জাতীয় রুফটপ সোলার কর্মসূচি
রুফটপ সোলার কর্মসূচির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সফট লোন প্রয়োজন: বিশেষজ্ঞরা
দেশের ছাদগুলোকে সোলার (সৌরশক্তি) ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা সফল করতে বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ ও সহজ শর্তে সফট লোন প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
রবিবার (২৭ জুলাই) ধানমন্ডিতে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘জাতীয় রুফটপ সোলার কর্মসূচির নকশা, বাস্তবায়ন, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন কাঠামো বিষয়ে প্রস্তাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এই কথা বলা হয়।
সংলাপের প্রধান আলোচক ছিলেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তি এবং বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউএবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সদস্য মো. নাসির উদ্দিন।
২৩ জুলাই অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় রুফটপ সোলার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। সরকারের জ্বালানি নীতির আওতায় এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। জ্বালানি নীতিতে ২০৩০ সালের মধ্যে ২০ শতাংশ ও ২০৪০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির উত্তরণ করা হবে।
সরকার ইতোমধ্যে ‘ন্যাশনাল রুফটপ সোলার প্রোগ্রাম’ বাস্তবায়নে প্রাথমিক পদক্ষেপ নিলেও, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) কার্যকর বাস্তবায়ন নির্দেশিকা ও পরিকল্পনার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলেন, এই ধরনের দিকনির্দেশনা না থাকলে আগের ‘নেট মিটারিং রুফটপ সোলার কর্মসূচি’-এর মতো এই উদ্যোগও ব্যর্থতার মুখে পড়তে পারে। সংলাপে প্রস্তাবিত ‘জাতীয় রুফটপ সোলার কর্মসূচি’-এর একটি খসড়া কাঠামো উপস্থাপন করা হয়, যার সঙ্গে সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য একটি মনিটরিং ও মূল্যায়ন কাঠামোরও রূপরেখা তুলে ধরা হয়।
চ্যালেঞ্জ ও সুপারিশ
‘জাতীয় রুফটপ সোলার কর্মসূচি’-এর সফল বাস্তবায়নে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ৩ শতাংশ সুদে সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তারা প্রচলিত ব্যাংক গ্যারান্টির বিকল্প হিসেবে এসক্রো অ্যাকাউন্ট বা প্রকল্পভিত্তিক দায়িত্ব হস্তান্তরের মতো ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন।
লোডশেডিংয়ের সময় ‘ডিমড জেনারেশন’ স্বীকৃতি দেওয়ারও দাবি জানান তারা, যাতে গ্রিড সংযোগ থাকা অবস্থায় যতটুকু বিদ্যুৎ উৎপন্ন হতো তা হিসাব করে উদ্যোক্তারা ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পান। এছাড়া, স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন (আইপিপি) প্রকল্পগুলোর মতো আমদানি শুল্ক কাঠামো এবং প্রাতিষ্ঠানিক সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থার নিরাপত্তা জোরদারের দাবি ওঠে।
পড়ুন: বাংলাদেশের প্রধান খাতগুলোতে বিনিয়োগে আগ্রহী চীনা ব্যবসায়ীরা: বিডা
মান নিশ্চিত ও জবাবদিহিতা বজায় রাখতে হার্ডওয়্যারের মান নিয়ন্ত্রণে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) ভূমিকা এবং প্রকল্পের নকশা থেকে কার্যক্রম পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির নজরদারির সুপারিশ দেওয়া হয়।
তবে ওপেক্স মডেলের অধীনে পাবলিক–প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) বাস্তবায়নে একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো— বেশিরভাগ বিদ্যুৎ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান নেট মিটারিং নির্দেশিকা অনুযায়ী ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে আগ্রহী নন, ফলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিনা গ্যারান্টিতে ঋণ দিতে রাজি হচ্ছে না।
প্রায় ৭ শতাংশ কার্যকর সুদের হার ও উদ্যোক্তাদের ২০–৩০ শতাংশ মূলধন বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা এ মডেলকে আরও অগ্রহণযোগ্য করে তুলছে। নিরাপত্তাও একটি বড় বিষয়, বিশেষ করে স্কুল–কলেজে স্থাপিত ১০ থেকে ৫০ কিলোওয়াট ক্ষমতার সিস্টেমগুলো রাতের বেলায় নজরদারিহীন এলাকায় ঝুঁকিতে থাকে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হলো লোডশেডিং চলাকালে ‘ডিমড জেনারেশন’। যেহেতু গ্রিড–সংযুক্ত সৌরসিস্টেম চালু থাকতে লাইভ গ্রিড দরকার, তাই বিদ্যুৎ না থাকলে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে রাজস্ব ক্ষতি হয়, যা গ্রামীণ এলাকায় আরও প্রকট।
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন— বাংলাদেশ ব্যাংক টেকসই অর্থায়ন বিভাগের সাবেক পরিচালক খন্দকার মোরশেদ মিল্লাত, জি সোলারিক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী নাজনীন আক্তার, বাংলাদেশ গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন বোর্ডের নবায়নযোগ্য শক্তি অধিদপ্তরের উপপরিচালক রামপ্রসাদ পাল, নবায়নযোগ্য শক্তি ও গবেষণা ও উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রযুক্তিগত) মনিরুজ্জামান, পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসির প্রধান প্রকৌশলী সরদার মোহাম্মদ জাফরুল হাসান, নবায়নযোগ্য শক্তি উন্নয়নের পরিচালক (উপসচিব) প্রকৌশলী মো. মুজিবুর রহমান।
১৩০ দিন আগে