আফ্রিকান নারী
আফ্রিকান নারীদের শরীরে ক্যানসার ছড়াচ্ছে ত্বক ফর্সাকারী পণ্য
আফ্রিকার দেশ টোগোর ৬৫ বছর বয়সী এক নারী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মাত্র দুই মাস পর মারা যাওয়ার ঘটনা বেশ সাড়া ফেলেছে। চিকিৎসকরা বলছেন, ত্বক ফর্সা করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত প্রসাধনী ক্রিমই তার মৃত্যুর কারণ। শরীরে জমা হওয়া বিষক্রিয়াই প্রাণহানির কারণ হয়েছে।
এই মৃত্যু নতুন নয়; আফ্রিকার নানা দেশে এমন ঘটনা এখন ক্রমেই বাড়ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—মানুষ কেন এমন বিপজ্জনক পথে হাঁটছে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর শিকড় লুকিয়ে আছে বহু পুরোনো এক মানসিকতায়—যেখানে ফর্সা ত্বক মানেই সৌন্দর্য, মর্যাদা ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা। এই মানসিকতা এসেছে ঔপনিবেশিক শাসনের সময় থেকে, যখন শাসকগোষ্ঠী তাদের গায়ের রঙকে শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক বানিয়ে তুলেছিল। আফ্রিকায়, এমনকি এশিয়া ও লাতিন আমেরিকাতেও সেই মানদণ্ড আজও অনেকের মননে গেঁথে আছে।
টোগোর ওই নারী জীবনের শেষ পর্যন্ত হয়তো বিশ্বাস করেছিলেন, ফর্সা ত্বক তাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সে কারণেই বছরের পর বছর ব্যবহার করে গেছেন রাসায়নিকসমৃদ্ধ প্রসাধনী, যা তার শরীরকে ধীরে ধীরে বিষিয়ে তুলেছে।
আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের মধ্যে তথাকথিত সৌন্দর্যবর্ধক প্রসাধনী ব্যবহারের প্রবণতা ব্যাপকহারে বেড়েছে। তবে এসব পণ্যের দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে ক্যানসারের ঝুঁকি আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে বলে সতর্ক করেছেন চিকিৎসকরা।
সম্প্রতি, একের পর এক ঘটনায় আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে নারীদের মধ্যে তথাকথিত ত্বক ফর্সাকারী ক্ষতিকর ক্রিম ও লোশন ব্যবহারের ভয়াবহতা সামনে এসেছে।
আরও পড়ুন: ত্বকের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ধরন নারী-পুরুষ ভেদে ভিন্ন: গবেষণা
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কালো ত্বকে প্রাকৃতিকভাবে মেলানিনের উপস্থিতি থাকে, যা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে এবং ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক। কিন্তু এসব তথাকথিত সৌন্দর্যবর্ধক ক্রিম মেলানিন ধ্বংস করে প্রাকৃতিক সুরক্ষা ভেঙে দেয়।
আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে নারীদের মধ্যে তথাকথিত ত্বক ফর্সাকারী ক্রিম ব্যবহারের হার ২৫ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বলে ধারণা করা হচ্ছে। গবেষকরা বলছেন, ঔপনিবেশিক যুগ থেকে চলে আসা সৌন্দর্য মানদণ্ডে ফর্সা ত্বককে শ্রেষ্ঠ ও আকর্ষণীয় মনে করা হয়। এই মানসিকতার কারণেই ক্রিম ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে।
আফ্রিকাজুড়ে তথাকথিত ত্বক ফর্সাকারী পণ্যের বাজার দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বর্তমানে ১০.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের এ বাজার ২০৩৩ সালের মধ্যে ১৮.১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। এমনকি এসব পণ্য শিশু ও নবজাতকদের ওপরও ব্যবহৃত হচ্ছে বলে কিছু রিপোর্টে উঠে এসেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়াজুলু-নাটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্মরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এনকোজা ডলোভা ডলোভা ও তার সহকর্মীরা মালি, সেনেগালসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে সংগৃহীত অন্তত ৫৫টি ত্বক ক্যানসারের ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করছেন। এসব রোগীর অধিকাংশই দীর্ঘ সময় ধরে সৌন্দর্যবর্ধক ক্রিম ব্যবহার করতেন।
আরও পড়ুন: এখন দেশেই বিশ্বমানের প্রসাধনী তৈরি করছে রিমার্ক-হারল্যান
ডলোভা এই প্রবণতাকে ‘গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এটি অবিলম্বে মোকাবিলা করা প্রয়োজন। প্রতিদিনই তার ক্লিনিকে ত্বক ফর্সাকারী পণ্যের কারণে ত্বকের সমস্যায় ভোগা রোগী আসছেন।
সবাই ক্যানসার নিয়ে আসছেন না, তবে অনেকেই এমন ছত্রাক সংক্রমণ নিয়ে আসছেন যেগুলো সাধারণ চিকিৎসায় প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। অনেকে স্টেরয়েড-প্ররোচিত ব্রণ, রোসেশিয়া, স্থায়ী স্ট্রেচ মার্কসহ নানা জটিলতা নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
১২৮ দিন আগে