্বেও রাশিয়ার তেল কেনা অব্যাহত রাখার ইঙ্গিত ভারতের
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রকাশ্য হুমকি সত্ত্বেও রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাশিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ‘স্থিতিশীল ও দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত’। তৃতীয় কোনো দেশের দৃষ্টিভঙ্গিতে এই সম্পর্ককে দেখা উচিত নয়।
শুক্রবার (১ আগস্ট) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে জানান, ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে দেশটির সামগ্রিক অবস্থান নির্ভর করে বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও বাজারে তেলের প্রাপ্যতার ওপর। তাছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক স্থিতিশীল ও পরীক্ষিত। এই সম্পর্ককে তৃতীয় কোনো দেশের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত নয়।
এমন এক সময়ে ভারত এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে ভারত, যখন ইতোমধ্যেই দেশটির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। একই সঙ্গে রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে ভারতের ওপর অতিরিক্ত আমদানি কর বসানোরও হুমকি দিয়েছেন তিনি।
২০২২ সালের জানুয়ারিতে রাশিয়া থেকে দৈনিক ৬৮ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করে ভারত। পরে ওই বছরের জুনে তা বেড়ে দাঁড়ায় দৈনিক ১১ লাখ ২০ হাজার ব্যারেলে। ২০২৩ সালের মে মাসে এ হার সর্বোচ্চ ২১ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেলে পৌঁছায় এবং এরপর থেকে আমদানির এই সংখ্যা ওঠানামা করছে।
আরও পড়ুন: ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: তেলের দামে অনিশ্চয়তা, হুমকিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি
প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার (পিটিআই) এক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, একসময় ভারতের আমদানি করা অপরিশোধিত তেলের ৪০ শতাংশের যোগানদাতা হয়ে ওঠে রাশিয়া।
অবশ্য এর আগে মধ্যপ্রাচ্য থেকে অধিকাংশ তেল আমদানি করত ভারত।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। মস্কোর ওপর চাপ তৈরি করতে পশ্চিমা দেশগুলো রুশ তেল বর্জন করলে সে সময় কম দামে তেল বিক্রির প্রস্তাব দেয় রাশিয়া। সে সময় থেকেই রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বাড়াতে শুরু করে ভারত।
১২৪ দিন আগে
ঢাকার সঙ্গে সব বিষয়ে গঠনমূলক আলোচনায় প্রস্তুত ভারত: রণধীর জয়সওয়াল
পারস্পরিক লাভজনক সংলাপের অনুকূল পরিবেশে বাংলাদেশের সঙ্গে সব বিষয়ে আলোচনায় প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল।
শুক্রবার (২৭ জুন) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি নবায়ন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
রণধীর বলেন, ‘আমরা গঙ্গাসহ একে অপরের সঙ্গে ৫৪টি নদীর পানি ভাগাভাগি করি। আর এসব নিয়ে আলোচনার জন্য দুই দেশের যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) রয়েছে।’
পানি বণ্টনসহ এ ধরনের ইস্যুতে ভারতের অভ্যন্তরে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়মিত পরামর্শ করে নিজেদের অবস্থান নির্ধারণ করা হয় বলে জানান তিনি।
সম্প্রতি কলকাতায় জয়েন্ট রিভার কমিশনের ৮৬তম বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারতের কর্মকর্তারা ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি নবায়নের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। আগামী বছর এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে।
বাংলাদেশ-চীন-পাকিস্তান বৈঠক প্রসঙ্গে ভারত
গত ১৯ জুন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। চীনের কুনমিংয়ে ‘নবম চায়না-সাউথ এশিয়ান এক্সপজিশন অ্যান্ড দ্যা সিক্সথ চায়না-সাউথ এশিয়া কো-অপারেশন’ শীর্ষক বৈঠকের সাইডলাইনে তিন দেশের পররাষ্ট্র সচিবদের ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ আমাদের মূল্যবান অংশীদার: ড. ইউনূসকে কসোভোর রাষ্ট্রদূত
ওই ত্রিপক্ষীয় বৈঠক নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘আশপাশের অঞ্চলের ঘটনাপ্রবাহে আমরা সবসময় নজর রাখি। কারণ এগুলো আমাদের স্বার্থ ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি দেশের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক, তা আলাদা আলাদা ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু সেই সম্পর্ক বিচার করার সময় আমরা পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটও বিবেচনায় নিয়ে থাকি।’
ওই বৈঠক নিয়ে বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন নিশ্চিত করেন, চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো নতুন জোট গঠনের উদ্যোগ নেই এবং এটি ভারতের বিরুদ্ধেও কিছু নয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো জোট করছি না। এটি রাজনৈতিক নয়, কেবল দাপ্তরিক পর্যায়ের একটি বৈঠক। এখানে কোনো জোট গঠনের বিষয় নেই।’
বৈঠকটি ভারতের ওপর কৌশলগত চাপ তৈরির উদ্দেশ্যে কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, ‘অবশ্যই না। এটি আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিতে পারি। টার্গেট করার বিষয় এখানে নেই।’
বাণিজ্য ইস্যুতে ভারতের অবস্থান
বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য-সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রণধীর বলেন, ‘বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ন্যায়বিচার, সমমর্যাদা এবং পারস্পরিক চাওয়ার ভিত্তিতেই ভারতে সংশোধিত বাণিজ্যিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে সহায়তা করবে যুক্তরাজ্যের শিল্প কৌশল: সারা কুক
তিনি জানান, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা এসব বিষয়ের সমাধানের অপেক্ষায় রয়েছে ভারত।
মুখপাত্র বলেন, ‘এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আগেও বহুবার গঠনমূলক বৈঠকে আলোচনা করেছি, এমনকি সচিব পর্যায়েও।’
সংখ্যালঘু ইস্যুতে ভারতের প্রতিক্রিয়া
ঢাকার খিলক্ষেতে দুর্গা মন্দির ধ্বংস প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে রণধীর বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, কট্টরপন্থিরা সেখানে একটি মন্দির ভাঙার দাবি তুলেছিলেন। অন্তর্বর্তী সরকার মন্দিরের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে উল্টো অবৈধ জমি ব্যবহারের যুক্তিতে সেটি ভাঙার অনুমতি দিয়েছে।’
মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত হতাশ যে বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়, তাদের সম্পত্তি ও উপাসনালয়গুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অন্তর্বর্তী সরকারেরই দায়িত্ব।’
১৬১ দিন আগে