প্রতিবাদকারী
গাজায় গণহত্যা: প্রতিবাদকারীদের ওপর যেভাবে নীরবতা ছড়িয়ে চলেছে হলিউড
শিল্প হলো প্রতিবাদের সবচেয়ে নান্দনিক ভাষা। একসময় যুক্তরাষ্ট্রের হলিউড চলচ্চিত্র শিল্প মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হতো। অথচ, গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিষয়ে হলিউড পাড়ায় চরম নীরবতা। কেন ও কিভাবে হলিউড পাড়ায় এই ঐতিহাসিক নীরবতা তৈরি হলো—এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন বিশ্লেষকরা।
এই শিল্পের শিল্পী, অভিনেতা ও প্রযোজনা কর্মীদের অভিযোগ, ইসরায়েল গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিনোদন জগৎ এখন আর মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতীক নয়, বরং এই খাত ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি দমন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলায় চাকরি খুঁইয়েছেন অনেকে, এমনকি এসব ব্যক্তির ভবিষ্যতে কখনোই কাজ না পাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইকে যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প ও বিনোদন জগতের বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েক ডজনকর্মী জানিয়েছেন, গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিরোধিতা করায় তাদের চাকরি হারাতে হয়েছে বা কালোতালিকায় পড়তে হয়েছে।
এসব ব্যক্তির মধ্যে আছেন—অভিনেতা, নৃত্যশিল্পী, কাঠমিস্ত্রি, সেট ডিজাইনার, অ্যানিমেটর, সুরকার ও স্ক্রিপ্ট লেখক। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ৫৭ হাজার ৭০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
চলতি বছরের শুরুর দিকে চলচ্চিত্রখাতের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পদক ‘অস্কার’ জয়ী ফিলিস্তিনি নির্মাতা হামদান বল্লাল ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে অধিকৃত পশ্চিমতীরে মারধরের শিকার ও আটক হন। সে সময় অস্কার কমিটি ‘অ্যাকাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস’ এই ঘটনার নিন্দা জানাতে অস্বীকৃতি জানায়। এটি হলিউডের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মৃত্যুর সবচেয়ে স্পষ্ট উদাহরণ।
আরও পড়ুন: ত্রাণ নিতে গিয়ে মে থেকে প্রায় ৮০০ ফিলিস্তিনি নিহত
হামদান ও বেসেল আদরার পরিচালিত ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী আন্দোলনবিষয়ক ডকুমেন্টারি ‘নো আদার ল্যান্ড’ ২০২৪ সালে অস্কার লাভ করে। এই চলচ্চিত্র বানানোর প্রতিশোধ নিতেই হামদানের ওপর হামলা হয়েছে বলে দাবি করেন সহপরিচালক আদরার।
এর কয়েক সপ্তাহ পর ‘স্নো হোয়াইট’ সিনেমার তারকা র্যাচেল জেগলারের একটি ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের টুইট নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। টুইটে তিনি লিখেছিলেন, ‘এবং মনে রাখবেন, স্বাধীন ফিলিস্তিন।’
চলচ্চিত্র প্রযোজকরা এই অভিনেত্রীকে বক্তব্য প্রত্যাহারের জন্য প্রচণ্ড চাপ দেন। এমনকি এই টুইটকে সিনেমাটির বক্স অফিসে ভরাডুবির কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়।
ইসরায়েলি আগ্রাসনকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও বিভিন্ন দেশ। এর বিপরীতে, যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প ও বিনোদন জগতে ক্ষমতাধর মহলের আগ্রাসনবিরোধীদের চুপ করিয়ে দেওয়ার অন্যায় প্রচেষ্টা ও ইসরায়েলকে সমর্থনের বিষয়টি বল্লাল ও জেগলারের সাম্প্রতিক উদাহরণ দুটির মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে।
শিল্প ও সৃজনশীলতার মুক্ত পরিবেশ হিসেবে বিবেচিত একটি ইন্ডাস্ট্রিতে এখন সহজে ভয় ও দমন-পীড়নের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।
মিডল ইস্ট আইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, তাদের কেউ কেউ সুপারহিরো ও হরর চলচ্চিত্রে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কেউ কেউ আবার এইচবিও, প্রাইম ও ফক্সের মতো জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলের সিরিজেও কাজ করেছেন।
তবে তাদের কেউই শীর্ষ পর্যায়ের অভিনেতা নন। তাই, তাদের বরখাস্ত বা কালোতালিকাভুক্ত করার ঘটনা বিনোদন জগতে প্রধান শিরোনামও হয়নি, হয়নি কোনো ধরনের আলোচনা। এই স্বীকৃতির অভাবই তাদেরকে আরও বেশি ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।
১৪৪ দিন আগে