জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়
ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন বাতিলে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
রাজধানী ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের বিরুদ্ধে আপত্তি ও স্থাপনের অনুমোদন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে একদল শিক্ষার্থী।
আজ বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তারা সরকারের প্রতি ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ঘোষণা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী জিয়াউল হক। তিনি বলেন, স্বৈরাচারের আমলে আমরা দেখেছি— বিভিন্ন এনজিওর ফান্ডিংয়ে স্কুল সিলেবাসে শরীফ-শরীফার গল্প ঢুকিয়ে বাচ্চাদের মগজে ট্রান্সজেন্ডার বা সমকামিতাকে বৈধ করার অপচেষ্টা করা হয়েছিল। জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের ওয়েবসাইটে সমকামিতাকে অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া এবং সেটাকে প্রমোট করার এজেন্ডার কথা বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস থাকলে শরীফ-শরীফার গল্প শুধু স্কুলে নয়, দেশের সব পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে চলে আসবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ‘সমকামি বিদ্যালয়ে’ পরিণত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে সমকামিতার অন্তর্ভুক্তি বাধ্যতামূলক হয়ে যাবে। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অঙ্গহানির মাধ্যমে লিঙ্গ পরিবর্তন, চিন্তা-ভাবনা ও মানসিকতায় বিকৃতি প্রকট আকার ধারণ করবে। এতে পারিবারিক কাঠামো নষ্ট হয়ে সামাজিক অবক্ষয় অপ্রতিরোধ্য হয়ে যাবে।
দেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের কার্যক্রম চলমান থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও চাকরির পরীক্ষায় ট্রান্সজেন্ডার কোটার প্রচলন করা হবে বলে আশঙ্কা করেন তারা।
জিয়াউল হক বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের কার্যক্রম দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার উপর আঘাত হানবে। এতে পার্বত্য চট্টগ্রাম অস্থিতিশীল হবে। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে মদদ দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘কার্যালয় স্থাপনে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে। ধর্ম পালন ও প্রচারের স্বাধীনতা হরণ হবে। এককথায়, দেশের মানুষের সাথে এক ধরণের আদর্শিক সংঘাত তৈরি হয়ে দেশে গৃহযুদ্ধের মতো অবস্থা তৈরি হবে।’
জিয়াউল হক বলেন, ‘ধর্ষক ও খুনিদের, বিশেষ করে জুলাই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের কোনো ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট হবে না। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এখানে বাধা দেবে।’
সরকারকে দেশের সার্বভৌমত্ব, মূল্যবোধ ও গৃহযুদ্ধের হাত থেকে দেশকে রক্ষার স্বার্থে ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের অনুমোদন বাতিল করতে হবে—বলেন জিয়াউল হক।
তিনি বলেন, সরকারকে একাধিকবার এই ব্যাপারে অনুরোধ জানালেও তারা কর্ণপাত করেনি। আমরা অন্তবর্তী সরকারকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিচ্ছি। সরকার যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস বাতিল না করে তাহলে দেশের স্বার্থে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব রাকিবুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
১১৭ দিন আগে
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের দপ্তর হচ্ছে ঢাকায়
ঢাকায় চালু হচ্ছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের (ওএইচসিএইচআর) মিশন। বাংলাদেশে মানবাধিকার সুরক্ষা ও বিকাশের লক্ষ্যে তিন বছরের জন্য সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে দুই পক্ষ।
শনিবার (১৯ জুলাই) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই মিশন চালুর উদ্দেশ্য হলো সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি সংগঠনগুলোর জন্য প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করা, যার মাধ্যমে তাদের সক্ষমতার উন্নয়ন, আইনি সহায়তা ও প্রাতিষ্ঠানিকতা শক্তিশালী হবে। এ ছাড়া, বাংলাদেশকে তার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতা পূরণে সহায়তা করাও এর লক্ষ্য।
প্রেস উইং জানিয়েছে, এই উদ্যোগ বিশেষ করে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিপ্রেক্ষিতে সংস্কার ও জবাবদিহির প্রতি সরকারের অব্যাহত প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আমরা স্বীকার করি, বাংলাদেশে কতিপয় গোষ্ঠী জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ভাবাদর্শগত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
প্রেস উইং জানায়, বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে গঠিত সমাজ। আমরা নাগরিকদের কাছ থেকে এমন প্রতিক্রিয়া পেয়েছি, যেকোনো আন্তর্জাতিক অংশীদারত্ব যেন এসব মূল্যবোধের প্রতি সম্মান দেখায়।
ওএইচসিএইচআরের এই মিশন মূলত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধ ও প্রতিকার—যেমন পূর্ববর্তী সরকারের দ্বারা সংঘটিত অপরাধগুলো—নিশ্চিত করার ওপর কেন্দ্রীভূত থাকবে। এটি এমন কোনো সামাজিক এজেন্ডা প্রচারে ব্যবহৃত হবে না যা দেশের প্রথাগত আইনি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোর বাইরে পড়ে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আমরা আশা করি, এই মিশন সর্বদা স্বচ্ছতা এবং স্থানীয় অংশীজনদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা বজায় রাখবে। জাতিসংঘ বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বাস্তবতাকে পূর্ণ সম্মান জানিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
সরকার জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হলে নিজ সিদ্ধান্তে সমঝোতা থেকে সরে আসার সার্বভৌম কর্তৃত্ব সংরক্ষণ করে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যদি এমন একটি কার্যালয় পূর্ববর্তী প্রশাসনের সময়ে বিদ্যমান থাকত, যখন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও জনসমক্ষে গণহত্যা অবাধে সংঘটিত হয়েছিল, তাহলে অনেক অপরাধই যথাযথভাবে তদন্ত, নথিভুক্ত এবং বিচার প্রাপ্ত হতে পারত। আজকের মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি অবশ্যই আদর্শ নয়, ন্যায়বিচারের ওপর ভিত্তি করে হতে হবে।
সরকার এই অংশীদারত্বকে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানসমূহকে শক্তিশালী করা এবং আমাদের নাগরিকদের সুরক্ষা বাড়ানোর একটি সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করছে, যা আমাদের মূল্যবোধ দ্বারা পরিচালিত, আমাদের আইন দ্বারা গঠিত এবং আমাদের জনগণের কাছে জবাবদিহিবদ্ধ থাকবে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
১৩৯ দিন আগে