গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়
ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ গেল আরও ৪৮ ফিলিস্তিনির
গাজা উপত্যকায় ত্রাণ নিতে গিয়ে আরও অন্তত ৪৮ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও অনেকে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৩০) এ হতাহতের তথ্য জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এই হামলা ও হতাহতের ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটেছে, যখন চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য ইসরায়েল সফরে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিফ উইটকফ।
গাজা শহরের শিফা হাসপাতাল জানিয়েছে, নিহত ও আহতরা জিকিম ক্রসিং এলাকায় জড়ো হয়েছিলেন। এটি উত্তর গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের প্রধান পথ। তবে কে গুলি চালিয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট হয়নি এবং ওই ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে, আল-সারায়া ফিল্ড হাসপাতাল জানিয়েছে, তাদের হাসপাতালে শতাধিক আহত ও নিহতদের নিয়ে আসা হয়েছে।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জরুরি বিভাগের প্রধান ফারেস আওয়াদ জানান, কিছু লাশ অন্য হাসপাতালেও নেওয়া হয়েছে। এ কারণে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত ইসরায়েলি বিমান হামলা ও গুলিতে অন্তত ৪৬ ফিলিস্তিনি নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই খাবারের খোঁজে জড়ো হয়েছিলেন।ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই হামলাগুলোর বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। সেনাবাহিনীর দাবি, তারা কেবল যোদ্ধাদের লক্ষ্য করেই হামলা চালায়। তাছাড়া বেসামরিক মৃত্যুর জন্য হামাসকেই দায়ী করে। কারণ তাদের ভাষ্যে, হামাসের যোদ্ধারা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থান নেন।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলি আগ্রাসনে ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানি ছাড়ালো ৬০ হাজার
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, অনাহারে এক শিশুসহ আরও সাত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে অনাহারে ৮৯ শিশু প্রাণ হারিয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক ৬৫ ফিলিস্তিনি মারা গেছেন।
ত্রাণ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করলেও রয়ে গেছে বাধা
গাজায় ত্রাণ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কারণে উপত্যকাটি ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে। একের পর এক অনাহারে মৃত্যুর পর আন্তর্জাতিক চাপের কারণে গাজায় ত্রাণ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল করেছে ইসরায়েল।
তবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি, গাজায় যে পরিমাণ ত্রাণ প্রয়োজন, তা সম্পূর্ণভাবে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে কাজ করা ইসরায়েলি সামরিক সংস্থা কোগাট জানিয়েছে, মঙ্গলবার গাজায় ২২০টিরও বেশি ট্রাক প্রবেশ করেছে।
তবে চলতি বছরের শুরুর দিকে যুদ্ধবিরতির সময় প্রতিদিন গড়ে জাতিসংঘের ৫০০–৬০০ ট্রাক ত্রাণ প্রবেশ করত। সে তুলনায় বর্তমানে পর্যাপ্ত ত্রাণ পাচ্ছেন না গাজাবাসী। তাছাড়া এখনো গাজায় প্রবেশ করা সহায়তা যথাযথভাবে বিতরণে হিমশিম খাচ্ছে জাতিসংঘ। কারণ অধিকাংশ ট্রাক ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ভিড় করা জনতার মাধ্যমে খালাস হয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: ত্রাণ প্রবেশে সীমিত যুদ্ধবিরতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ফিলিস্তিনিরা
অন্যদিকে, ইসরায়েল-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) থেকে খাবার নিতে গিয়ে মে থেকে এ পর্যন্ত অন্তত এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানে এবার কানাডা ও মাল্টার সম্মতি
এদিকে, গাজায় ইসরায়েলের ক্রমাগত হামলা ও অনাহারে একের পর এক মৃত্যুতে নড়েচড়ে বসেছে পশ্চিমা বিশ্বও।
দ্বি-রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধানের ভিত্তি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের পর আগামী সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কানাডা ও মাল্টা।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি মন্ত্রিসভার এক বৈঠক শেষে এই ঘোষণা দেন। এর আগে মাল্টার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব ক্রিস্টোফার কুটাজার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানবিষয়ক অধিবেশনে মাল্টার অবস্থান ঘোষণা করেন।
তবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থ হামাসের ‘সন্ত্রাসবাদ’ পুরস্কৃত করার শামিল হবে বলে মন্তব্য করেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
আরও পড়ুন: অনাহারে ১২৭ প্রাণহানির পর গাজায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি ইসরায়েলের
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে নেতানিয়াহু লেখেন, ‘আজ ইসরায়েলের সীমান্তে একটি জিহাদি রাষ্ট্র গড়া হলে, কাল সেটি আপনাদের জন্যেই হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।’
১২৭ দিন আগে
ইসরায়েলি আগ্রাসনে ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানি ছাড়ালো ৬০ হাজার
ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনিদের নিহতের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনে গাজার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) এ তথ্য জানায় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তাদের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের অক্টোবরের পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ৬০ হাজার ৩৪ জন নিহত এবং এক লাখ ৪৫ হাজার ৮৭০ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অর্ধেকই নারী ও শিশু। তবে হতাহতের এ সংখ্যা নিয়ে সন্দিহান ইসরায়েল। যদিও তারা নিজেরা কোনো সংখ্যা প্রকাশ করেনি।
এদিকে, ২০ লাখ ফিলিস্তিনি বর্তমানে ইসরায়েলি হামলার পাশাপাশি ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মুখে রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ত্রাণ আনতে গিয়ে
গাজার আল-আওদা হাসপাতাল জানিয়েছে, সোমবার (২৮ জুলাই) নুসেইরাত আশ্রয়কেন্দ্রে ১২ শিশু ও ১৪ নারীসহ ৩০ জন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে, দক্ষিণ গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৩৩ জন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ত্রাণের জন্য কিছু লোক জড়ো হলে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
আবার, মধ্য গাজায় ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন’ থেকে ত্রাণ নেওয়ার সময় মঙ্গলবার আরও ১৪ ফিলিস্তিনি নিহত হন।
এ নিয়ে মে মাস থেকে এ পর্যন্ত ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। যদিও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, তারা কেবল হুমকি মনে করলে সতর্কতামূলক গুলি ছোড়ে। এছাড়া হামাসের উপস্থিতি টের পেলেই কোনো স্থাপনায় হামলা চালায় তারা।
আরও পড়ুন: রাতভর ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত ৭২
অনাহারে মৃত্যু
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, চলতি মাসে অপুষ্টিজনিত কারণে গাজায় ৬০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু রয়েছে ২৪ জন।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অপুষ্টিজনিত কারণে মোট ৮৮ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শুধু চলতি মাসেই অপুষ্টিজনিত কারণে ৫৮ জন প্রাপ্তবয়স্কের মৃত্যু হয়েছে।
খাদ্য সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) জানিয়েছে, গাজা গত দুই বছর ধরে দুর্ভিক্ষের ধারপ্রান্তে রয়েছে। তবে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘গাজায় সৃষ্ট এই দুর্ভিক্ষ নিয়ে তথ্য-প্রমাণ স্পষ্ট— এবং সেগুলো অস্বীকার করার উপায় নেই।’
তবে ইসরায়েলের কারণে গাজায় দুর্ভিক্ষ তৈরি হয়েছে— এমন অভিযোগ অস্বীকার করে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডন সার বলেন, দুর্ভিক্ষ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে আলোচনা চলছে, তা বিকৃত আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগের একটি অংশ।
আকাশ থেকে ফেলা ত্রাণ সাঁতরে নিচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা
সম্প্রতি গাজায় ত্রাণ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে ইসরায়েল। এর পরপরই জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিমানবাহিনীর কার্গো বিমান গাজায় আকাশপথে ত্রাণ ফেলতে শুরু করে। ফ্রান্স ও জার্মানিও এই কার্যক্রমে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছে।
তবে আকাশ থেকে ফেলা ত্রাণের বেশিরভাগই পড়ছে ‘রেড জোনে’, যেখান থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আগেই ফিলিস্তিনিদের সরে যেতে বলেছে।
মঙ্গলবার অনেককে ত্রাণের জন্য ভূমধ্যসাগরে ঝাঁপ দিতে দেখা গেছে। অনেককে ভেজা চায়ের প্যাকেট বা আটা নিয়ে ফিরতে দেখা গেছে। একজনের হাতে ছিল এক ক্যান শস্যদানা।
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৯৪ ফিলিস্তিনি নিহত
মোমেন আবু আতাইয়া নামে এক ফিলিস্তিনি বলেন, ‘আমি ত্রাণ নিতে সাগরে নেমেছিলাম। প্রায় ডুবে যাচ্ছিলাম। শেষ পর্যন্ত মাত্র তিন প্যাকেট বিস্কুট সংগ্রহ করতে পেরেছি।’
জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরেই গাজায় আকাশপথে ত্রাণ পাঠানো নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে আসছে। তাদের মতে, এই পদ্ধতিতে ত্রাণ দেওয়া ব্যয়বহুল এবং স্থলপথে সহায়তা পাঠানোর তুলনায় অনেক কম ত্রাণ পৌঁছায়।
তাছাড়া ত্রাণের প্যাকেটগুলো ভিড়ের মধ্যে পড়লে আহত বা নিহত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। সেই সঙ্গে হাজারো মানুষ একত্রে ছুটে আসায় মারাত্মক পদদলিত হওয়ার ঘটনাও ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা জানিয়েছেন তারা।
১২৮ দিন আগে