পক্ষপাত
সরকারকে পক্ষপাতিত্ব না করে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান মির্জা আব্বাসের
অন্তর্বর্তী সরকারকে 'পক্ষপাতমূলক আচরণ' পরিহার ও দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা মির্জা আব্বাস।
তিনি বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে বলতে চাই, দয়া করে, পক্ষপাতমূলক আচরণ বন্ধ করুন। এটি দেশের ক্ষতি করছে।’ জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে শুক্রবার (১৮ জুলাই) এক মৌন মিছিল উদ্বোধনের আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্বাস সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, একটি পক্ষের প্রতি ঝুঁকে এবং অন্য পক্ষকে পাশ কাটিয়ে বিএনপিকে নির্মূলের করার চেষ্টা করবেন না। ‘কখনও এমন চিন্তা করবেন না।’
তিনি বলেন, বিএনপি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে এবং সহযোগিতা করার চেষ্টা করছে।
আব্বাস বলেন, ‘আমরা এখনও আপনাদেরকে (সরকারকে) সমর্থন করছি। তাই, দয়া করে খুব শিগগিরই একটি জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে দেশে চলমান অস্থিরতা শান্ত হয়ে যাবে। কিন্তু যদি তা না হয়—তাহলে মানুষ বিশ্বাস করবে যে, আপনারাই দেশকে অস্থিতিশীল করছেন—যাতে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকতে পারেন।’
জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে ৩৬ দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপির ঢাকা দক্ষিণ সিটি ইউনিট নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
পড়ুন: বিভ্রান্তির রাজনীতির মাধ্যমে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে একটি দল: সালাহউদ্দিন
কিছু রাজনৈতিক নেতার সাম্প্রতিক আপত্তিকর মন্তব্যকে উল্লেখ করে আব্বাস বলেন, কেউ কেউ বলেছেন বাংলাদেশ থেকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল হওয়ার পর বিএনপির নাম গিনেস বুকে লেখা হবে।
তিনি বলেন, ‘তারা বিএনপিকে মুছে ফেলতে চায়। আমি তাদের বলছি, দয়া করে জিভ সংযত রাখুন। এটা আপনার জন্য, দেশের জন্য এবং জনগণের জন্য ভালো হবে।’
বিএনপির এই নেতা রাজনৈতিক নেতাদের তাদের দল সম্পর্কে এমন বাজে এবং অযৌক্তিক মন্তব্য না করারও আহ্বান জানান, যাতে জনরোষের সৃষ্টি না হয়।
তিনি বলেন, ‘আমাদের উত্তেজিত করার চেষ্টা করবেন না বা আমাদের অন্য দিকে ঠেলে দেবেন না। আপনারা বিএনপির সঙ্গে লড়াই করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বিএনপি ঝগড়ায় জড়াবে না। বিএনপি বিশৃঙ্খলার দল নয়। বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে এবং জনগণের সঙ্গে থাকে।’
৫ আগস্টের পর কিছু রাজনৈতিক নেতার লম্বা দাবির সমালোচনাও করেন মির্জা আব্বাস। বলেন, ‘আমি জানি না তারা কী পেয়েছে বা কোথা থেকে সাহস পেয়েছে। আমরা আশা করি আপনারা শক্তিশালী এবং সাহসী হয়ে উঠবেন, কিন্তু দয়া করে বিএনপির মতো সত্যিকারের দেশপ্রেমিক দলের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন গুজব এবং অপবাদ ছড়াবেন না।’
মিটফোর্ডে এক ভাঙারি ব্যবসায়ীর মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, একজন যুবদল নেতা খুনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু কেউ কেউ এই ঘটনাকে বাংলাদেশ থেকে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে ক্ষমতায় আসার পথ পরিষ্কার করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘কেউ কেউ বলছেন বিএনপি ক্ষমতায় আসতে মরিয়া। এটা সত্য নয়। বিএনপি ১৭ বছর ধরে রাজপথে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং ভোটের অধিকারের জন্য লড়াই করছে। এখন আপনারা বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে ক্ষমতা দখল করতে চান।’
পড়ুন: চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির তীব্র নিন্দা বিএনপির
তিনি সতর্ক করে বলেন, যারা ক্ষমতায় আসার পথ মসৃণ করতে বিএনপিকে সরিয়ে দিতে চান তারা ভুল করছেন। ‘যতক্ষণ পর্যন্ত বিএনপির একজনও নেতা বা কর্মী বেঁচে থাকবেন, ততক্ষণ আপনাদের বিএনপিকে নির্মূল করার স্বপ্ন কখনোই পূরণ হবে না।’
আব্বাস বলেন, বিএনপি নেতা-কর্মীদের ১৭ বছর ধরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং তারা জানে কীভাবে রাস্তায় প্রতিবাদ করতে হয় এবং কীভাবে জেলে টিকে থাকতে হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তাই হুমকি দিয়ে আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করবেন না।’
বক্তৃতার শুরুতে আব্বাস জুলাইয়ের বিদ্রোহের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের চেতনা ও আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং দেশ গঠনে কাজ করার পরিবর্তে কিছু দল তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল ও রাজনীতিতে তাদের অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য শহীদদের ব্যবহার করার চেষ্টা করছে।
পরে, বিএনপি নেতাকর্মীরা মৌন মিছিল বের করে। মিছিলটি কাকরাইল, শান্তিনগর, মৌচাক এবং মালিবাগ ক্রসিং হয়ে আবুল হোটেলের কাছে গিয়ে শেষ হয়।
১৩৯ দিন আগে